উদিসা ইসলাম
জাকার্তায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী (তৎকালীন) আব্দুস সামাদের আলোচনা শেষে প্রকাশিত বাংলাদেশ-ইন্দোনেশিয়া যৌথ ইশতেহারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টোর বৈঠক অনুষ্ঠানে ইন্দোনেশিয়ার দেওয়া প্রস্তাবের উল্লেখ ছিল না। এর আগের দিন সফরসূচির নির্ধারিত বৈঠকে ইন্দোনেশিয়া বৈঠকের প্রস্তাব তুললে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তা তৎক্ষণাৎ নাকচ করে দেওয়া হয়। ১৯৭২ সালের ২৪ জুলাই প্রকাশিত পত্রিকার খবরে এ তথ্য জানানো হয়।
দেশে ফেরার পথে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ বলেন, যেকোনও বৈঠকের আগে পাকিস্তানকে অবশ্যই আটক বাঙালিদের ফিরিয়ে দিতে হবে। এর আগে বঙ্গবন্ধু একাধিকবার আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক সভায় জানিয়ে দেন, বাস্তবতা মেনে নিয়ে আগে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিলেই কেবল পাকিস্তানের সঙ্গে কোনও বৈঠক বা আলোচনার সুযোগ আছে, এর আগে নেই।
ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ সফরে আসবেন
ইশতেহারে সিমলা চুক্তি ভারতীয় উপমহাদেশে শান্তি স্থাপনের সহায়ক হবে বলে উল্লেখ করা হয়। বৈঠকের মধ্য দিয়ে পারস্পরিক সম্মান ও স্থায়ী শান্তি এবং উপমহাদেশের দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে উল্লেখ করে পদক্ষেপকে স্বাগত জানানো হয়।
বঙ্গবন্ধুকে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ
পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পিত্তকোষে পাথর হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এক স্বাস্থ্য বুলেটিনে এ কথা জানান। যত দ্রুত সম্ভব তার অপারেশন করতে হবে বলে বুলেটিনে জানানো হয় বলে বাসসের বরাত দিয়ে দৈনিক বাংলা পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়। তার স্বাস্থ্য ভালো থাকায় এখনই অপারেশন করতেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে বুলেটিনে জানানো হয়।
ছাত্রলীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সংঘর্ষ
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের তিন দিনব্যাপী সম্মেলনের সমাপ্তি দিবসে দুটি পৃথক পৃথক সংঘর্ষে একজন পুলিশ কর্মকর্তা, একজন ট্রাফিক পুলিশ, এক ছাত্রীসহ শতাধিক ছাত্র ও পথচারী আহত হন। আহতদের মধ্যে ২৮ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান আব্দুর রাজ্জাক, ছাত্রনেতা আসম আব্দুর রব, ছাত্রলীগের নবনির্বাচিত সহ-সভানেত্রী মমতাজ বেগমসহ আরও অনেকে আহত হন।
এদিকে সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাকের ওপর হামলা নিন্দনীয়। তিনি বলেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ হামলা চালানো হয়েছে। এ হামলার পেছনে স্বাধীনতা হরণের ষড়যন্ত্র রয়েছে।
ঘটনা সম্পর্কে ছাত্রলীগও তাদের বক্তব্য দিয়ে বিবৃতি দেয়। তাদের দাবি, বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল যাওয়ার সময় একদল সশস্ত্র ব্যক্তি হামলা চালায়। তারা এই হামলার প্রতিবাদ জানায়। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তাদের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলে, এই শান্তিপূর্ণ মিছিলে দেশের বিভিন্ন অংশ হতে আগত হাজার হাজার প্রতিনিধি ছিল। এই মিছিলের প্রথম অংশ যখন পুরাতন রেল গেটের কাছে আসে সে সময় একদল ছাত্রলীগ নামধারী মাওবাদী গুণ্ডা শান্তিপূর্ণ মিছিলের সামনে পিস্তল, বোমা, বেয়নেট, ড্যাগার, লাঠি উঁচিয়ে হামলা চালায়।
অবশেষে শিক্ষা কমিশন
২১ সদস্যবিশিষ্ট শিক্ষা কমিশনের সদস্যদের তালিকা প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে দৈনিক বাংলার খবরে প্রকাশ করা হয়। ১৯৭২ সালের ২৪ জুলাইয়ের পত্রিকায় এ খবর প্রকাশ করে বলা হয়, আগামী দু-একদিনের মধ্যে তালিকা সরকারিভাবে ঘোষণা করা হবে। শিক্ষা কমিশনে উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে রয়েছেন ড. আনিসুজ্জামান, শরফুদ্দিন মুফতি, জহিরুল ইসলাম, স্বদেশ রঞ্জন বড়ুয়া প্রমুখ। প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ কুদরত-ই খুদা ও কবীর চৌধুরীকে চেয়ারম্যান ও সদস্য সম্পাদক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে শিক্ষা কমিশন গঠনের কথা সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয় এর আগেই। তবে সে সময় সদস্যদের নাম জানানো হয়নি। বিশ্বস্ত সূত্রে দৈনিক বাংলা খবর প্রকাশ করেছে যে চার-পাঁচজন রদবদলের পর এই প্রথমবার শিক্ষা কমিশনের পূর্ণাঙ্গ তালিকা ঘোষণা হতে যাচ্ছে। খবরে বলা হয়, শিক্ষা কমিশন আগামী ছয় মাসের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন একটি রিপোর্ট পেশ করবেন। এ রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে কেরানী তৈরির বর্তমান যে শিক্ষাব্যবস্থা তা পরিবর্তনে কাজ শুরু হবে।
সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন, প্রকাশিত : জুলাই ২৩, ২০২০