বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমানের দায়

- রাজেশ পাল  

১৫ই আগস্ট, ১৯৭৫। বাঙালি জাতির জীবনে কলঙ্কজনক একটি অধ্যায়। এদিন দেশী বিদেশী অপশক্তির প্রত্যক্ষ মদদে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, এদেশের স্বাধিকার আন্দোলনের রূপকার , বাঙালি জাতির মুক্তিসংগ্রামের স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। শুরু হয় এক নদী রক্তের বিনিময়ে কেনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধুলিস্যাত করে, পাকিস্তানবাদ প্রচারের এক পেছন পথে যাত্রা। ২১ বছর ধরে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকিয়ে দেয়া হয় মৌলবাদ আর সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প। উত্থান ঘটে পাকিস্তানবাদের। কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীদের করা হয় রাষ্ট্রীয়ভাবে পুনর্বাসিত। ভূলুন্ঠিত করা হয় ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগকে। পুনরায় রাজনীতি করার অধিকার ফিরিয়ে দেয়া হয় জামায়াতে ইসলামীকে।

আর এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের পরোক্ষ মদদদাতা ছিলেন নিজেই একাত্তরের এক বীর সেক্টর কমাণ্ডার। ক্ষমতার লোভে অন্ধ এই উচ্চাভিলাষী মানুষটি মীরজাফরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন সেদিন নিজের স্বীয় দায়িত্বের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। মানুষটি আর কেউ নন। এদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সামরিক একনায়ক জেনারেল জিয়াউর রহমান। পলাশীর প্রান্তরে মীরজাফরের ভূমিকায় ২০০ বছরের ব্যবধানে আবারো অভিনয় করে গেলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়ার জড়িত থাকার কিছু দালিলিক প্রমাণ নিয়েই আজকের এই লেখাটি।
 
স্বাধীনতার পূর্বে পাকিস্তান আর্মিতে সামান্য মেজরের পদে চাকরি করা জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার পরে নবগঠিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল পদে আসীন হলেও তাতে তার তৃপ্তি আসেনি। ক্ষমতার শীর্ষে ওঠার তীব্র উচ্চাভিলাষ দানা বেধে উঠেছিল তার মনে। জেনারেল শফিউল্লাহকে সেনাপ্রধান করা হলে তা তীব্র ক্ষোভের জন্ম দেয় তার মনে। কেননা সেনাপ্রধান হওয়ার তীব্র বাসনা ছিলো তার।

মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরী বীরবিক্রমের “এক জেনারেলের নীরব সাক্ষ্য” বইতে উল্লেখ আছে, “পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নয়জন কর্মরত এবং পরে পাকিস্তান থেকে আগত তিনজন মোট ১২ জন মেজর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। জিয়া ও শফিউল্লাহ একই ব্যাচের কিন্তু প্রশিক্ষণের ফলের ভিত্তিতে জিয়া ছিলেন জ্যেষ্ঠ। বঙ্গবন্ধু নিজ থেকেই শফিউল্লাহকে সেনাপ্রধান নিয়োগ করেন। এজন্য বিশেষ কোনো সুপারিশ ছিল না। জিয়া এতে ক্ষুব্ধ হন। খালেদ মোশাররফের সঙ্গেও জিয়ার সম্পর্ক ভালো ছিল না। ধারণা করা হতো শফিউল্লাহর সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো। তারা দুজনই প্রভাব বিস্তারে সচেষ্ট ছিলেন এবং সিনিয়র অফিসাররা তা জেনে সুযোগ দিতেন। শফিউল্লাহ এদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। মইনুল লিখেছেন, “মূলত গত ২৮ বছরে বিভিন্ন সময় সেনাবাহিনীতে সেনাপ্রধানের কমান্ড ও কন্ট্রোল না থাকায় সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে নানা অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে, তা পুরো জাতিকে বারবার বিপর্যস্ত করেছে। তবে এসব দুঃখজনক ঘটনার দায় সেনাপ্রধানের পাশাপাশি রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের ওপরও বর্তায়।” [পৃ.৪২]
 
ফলে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী খুনী ফারুক রশীদ চক্রের সাথে জিয়া মেতে ওঠেন এক প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে। যদিও তিনি কখনোই সামনে আসেননি, পেছন থেকে নেড়ে গেছেন কলকাঠি।

অশোক রায়নার বই ‘ইনসাইড র দ্যা স্টোরি অব ইন্ডিয়াস্ সিক্রেট সার্ভিস’ এ উল্লেখ আছে, “বেগম জিয়ার বাড়ির ট্রেস থেকে উদ্ধার করা হয় তিন ঘণ্টা মিটিংয়ের পরে মুজিবের বিরুদ্ধে ক্যু-এর একটি স্ক্রাপ পেপার। কাগজটি যত্নসহকারে গার্বেজ করা হলে একজন গুপ্তচর গৃহভৃত্যের মাধ্যমে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য দিল্লীতে পাঠিয়ে দিলে বঙ্গবন্ধুকে সতর্ক করে দেয়ার জন্য ‘র’এর পরিচালক মি. কাউ পান বিক্রেতার ছদ্মবেশে বাংলাদেশে আসেন। বঙ্গবন্ধু সেটাকে যথারীতি উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ওরা আমার সন্তানের মতো। এই চিরকুটে যাদের নাম ছিল, জিয়াউর রহমান, মেজর রশিদ, মেজর ফারুক, জেনারেল ওসমানী এবং মেজর শাহরিয়ার। ”

১৯৭৬ সালের আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী ফারুক আর রশীদের একটি সাক্ষাতকার নেন প্রখ্যাত সাংবাদিক এন্থনী ম্যাসকারেনহাস।সাক্ষাতকারে ফারুক বলে,
“আমাদের লীড করার জন্য জেনারেল জিয়াই ছিল মতাদর্শগত ভাবে যোগ্যতম ও বিশ্বস্ত ব্যক্তি। তার সাথে দেখা করলাম ২০ শে মার্চ ১৯৭৫, জেনারেল জিয়া বললেন একজন সিনিয়র অফিসার হিসাবে আমি তোমাদের এই টিমে সক্রীয় হতে পারি না, তোমরা জুনিয়র অফিসাররা এই অংশটা চালিয়ে যাও। ফারুকঃ এর পর লনে হাটতে হাটতে বললাম, স্যার ! আমরা প্রফেশনাল সোলজার। আমরা প্রফেশনাল কিলারের মত কোন একক ব্যক্তিকে সার্ভ করবো না। আমরা আপনার এবং আমাদের মতাদর্শের বিজয় দেখতে চাই। এ মিশনে আপনার সমর্থন ও নেতৃত্ব অনিবার্য।”
 
এই সংক্রান্তে প্রখ্যাত সাংবাদিক লিফশুলজের Anatomy of a coup থেকে জানা যায় –

“ General Zia, who was then Deputy Chief of the Army, expressed continuing interest in the proposed coup plan, but also expressed reluctance to take the lead in the required military action. The junior officers had already worked out a plan, Rashid told Zia, and they wanted his support and leadership. Zia temporised. According to the account given by Rashid to Mascarenhas and confirmed by my source, Zia told him that as a senior officer he could not be directly involved but if they junior officers were prepared, they should go ahead. According to my unusual source, the Majors hoped right up until the end that Zia would take the lead in the coup. Their view was that the best option would be not to bring in Mustaque with whom they were in constant, yet discreet, contact. The best option from the Majors perspective was to establish a Military Council as the commanding authority after the coup. In fact, it was largely Rashid who was in charge of defining the options for his group. It was their hope that Zia would lead such a council. While the junior officers might have preferred a senior officers’ coup with Zia at the head, they secured the next best option. With General Zia’s neutrality or even tacit support assured, the junior officers could move ahead without fear that Zia would throw his forces against them at the crucial moment.

শাহাদুজ্জামানের ক্রাচের কর্নেল থেকে জানা যায় –

“ ঘটনার খানিক পর কর্ণেল রশীদের ফোন পান সেনানিবাসে অবস্থানরত ব্রিগেডিয়ার শাফায়াত জামিল। ঘটনায় হতভম্ব ও উদভ্রান্ত অবস্থায় তিনি ছুটে যান কাছেই উপ সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের বাসায়। উত্তেজিত অবস্থায় দরজা ধাক্কাতে থাকেন তিনি, বেরিয়ে আসেন জিয়া। পরনে স্লিপিং ড্রেসের পায়জামা ও স্যান্ডো গেঞ্জি। এক গালে শেভিং ক্রিম লাগানো। শাফায়াত উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বললেন, “দ্য প্রেসিডেন্ট ইজ কিল্ড”। শুনে জিয়া অবিচলিত। তার শান্ত প্রতিক্রিয়া-“ প্রেসিডেন্ট ইজ ডেড সো হোয়াট? ভাইস প্রেসিডেন্ট ইজ দেয়ার। গেট ইউর ট্রুপস রেডি। আপহোল্ড দ্য কনস্টিটিউশন।”

একটু পরেই চিফ অব জেনারেল স্টাফ খালেদ মোশাররফের সাথে সাথে জিয়াও সেনাসদরে এসে উপস্থিত। ঘটনায় কিংকর্তব্যবিমুঢ় সেনাপ্রধান শফিউল্লাহর জরুরী তলব পেয়ে এসেছেন তারা । খালেদের পরনে শার্ট ও পায়জামা, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। নিজেই গাড়ি চালিয়ে এসেছেন। জিয়া এসেছেন ক্লিন শেভ ও মেজর জেনারেলের এক্সিকিউটিভ পোশাকে ড্রাইভার চালিত সরকারী গাড়িতে। জিয়ার এরকম পূর্বপ্রস্তুতিমূলক ফিটফাট হয়ে থাকা এবং ভাবলেশহীন শান্ত – নির্লিপ্ত কণ্ঠস্বর যথেষ্ট প্রশ্নের উদ্রেক ঘটায় যে তিনি নিশ্চয়ই আগেই থাকেই জানতেন, না জানলে তারও খালেদের মত অগোছালো অবস্থায় হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসার কথা ছিলো।”


এ থেকে সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সাথে জিয়া ছিলেন ওতোপ্রতভাবে জড়িত। প্রকাশ্যে কিছু না করলেও তিনিই ছিলেই মূল নাটের গুরু। পরবর্তীতে জেনারেল জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল তার অনুগত জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী পাস করিয়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হতে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত জারি করা সকল সামরিক আইন-বিধি কার্যক্রমকে বৈধতা দেন। শুধু তাই নয়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দায়ে যাদের বিচার হবার কথা, সেই খুনিদের আখ্যায়িত করা হলো ‘সূর্যসন্তান’ বলে! পুনর্বাসিত করা হলো উচ্চপদে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোতে। জেনারেল জিয়া এবং এরশাদের সামরিক সরকার তা বহাল রাখল বহু বছর। এরপর থেকে ক্ষমতাসীন কোন সরকারই বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের বিষয়ে কোন উদ্যোগ নেয়নি, বরং খুনিদের নানাভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে এমনকি পুরস্কৃতও করেছে।

১৯৭৬ সালের ৮ জুন ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার দায়ে অভিযুক্ত হত্যাকারী গোষ্ঠীর ১২ জনকে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেওয়া হয়েছিল। যেমন:

১. লে. কর্নেল শরিফুল হককে (ডালিম) চীনে প্রথম সচিব,
২. লে. কর্নেল আজিজ পাশাকে আর্জেন্টিনায় প্রথম সচিব,
৩. মেজর এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদকে আলজেরিয়ায় প্রথম সচিব,
৪. মেজর বজলুল হুদাকে পাকিস্তানে দ্বিতীয় সচিব,
৫. মেজর শাহরিয়ার রশিদকে ইন্দোনেশিয়ায় দ্বিতীয় সচিব,
৬. মেজর রাশেদ চৌধুরীকে সৌদি আরবে দ্বিতীয় সচিব,
৭. মেজর নূর চৌধুরীকে ইরানে দ্বিতীয় সচিব,
৮. মেজর শরিফুল হোসেনকে কুয়েতে দ্বিতীয় সচিব,
৯. কর্নেল কিসমত হাশেমকে আবুধাবিতে তৃতীয় সচিব,
১০. লে. খায়রুজ্জামানকে মিসরে তৃতীয় সচিব,
১১. লে. নাজমুল হোসেনকে কানাডায় তৃতীয় সচিব,
১২. লে. আবদুল মাজেদকে সেনেগালে তৃতীয় সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।

তাঁদের নিয়োগপত্র ঢাকা থেকে লিবিয়ায় পৌঁছে দিয়েছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন কর্মকর্তা ও পরবর্তীকালে পররাষ্ট্রসচিব শমসের মবিন চৌধুরী। এর আগে ওই বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা-সমঝোতার জন্য ঢাকা থেকে তৎকালীন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নুরুল ইসলাম (শিশু) ঢাকা থেকে লিবিয়া গিয়েছিলেন। ১৯৮০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জিয়াউর রহমানের নির্দেশে খুনিদের বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে (ফরেন সার্ভিস ক্যাডার) অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হয়। সে সময়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে এসব জানা গিয়েছিল। তবে ১২ জন সেনা কর্মকর্তা চাকরিতে যোগ দিতে রাজি হলেও ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের প্রধান দুই হোতা কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান ও কর্নেল খন্দকার আব্দুর রশীদ সরকারের সঙ্গে সমঝোতা ও চাকরি গ্রহণে অসম্মতি জানিয়েছিলেন। তাঁরা ব্যবসা-বাণিজ্যে লিবিয়ায় প্রেসিডেন্ট কর্নেল গাদ্দাফির সব ধরনের সহযোগিতা পান।

৭ই নভেম্বর তথাকথিত সিপাহি জনতার বিপ্লব করে জাসদ। হত্যা করা হয় এদেশের মুক্তিযুদ্ধের তিন অকুতোভয় বীর সন্তান মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ, ক্র্যাক প্লাটুনের প্রতিষ্ঠাতা মেজর হায়দার ও আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী কর্ণেল হুদাকে। নাটকীয়ভাবেই ক্ষমতায় আসেন জেনারেল জিয়া। কালুরঘাটের বেতার কেন্দ্রের মতো আরো একবার ভাগ্য হলো তার পরম সহায়। জিয়া ক্ষমতা পেয়েই প্রথমে চরম গাদ্দারী করে বসেন ৭ ই নভেম্বরের কুশীলবদের উপর। বন্দী করা হয় কর্ণেল তাহের, মেজর জলিলি, মেজর জিয়াউদ্দিনসহ শত শত সিপাহী ও অফিসারদের। প্রহসনের কোর্ট মার্শালে রাতের অন্ধকারে ফাঁসিতে হত্যা করা হয় তাদের বেশীরভাগকে। ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার মানসে জিয়া হাত দেন রাজনৈতিক দল গড়ার কাজে। প্রথমে জাগদল ,পরে বিএনপি। কিন্তু কাজটি সহজ ছিলো না। প্রথমত তার ছিলো না রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, দ্বিতীয়ত, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের প্রতিটি শক্তি, যারা ৩ রা নভেম্বরে আবারো ভেঙে যাওয়া স্বপ্ন আবার নতুন করে দেখা শুরু করেছিলেন, তারা সকলে তাকে প্রতিপক্ষ হিসেবেই বেছে নেন। এমতাবস্থায় জিয়া হাত বাড়িয়ে দেন ৭১ এর পরাজিত শক্তিগুলোর দিকে। পিডিপি, মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলামের নেতারা এসে জড়ো হন তার ছায়াতলে। সাথে জড়ো হল স্বাধীনতা বিরোধী চৈনিকপন্থী বাম, ভুইফোড় ব্যবসায়ী, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা আর আমলারা। জিয়া প্রকাশ্যই ঘোষণা দেন ,” Money is no problem. I shall make politics difficult for the politicians. “
 
কুখ্যাত কলাবরেটর শাহ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসিয়ে রাজাকারতন্ত্রের করেন শুভসূচনা। পরিশেষে ৭৮ সালে বহুদলীয় রাজনীতির আবরণে পুনরায় রাজনীতি করার সুযোগ ফিরিয়ে দেন জামায়াতকে। শুরু হয় এদেশের পেছল পথে যাত্রা। হুমায়ূন আজাদ স্যার বলেছিলেন,” একবার রাজাকার ,চিরদিন রাজাকার। কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধা চিরকাল মুক্তিযোদ্ধা থাকতে পারেনা”। ৭১ এর বীর মুক্তিযোদ্ধা সেক্টর কমাণ্ডার জিয়াউর রহমান সেই কথার যথার্থতা বুঝিয়ে দিলেন মর্মে মর্মে।

সূত্র :
১) কারা মুজিবের হত্যাকারী –এ এল খতিব (Who Killed Mujib – A L Khatib )
২) তিনটি সেনা অভ্যুথান ও কিছু না বলা কথা, লে কর্নেল এম এ হামিদ, মোহনা প্রকাশনী, ১৯৯৫
৩) একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ রক্তাক্ত মধ্যআগষ্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর, কর্নেল শাফায়াত জামিল, সাহিত্য প্রকাশ, এপ্রিল ২০০০
৪) বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড: ফ্যাক্টস এন্ড ডকুমেন্টস, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ
৫) ভোরের হত্যাযজ্ঞ (ভোরের কাগজ: ১৫ আগস্ট, ২০০৫)
৬) পচাত্তরের পনেরই আগষ্ট, মেজর মো মুখলেছুর রহমান, আহমদ পাবলিশিং হাউজ, ঢাকা ১৯৯৬
৭) মুজিব হত্যায় সি আই এ, দেলোয়ার হোসেন, এশিয়া পাবলিকেশন, ঢাকা ১৯৯৬
৮) ক্রাচের কর্ণেলঃ  শাহাদুজ্জামান
৯) এক জেনারেলের নীরব সাক্ষ্য : মেজর জেনারেল মইনুল ইসলাম চৌধুরী

SUMMARY

301-1.jpeg