ইংরেজীতে একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদ আছে। প্রবাদটি হলো “অ ইঅজকওঘএ উঙএ ঝঐঊখউঙগ ইওঞঊঝ” (এ বার্কিং ডগ সেলডম বাইটস)। বাংলায় এর প্রকৃত অর্থ শুনতে খারাপ লাগে বলে গুণীজনেরা বলেছেন এমনভাবে- “যত গর্জে তত বর্ষে না”। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কারো অনুরোধে বা তোষামোদিতে রাজনীতি করতে রাজনীতিতে যোগ দেননি। তিনি রাজনীতির খাতায় নাম লিখিয়েছিলেন নিপীড়িত, নির্যাতিত, অবহেলিত বাঙালি জাতিকে মুক্তি দিতে। তিনি এতটায় দেশপ্রেমিক, এবং হৃদয়বান ছিলেন যে তিনি মর্মে মর্মে বুঝতে পেরেছিলেন এ জাতিকে মুক্তি দিতে আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই।
শুধু তাই নয় জাতিকে দ্বিধা বিভক্ত না রেখে সকলের জন্য রাজনীতি এবং দ্বিধাবিভক্তের হাত থেকে রক্ষা পেতে নিরপেক্ষতাকে প্রাধান্য দেন। ১৯৫৫ সালের ১৭ই জুন পল্টনের জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্ব প্রথম স্বায়ত্বশাসন দাবী করেন। একই বছরে ২১ শে অক্টোবর আওয়ামী মুসলিম লীগের বিশেষ কাউন্সিল অধিবেশনে ধর্মনিরপেক্ষতাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে নতুন নামকরণ করেন ‘আওয়ামীলীগ’। দুরদর্শী এই মহান নেতা সকল ধর্মের লোকদেরকে প্রাধান্য দেওয়ার লক্ষে তিনি দলের নাম থেকে মুসলিম কথাটিকে বাদ দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করেন তিনি শুধু মুসলমানদের নেতা নন তিনি হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সহ দেশে অবস্থিত সকল ধর্মের অনুসারীদের নেতা, সাতকোটি বাঙালির নেতা। বঙ্গবন্ধু আমৃত্যু ছিলেন জনদরদী নেতা।
নিজে না খেয়ে অপরকে খাওয়ানো, নিজের গায়ের শীতবস্ত্র খুলে নিরীহকে দান কর এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ করা ছিল মহান নেতার চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট। সৃষ্টিশীল মানসিকতার মহান নেতা স্বাধীনতা পূর্ববর্তীকালেই প্রতিষ্ঠা করেন এফডিসি। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ ব্যাংক এবং নিজের পুরস্কার পাওয়া সম্পদ দিয়ে ব্যাংকের মূলধন সৃষ্টি করেন। জাতিসংঘে বাংলায় বক্তৃতা দেওয়ার প্রচলন, বিডিআর বাহিনী প্রতিষ্ঠা, সংসদ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, ৩৫ হাজার প্রাথমিক স্কুল প্রতিষ্ঠা সহ নানাবিধ উন্নয়নমূলক কাজ করে যান নিরলসভাবে। চরমভাবে মোকাবেলা করেন ৭৪ এর দুর্ভিক্ষ। ১৯৭২ সালে ভারতীয় সৈন্যকে অপসরণের মত দুঃসাহসিক কাজ তিনি করে বিশ্বে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন।
এ বছরেই তিনি সমুদ্র সীমা বেদখলের বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডস এর স্থায়ী সালিশি আদালতে নালিশী মামলা দায়ের করেন। এখানেই শেষ নয় ১৯৭৪ সালের ১৬ই মে দিল্লীতে স্থল সীমান্ত চুক্তিতে সই করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের পক্ষে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। দেশ যখন টালমাটাল। চারিদিকে বিদ্ধস্থ, হাহাকার, চরমপন্থিদের উন্থান সবকিছু শক্তহাতে সামাল দিয়ে শুন্য দেশেকে নিয়ে যাচ্ছিলেন এক সম্ভাবনার পথে ঠিক সেই মুহুর্তে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার মহান কারিগর, বাংলাদেশের স্থপতি, স্বাধীন দেশের রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। এরপর এসেছে অনেককেই কাল ক্ষেপন করেছেন নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থে। মুক্তিযোদ্ধাদেরকে পাশ কাটিয়ে, হত্যা করে রাজাকারদের নিয়ে গঠন করেছেন মন্ত্রি সভা। সাগর সীমানার সমাধান না করে, ছিটমহল সমস্যার সমাধান না করে কেউ কেউ সময় নষ্ট করে, অর্থ নষ্ট করে খাল কাটার মাধ্যমে নিজেকে অশিক্ষিত, মুর্খ জনগণকে বোঝাতে চেয়েছেন তিনি মাটির মানুষ।
কিন্ত লজ্জা এবং দুঃখের বিষয় তিনি মাটির মানুষের সম্পদ সমুদ্র সীমানার মামলা নিয়ে কখনও তদবির করেননি, হাটেননি মামলা নিষ্পত্তির পথে। তাহলে আপনি কি বলবেন তিনি ছিলেন দেশপ্রেমিক রাষ্ট্র নায়ক? তিনি নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত ছিটমহল নিয়ে কখনও কি আলোচনা করেছেন ভারত সরকারের সাথে? করেননি। কারণ করে ফেললে তার পিছনে হয়তো কেউ আর ছুটবে না। অথচ এক শ্রেণীর জনগগণ প্রশংসায় বিভোর ছিলেন সে সময়। এরপর এসেছেন আরেক জেনারেল একই পথে এসে সমুদ্র সীমা, এবং ছিট মহল নিয়ে সমাধান করাতো দুরে থাক নারী নিয়ে আর বিয়ে ঘটিত দৃশ্য চিত্রায়ন করতে করতে কাটিয়ে দিয়েছেন দীর্ঘ নয় বছর। এরপর আসলেন ভাগ্যক্রমে জনৈক প্রেসিডেন্টের স্ত্রী।
তিনিও সুদীর্ঘ ১০টি বছর পার করেছেন মেকাপ আর জর্জেট শাড়ীতে কিন্তু ভুলেও কখনও দেশ জাতির কথা ভেবে সমুদ্র সীমানা এবং ছিটমহল নিয়ে কোন কাজ করেননি। তিনি নাকি দেশ নেত্রী কিন্তু দেশের সম্পদ হয়ে আছে বেহাত সে ব্যাপারে ১০ টি বছরের মধ্যে একবারও সে বিষয়ে কোন কথা বলেননি। একেই কি বলে দেশ নেত্রী? আরেকজন নিজে নিজে খেতাব দিলেন ‘পল্লী বন্ধু’ কিন্তু তিনি কি ছিটমহলের চাষীদের কথা কি কখনও ভেবেছেন নাকি ছিটমহল সমস্যা সমাধান করেছেন? তিনিও করেননি অগ্রজদের পথ অনুসরণ করে। তাহলে কি বোঝা যায় না রাষ্ট্র প্রধান হলেও তারা দেশ প্রেমিক নয়। দেশের মাটি দেশের সম্পদ যিনি রক্ষা করতে পারেন না তিনি কীভাবে হলেন এ দেশের দেশপ্রেমিক রাষ্ট্র নায়ক।
পরিশেষে আমাদের সকল আশা পূরণ করতে সক্ষম হলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সর্ব প্রথম জয় করলেন সমুদ্র সীমা। বিগত ৭ই জুলাই ২০১৪ তারিখে নেদারল্যান্ডসের স্থায়ী সালিশী আদালত হেগের সালিশী আদালত সমুদ্র সীমার রায় দেন বাংলাদেশের পক্ষে। সে হিসেবে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমানার পরিমান দাঁড়ালো ১লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিঃ মিঃ। বিরোধপূর্ণ এলাকা ছিল ২৫,৬০২ বঃকিঃমিটার।
রায়ের পর সবাংলাদেশে পায়- ১৯,৪৬৭ বঃ কিঃ মিটার। ভারত পায়-৬,১৩৫ বঃ কিঃ মিটার। মামলা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শেষ করে আদায় করে আনলেন তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছিটমহলের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন বঙ্গবন্ধু, শেষ করলেন তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা। দেশ দরদী হতে হলে , রাষ্ট্র নায়ক হতে হলে এমনই হতে হয়। ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।