উদিসা ইসলাম
বিশ্বব্যাপী ভুল তথ্য দিয়ে জাতিসংঘের সদস্য পদ পাওয়া থেকে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করতে উঠে পড়ে লেগেছে পাকিস্তান। ১৯৭২ সালের ১২ আগস্টের পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভের পথে অন্তরায় সৃষ্টির জন্য এক গভীর দুরভিসন্ধি নিয়ে পাকিস্তান মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে। পাকিস্তান তার বন্ধু ও মিত্র দেশগুলোর মধ্যে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলমান অধ্যুষিত দেশগুলো ও চীনের মধ্যে এমন এক ধারণা সৃষ্টি করেছে যে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে সেখানকার বামপন্থী শক্তিগুলো আন্দোলন শুরু করেছে এবং সেই আন্দোলন এখন চূড়ান্ত আকার ধারণ করেছে। পাকিস্তান বুঝিয়েছে, বাংলাদেশের জনগণ এখনও পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের আশা করে। পাকিস্তান এমন ধারণাও দিয়েছে—জাতিসংঘে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি যদি অন্তত এক বছর আটকে রাখা যায়, তাহলে বাংলাদেশ আবারও পাকিস্তানের সঙ্গে এক হয়ে যেতে পারে।
দৈনিকবাংলা
চীনের একক ভেটো
চীনের ঘোর আপত্তি অগ্রাহ্য করে বৃহস্পতিবার রাতে স্বস্তি পরিষদ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভের জন্য দাখিলকৃত বাংলাদেশের আবেদনটি তার অন্তর্ভুক্তি কমিটির কাছে প্রেরণ করা হয়। বাংলাদেশ সময় শুক্রবার রাত সাড়ে আটটায় উক্ত কমিটিতে আলোচনা হয়। স্বস্তি পরিষদের ১৫ জন সদস্যের সবাইকে নিয়েই উক্ত কমিটি গঠিত হয়।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভুট্টো উপমহাদেশে স্থায়ী শান্তি স্থাপনের প্রচেষ্টা বানচালের চেষ্টা করছেন বলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ অভিযুক্ত করেছেন। তিনি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা ও শান্তির চেষ্টা বিনষ্ট করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন বলে মন্ত্রী দাবি করেন। বাংলাদেশ তার নীতি থেকে একচুলও নড়বে না উল্লেখ করে আব্দুস সামাদ আজাদ বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে ত্যাগের মনোভাব নিয়ে আমাদের শান্তির নীতি অক্ষুণ্ন রাখবো।’ বাংলাদেশের জাতিসংঘ ভুক্তির আবেদন পত্রে চীন ভেটো প্রয়োগ করবে বলে জানিয়ে এক বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, ‘এটা আশ্চর্যজনক বলে মনে হচ্ছে যে, ভুট্টো নিজেই নিজেকে জাতিসংঘের মুখপাত্র আসনে বসিয়ে সোজা বলে দিলেন যে, বাংলাদেশের জন্য জাতিসংঘের দরজা বন্ধ।’ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আরও বিস্মিত যে, আমাদের আবেদনপত্র সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে জানানোর দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন ভুট্টো।’
কূটনৈতিক মুখপাত্র বলেন, এ ব্যাপারে কার্যক্রম গ্রহণ পিছিয়ে দেওয়ার মতো কোনও পদ্ধতি এখনও বের হয়নি, তবে করা যেতে পারে। পরিষদের বৈঠকে চীনের রাষ্ট্রদূত আলোচ্য সূচির অন্তর্ভুক্ত করেন। বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে ও বিপক্ষে ভোট পড়ে। তবে তিনি (চীনের রাষ্ট্রদূত) আলোচনায় অংশগ্রহণ করেননি। জানা যায়, বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে ১১ ভোট ও বিপক্ষে এক ভোট পড়ে।
চীনের রাষ্ট্রদূত অনেকভাবে আবেদনপত্রটি আলোচ্য সূচির অন্তর্ভুক্ত করার বিরোধিতা করেন। সোমবার নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা চিহ্নিত করার প্রচেষ্টা হিসেবে জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদের আবেদন বিবেচনার বিষয়টি ২১ আগস্ট পর্যন্ত স্থগিত রাখতে সম্মত হয়। চীনের রাষ্ট্রদূত বিষয়টি উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশ সদস্যপদ লাভের যোগ্য নয়। আর তাই চীন বর্তমান অবস্থায় বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির প্রবল বিরোধিতা করে। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের স্বদেশ পাঠানোর জন্য জাতিসংঘ স্পষ্টভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রতি আহ্বান জানায়। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা হলো, ভারত বাংলাদেশ হতে তার সেনাবাহিনীর প্রত্যাহারে ব্যর্থ হয় এবং এখনও ৯০ হাজারেরও অধিক পাকিস্তানি বন্দি আটক রয়েছে। আলাপ আলোচনায় বসতে সম্মত হওয়ার আগেই বাংলাদেশ-পাকিস্তানের স্বীকৃতির জন্য চাপ দিচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, পাকিস্তানকে ব্ল্যাকমেইল করা ও সংশ্লিষ্ট প্রস্তাব বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টির জন্য এটা ভারতের সঙ্গে অশুভ আঁতাত। তিনি বলেন জাতিসংঘের প্রতারণা ও হাস্যস্পদ করা ছাড়া আর কিছুই নয়, সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ এ ব্যাপারে ভারতকে সমর্থন জানাচ্ছে।
ইত্তেফাক
চীনা রাষ্ট্রদূতের ভাষণের জবাবে সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত বলেন, জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভের জন্য জাতিসংঘে প্রস্তাব বাস্তবায়নকে জাতিসংঘ সনদের শর্ত করা হয়নি। তিনি ইসলামকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, তাইওয়ানের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার পূর্বে কোনও প্রস্তাব মেনে নেয়নি। আলোচনার এক পর্যায়ে সোভিয়েত ও চীনের রাষ্ট্রদূতের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত এ প্রশ্নে কোনও কথাই বলেননি। নিরাপত্তা পরিষদের আলোচ্যসূচির অন্তর্ভুক্তির প্রশ্নে সোমালিয়া সুদান ভোট দানে বিরত থেকেছে। ভারতের প্রতিনিধি চীনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, উপমহাদেশের জনগণ এরই মধ্যে এটা বিশ্ববাসীর নিকট প্রমাণ করেছে যে, তারা নিজেরাই এসবের সমাধান করতে সক্ষম। এখন বিশ্বের জাতিপুঞ্জের যা করা উচিত তা হলো—সন্দেহ-সংশয় বিভ্রান্তি ও অবিশ্বাসের পরিবর্তিত পরিবেশে উৎসাহিত করা। আলোচনার পূর্বে রাষ্ট্রদূত সুপারিশ করেন যে, নিরাপত্তা পরিষদ বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখার জন্য তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল পাঠাতে পারে। কিন্তু তিনি তার সুপারিশটি প্রস্তাবনা আকারে উত্থাপন করেননি।
ইত্তেফাক
শাসনতন্ত্রে বিচার বিভাগ পূর্ণ স্বাধীন থাকবে
প্রধান বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, শাসনতন্ত্রে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত থাকবে। কুষ্টিয়ায় স্থানীয় বার কাউন্সিলের লাইব্রেরি প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সংবর্ধনা সভায় তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক সমাজে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অপরিহার্য।’ রাষ্ট্রপ্রধান উল্লেখ করেন, দেশের প্রগতির জন্য আইনশৃঙ্খলা একটি পূর্বশর্ত। তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারের সাহায্য করার জন্য আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানান।
সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন, প্রকাশিত : আগস্ট ১১, ২০২০