গৌতম কুমার রায়
বাবা শেখ লুত্ফর রহমান, মা শাহেদা বেগম। তাদের ঘরে জন্ম নিল সময়ের দিকপাল এক সাহসী পুরুষ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যিনি বাঙালির নবজাগরণের প্রাণপুরুষ। ব্রিটিশ থেকে ভারত কিংবা পাকিস্তান, অতঃপর পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ। ইতিহাস পড়ে অনেক কারণে বিশেষ বিশেষ মানুষের নাম জেনেছিলাম—জিন্নাহ্, মহাত্মা গান্ধী, নেহরু, সর্দার প্যাটেল, মওলানা আবুল কালাম আযাদ, সুভাষ চন্দ্র বসু, শরত্চন্দ্র বসু, সোহরাওয়ার্দী, এ কে ফজলুল হক। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পতনের মধ্যে এ নেতাদের কারো কারো বিবেচনায় ভারত ভেঙেছে। সাম্প্রদায়িক দ্বিজাতিতত্ত্বের সীমানা ডিঙিয়ে মানুষ ও তার অধিকারকে কেটে টুকরো টুকরো করে মনের ব্যবচ্ছেদ করা হয়েছে। এল পাকিস্তান। এবার নাম জানলাম নূরুল আমিন, ইস্কানদার মির্জা, আইয়ুব খান, ভুট্টোর মতো জাঁদরেল কুখ্যাত মানুষদের। আরেকটি নাম বিশ্বদরবার কাঁপিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করল, তিনি হলেন মহীরুহ পুরুষ ও কালজয়ী ব্যক্তিত্ব জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যিনি জুলুমবাজের বিরুদ্ধে সাড়ে সাত কোটি বাঙালির কেবল লাঠিসোটার শক্তিকে সম্বল করে মিত্র বাহিনীর সহযোগিতায় স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে পৃথিবীতে এনে দিলেন একটি মানচিত্র। সে আমার অহংকারের বাংলাদেশ, সে আমার ভালোবাসার বাংলাদেশ।
নামের কারণে, শাসনের কারণে এখনকার বাংলাদেশ ছিল পূর্ব পাকিস্তান। আজকের নিয়ম-নিয়ন্ত্রিকতার বিপরীতে তখন ছিল আর্মি শাসন। যাকে আমরা জংলি রাজার শাসনও বলি বটে। তখন প্রতিবাদ করলে কিংবা সৃজনশীল কাজ করলে অথবা ধর্মীয় কারণেও নাগরিক নিষিদ্ধ হতো। বঙ্গবন্ধু নিষিদ্ধ জীবন কাটিয়েছেন বারবার। কখনো জেলে গিয়ে, কখনো অবরুদ্ধ হয়ে। আমাদের বাংলা ও বাঙালির প্রাণপুরুষ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও নিষিদ্ধ ছিলেন তার নিজের দেশে। তবে তা ছিলেন শুধু শাসক আর শাসনের সাংস্কৃতিক ভীতির কারণে। লিখিত আর মৌখিক ফরমানে। তবে শেখ মুজিব ও রবীন্দ্রনাথ দুজনই নিষিদ্ধ হয়েই বিখ্যাত হয়েছেন। দুজনই কাজ করেছেন বাংলার জন্য, বাঙালির জন্য, সর্বোপরি মানুষের জন্য। একজন পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙেছেন। আরেকজন বাঙালির সৃজনশীল সংস্কৃতিকে তাদের অন্তরে ধারণ করাতে সক্ষম হয়েছেন। মজার বিষয় যেটা, তা হলো মুজিব-রবীন্দ্রনাথ দুজনই বিশ্বসমাদৃত এবং বাঙালিকে তুলে ধরেছেন দেশের আঙিনা ডিঙিয়ে বিশ্ববাসীর কাছে।
১৯৭১ সালে এক অবধারিত ও অনিবার্য কারণে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধটা এল। পাকিস্তানের ২৪ বছরের বৈষম্য আর বঞ্চনার কারণে বাঙালি উপায় খুঁজছিল তাদের রাজনৈতিক মুক্তি পেতে। আমাদের অর্থনীতিকে আমাদের কল্যাণে ব্যবহার না করার যে আকুতি, তা থেকে বাহিত হতে থাকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষিত রস। আরো আনুভূমিক করেছিল। শোষণ আর শাসনে পারদর্শী পাকিস্তানি শাসকদের হিংসা আর বিড়ম্বনা আমাদের দ্রুত সংঘটিত হতে কৌশলী করেছিল। কৌশলের সে স্রোতে নৌকা ভাসিয়ে সে নৌকার হাল ধরেছিলেন বঙ্গবন্ধু। উপেক্ষার জন্য পাকিস্তানের শাসনের ফ্রেম ভেঙে পড়ে। আর আমাদের জয় এগিয়ে আসে। পরিশেষে ১৯৭১ সাল। পৃথিবী থেকে পূর্ব পাকিস্তান নামটা মুছে গিয়ে অভ্যুদয় হয় বাংলাদেশের। এক নতুন মানচিত্রের।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীন হলেও আমাদের স্বাধীনতার আশা মুখব্যক্ত হয়ে পরিশিষ্ট হয়, সেই ১৯৫২ সাল বেয়ে ১৯৫৪, অতঃপর ১৯৬৬ ও ১৯৭১ সাল। ১৯৭১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা ১ মিনিটে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে সম্মিলিত জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘ ... আমি সামনে ভয়ংকর দিন দেখতে পাচ্ছি। আমি সবসময় আপনাদের সাথে নাও থাকতে পারি। মরণের জন্যই মানুষ বেঁচে থাকে। জীবনে বেঁচে থাকাটাই একটা দুর্ঘটনা মাত্র। আমি জানি না আবার কখন আপনাদের সাথে আমার দেখা হবে...।’
১৯৭১ সালের মার্চ। দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের এক ঐতিহাসিক মাস এটা। এ মার্চকে ঘিরে আমাদের যুদ্ধের বারুদ যেমন জ্বলেছে, আবার আমাদের শত্রুরাও জ্বালিয়েছে। তবে এ বারুদের দাহ্য শিখায় শত্রুদের সবকিছু পুড়ে ছারখার হয়েছিল। আমাদের এসেছিল স্বাধীনতা, যা উপহার দিয়েছিল একটি স্বাধীন মানচিত্র। যুদ্ধের ময়দানে মহারাজা ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তবে ১ থেকে ৭ মার্চ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সাক্ষ্যে বলিষ্ঠ নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পালা। যেটি সুচারুরূপে সম্পাদন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।
১ মার্চ: প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বেলা ১টায় রেডিওর এক প্রচারে জাতীয় পরিষদের পূর্বঘোষিত অধিবেশন স্থগিত করলেন। ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরে হইচই পড়ল। কর্মস্থল থেকে সবাই বেরিয়ে এল। ক্রিকেট খেলার মাঠ ছেড়ে ৩০-৪০ হাজার দর্শক বেরিয়ে এল। তাদের মুখে তখন শুধু জয় বাংলার স্লোগান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হোটেল পূর্বাণীতে প্রেস কনফারেন্স ডেকেছিলেন। হোটেলের সামনে লোকে ঠাসা। সবার হাতে লোহার রড আর বাঁশের লাঠি।
২ মার্চ: হরতাল হলো। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ বঙ্গবন্ধু যানবাহন, হাটবাজার, অফিস-আদালত, কলকারখানায় পূর্ণ হরতাল পালনের ডাক দিলে তা সফল হয়েছে।
৩ মার্চ: রাত ১১টায় মাইকে ঢাকায় কারফিউ জারির ঘোষণা এল। ১১০ নম্বর সামরিক আদেশ জারি হলো। খ অঞ্চলের সামরিক আইন প্রশাসক লে. জেনারেল সাহেবজাদা ইয়াকুব খান এ আদেশে দেশের পত্রপত্রিকাগুলোয় পাকিস্তানের সংহতি ও সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী মতামত, ছবি প্রকাশ নিষিদ্ধ করে। তবুও জনতা সারা দিন রাস্তায় মিছিল সমাবেশ করে। আগের রাতে গুলিতে নিহত আট বাঙালির মরদেহ নিয়ে শহর ঘুরিয়ে মিছিল করেছে। পরে মরদেহ শহীদ মিনারে রেখে সমস্বরে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধিকার আদায়ের শপথ নিয়েছে। পল্টন ময়দানে মরদেহ নিয়ে বিশাল জনসমুদ্রে শহীদদের আরাধ্য কাজ করার শপথ নেয়া হলো। শেখ মুজিব অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিলেন। তিনি বললেন, জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা না দেয়া পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি এক পয়সাও ট্যাক্স-খাজনা দেবে না। তিনি সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নিতে বললেন এবং জনতাকে বললেন শান্তিপূর্ণ অসহিংস আন্দোলন চালিয়ে যেতে।
৪ মার্চ: রেডিওতে আগের রাতের আদেশ পুনঃজারি করা হলো। জনতা আবারো কারফিউ ভেঙে মিছিল করেছে। আজও ৬টা-২টা হরতাল হলো।
৫ মার্চ: হরতালে বেতন নেয়ার এবং অতি জরুরি কাজ করার সুবিধার্থে ব্যাংক, অফিস-আদালত বেলা ২টা ৩০ থেকে ৪টা পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশ দেন। রেশন দোকান ওই সময়ে খোলা রাখতে নির্দেশ দেন। তবে ওষুধের দোকান, হাসপাতাল, সংবাদপত্রের গাড়ি, হোটেল, ডাক্তারের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, পানি, বিদ্যুৎ, দমকল, মেথর, আবর্জনার গাড়ি হরতালমুক্ত ঘোষণা করেন।
৬ মার্চ: বেলা ১টা ৫ মিনিটে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন। জাতি তার ভাষণে হতাশ হলো। বাংলা একাডেমিতে বেলা ২টা ৩০ মিনিটে শিল্পীদের জরুরি সভা হলো। সভায় শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের শপথ নেয়া হলো।
৭ মার্চ: ঐতিহাসিক ঢাকার রেসকোর্স ময়দান। ৩০ লাখের মতো জনারণ্যে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘... আমি প্রধান মন্ত্রিত্ব চাই না। আমার দেশের মানুষের অধিকার চাই। আমি পরিষ্কার করে বলে দেবার চাই, আজ থেকে এই বাংলাদেশে কোর্ট-কাচারি, আদালত-ফৌজদারি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে।
গরিবের যাতে কষ্ট না হয়, যাতে আমার মানুষ কষ্ট না করে, সেই জন্য যে সমস্ত অন্যান্য জিনিসগুলো আছে সেগুলোর হরতাল কাল থেকে চলবে না। ২৮ তারিখে কর্মচারীরা যেয়ে বেতন নিয়ে আসবেন। এর পরে যদি বেতন দেওয়া না হয়, আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়, তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সবকিছু—আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি—তোমরা বন্ধ করে দেবে। আমরা ভাতে মারব, আমরা পানিতে মারব। তোমরা আমার ভাই, তোমরা ব্যারাকে থাকো। কেউ তোমাদের কিছু বলবে না। কিন্তু আমার বুকের উপর গুলি চালাবার চেষ্টা করো না। সাত কোটি মানুষকে দাবাইয়া রাখতে পারবা না। আমরা যখন মরতে শিখেছি তখন কেউ আমাদের দাবাতে পারবে না। ...রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ।
এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম,
জয় বাংলা।’
নয় মাস যুদ্ধের পরিশেষ হলো ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। দারুণ চাঞ্চল্য ও উত্তেজনা। মিত্রবাহিনীর অরোরার কাছে শত্রুবাহিনীর জেনারেল নিয়াজি ৯০ হাজার পাকিস্তানি সৈন্যসমেত আত্মসমর্পণ করেন। যে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণে আগুন ছড়িয়েছিল সবখানে, সেই আগুনের পরিসমাপ্তি ঘটল এখানেই। বঙ্গবন্ধুর শাসনের চেয়ে ভাষণে এ দেশের মুক্তিকামী মানুষ বেশি উজ্জীবিত হয়েছিল। আর বিশ্বাসঘাতক ও পরাজিতরা এবং নির্যাতনকারীরা বারবার যূথবদ্ধ হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ও আমাদের আঘাত করেছে। বিশ্বাসঘাতকদের বিরুদ্ধে আমরা তবুও কিন্তু একতাবদ্ধ হতে পারিনি। এই পরাজিত ও বিশ্বাসঘাতক কয়েকজন বাঙালি কুলাঙ্গার বিদেশী চক্রান্তকারীদের সঙ্গে নিয়ে শেখ মুজিবকে বাঁচতে দেয়নি। আমাদের আঘাত করছে এখনো। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর রক্তের কাছে আমাদের ঋণ প্রতিটি ফোঁটায় ফোঁটায়। আমরা বঙ্গবন্ধুর শাসন, ভাষণ ও দেশপ্রেমের ক্রমপুঞ্জিত মহড়া নিয়ে এখনো স্বাধিকার ও স্বাধীনতাকে ধরে রেখেছি। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।
বঙ্গ শব্দটা অতি পুরনো। আমাদের সৃষ্টি ও স্থিতিও সেজন্য পুরনো। সমুদ্রবাহিত নদী অঞ্চলের অতি নিচু এলাকার দ্রাবিড় সভ্যতার মানুষ আমরা। নদীকে আঁকড়ে যে স্থায়ী বসবাসকারী তারাই আমরা, যারা বাঙালি। হাজার বছরের বিবর্তিত বৃহৎ গাঙ্গেয় বদ্বীপ এ বাংলাদেশের মানুষ। ইতিহাসের ক্রাশিং রোলে আমরা রূপায়ণ ও অভিপ্রয়াণের পর আমাদের ভাষা, সাহিত্য, কৃষ্টি, ধর্মীয় বোধ, চিন্তাচেতনা সংমিশ্রণ, সংযোজন, পরিবর্তন ও পরিবর্ধন এবং সমন্বয় সাধন করতে পেরেছি। বহু সংস্কৃতির মিশ্রণ আমাদের বাঙালিপনা। সময় বয়ে সময় এসেছে। কল্যাণের অমৃত বাণী শুনিয়েছেন অনেকে। সনাতন থেকে বৌদ্ধ। বৌদ্ধ থেকে খ্রিস্টান কিংবা মুসলিম আইডিওলজি, যা-ই বলি না কেন, আসলে আচার-আচরণে, ধ্যান-জ্ঞানে, মন ও প্রাণে হাজার বছরে বাঙালি জন্মেছে হাতেগোনা কয়েকজন। আর এই বাঙালির সার্থক ও জাগ্রত রূপকে যিনি রূপায়িত করতে সক্ষম হয়েছিলেন, তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার সর্বশেষ যে উপজীব্য বিষয় আমাদেরকে বিশ্বচলকে এনে দাঁড় করিয়েছে, তা হলো দীর্ঘ নয় মাসের রক্তাক্ত সংগ্রামে অর্জন মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রাপ্ত স্বাধীনতা। আর এ বিজয়ের লালিত বাণীই ৭ মার্চ বাঙালি জাতির স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ।
১৯৭১ থেকে ২০১৯ সাল। ব্যবধান ৪৮ বছর। আমাদের অর্জন আছে। আছে আমাদের বিসর্জন। এখনো সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী নিজের ধর্মকে নিজেই অবমাননা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে হিন্দুপাড়ায় আগুন দেয়, লুট করে। এরা নিজ ধর্মের ঢোল নিজেই বাজিয়ে, নিজের হাতে নিজে তালি বাজিয়ে নিজের বাহবা নিজেই নেয়। আমাদের অর্জন স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুদের বিচার এবং বিচারে তাদের শাস্তি দিতে পেরেছি। আমরা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী। আমরা খেলাধুলায় বিশ্ব জয় করেছি। ২০১৭ সালে আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের অলিখিত ও ঐতিহাসিক ভাষণ ইউনেস্কোর বিচারে ‘মেমোরি অব দি ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টার’ হিসেবে বিশ্বের ১০টি ভাষণের একটি হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। অন্যদের চেয়ে এ ভাষণের তাত্পর্য হলো, একমাত্র মুজিবের ভাষণটি অলিখিত ছিল। এ প্রাপ্তি আমাদের দেশ ও জাতির প্রতিজন গর্বিত অংশীদারের। আমাদের এ অহংকার এখন দেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বদরবারে উপস্থিত হতে পেরেছে। আমাদের কাছে মুজিবের ঋণ দিনে দিনে বাড়ছেই। মুজিব নেই, আমরা তার ব্যাপ্তিকে নিয়ে সামনে এগোতে চাই। কেননা মুজিব মানেই স্বাধীনতা, লাল-সবুজের পতাকা। মুজিব মানেই মহামুক্তি, মুজিব আমাদের জাতির পিতা। কবি ও পণ্ডিত অন্নদা শংকর রায়ের কথায়,
‘যতদিন রবে গৌরী পদ্মা মেঘনা যমুনা বহমান
ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।’