বঙ্গবন্ধুকে হত্যা এক কলঙ্কময় অধ্যায়


শোকাবহ আগস্ট মাস। অতি করুণ স্মৃতিবিজড়িত এ মাসে বাংলাদেশের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে সাড়ে সাত কোটি মানুষের সংগ্রাম-সাধনার মধ্য দিয়ে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের গোড়াপত্তন ঘটে। অবশ্য বঙ্গবন্ধু আজীবন এমনই একটি গণতান্ত্রিক প্রগতিবাদী ও অসাম্প্রদায়িক সমাজ বিনির্মাণের জন্য অকুতোভয়ে সংগ্রাম করে গেছেন। যে সমাজে কোনো হিংসা-ঘৃণা-ভয়, দুর্নীতি-অন্যায়-বৈষম্য কিছুই থাকবে না। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রেও তিনি ওই চেতনার প্রতিফলন ঘটিয়ে একটি ধর্মনিরপেক্ষ, সমাজতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রত্যয়দৃঢ় ভূমিকা নেন। বঙ্গবন্ধু তার লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তাই সর্ব প্রথই জাতিকে একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান উপহার দেয়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। সেই সংবিধানের মধ্য দিয়েই বঙ্গবন্ধু এবং তার সরকারের পথচলার দিক-নির্দেশনা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদভিত্তিক গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য অর্থনীতির ক্ষেত্রে জনকল্যাণাভিসারী সমাজতান্ত্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তিনি। ঔপনিবেশিক আমলাতন্ত্রের স্থলে একটি গণমুখী শাসন কাঠামো তৈরির জন্য বঙ্গবন্ধু যাবতীয় উদ্যোগ ও আয়োজন সম্পন্ন করেন। বাঙ্গালির সংস্কৃতি, কৃষ্টি, সভ্যতা ও ঐতিহ্য সর্বত্র উচ্চকিত করে মেলে ধরার জন্য তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন গড়ে তোলেন, তেমনই ইসলাম ধর্মের অসাম্প্রদায়িক চেতনার ক্ষেত্রেও ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেন। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী অপশক্তি এবং উগ্রবাদী কিছু বিশৃঙ্খলগোষ্ঠী আমাদের অর্জিত সাফল্যকে নস্যাৎ করার হীন চক্রান্তে মেতে ওঠে। সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীদের হত্যা, থানা লুট, গুদামসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানায় অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায়। এ অন্তর্ঘাতমূলক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু বলিষ্ঠ ভূমিকা গ্রহণ করলেও দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারী ও তাদের এদেশীয় চর বঙ্গবন্ধুর প্রশাসনকে নানাভাবে অস্থির করে তোলে। সেদিনও অসৎ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের আকাশচুম্বি স্ফীতি ঘটিয়ে এবং দেশে খাদ্যসংকট সৃষ্টির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে বিপন্ন করতে উদ্যত হয়। এ ধরনের এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় বঙ্গবন্ধু দল-মত নির্বিশেষে দেশের সকলকে নিয়ে নতুন ধাঁচের সংগ্রামের সূচনা করেন। কিন্তু গণমানুষের নয়নের মণি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো দেশদরদি, নির্ভীক, অসামান্য ব্যক্তিত্বশালী নেতাকে উৎখাতের জন্য নির্মম হত্যাকাণ্ডের জঘন্য পথ বেছে নেয় কুচক্রীরা। তারা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালো রাতে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করে। পৃথিবীর ইতিহাসে সৃষ্টি করে এক নতুন নজির এবং অতি কলঙ্কময় এক অধ্যায়ের।

SUMMARY

402-1.jpg