অস্ত্রোপচারের জন্য লন্ডন যাওয়ার সিদ্ধান্ত বঙ্গবন্ধুর

উদিসা ইসলাম
১৯৭২ সালের ২৬ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অস্ত্রোপচারের জন্য লন্ডন যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তার পিত্তকোষে পাথর জমেছে বলে চিকিৎসকরা যে তথ্য জানিয়েছিলেন লন্ডনে এক জরুরি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তা অপসারণ করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তার সঙ্গে যাবেন তার বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ও জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল। ২৪ জুলাই ঢাকায় অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয় বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়ে ২৫ জুলাই সংবাদ প্রকাশ করে দৈনিক ইত্তেফাক।
সংবাদে বলা হয়, বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজ করবেন। ২৪ জুলাই রাতে ঢাকায় বিবিসির খবরে বিষয়টি পরিবেশিত হয়। এতে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে বঙ্গবন্ধু অসুস্থ। তার তলপেটে ব্যথা অনুভূত হচ্ছে। পরীক্ষা করে দেখা যায় তার পিত্তকোষে পাথর আছে।

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক নজরুল ইসলাম জানান, প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য অস্ত্রোপচারের পক্ষে সম্পূর্ণ উপযুক্ত। প্রফেসর নুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে গঠিত তিন সদস্য বিশিষ্ট মেডিক্যাল বোর্ড প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। ২৪ জুলাই সন্ধ্যায় ঢাকায় প্রকাশিত এক স্বাস্থ্য বুলেটিনে বিস্তারিত জানানো হয়। অন্য ‍দুজন চিকিৎসক হলেন পোস্ট গ্রাজুয়েট মেডিসিন ইনস্টিটিউটে ডা. আশরাফ এবং সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের ডা. বখতিয়ার হোসেন।


আওয়ামী লীগের মুখপাত্রদের বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থা এনা জানায়, প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি লন্ডনে যাওয়ার জন্য সরকার একটি বিমান ভাড়া করার চেষ্টা করছে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, বঙ্গবন্ধুর জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বোয়িং ভাড়া করা হচ্ছে। এদিকে প্রধান বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী অসুস্থ প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে তার ধানমন্ডিস্থ বাসায় যান। তিনি বঙ্গবন্ধুর স্বাস্থ্য সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেন এবং সেখানে এক ঘন্টারও বেশি সময় থাকেন।

অস্ত্রের ভাষা নয়, জনগণের শক্তি ও সমর্থন

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান ও আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক জীবনের বিনিময়ে হলেও সর্বাত্মক শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ অস্ত্রের ভাষায় বিশ্বাস করে না। আওয়ামী লীগ আজীবন বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষের সমর্থন ও ভালোবাসাকে সম্মান করে অস্ত্রের ভাষায় বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে। তাই অস্ত্রের ভাষায় নয় জনগণের সমর্থন ও শক্তিতে বলিয়ান হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মুজিববাদ প্রতিষ্ঠা করবে।

আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক প্রধান ১৯৭২ সালের ২৪ জুলাই বিকালে সার্কিট হাউসে আওয়ামী লীগ অফিস প্রাঙ্গণে আয়োজিত ঢাকা নগর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক দলের সমাবেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ, ঢাকা নগর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক প্রধান ফজলুর রহমানসহ আরও অনেকে বক্তৃতা করেন। উল্লেখ এর আগে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক প্রধান আব্দুর রাজ্জাকের ওপর এবং এদিন সন্ধ্যায় আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর ওপর হামলার প্রতিবাদে সভার আয়োজন করা হয়। হামলার তীব্র নিন্দা করে তার ভাষণে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের মানুষ শান্তি চায়। বঙ্গবন্ধুকে দেশবাসী কথা দিয়েছেন তারা তিন বছর কিছুই চায় না। চায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ গঠন করতে। কিন্তু মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী ও সুবিধাবাদী চীন বাংলাদেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকুক বাংলাদেশের মানুষ সুখে শান্তিতে বাস করুক তা চায় না। উস্কানির মুখে উত্তেজিত না হয়ে জনগণের আস্থা ও ভালবাসা অর্জনের মাধ্যমে মুজিববাদ কায়েম করার জন্য স্বেচ্ছাসেবকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

কর্মকর্তারা পাকিস্তানে বরখাস্ত

পদস্থ সকল বাঙালি অফিসারকে বরখাস্ত করে পাকিস্তান। বরখাস্তকৃত উচ্চপদস্থ বাঙালি অফিসারদের মধ্যে রয়েছেন শফিউল আজম, একেএম আহসান আনিসুজ্জামান ও মুজিবুল হক। এদের সকলকে ১৯৭২ সালের ১০ জুলাই বরখাস্ত করা হয়। বিশ্বস্ত সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এনা জানায়, বরখাস্ত করার পর মুহূর্ত থেকেই এইসব উচ্চপদস্থ বাঙালি অফিসারদের সকল সুবিধা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে অপশন দেওয়ার জন্যই তাদের সকলকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন, প্রকাশিত : জুলাই ২৪, ২০২০ 

SUMMARY

2783-২.jpg