বঙ্গবন্ধু লন্ডনে, জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম

উদিসা ইসলাম
 
১৯৭২ সালের ৩০ জুলাই বঙ্গবন্ধুর পিত্তকোষের পাথর অপসারণে অপারেশন হয় লন্ডনে। সে সময় বাংলাদেশে অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। তিনি ২৯ জুলাই জাতির উদ্দেশে ভাষণদানকালে বঙ্গবন্ধুর সুস্থতা কামনায় সকলের দোয়া প্রার্থনা করেন। দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আসুন মোনাজাত করি, প্রতি বাঙালির প্রাণের ধন, নয়নের মণি, আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক বঙ্গবন্ধুকে আল্লাহ তুমি শিগগিরই সুস্থ করে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দাও।
জাতির উদ্দেশে অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের কাজে আত্মনিয়োগ করা বর্তমানে আমাদের সবার কর্তব্য। অগ্রযাত্রার জন্য সকলেরই প্রস্তুত থাকা বাঞ্ছনীয়। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সরকার এ ব্যাপারে সজাগ রয়েছে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভের প্রাক্কালে বাংলাদেশের জয়যাত্রাকে ব্যর্থ করে দেওয়ার জন্য এক আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের সম্ভাবনা সম্পর্কে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এখন বাংলাদেশে একটি বাস্তব সত্য। বৃহৎ শক্তিসহ অধিকাংশ দেশই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। জাতিসংঘকেও বাংলাদেশের অস্তিত্ব স্বীকার করে নিতে হবে। তিনি সকলকে সাবধান করে দিয়ে বলেন, জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভের জন্য বাংলাদেশের আবেদন যাতে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নস্যাৎ না হয় সেজন্য সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।


শিল্পে শান্তি বজায় রেখে অধিক উৎপাদন কাজে সর্বশক্তি নিয়োগের জন্য তিনি দেশের মেহনতি মানুষের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য উৎপাদন বৃদ্ধি আমাদের একান্তই প্রয়োজন। দেশের শ্রমিক সমাজ গড়ে তুলবে আগামী দিনের সুখী সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ।

আগামী দিনে এক সুখী সমৃদ্ধশালী প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি দেশের ছাত্র সমাজের প্রতি আহ্বান জানান। সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, মতপার্থক্যের অর্থ পরস্পরের মধ্যে সংঘর্ষ নয়। বিভিন্ন দল নিয়ে এগিয়ে যাবো এটাই শিক্ষা। ছাত্র সমাজকেও পারস্পরিক আত্মকলহ ভুলে দেশের কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে।
প্রতিবাদ দিবস পালিত

আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্রকে যেকোনও ত্যাগের বিনিময়ে নস্যাৎ করা ও মুজিববাদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের কৃষক-শ্রমিক রাজ কায়েম করার জন্য সংকল্প ঘোষণা করা হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর হামলার বিরুদ্ধে ঢাকাসহ সারা দেশে এই প্রতিবাদ দিবস পালিত হয়। ঢাকা শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি গাজী গোলাম মোস্তফার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় কেন্দ্রীয় বিভিন্ন নেতা উপস্থিত ছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর অপারেশন

১৯৭২ সালের ৩০ জুলাই প্রকাশিত পত্রিকার খবরে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পিত্তের পাথর অপসারণের জন্য ৩০ জুলাই তার দেহে অস্ত্রোপচার করা হবে বলে ঢাকায় পররাষ্ট্র অফিস সূত্রে জানানো হয়। লন্ডনের বিশ্ববিখ্যাত লন্ডন ক্লিনিকে অস্ত্রোপচার হবে। লন্ডন থেকে বাসসের খবরে বলা হয়, হাইকমিশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রাণীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এডওয়ার্ড মুর নিজে অস্ত্রোপচার করবেন। তাকে অস্ত্রোপচারে সাহায্য করবেন ফ্রান্সিস। লন্ডন থেকে এনা জানায়, প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠমহল থেকে বলা হয়, গত শুক্রবার রাতে বঙ্গবন্ধু কিছুটা স্বস্তিতে কাটান। এই দিনে বঙ্গবন্ধুর বেরিয়াম এক্সরে নেওয়া হয়। ব্যক্তিগত চিকিৎসক নুরুল ইসলাম জানান, এক্সরেতে অস্বাভাবিক কিছু পাওয়া যায়নি। যা কিছু ধরা পড়েছে তার সবই ঢাকা পোস্ট গ্রাজুয়েট মেডিকেল ইনস্টিটিউটের অনুরূপ। তিনি জানান, বঙ্গবন্ধু শরীর অস্ত্রোপচারের খুবই অনুকূল।


সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন, প্রকাশিত : জুলাই ২৯, ২০২০ 

SUMMARY

2788-২.jpg