অসীম সাহা
খোকা, মুজিব, মুজিব ভাই, মিয়া ভাই ও বঙ্গবন্ধু। এতোগুলো ধাপ পেরিয়ে অবশেষে নিজেকে জাতির পিতা হিশেবে প্রতিষ্ঠিত করা চাট্টিখানি কথা নয়। বাঙালির ইতিহাসে স্বাধীন রাজ্য ছিলো বটে কিন্তু স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র কখনো ছিলো না। সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ করে ধাপে ধাপে স্বাধীনতার ডাক দিয়ে ৩০ লাখ শহিদ ও দু’লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে একটি লাল-সবুজের মানচিত্রের অভ্যুদয় ঘটিয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে যিনি নিজের নাম অক্ষয় করে রেখেছেন, তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
অনেকে বলার চেষ্টা করেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা শেখ মুজিবের একার অবদান নয়। আমাদের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্রকুমার সিংহও এমন একটি কথা বলে নিজে যেমন বিতর্কিত হয়েছেন, তেমনি জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। ফলে এমনকি তাঁকে দেশ থেকে বিতাড়িতও হতে হয়েছে। কারণ ইতিহাসের একটি অমোঘ সত্য এই যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এককভাবে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেননি বটে, কিন্তু গোটা জাতিকে একই পতাকাতলে সমবেত করে তিনি একটি একক সত্তায় পরিণত হয়েছিলেন।
ফলে তাঁর অনুপস্থিতিতেও তিনি হয়ে উঠেছিলেন স্বাধীনতার স্থপতি, যিনি একমেবাদ্বিতীয়ম। পৃথিবীতে এমন ইতিহাস শুধু বিরল নয়, নেই বললেই চলে। যদি ১৯৪৮ সাল থেকে ধরি, তা হলে ধাপে ধাপে তিনি ভাষা আন্দোলন, ৬৬-এর ৬ দফা, ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান,৭০-এর অসহযোগ আন্দোলন, এবং ১৯৭১-এর ৭ই মার্চের সেই অমোঘ আহ্বান “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম/এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম” -এর মাধ্যমে গোটা বাঙালি জাতিকে একই সূত্রে গ্রথিত করে, ‘যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করার’আহ্বান জানিয়ে স্বাধীনতার পথে বাঙালিকে সকল শক্তি নিয়ে এগিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করেন। আর এর একক নায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ নিয়ে যারা অকারণ বিতর্ক সৃষ্টি করার চেষ্টা করেন, হয় তারা একক অস্তিত্ব কী, তা বোঝেন না, আর না হয় তারা জ্ঞানপাপী। তবে আশার কথা এই যে, ইতিহাস মহানায়কদেরই তাদের কোলে বরণ করে নেন। আর খলনায়কদের ইতিহাসের ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করে। সে-জন্যে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ভাবনা নেই। ভাবনা সেই কলঙ্কিত খলনায়কদের নিয়ে, যাদের আসল চেহারা গভীর অন্ধকার থেকে ক্রমশ আলোকিত ভুবনে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে; আর আগামী প্রজন্ম তাদের মুখে ঘৃণায় থুতু নিক্ষেপ করার জন্য অপেক্ষা করছে।