মহাত্মা ও বঙ্গবন্ধু: শান্তি ও সংগ্রামের দুই আদশর্ পুরুষ

মোনায়েম সরকার   
বঙ্গবন্ধু ও মহাত্মা এই শব্দ দুটোর সঙ্গে মিশে আছে মানুষের ভালোবাসা, ভক্তি ও শ্রদ্ধা। আজ পৃথিবী হানাহানির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, বিশেষ করে বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান উপমহাদেশে মহাত্মা গান্ধী কিংবা বঙ্গবন্ধু যুগে যুগে জন্মান না। আমরা ক্রমেই পারমাণবিক সহিংসার দিকে যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি, তা কখনই ভালো ফল বয়ে আনতে পারে না। বস্তুত আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্নেই পারমাণবিক অস্ত্র পরিহার করা উচিত।
মহাত্মা ও বঙ্গবন্ধু: শান্তি ও সংগ্রামের দুই আদশর্ পুরুষ
মহাত্মা গান্ধী এবং বঙ্গবন্ধুকে তুলনা করার জন্য আমার এ লেখার অবতারণা নয়। আজ স্বাথার্ন্ধতা আর সহিংসতায় পৃথিবীর মানুষ যে অবস্থানে এসে দঁাড়িয়েছে তাতে আমরা এই মহাপ্রাণদের আদশের্র প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। আমাদের প্রতিবেশী ও দূরবতীর্ দেশগুলো ক্রমাগত সহিংসতায় মেতে উঠেছে। ধমীর্য় মৌলবাদ ধ্বংস করে দিচ্ছে মানুষের সৃজনশীলতা, শুরু হয়েছে পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতার নিলর্জ্জ মাতামাতি। এ অবস্থায় আমার বুঝতে অসুবিধে হয় না যে আমরা আমাদের পরিবেশ প্রতিবেশ সব কিছু মিলিয়ে ক্রমাগত অবনমনের দিকে যাচ্ছি। এই অবনমন আমাদের সামাজিক, রাজনৈতিক সবোর্পরি আত্মিক। আমরা আমাদের আত্মাকে কলুষিত করি, ক্ষমতার দ্ব›েদ্ব লিপ্ত হই, অনাবশ্যক আত্মম্ভরিতা আর স্বাথর্পরতার পরাকাষ্ঠে বলি হই। মানবতা আমাদের অন্তর থেকে নিবাির্সত প্রায়। কথায় কথায় পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের প্রতিযোগিতায় নেমে নিজেদের শক্তিমত্তা জাহির করতে তৎপর। আমাদের মানবিক অধঃগতির এই অবস্থায় মহাত্মা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধুর মতো মহান নেতার প্রয়োজন, যারা আমাদের সামনে এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন যেন তাদের কথায় বিশ্বাস করে আমরা শান্তি ও স্বস্তি ফিরে পেতে পারি।

মহাত্মা গান্ধী ছিলেন অহিংসার মন্ত্রপুত মানুষ। তিনি বলতেন নিরস্ত্র প্রতিরোধ হচ্ছে ব্যক্তিগত ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে অধিকার সংরক্ষণের একটি কৌশল। এটি সশস্ত্র প্রতিরোধের বিপরীত পদ্ধতি। যে দৃঢ়তার বলে তিনি সমগ্র পৃথিবীকে সচেতন করেছিলেন, সেই প্রচÐ শক্তি সমস্ত স্থবিরতার জগদ্দল পাথর নাড়িয়ে দিয়েছিল। তার উজ্জ্বল আবিভাের্বর আগে ভারতবষর্ ছিল ভয়ে আচ্ছন্ন। ভারতবাসীর মজ্জায় মজ্জায় ছিল নিজেদের ওপর আস্থাহীনতার দৈন্য।

বিলেতের ব্যারিস্টার হওয়া সত্তে¡ও রেলের প্রথম শ্রেণির কামরা থেকে তাকে ফেলে দিয়েছিল একজন সাহেব। সেদিন তিনি কি ভেবেছিলেন তা কখনো জানা যাবে না। কিন্তু লক্ষ্য করার বিষয় যে তিনি দেশে প্রত্যাবতর্ন না করে দক্ষিণ আফ্রিকায় চলে গেলেন। বণর্ বৈষম্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত শ্বেতাঙ্গদের শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে গান্ধী সাহসের সঙ্গে তার অহিংস সত্যাগ্রহ পরিচালনা করেন। তার সংগ্রাম ভারতীয় উপমহাদেশ ব্যাপকভাবে আলোড়িত করেছিল। এ বিষয়টি তার মনে আত্মপ্রত্যয় জাগায়। তিনি দেশে প্রত্যাবতর্ন করে স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন পবের্ অবিচল আস্থা নিয়ে তার মতাদশর্ পরিচালনা করেছেন। তিনি দেশের মঙ্গলের জন্য আন্দোলনকে গ্রামমুখী করার সিদ্ধান্ত দেন। তিনি সুতোকাটার ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি মনে করতেন এতে নারী-পুরুষের জীবিকার সংস্থান হবে। তানজানিয়ার ড. জুলিয়াস নায়ারে গান্ধীজির গ্রাম উন্নয়নের মডেলে ‘উজামা’ গ্রাম গড়ে তুলেছেন। জাম্বিয়ার ড. কেনেথ কাউন্ডাও গান্ধীর অহিংস প্রতিরোধ ও সত্যাগ্রহের ধারণা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। আজকের বিশ্বে যারা নিজেদের বিবেকের ভ‚মিকায় দেখতে ভালোবাসে সেই আমেরিকানরাও হিংসাদ্বেষের বলয় থেকে বেরিয়ে আসার জন্য এই ক্ষীণদেহী মহাত্মা মানুষটির কাছে কৃতজ্ঞ ও ঋণী। সাদা কালোর দ্ব›েদ্ব গান্ধীর দশর্ন তাদের মানসিক শক্তি জুগিয়েছিল। আমেরিকান কালোদের মহান নেতা মাটির্ন লুথার কিং বহুবার গান্ধীর কাছে ঋণ স্বীকার করেছিলেন। নেলসন ম্যান্ডেলা বহুবার প্রকাশ্যে গান্ধীজির কাছে ঋণ স্বীকার করেছেন। বিপ্লবী আন্দোলনকে তিনি সমথর্ন করেননি। তিনি বিশ্বাস করতেন বিপ্লবী আন্দোলন সরকারি দমন নীতির মুখে ভেঙে পড়বে এবং জাতীয় আন্দোলনকে শেষ পযর্ন্ত দুবর্ল করবে। তিনি মনে করতেন নতুন সমাজ গড়ার জন্য অহিংসার দরকার। গান্ধীজি হিন্দু, মুসলমান সম্প্রীতির স্থায়ী সম্পকর্ গড়ে তোলার পক্ষপাতী ছিলেন। খিলাফত আন্দোলনে মুসলমানদের প্রতি তার ভালোবাসা প্রতিফলিত হয়। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন হিন্দু মুসলমান সম্পকের্র উন্নয়ন না হলে দেশ স্বাধীনতা লাভ করতে পারবে না। জীবনের শেষ দিন পযর্ন্ত তিনি এ সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। এ কারণে তাকে বহু মূল্য দিতে হয়েছে। অস্পৃশ্যতা বজর্ন গান্ধীর রাজনৈতিক জীবনের এক বিশেষ দিক। তিনি দৃঢ়ভাবে হিন্দুসমাজের বাধা উপেক্ষা করে অস্পৃশ্যদের পক্ষ অবলম্বন করেছিলেন। তিনি হিন্দু, মুসলমানের ঐক্য চেয়েছিলেন কিন্তু সে ঐক্য ঘটেনি, হিংসা থেকে মানুষকে সরিয়ে নিতে চেয়েছিলেন কিন্তু হিংসা এখন ভারতীয় সমাজের সবর্ত্র ছড়িয়ে গেছে। ভারতের মানুষ তার অহিংসার আদশর্ থেকে সরে গেছে। গান্ধীজি মানুষের জীবনাচরণ থেকে সাতটি সামাজিক পাপকে চিহ্নিত করেছেন। নীতি বজির্ত রাজনীতি, কমির্বহীন সম্পদ, বিবেকশূন্য আনন্দ, চরিত্রবিহীন জ্ঞান, নৈতিকতা বজির্ত বাণিজ্য, মানবতাবিহীন বিজ্ঞান, ত্যাগ বিনা প্রাথর্নাÑ এই সাতটি সামাজিক পাপকে তিনি মানুষের শত্রæ জ্ঞান করতেন। আজকে আমরা আমাদের চারপাশে অসংখ্য মানুষের মধ্যে এই পাপগুলোর প্রতিফলন দেখতে পাই। দেখতে পাই রাজনৈতিক নেতাদের নীতি জ্ঞানহীন রাজনীতি। কথায় কথায় দেশকে ঠেলে দিচ্ছেন ধ্বংসের দিকে।

১৯৪৭-এর পরের কালকে গান্ধীর জীবনের শেষ অধ্যায় বলে চিহ্নিত করা যায়। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় তিনি ছুটে গেছেন সবর্ত্র। লডর্ মাউন্ট ব্যাটেন একে বলেছেন মাই ওয়ান ম্যান বাউন্ডারি ফোসর্। বেলেঘাটায় অবস্থান করে সোহরাওয়াদীের্ক সঙ্গে নিয়ে তিনি দাঙ্গা বন্ধের জন্য জীবনপণ করলেন। এই দাঙ্গা চলেছিল স্বাধীনতার আগের দিন পযর্ন্ত। তার এ অনশনের বিরুদ্ধে হিন্দু সমাজের একটা বড় অংশের তীব্র অসন্তোষ ছিল। কলকাতার পর দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ল নোয়াখালীতে। তিনি নোয়াখালীতে ছুটে গেলেন। উন্মত্ততা বন্ধের জন্য ছুটে গেলেন নোয়াখালীর পর বিহারে। গান্ধী বিহার থেকে দিল্লিতে এলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সদার্র প্যাটেল এ সময় হিন্দু সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর সমথর্ক হলেন এবং পাকিস্তানকে ৫৫ কোটি টাকা দেয়ার পূবর্শতর্ অস্বীকার করলেন। অনশনের সময় গান্ধীজি প্যাটেলকে বলেছিলেন তুমি সেই সদার্র নও যাকে আমি চিনতাম। ইতোমধ্যে গান্ধী হত্যার ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে গিয়েছিল। আধুনিক গবেষণা থেকে জানা গেছে সাভারকরের শিষ্য এবং ভক্ত, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সভ্য নাথুরাম গডসে গান্ধী হত্যার দায়িত্ব নিয়ে দিল্লিতে এসেছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সদার্র প্যাটেল এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। গান্ধীজি ভারতবষের্র স্বাধীনতা আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা। তবে যে অথের্ এই ‘নেতা’ শব্দটি ব্যবহৃত হয় গান্ধী ঠিক সেরকম নেতা ছিলেন না। নেতার চাইতে অবতার শব্দটিই তাকে বেশি মানায়। 

গান্ধীজিকে যেমন মহাত্মা উপাধি দেয়া হয়েছে, শেখ মুজিবকেও জনগণ ভালোবেসে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভ‚ষিত করেছে। তিনি একটা জাতিকে মুক্ত করেছেন সামাজিক, রাজনৈতিক, অথৈর্নতিক ও সাংস্কৃতিক শোষণের নাগপাশ থেকে। বাঙালির হাজার বছরের সাধনার সফল রূপকার বঙ্গবন্ধু। শেখ মুজিবের বিদ্রোহী সত্তার উন্মেষ কোনো আকস্মিক ঘটনার ফলশ্রæতি নয়। তার শৈশব ও কৈশোর এমন এক সময়ে অতিবাহিত হয়েছে যখন বাংলার আকাশে-বাতাসে অসন্তোষের অগ্নিধূমায়িত হয়ে উঠেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন তার আবিভার্ব। তাই পরিণত বয়সে এই বিদ্রোহের লক্ষণগুলো স্বতঃস্ফ‚তর্ভাবেই জাগ্রত হয়েছে। তবে এই বিদ্রোহের ছিল একটি স্বতন্ত্ররূপ। এ বিদ্রোহে কোনো হঠকারিতা ছিল না, ছিল না ধ্বংসাত্মক মনোভাবের প্রতিফলন। বুদ্ধদেব, গান্ধীজি, বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ যে প্রক্রিয়ায় বিদ্রোহ করে গিয়েছেন সেই ঐতিহ্যই বঙ্গবন্ধুকে অনুপ্রাণিত করেছে। অসহযোগ আন্দোলনই শেখ মুজিবের বিদ্রোহী সত্তার প্রধান বৈশিষ্ট্য। তিনি সব সাম্প্রদায়িকতা ও ধমার্ন্ধতাকে মনে-প্রাণে ঘৃণা করতেন। বস্তুত তিনি সাম্রাজ্যবাদবিরোধী অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মূতর্প্রতীক। বাংলার আপামর জনসাধারণের আশা-আকাক্সক্ষা, বেদনা-বিক্ষোভ সবোর্পরি আবহমান বাংলার বৈশিষ্ট্যকে তিনি নিজের জীবনে আত্মস্থ করেছেন। তার কণ্ঠে বাঙালি জাতির সঠিক মুক্তির আকাক্সক্ষা প্রতিধ্বনিত হয়েছে। উপমহাদেশের রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর আবিভার্বও মহাত্মা গান্ধীর মতো। স্বাধীন পাকিস্তানের পূবর্ বাংলার মানুষের জীবন হাহাকার আর বঞ্চনাপূণর্ ছিল। এই অবস্থা থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্ত করার জন্য সুদীঘর্ ২৪ বছর নিরলস সংগ্রাম করেছেন বঙ্গবন্ধু। তার এই সুদীঘর্ সংগ্রামের ভেতর আমরা কেবল অহিংসার জ্যোতি বিচ্ছুরিত হতে দেখেছি। পাকিস্তানি শাসকদের শোষণমাত্রা ছাড়িয়ে গেল যখন বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিলেন। অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে বঙ্গবন্ধু সামরিক সরকারকে অবিলম্বে গণপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা সমপর্ণ করে ব্যারাকে ফিরে যাওয়ার আহŸান জানান। তিনি বলিষ্ঠ কণ্ঠে ঘোষণা করেন, বাংলার গণপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে ব্যারাকে না যাওয়া পযর্ন্ত সরকারের সঙ্গে স্বাধীনতাকামী বাংলার মানুষ আর সহযোগিতা করবে না। কোনো কর-খাজনা দেবে না। এই জনসভায় লাখ লাখ মানুষকে বঙ্গবন্ধু সবার্ত্মক অহিংস অসহযোগের আহŸান জানান। তার এ আহŸানে সাড়া দেয় বাংলার মানুষ। বস্তুত বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনের ডাক সমগ্র বাঙালি জাতির বিবেককে জাগ্রত করে। মোটকথা জাতিকে সামাজিক, অথৈর্নতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধমীর্য় শোষণের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য তার এ সংগ্রাম। বাঙালি ও বাংলাদেশকে সবর্প্রকার শোষণের হাত থেকে মুক্ত করার স্বপ্ন ছিল তার আমৃত্যু। বঙ্গবন্ধু তার সংগ্রামী জীবনে দুঃখ, কষ্ট ও নিযার্তনকে নিত্যসঙ্গী হিসেবেই গ্রহণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর অহিংসনীতি পরবতীর্কালে নিজের জন্য বিপযর্য় ডেকে আনে। মহাত্মা গান্ধীর মতো তাকেও প্রাণ দিতে হয় স্বজাতির হাতে। পাকিস্তানপন্থী লোকজনদের তিনি তার স্বভাবসুলভ উদারতায় ক্ষমা করে দেন। তিনি মৃত্যুর পূবর্ দিন পযর্ন্ত স্বীয় আদশের্ অটল থাকেন। রাজনীতিতে হত্যা কোনো নতুন ঘটনা নয়। কিন্তু যে-সব মহামানব সারাজীবন দেশের জন্য, আদশের্র জন্য নিজেদের বিপন্ন করেছেন সেই মহাপুরুষদের প্রাপ্য স্বজাতির হাতে মৃত্যু নয়। অথচ ইতিহাসের নিমর্ম পরিহাস এই মহৎপ্রাণ ব্যক্তিদের জীবনে এ ধরনের পুরস্কারপ্রাপ্তিও ঘটে। বিবেক যখন স্তব্ধ আত্ম তখন এমনভাবেই কলুষিত হয়। বিশ্ব-ইতিহাসের জুলিয়াস সিজার, আব্রাহাম লিঙ্কন, ট্রটস্কি, মাটির্ন লুথার কিং, কেনেডি, ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধীর মতো মহৎপ্রাণ ব্যক্তিরা আততায়ীর হাতে প্রাণ দিয়েছেন।

কিন্তু বঙ্গবন্ধু, গান্ধীজির হত্যার খবরে মুহূতের্র জন্য হলেও সভ্যতার ইতিহাস থমকে দঁাড়ায়। মহাত্মা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধু ইতিহাসে নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করেছিলেন। গান্ধীজি বিশ্বাস করতেন হিংসার পথে মানুষের মুক্তি আসতে পারে না। অন্যায় আর নিযার্তনের বিরুদ্ধে তার প্রতিবাদের ভাষা ছিল প্রচÐ শক্তিমান। মানুষে মানুষে ভেদাভেদকে তিনি অস্বীকার করতেন। বাতিল করে দিয়েছিলেন শ্রেষ্ঠ নিকৃষ্টের ফ্যাসিবাদী ধারণা। শেখ মুজিব ছিলেন মহাত্মা গান্ধীর মতো অহিংস ধারার রাজনীতিবিদ। আজকের পৃথিবীতে যেখানে হিংসা, দ্বেষ আর ঘৃণার রাহুগ্রাস, সেখানে তাদের দশর্নকে ইউটোপিয়া মনে হতে পারে।

বঙ্গবন্ধু ও মহাত্মা এই শব্দ দুটোর সঙ্গে মিশে আছে মানুষের ভালোবাসা, ভক্তি ও শ্রদ্ধা। আজ পৃথিবী হানাহানির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, বিশেষ করে বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান উপমহাদেশে মহাত্মা গান্ধী কিংবা বঙ্গবন্ধু যুগে যুগে জন্মান না। আমরা ক্রমেই পারমাণবিক সহিংসার দিকে যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি, তা কখনই ভালো ফল বয়ে আনতে পারে না। বস্তুত আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্নেই পারমাণবিক অস্ত্র পরিহার করা উচিত। 

সেদিন হয়তো খুব বেশি দূরে নয়। যেদিন পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্ফোরণে মুহূতের্ তুলোর মতো উড়ে যাবে গোটা পৃথিবী। নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে প্রাণী মানুষের অস্তিত্ব। আজ শুধু ভারতীয় উপমহাদেশেই নয়, বিশ্ব রাজনীতিতে মহাত্মা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধুর মতো প্রজ্ঞাবান নেতৃত্বের আবিভার্বই আমাদের সাম্প্রদায়িকতা ও পারমাণবিক সহিংসতা থেকে রক্ষা করতে পারে।

মোনায়েম সরকার : রাজনীতিবিদ ও কলামিস্ট

SUMMARY

388-1.jpg