বঙ্গবন্ধু স্মরণে সাধারণ মানুষের অমর সব কবিতা


- শর্মিলা সিনড্রেলা  

এক ভয়াবহ ইতিহাস, তীব্র নিষ্ঠুরতার সাক্ষী ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধুর বাড়ি। অতি সাধারণ সেই বাড়ি থেকেই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন জাতির জনক। এরপর ওই বাড়ি থেকেই পাকিস্তানী বাহিনী তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলো। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সেই বাড়িতেই ফিরে এসেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালির ঠিকানা হওয়া বাড়িটিতেই সপরিবার নিহত হন তিনি।

এখন বাঙালির তীর্থ হওয়া বাড়িটিতে এসে কালো কালো অক্ষরে শোকের সঙ্গে শক্তিও সঞ্চয় করে বাঙালি।

দেয়ালে কাঁচ দিয়ে বাঁধানো গুলির চিহ্ন বা সিঁড়িতে রক্তের দাগ; চার দশক পরে এসেও যেনো মলিন হয়নি এতোটুকু। বাড়িটি দেখতে এসে কেবল এক স্মৃতি জাদুঘর ঘোরা বা দেখাই না, বরং ইতিহাসের সাক্ষী হন মানুষ। আর সেসবই ফুটে উঠে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের তৃতীয় তলায় রাখা মন্তব্য খাতায়। জনকের জন্য সাধারণ মানুষের প্রতিটি শোকলিপিই একেকটি অমর কাব্য।

পুরো দেশের নানা জায়গা থেকে আসা মানুষেরা জনকের জন্য তাদের কষ্ট, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, জীবনবোধ, অভিজ্ঞতা; সবই ভাগাভাগি করে নেন মন্তব্য লেখার বইটির মধ্যে দিয়ে। নিজেদের মনের ভাষা অবলীলায় বলে দেন অন্যদের কাছে। পূর্ববর্তী প্রজন্ম থেকে বর্তমান বা পরবর্তী প্রজন্ম; সকলেই কাঁচা-পাকা হাতে জানিয়েছেন নিজেদের মনের কথা।

এখানে এসে অনুপ্রাণিতও হন অনেকে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রকিব উদ্দিন এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর দেখতে। মন্তব্য খাতায় তিনি লিখেছেন: ‘প্রিয় বঙ্গবন্ধু, আপনার বাসায় এসেছি। আমরা আপনার নতুন প্রজন্ম। জানি না আপনার মতো দেশকে কতটুকু দিতে পারবো। কিন্তু আপনার এই দেশে জন্মগ্রহণ করায় আমি গর্বিত। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’

জামালপুর থেকে এসেছিলেন ফজলুল হক আকন্দ। তার কথা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুতে পুরো জাতি আজ হতাশ।

চট্টগ্রামের গ্রিন ভিউ থেকে এসেছিলেন ইমরুল। নিজের কথা তিনি মন্তব্য খাতায় লিখেছেন এভাবে: ‘অনেক দিন ইচ্ছে ছিলো, আজ পূর্ণ হলো, অশ্রুসিক্ত চোখে দেখলাম ১৫ আগস্টের নির্মমতা। মানুষ কেমন করে এত হিংস্র হয়?’ এমন প্রশ্নও তিনি রাখেন বিবেকের কাছে।

চিত্রকর্মে গুলিবিদ্ধ জাতির জনককের দেখে বাংলাদেশ ব্যাংকের লোকমান হেকিম লিখেছেন, ঘাতকদের নির্মম বুলেটে মৃত্যুর পরও পিতার মুখাবয়বে যে ব্যক্তিত্ব ও প্রত্যয় ফুটে উঠেছে তা আমাদের মনে করিয়ে দেয় স্বাধীনতার আগুন বহনকারী প্রমিথিউসের মৃত্যু নেই। তিনি চিরঞ্জীব। আমরা তোমাকে ভুলিনি, ভুলবো না।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা নিজের কবিতাও মন্তব্য খাতায় লিখে দিয়ে যান একজন। সেটি এরকম:

বঙ্গবন্ধুর গান
এম আনিসুল হক
বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধু
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু। 
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিলো
সোনার বাংলা দেশ গড়বো
বঙ্গবন্ধু স্লোগান দিলো
বাংলার মানুষ জাগ্রত হলো
বঙ্গবন্ধুর স্লোগানই ছিলো 
সোনার বাংলা অটুট রাখবো। 
নয় মাস যুদ্ধ শেষে 
বাংলাদেশ স্বাধীন হলো
হঠাৎ একদিন কালো ঝড়ে 
বঙ্গবন্ধু চলে গেলো
বাংলার মাটি অটুট রাখতে
শেখ হাসিনা আবার এলো।

শুধু স্মৃতি হাতড়ানোই না, বঙ্গবন্ধুর বাড়িটি অনেককে অনুপ্রাণিতও করে। বঙ্গবন্ধুর প্রতি নির্মমতা, বঙ্গবন্ধুর চোখে মুখে কষ্টের অভিব্যক্তি সবই যেন নতুন প্রজন্মকে আবার নতুন করে জেগে উঠার প্রেরণা যোগায়।

তেমনটিই দেখা গেলে গাজীপুরের হাসিবুল হাসান হিমেলের মন্তব্যে। তিনি লিখেছেন, ‘একটা কথা এখনো মনে হয়। যুদ্ধ যদি আবার হতো। এতকিছু দেখার পর ঘরে বসে থাকা যায় না। আর যদি কেউ বসে থাকে তাহলে সে রাজাকার।’

SUMMARY

318-2.jpg