স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রথম কর্মদিবস

শাহীনূর সরকার

ঢাকা: স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের এই দিনেই শুরু হয়েছিল বঙ্গবন্ধু ও তার মন্ত্রিসভার কর্মসূচি।  ১২ জানুয়ারি শপথগ্রহণের পর ১৩ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১১টায় সচিবালয়ে শুরু হয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বৈঠক। প্রথম দিনেই গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছিল সেদিন।

জাতীয় সংগীত ও সমরসংগীতের অনুমোদন
স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রথম কর্মদিবস
স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রথম কর্মদিবস


বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটির প্রথম ১০ লাইন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে গাওয়ার আনুষ্ঠানিক ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয় মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে। রাষ্ট্রীয় কোনো অনুষ্ঠানে গানটির প্রথম চার লাইন যন্ত্রসঙ্গীতে বাজানোর সিদ্ধান্ত হয়। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে এই গানটি প্রথম জাতীয় সংগীত হিসেবে গাওয়া হয়েছিল।

মন্ত্রিসভার ওই বৈঠকে সমরসংগীতেরও অনুমোদন দেওয়া হয়। কাজী নজরুল ইসলামের ‘চল চল চল’ গানটির প্রথম ২১ লাইন সমরসংগীত হিসেবে নির্ধারণ করা হয়।

সকল বকেয়া খাজনা আদায় বন্ধস্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রথম কর্মদিবস

বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার ওই বৈঠকে বাংলা ১৩৭৮ সালে অর্থাৎ ১৯৭২ সালের ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত সুদসহ বকেয়া খাজনা মওকুফের সিদ্ধান্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধে কৃষকদের অংশগ্রহণ, তাদের বাঁচার সংগ্রাম, গ্রামাঞ্চলে পাকিস্তানি বাহিনীর ধ্বংসলীলা এবং কয়েক লাখ মানুষের গৃহহারা হওয়ার কথা বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সিদ্ধান্তে বলা হয়, বর্তমান জনসাধারণ যারা জাতীয় মুক্তি আন্দোলনে সাহসিকতার সঙ্গে অংশ নিয়েছেন তারা আজ অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম করছেন। সমগ্র গ্রামবাংলা ধ্বংস হয়ে গেছে এবং লাখ লাখ মানুষ গৃহহারা হয়েছে এবং এ কারণে তাদের অবিলম্বে এ দায় থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য খাজনা মওকুফের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

জাতীয় পতাকা থেকে মানচিত্র বাদ দেওয়া
স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রথম কর্মদিবস

তৎকালীন দেশের মানচিত্রখচিত পতাকা জটিল ও সাধারণ মানুষের জন্য এর সঠিক নমুনা তৈরি অসুবিধাজনক হওয়ায় জাতীয় পতাকা থেকে মানচিত্র বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

গেজেট নোটিফিকেশন বাংলায় প্রকাশের সিদ্ধান্ত

সরকারের গেজেট নোটিফিকেশন বাংলায় প্রকাশের সিদ্ধান্ত হয় আজকের দিনেই। তবে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সুবিধার জন্য গেজেটের একটি ইংরেজি সংস্করণও প্রকাশ করা হবে বলে সিদ্ধান্তে জানানো হয়। সংবাদ সংস্থা বাসসের বরাত দিয়ে দৈনিক বাংলায় এ খবর প্রকাশ করা হয়।

প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন

রমনায় যে প্রেসিডেন্ট ভবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ইয়াহিয়া খানের আলোচনা হয়েছিল, সেই ভবনটিকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত হয় প্রথম কর্মদিবসের বৈঠকে।

এছাড়া, ১৯৭২ সালের ১৩ জানুয়ারি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অভিনন্দন জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। সেদিন ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন, ‘আপনার বিজ্ঞ নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনতা, সহিষ্ণুতা এবং মানবিক মর্যাদার রক্ষক হিসেবে তাদের লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে আশ্বাস লাভ করবে। আমরা ঐকান্তিকভাবে আশা করি যে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে শান্তি ও বন্ধুত্বের স্বার্থে আমাদের এ দুটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র একযোগে কাজ করবে।’

বাহাত্তরের আজকের দিনেই ধানমন্ডির অস্থায়ী বাসভবনে আলাদাভাবে কর্নেল ওসমানী ও সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছিল।

SUMMARY

2869-2.jpg