বঙ্গবন্ধুর জন্ম এবং রক্তে কেনা একটি পবিত্র ভূখণ্ড


প্রফেসর ড. এম শাহ্ নওয়াজ আলি

স্বাধীনতা, প্রিয় একটি শব্দ। মধুর শব্দ। স্বাধীনতা কতোটা মধুর, কতোটা গুরুত্বপূর্ণ, কতোটা আকাক্সিক্ষত, আবশ্যকীয় বা প্রয়োজনীয় সেই মানুষ, জাতিটিই প্রকৃতভাবে উপলব্ধিটি করতে পারে। কারণ স্বাধীনতাহীনতায় কখনো কেউ বা কোনো জাতি বাঁচতে চায় না। ভালো থাকতে পারে না। আমরাও ভালো ছিলাম না। পাকিস্তানিরা আমাদের একরকম প্রজার জীবন দিয়েছিলো। পদে পদে আমাদের বঞ্চিত করে রাখতো। কোনো ক্ষেত্রেই আমাদের কোনো জায়গা ছিলো না। আমাদের অবহেলা করে, শোষণ করে বিকৃত আনন্দ লাভ করত।
 
একসময় পাকিস্তানিরা আমাদের ভাষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চাইলো, পারলো না। আমাদের রাষ্ট্রীয় সব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে রাখতে চাইল আমরা প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠলাম। আমাদের গ্রেপ্তার, হয়রান করে মুখবন্ধ করতে চাইলো, আমরা গর্জে উঠলাম। আমরা অধিকার চাইলাম, দিতে অপারগতা প্রকাশ করলো পাকিস্তানি শাসকেরা। আমরা পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ, আমরা সত্তরের নির্বাচনে নিরুষ্কভাবে জয় লাভ করলাম, তবুও আমাদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে তালবাহানা। ৪৭ থেকে ৭১Ñ কেবলই শোষণ, বঞ্চনা, অবহেলা, নির্যাতন, বর্বরতার ইতিহাস। আমাদের অস্থিত্ব ধ্বংসের ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখল পাকিস্তানিরা। ঠকে ঠকে, অবহেলা, নির্যাতন ও অধিকার বঞ্চিত বাঙালি তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলো। শত্রুর সঙ্গে আর একত্র বাস নয়। ওরা আমাদের অধিকার দিবে না, অধিকার আমাদের আদায় করে নিতে হবে। অধিকার আদায়ে চূড়ান্ত সংগ্রামে অবতীর্ণ হলো জাতি। জাতির জনক ঘোষণা দিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।

বাঙালি স্বাধীনতার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকলো। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অপারেশন সার্চ লাইটের নামে বাঙালি নিধনে নেমে পড়লো। জাতির জনক ২৫ মার্চ রাতে, তথা ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন। তারপর তাকে গ্রেপ্তার করা হলো। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো। তারপরের গল্প তো সবার জানা। বিশ্ব জানে, কীভাবে বাংলাদেশ নামক একটি ভূখ- আমরা পেলাম। লাখ লাখ শহিদের আত্মবিসর্জন, মা-বোনের সম্ভ্রমহানি, রক্তে কেনা একটি পবিত্র ভূখ- আমরা পেলাম।

আমরা এখন স্বাধীন। আমরা এখন উন্নত জীবনযাপনের কেবল স্বপ্নই দেখিই না, তা এখন বাস্তব। হয়তো সবাই উন্নত জীবন এখনো পায়নি, এখনো হয়তো সুষমবন্টন ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়নি, এখনো হয়তো সবার অর্থনৈতিক মুক্তি মিলেনি, কিন্তু আমরা স্বাধীনতায় বাঁচি। আমরা স্বাধীনভাবে হাসতে পারি, কাঁদতে পারি। আমরা আর এখন অভুক্ত থাকি না। অন্তত তিনবেলা খেয়েপড়ে বাঁচার ব্যবস্থা হয়েছে। আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকাভুক্ত হয়েছি। আমরা এগিয়ে চলেছি জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলার পাওয়ার আকাক্সক্ষায়। সেই কাজটি করছেন জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা বিশ্বাস করি, জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা আর বেশি দূরে নয়। ফলে জাতির জনকের জন্ম আমাদের জন্য ছিলো পরম  সৌভাগ্য। তার জন্যই আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। এ দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়েই বাংলার মানুষকে তিনি মুক্ত করেছিলেন।   জন্মদিনে জনকের প্রতি শ্রদ্ধা।

লেখক : সদস্য, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন

SUMMARY

442-1.jpg