মেহেদী হাসান
বাঙালি জাতির রাজনৈতিক ইতিহাস অন্য যেকোনো জাতির চেয়ে অনেক বেশি সমৃদ্ধ, অর্জনে অনেক বেশি পূর্ণ। শান্তিপ্রিয় বাঙালি তার ভৌগোলিক গুরুত্ব ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে আকৃষ্ট করেছে সারা পৃথিবীকে। দূরপ্রাচ্য, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আফ্রিকা থেকে এসেছে অনেকেই—কেউ বাংলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে, কেউবা ব্যবসার খাতিরে, আবার কেউবা বাঙালির সংস্কৃতিতে মুগ্ধ হয়ে অথবা শিক্ষা অর্জন করতে। বাঙালির সরলতা, অতিথিপরায়ণতাকে দুর্বলতা ভেবে এ দেশবাসীকে তাদের রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে পরাধীনতার শিকলে আবদ্ধ করে রেখেছিল বিদেশী শাসকরা। এরই ধারাবাহিকতায় শুরু হয় শান্তিপ্রিয় সহজ-সরল বাঙালিদের জীবনে বিদেশী পরাধীনতার অভিশপ্ত জীবন। শান্তিপ্রিয় বাঙালি হয়ে ওঠে স্বাধীনতাকামী। একের পর এক যুদ্ধ, আন্দোলন আর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এগিয়ে আসে বহু কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার দাবি। কখনো মাত্স্যন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, নওগাঁর কৈবর্ত বিদ্রোহ, কখনো মারাঠা আক্রমণ থেকে বাঁচতে প্রতিরক্ষা আন্দোলন, কখনো ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, সিধু-কানুর সাঁওতাল বিদ্রোহ, মজনু শাহের ফকির বিদ্রোহ, ভবানী পাঠকের সন্ন্যাস বিদ্রোহ, ইলা মিত্রের তেভাগা আন্দোলন এবং সব শেষে পাকিস্তানি শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে মুক্তিসংগ্রামের আন্দোলন। ওইসব ঐতিহাসিক আন্দোলনের ফলাফল আজকের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। শশাঙ্ক থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পর্যন্ত এক অনন্য সংগ্রামী সময় পার করেছে বাঙালি। পৃথিবীর মানচিত্রে একটি স্বাধীন ভূখণ্ড, ইতিহাসের পাতায় নিজেদের অস্তিত্বের দাবি আর নিজস্ব পতাকা বাঙালিকে উপহার দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭১-এর এপ্রিল এক অনন্য মাস। পৃথিবীর ইতিহাসে বাঙালি জাতি এ মাসেই প্রথম তার রাজনৈতিক অধিকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং গঠন করে রাজনৈতিক সরকার। এটাই ছিল বাঙালির জীবনে ঐতিহাসিক মুক্তির সনদ, যেখানে বাঙালিরা পৃথিবীকে তাদের অস্তিত্বের বার্তা দিয়েছিল। বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার বা মুজিবনগর সরকার গঠিত হয় ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল এবং ১৭ এপ্রিল এ সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা শপথ গ্রহণ করেন। মুজিবনগরের ঐতিহাসিক বিশেষত্ব আছে, যেমনটি ওই সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, ‘আমরা ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন এক আম্রকাননে (পলাশীর) স্বাধীনতার সুখ হারিয়েছিলাম, আজ আরেক আম্রকাননে (মুজিবনগর) ১৯৭১-এর ১০ এপ্রিলে আবার পুনরুদ্ধার করেছি সেই বহু প্রতীক্ষিত স্বাধীনতার স্বাদ।’ শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মানে তাজউদ্দীন আহমদ বৈদ্যনাথতলার নাম পরিবর্তন করে আনুষ্ঠানিক শপথ অনুষ্ঠানের দিন ‘মুজিবনগর’ করেন। তিনি ঘোষণা করেন, শহরটি বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক রাজধানী হবে। আন্তর্জাতিকভাবে বাঙালি মাথা উঁচু করে বিশ্বদরবারে স্থান করে নেয় ওইদিন। মুজিবনগর সরকার মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য গঠিত বাংলাদেশের প্রথম সরকার, ইতিহাসের প্রথম বাঙালি সরকার। এর আগে কখনো বাঙালি নিজেদের শাসন করেনি।
মুজিবনগর সরকারের কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের বাইরে থেকে পরিচালিত হয়েছিল বলে এ সরকার ‘প্রবাসী সরকার’ হিসেবে খ্যাত। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল থেকে ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত ছিল মুজিবনগর সরকারের কার্যকাল। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দেশের জনগণের প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু হলেও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য মুক্তিবাহিনী সংগঠন ও সমন্বয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায় এবং এ যুদ্ধে প্রত্যক্ষ সহায়তাকারী রাষ্ট্র ভারতের সরকার ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক রক্ষায় এ সরকারের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। এ সরকার গঠনের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধ প্রবল যুদ্ধে রূপ নেয় এবং স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের বিজয় অর্জন ত্বরান্বিত হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সরকার গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় । এমন একটি পরিবেশ, যখন পুরো দেশ বিধ্বস্ত, জাতীয় নেতা কারাবন্দি, এমনকি এমন একটা জায়গা ছিল না, যেখানে প্রকাশ্যে সরকার গঠন করা সম্ভব হয়। প্রধানত নিরাপত্তাজনিত কারণে ওই সরকারের প্রধান কার্যালয় কলকাতায় স্থাপন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য মুজিবনগর সরকার যেমন সশস্ত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী সংগঠিত করেছিল, একইভাবে সরকার পরিচালনার জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, মন্ত্রণালয়ের সচিবালয় ও বিভিন্ন বিভাগ গঠন করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য মুজিবনগর সরকার গঠন ছিল অপরিহার্য। বাংলাদেশ সরকারের সরকারি রূপরেখা অত্যন্ত স্বল্প সময়ে সমস্যা জর্জরিত অবস্থায় দেশ ও বিদেশে নিজেদের কার্যক্রম শুরু করে। সরকারের বিভিন্ন কার্যাবলি পর্যালোচনা করলেই বোঝা যাবে কত ব্যাপক এবং সুসংগঠিত ছিল ওই সরকারের কর্মসূচি ও গঠন কাঠামো। এই প্রথম বাঙালিদের সরকার ও তার প্রধান মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা ছিলেন আগাগোড়া বাঙালি। এ অনুভূতিটুকুই তাদের মুক্তিসংগ্রামকে বেগবান করে তুলেছিল। ২৫ মার্চের ভয়াবহ গণহত্যার সময় আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রধান নেতা তাজউদ্দীন আহমদ নিজ বাসভবন ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান এবং এ সময়েই তিনি বাংলাদেশ সরকার গঠনের পরিকল্পনা শুরু করেন।
প্রথমে আত্মরক্ষা, তারপর প্রস্তুতি এবং সব শেষে পাল্টা আক্রমণ—এ নীতিকে সাংগঠনিক পথে পরিচালনার জন্য তিনি সরকার গঠনের চিন্তা করতে থাকেন। এরই মধ্যে ৩০ মার্চ সন্ধ্যায় তিনি ফরিদপুর-কুষ্টিয়া পথে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে পৌঁছেন। ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে ৩১ মার্চ মেহেরপুর সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে পদার্পণ করেন। সীমান্ত অতিক্রম করার পর ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) তত্কালীন মহাপরিদর্শক গোলক মজুমদার তাজউদ্দীন আহমদ ও ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামকে যথোপযুক্ত সম্মান প্রদর্শনপূর্বক তাদের নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন। গোলক মজুমদারের কাছে সংবাদ পেয়ে বিএসএফের মহাপরিচালক কে এফ রুস্তামজি তাদের আশ্রয়স্থলে তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেন এবং পূর্ব বাংলার সার্বিক পরিস্থিতি এবং বাঙালির স্বাধীনতা লাভের অদম্য স্পৃহা সম্পর্কে সম্যক অবগত হন। মুক্তিফৌজ গঠনের ব্যাপারে তাজউদ্দীন আহমদ বিএসএফের সাহায্য চাইলে তত্কালীন বিএসএফপ্রধান তাকে বলেন, মুক্তিসেনাদের ট্রেনিং ও অস্ত্র প্রদান সময়সাপেক্ষ কাজ। তিনি আরো বলেন, ট্রেনিংয়ের বিষয়ে তখন পর্যন্ত ভারত সরকারের কোনো নির্দেশনা না থাকায় তিনি মুক্তিবাহিনীকে ট্রেনিং ও অস্ত্র দিতে পারবেন না। কে এফ রুস্তামজি দিল্লির ঊর্ধ্বতন কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাকে জানানো হয়, তাজউদ্দীন আহমদ ও ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামকে নিয়ে দিল্লি যাওয়ার জন্য। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বৈঠকের আগে ভারত সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাজউদ্দীন আহমদের কয়েক দফা বৈঠক হয় এবং তিনি তাদের মুক্তিসংগ্রাম পরিচালনার জন্য যেসব সাহায্য ও সহযোগিতার প্রয়োজন, তা বুঝিয়ে বলেন। এ সময় তিনি উপলব্ধি করেন, আওয়ামী লীগের একজন নেতা হিসেবে যদি সাক্ষাৎ করেন, তবে সামান্য সহানুভূতি ও সমবেদনা ছাড়া তেমন কিছু আশা করা যায় না। সরকার গঠন ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ওই সরকারের দৃঢ় সমর্থন ছাড়া বিশ্বের কোনো দেশই বাংলাদেশের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে না। এছাড়া ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের আগের দিন এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাজউদ্দীনের কাছে জানতে চান স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে কোনো সরকার গঠিত হয়েছে কিনা। তখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন, বৈঠকে তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিরূপে নিজেকে তুলে ধরবেন। কারণ এর মাধ্যমে পূর্ব বাংলার জনগণের সংগ্রামকে সাহায্য করার জন্য ৩১ মার্চ ভারতীয় পার্লামেন্টে যে প্রস্তাব গৃহীত হবে, তা কার্যকর রূপ লাভ করতে পারবে বলে তাজউদ্দীনের ধারণা হয়। ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বৈঠকের সূচনায় তাজউদ্দীন জানান, পাকিস্তানি আক্রমণ শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই ২৬ মার্চ বাংলাদেশকে স্বাধীন ঘোষণা করে সরকার গঠন করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেই স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রেসিডেন্ট এবং মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠকে যোগদানকারী সব প্রবীণ সহকর্মীই মন্ত্রিসভার সদস্য। শেখ মুজিবের গ্রেফতার ছাড়া তখন পর্যন্ত দলের অন্যান্য প্রবীণ নেতাকর্মীর খবর অজানা থাকায় সমবেত দলীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে দিল্লির ওই সভায় তাজউদ্দীন নিজেকে প্রধানমন্ত্রীরূপে তুলে ধরেন। ওই বৈঠকে তাজউদ্দীন আহমদ ইন্দিরা গান্ধীর কাছে স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানের জন্য অনুরোধ করেন। এভাবেই সূচনা হয় অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের। ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি বাংলাদেশকে সর্বপ্রকার সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিলে তাজউদ্দীন আহমদ কুষ্টিয়া জেলার সীমান্তে আওয়ামী লীগের এমএনএ ও এমপিএদের অধিবেশন আহ্বান করেন। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে গার্ড অব অনার প্রদানের মাধ্যমে ওই অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে মুক্তিযুদ্ধ ও সরকার পরিচালনার জন্য মন্ত্রিপরিষদ গঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন ১১ এপ্রিল বাংলাদেশ বেতারে মন্ত্রিপরিষদ গঠনের ঘোষণা দিয়ে ভাষণ প্রদান করেন (হোসেন তওফিক ইমাম, বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১)। বাংলাদেশ সরকার গঠন ও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের সংবাদ আকাশবাণী বেতার কেন্দ্র কলকাতা, তারপর দিল্লি কেন্দ্র, বিবিসিসহ বিশ্বের অন্যান্য গণমাধ্যম এ সংবাদ প্রচার করে। একাত্তরের ১১ এপ্রিল ভারতের আগরতলায় এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, চুয়াডাঙ্গায় অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা ১৪ এপ্রিল প্রকাশ্যে শপথ গ্রহণ করবেন। এ সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমে প্রকাশ লাভ করায় দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী চুয়াডাঙ্গায় প্রবল বোমবর্ষণ করে। পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত হয়, চুয়াডাঙ্গার পার্শ্ববর্তী মেহেরপুর মহকুমার বর্তমানে জেলা বৈদ্যনাথতলায় বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ নেবে। এরপর ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ পূর্বঘোষণা মোতাবেক কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার এক আমবাগানে মন্ত্রিপরিষদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। দেশী-বিদেশী প্রায় ৫০ জন সাংবাদিক ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বেলা ১১টায় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শুরু হয়। কোরআন তেলাওয়াত ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। শুরুতেই বাংলাদেশকে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ রূপে ঘোষণা করা হয়। এরপর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি একে একে প্রধানমন্ত্রী ও তার তিন সহকর্মীকে পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর নতুন রাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান হিসেবে কর্নেল এমএজি ওসমানী এবং সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ পদে কর্নেল আবদুর রবের নাম ঘোষণা করেন। এরপর সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী উভয়েই বক্তব্য দেন। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ তার ভাষণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেন। ভাষণের শেষাংশে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববাসীর কাছে আমরা আমাদের বক্তব্য পেশ করলাম, বিশ্বের আর কোনো জাতি আমাদের চেয়ে স্বীকৃতির বেশি দাবিদার হতে পারে না। কেননা আর কোনো জাতি আমাদের চেয়ে কঠোর সংগ্রাম করেনি। অধিক ত্যাগ স্বীকার করেনি। জয় বাংলা।’ (একাত্তরের রণাঙ্গন, শামসুল হুদা চৌধুরী)। একাত্তরের বিজয়কে সঠিকভাবে পরিচালিত করেছে মুজিবনগর সরকার। আজও জাতিকে দিয়ে যাচ্ছে মুক্তির দিশা। আজ দেশ ও জাতি যে স্বাধিকারের স্বাদ আস্বাদন করছে, তার পটভূমি তৈরি করেছিল মুজিবনগর সরকার। মুজিবনগর দিবসে সেই অকুতোভয় মুক্তিসংগ্রামের নায়কদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। আর কৃতজ্ঞচিত্তে নিঃসংকোচে মাথা উঁচু করে বলতে চাই, আমরা তোমাদের ভুলব না।