দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর স্বাধীন হলো দেশ। জন্ম হলো বাংলাদেশ। কে হবে দেশের নেতা? কারা চালাবে দেশে? কীভাবে চলবে দেশ? কি হবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ? বাংলাদেশ কৌতূহলের শেষ ছিল না বিশ্বের বিভিন্ন দেশের। বিশ্ব গণমাধ্যমে উঠে এসেছিল এমনই কিছু কৌতূহলের চিত্র। বাংলাদেশের মতো বিশ্ব গণমাধ্যমেরও আগ্রহের জায়গায় ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সাধারণ পরিবারে জন্ম নেওয়া মুজিব কি করে হয়ে উঠলেন অবিসংবাদিত নেতা। এ নিয়ে দি অবজারভারে প্রতিবেদন করেছিলেন সাংবাদিক সিরিল ডান। ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ লন্ডনের দি অবজারভারে প্রকাশিত হয় এই প্রতিবেদন।
প্রতিবেদনের শুরুতেই সিরিল বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক সুবিধাবাদী নন বলে উল্লেখ্য করে লেখেন, যদিও আজকের চূড়ান্ত নাটকীয় অবস্থানে পৌঁছুতে জীবনের ২০ বছরের বেশি সময় লেগেছে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের উপনিবেশ হিসেবে ব্যবহৃত নিজ মাতৃভূমি পূর্ব পাকিস্তানকে মুক্ত করাটা শেখ মুজিবুর রহমানের বরাবরের লক্ষ্য ছিল। তার বিরুদ্ধে যা-ই কিছু বলা হোক না কেন, এটা সত্য যে তিনি রাজনৈতিক সুবিধাবাদী নন।
প্রতিবেদনে তিনি শেখ মুজিবের সাহসিকতার পরিচয় তুলে ধরেন লিখেন, ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে শেখ মুজিব হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাহসী দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে আইয়ুব খানের কাছে রাজনীতি না করার মুচলেকা দিতে অস্বীকার করেন। অথচ সে সময় পাকিস্তানের অধিকাংশ রাজনীতিকই ৫ বছর রাজনীতিতে জড়িত না হওয়ার ব্যাপারে আইয়ুব খানের কাছে মুচলেকা দিয়েছিলেন।
তিনি আরও লেখেন, আইয়ুব শাহীর নৃশংসতম স্বৈরশাসনের ভয়ে সে সময় সারা দেশ চুপ থাকলেও শেখ মুজিব অসীম সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেন। সারা পূর্ব পাকিস্তানজুড়ে সফর করে তিনি একের পর এক জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়ে বেড়তে শুরু করেন।
শেখ মুজিব নিজের দেশের মানুষের ওপর নিপীড়ন ও নির্যাতনের কথা বলতে কোনো রকম দ্বিধা বোধ করতেন না এবং বাংলার মানুষ যে তাকে সমর্থন করে সে বিষয়ে বঙ্গবন্ধু আত্মবিশ্বাসী ছিলেন বলেও সিরিল তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন। ৬৬ এর ছয় দফা থেকে শুরু করে আইয়ুব খানের পতন ও জেনারেল ইয়াহিয়ার সঙ্গে স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে সিরিল তার প্রতিবেদনে লেখেন, এত সব নাটকীয় পটভূমি সত্ত্বেও শেখ মুজিবকে কোনোভাবেই গোঁয়ার বলা যাবে না। সিরিলের প্রতিবেদনে বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার মুগ্ধতার কিছুটা আঁচ পাওয়া যায়। যেমন তিনি লিখেছেন, …বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ করার সময় তাকে সুদৃশ্য উইলসন পাইপে তামাক টানতে দেখলে বর্তমান ব্রিটিশ লেবার পার্টির যেকোনো নেতার চেয়ে বেশি চমকপ্রদ মনে হয়। প্রতিবেদনের শেষে শেখ মুজিবুর রহমান একজন সচেতন রাজনৈতিক নেতা হবেন বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন সিরিল।