অসুস্থ বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে লন্ডনে কূটনৈতিক তৎপরতা

উদিসা ইসলাম

বঙ্গবন্ধুর লন্ডনে আগমনের সুযোগে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রয়াসে নানা ধরনের কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়। ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতরের আন্ডার সেক্রেটারি শেখ সাহেবকে প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের একটি ব্যক্তিগত বার্তা প্রদান করেন। এদিকে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র দফতরের সেক্রেটারি জেনারেল ও  বৈদেশিক দফতরের দক্ষিণ এশীয় বিভাগের প্রধান প্যান সাদারল্যান্ডের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো লন্ডনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন—লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকার খবরে এমন আভাস দেওয়া হয়।
দৈনিক বাংলা ২৯ জুলাই ১৯৭২
দৈনিক বাংলা ২৯ জুলাই ১৯৭২
১৯৭২ সালের ২৯ জুলাই বাংলাদেশের প্রধান দৈনিক পত্রিকাগুলোতেও এই সংবাদ ফলাও করে প্রকাশিত হয়। এদিকে ব্রিটিশ পত্রিকার খবরে বলা হয়—শেখ মুজিবুর রহমান চিকিৎসার ব্যাপারে ইচ্ছাকৃতভাবেই মস্কোর সাহায্য-সহযোগিতা প্রত্যাখ্যান করেছেন। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই তিনি মস্কোর পরিবর্তে এখানে (লন্ডনে) এসেছেন। ‘পাকিস্তান বাংলাদেশকে আগেই স্বীকৃতি দিতে চায়’ এই শিরোনামে ২৮ জুলাই ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটির প্রতিবেদনে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘গতকাল (২৭ জুলাই) তিনি বলেছেন, আগস্টে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন শুরু হবে। পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবে।’

ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকার খবরে বলা হয়, ‘শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট লন্ডন যেতে প্রস্তুত রয়েছেন। লন্ডনে অবস্থানকালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মিলিত হতে চান তিনি। এ সময়ের মধ্যে পাকিস্তান হয়তো বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়ে দেবে। বাংলাদেশের মুখপাত্র এ খবর সম্পর্কে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। পাকিস্তানের সূত্রে বলা হয়, আগামী সপ্তাহের শেষ নাগাদ সম্ভবত প্রেসিডেন্ট ভুট্টোর লন্ডন সফর সম্পর্কে ঘোষণা করা হবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের লন্ডনে অবস্থানকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করার উদ্যোগ চলছে বলেও দাবি করা হয়।’
ইত্তেফাক ২৯ জুলাই ১৯৭২
ইত্তেফাক ২৯ জুলাই ১৯৭২
এদিকে বঙ্গবন্ধুর এক্সরে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৮ জুলাই বিনিদ্র রাত যাপন করেছেন। পিত্তকোষে পাথরের তীব্র ব্যথার জন্য তাকে ওষুধ দেওয়া শুরু হয়েছে। পরীক্ষা শেষে অপারেশনের তারিখ নির্ধারণ হবে। পিটিআইয়ের বরাত দিয়ে বাংলাদেশের পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয় যে, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ লন্ডনের বাংলাদেশ মিশন থেকে একটি তারবার্তা পেয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, পেটে তীব্র ব্যথার দরুন বঙ্গবন্ধু নিদ্রাহীন রাত অতিবাহিত করেন। তিন সদস্যবিশিষ্ট মেডিক্যাল বোর্ড তাকে পরীক্ষা করেন। পেটের যন্ত্রণা উপশমের জন্য তাকে বেদনানাশক ওষুধ দেওয়া হয়।
  
এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মী হত্যা এবং কর্মীদের ওপর গুপ্ত বাহিনীর হামলার বিরুদ্ধে ২৯ জুলাই প্রতিবাদ দিবস পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। ঢাকাসহ দেশের সর্বত্র প্রতিরোধ দিবস পালন উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান আব্দুর রাজ্জাক বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকায় এই দিবস পালিত হবে বলে জানান। এ উপলক্ষে ঢাকা নগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বায়তুল মোকাররমে জমায়েত অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয়। ঢাকা নগর স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান ফজলে হক ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের প্রত্যেক ইউনিয়নের প্রধান, উপপ্রধান এবং সংগঠনের সব সদস্যের অনুষ্ঠেয় জমায়েতে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেন।
সুত্র:বাংলা ট্রিবিউন, প্রকাশিত : জুলাই ২৮, ২০২০ 

SUMMARY

2787-২.jpg