বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে বাঁচানো সেই মেজর


১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করার পরও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবার ঢাকাতেই পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গৃহবন্দি অবস্থায় ছিল। তাদের উদ্ধারের জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর যে দলটিকে পাঠানো হয় তার নেতৃত্বে ছিলেন ভারতীয় মেজর অশোক তারা।
এই কাজের স্বীকৃতি হিসেবে সেনাবাহিনীর সাবেক এই কর্মকর্তাকে  বিশেষ সম্মাননা দিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারত সফররত শেখ হাসিনা সাতজন ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তাকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করেছেন। তাদেরই একজন মেজর অশোক তারা।

১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর মেজর অশোক তারা ছিলেন ঢাকা বিমানবন্দরে। তখন তিনি ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক তরুণ অফিসার। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করলেও ঢাকার অনেক অংশ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল। ঢাকার ধানমণ্ডির বাড়িতে তখনও কার্যত গৃহবন্দি ছিল বঙ্গবন্ধুর পরিবার। তাদের পাহারা দিচ্ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর একটি ইউনিট।

অশোক তারার ডাক পড়ল তাদের উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য। এ অভিযান চালানোর কিছুদিন আগেই 'গঙ্গাসাগর' যুদ্ধে অবদানের জন্য ২৯ বছর বয়সী সেনা কর্মকর্তা 'বীর চক্র' সম্মাননা পেয়েছিলেন।

অশোক তারা মাত্র তিনজন সেনা নিয়ে বুদ্ধিমত্তার গুণে কোনো রক্তপাত ছাড়াই বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে মুক্ত করেছিলেন। সেই ঘটনার ৪৬ বছর পর শনিবার (৮ এপ্রিল) মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সেনাদের অবদানের জন্য আয়োজিত সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে অশোক তারার বীরত্বের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি।

ওই সম্মাননা অনুষ্ঠানের পর অশোক তারা বলেন, 'শেখ হাসিনা আমাকে ও আমার স্ত্রী আভাকে দেখে খুব খুশি হয়েছেন। কিভাবে আমি একাই তাকে ও তার পরিবারকে কোনো অস্ত্র ছাড়াই উদ্ধার করেছিলাম, তিনি তা নরেন্দ্র মোদিকে বলেছেন। '

সম্মাননা প্রাপ্তদের মধ্যে অশোক তারার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সম্পর্কটা ভিন্ন। তিনি বলেন, 'বঙ্গবন্ধুর ধানমণ্ডির বাসায় যাওয়ার সময় অনেক মানুষের মরদেহ দেখতে পেয়েছেন। ভীতিকর পরিস্থিতিতে তিনি সেখানে পৌঁছালে পাকিস্তানি সেনারা তার দিকে মেশিন গান তাক করে রাখেন। তার অস্ত্রটিও জমা দিতে হয়। তাকে সতর্ক করে বলা হয়, কাছে আসলে গুলি করা হবে। তিনি হিন্দি-পাঞ্জাবি মিশ্রিত ভাষায় পাকিস্তানি সেনাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। '

অশোক আরও বলেন, 'ধানমণ্ডিতে অবস্থানরত ওই পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সেনাবাহিনীল কর্মকর্তাদের যোগাযোগ ছিল না। তাই পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের কথাও তারা জানতো না। আমি তাদের বোঝানোর চেষ্টা করি যে, ঢাকার পতন হয়েছে, আর সেই সঙ্গে যুদ্ধও শেষ হয়ে গেছে। তখন কয়েকটি ভারতীয় হেলিকপ্টার আকাশে উড়ছিল। শেষ পর্যন্ত আমি তাদের আশ্বস্ত করতে সক্ষম হই, তারা অক্ষত শরীরে নিজেদের পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারবেন। এরপর সমাপ্তি ঘটে ভীতিকর অবস্থার। '

মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনী সরাসরি অংশগ্রহণ করে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে। এতে ৩৮৪৩ জন ভারতীয় সেনা নিহত হন। ২০১২ সালে অশোক তারাকে 'ফ্রেন্ড অব বাংলাদেশ' পদক প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৬৩ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন অশোক তারা। ১৯৯৪ সালে কর্নেল হিসেবে অবসরে যান তিনি।

সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া

SUMMARY

424-1.jpg