ভুট্টোকে আদব-কায়দা শেখার পরামর্শ

উদিসা ইসলাম

বাংলাদেশ সরকারকে ‘ঢাকা কর্তৃপক্ষ’ বলে উল্লেখ করেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো। এর জবাবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ তাকে (ভুট্টো) সম্মানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ প্রথমে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের সরকারের প্রধানের সম্পর্কে কথা বলার আদব-কায়দার শিক্ষা নিয়ে পরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করতে পরামর্শ দেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের বাস্তবতা স্বীকার করে জাতিসংঘে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির সমর্থনের জন্য চীন ও পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানান। ১৯৭২ সালের ১৬ আগস্টে সিলেট জেলা রাষ্ট্রপ্রধান আবু সাঈদ চৌধুরীর সম্মানে আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভাষণ দিচ্ছিলেন।

প্রকৃতপক্ষে ভুট্টো পাকিস্তানের জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন বলে উল্লেখ করেন আব্দুস সামাদ। জাতিসংঘে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির আবেদনে বাধা সৃষ্টির পাকিস্তানি প্রচেষ্টাকে উপহাস হিসেবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিশ্ব সংস্থায় আমাদের অন্তর্ভুক্তিকে চ্যালেঞ্জ করার আপনারা কেউ নয় বরং আমরাই জাতিসংঘে আপনাদের সদস্যপদকে চ্যালেঞ্জ করতে পারি। তিনি অত্যন্ত স্পষ্ট করে বলেন, যে পাকিস্তান জাতিসংঘের সদস্য, সে পাকিস্তান এখন আর নেই। সে তার দেশের আয়তন এর সংজ্ঞা পুনর্নির্ধারণের এবং নতুন করে জাতিসংঘের সদস্য পদের জন্য দরখাস্ত করার উপদেশও দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এদিকে ১৯৭২ সালে ১৫ আগস্ট পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে বক্তৃতাকালে প্রেসিডেন্ট ভুট্টো বাংলাদেশ সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, ঢাকা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তার আলোচনার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এর প্রত্যুত্তরে বাংলাদেশের একজন মুখপাত্র বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে যদি কোনও আলোচনা হয় তবে তা সমমর্যাদার ভিত্তিতে হতে হবে। ভুট্টো কোন ঢাকা কর্তৃপক্ষের কথা বলেছেন কিন্তু বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে চাওয়াটা কোনও কথা নয়। তাকে অবশ্যই বাংলাদেশ তার সমমর্যাদার যিনি অধিষ্ঠিত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করতে হবে। এটা করতে না চাইলে কঠোর বাস্তবতা অস্বীকার করা হবে। মুখপাত্র বলেন, ঢাকা কর্তৃপক্ষ বলতে কী বোঝাতে চান তিনি। যখন এখনও বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করছেন না তখন তার সঙ্গে আলোচনা করতে অস্বীকার করা ছাড়া শেখ মুজিবুর রহমানের সামনে আর কোনও বিকল্প পথ খোলা নেই।

এদিকে এই মুখপাত্র জানান, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জেনেভায় অবস্থানকালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হতে পারেন। লন্ডন ত্যাগের আগে প্রধানমন্ত্রী হয়তো ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিথের সঙ্গে দেখা করবেন। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের জন্য ২১ আগস্ট লন্ডন থেকে সুইজারল্যান্ডে যাত্রা করবেন। সেখানে তিনি ১০ দিনের মত অবস্থানের সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে ফারাক্কা নিয়ে বাংলাদেশকে আবারও আশ্বস্ত করে ভারত। ফারাক্কা প্রকল্প চালু করার জন্য ভারত এমন কোনও বন্দোবস্ত করবে না, যা বাংলাদেশের ন্যায়সঙ্গত স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়। সেই সঙ্গে ভারতের অন্যতম সেরা বন্ধু হিসাবে কলকাতাকে সংরক্ষণের জন্য ভারত সরকার হুগলি নদীর নাব্য অক্ষুণ্ণ রাখার গুরুত্বটি স্বীকার করে এর নিশ্চয়তা বিধানের জন্য সকল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গৃহীত হবে ভারতের সেচ ও বিদ্যুৎ মন্ত্রী কে এন রাও। রাজ্যসভায় উপরোক্ত বক্তব্য পেশ করেন তিনি। তিনি ফারাক্কা সংক্রান্ত সরকারি সিদ্ধান্ত ঘোষণা উল্লেখ করে বলেন, ভারত সরকার ১৯৭৪ সালের শুরুতে ফারাক্কা পানি সরবরাহ খালটি চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। দীর্ঘ বিবৃতিতে তিনি সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের স্বার্থের কথা মনে রাখা হবে এবং আমরা এমন কোনও বন্দোবস্ত করবো না যা উক্ত স্বার্থবিরোধী।
দেশবাসীর জন্য বঙ্গবন্ধু উদ্বিগ্ন

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৬ আগস্ট খুব দুর্বল বোধ করলেও দেশের বন্যা পরিস্থিতি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি জানার জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেন। অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী জহুর আহম্মদ চৌধুরী সঙ্গে টেলিফোনে আলাপকালে বঙ্গবন্ধু তার উদ্বেগের কথা প্রকাশ করেন। পিত্তকোষের অস্ত্রোপচারের পর লন্ডনে অবস্থানরত বঙ্গবন্ধু দেশবাসীর কাছে ফিরে আসার জন্য তার ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেছেন বলেও সংশ্লিষ্টরা জানান। তবে ডাক্তারের নির্দেশে তিনি বিশ্রাম গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছেন বলেও জানান।
বাংলা ট্রিবিউন, প্রকাশিত :  আগস্ট ১৬, ২০২০ 
 

SUMMARY

2829-2.jpg