চাটুকারদের বিশ্বাস না করতে বঙ্গবন্ধুকে আবুল হাশিমের উপদেশ

উদিসা ইসলাম

অবিভক্ত বাংলার মুসলিম লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশিম জাতির জনক প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাজনৈতিক চাটুকারদের বিশ্বাস না করার এবং তাদের কাছ থেকে দূরে থাকার উপদেশ দেন। ১৯৭২ সালের ২২ জুলাই আবুল হাশিম পল্টন ময়দানে শাজাহান সিরাজ সমর্থিত ছাত্রলীগের সম্মেলনে দ্বিতীয় দিনে এক আলোচনা সভায় বক্তৃতায় এই উপদেশ দেন।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আবুল হাশিম তার ভাষণে বঙ্গবন্ধুর প্রতি উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন, আজকের বাংলাদেশের জনপ্রিয় নেতা শেখ মুজিবুর রহমান যখন আপনাদের মতো যুবক ছিলেন তখন আমার কাছে রাজনৈতিক জীবন আরম্ভ করেন। তিন বছর আমি তাকে রাজনৈতিক কাজ শিখিয়েছি। তাকে অনেক উপদেশ দিয়েছি। এই বয়সে তাকে কয়েকটি উপদেশ দেওয়ার অধিকার আমার আছে। গত সাধারণ নির্বাচনের পর তার সঙ্গে সরাসরি আমার সাক্ষাৎ হয়নি। তাই তিনি সমাবেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর উদ্দেশে বলেন, জীবনে অনেক দেখেছি। মানুষ যখন ক্ষমতায় আসে তখন হাজার হাজার চাটুকার ঘুরতে থাকে। তারা মানসিক উন্নতির জন্য আসে না, বৈষয়িক উন্নতির জন্য আসে। রাজনৈতিক স্বার্থ শিকারি এরা আপনাকে ও আপনার দলকে জনগণের নিকট থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে।
বঙ্গবন্ধু আবারও অসুস্থ

এক মাসের ভিতর আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধু। ভীষণভাবে অসুস্থ এই নেতাকে পূর্ণাঙ্গ আরাম করার পরামর্শ দেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক। অ্যাবডোমেনিয়াল পেইনে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সকলের সাক্ষাত নিষিদ্ধ করা হয়। বেগম মুজিব সার্বক্ষণিকভাবে তার সঙ্গে রয়েছেন বলে খবরে বলা হয়। বিশ্রাম না নেওয়া এবং নানা অনিয়মের কারণেই আবারও বিছানায় পড়েন বঙ্গবন্ধু। নিয়ম মেনে চলার কথা থাকলেও তিনি দুপুরের খাবার খেতে বিকাল পার করে ফেলতেন। এ সময় তিনি একের পর এক জেলা শহর সফরের কাজ করেছেন। যন্ত্রণা উপশমের জন্য বঙ্গবন্ধুকে পূর্ণ বিশ্রাম নিতে বলা হয়। এদিন দুপুরে ইনজেকশন নেওয়ার পর তিনি ঘুমিয়ে পড়েন এবং সারা দুপুর ঘুমান। বিকাল তিনটার দিকে তার ঘুম ভাঙলেও বিছানা থেকে ওঠার মতো শক্তি ছিল না। ব্যথা কমে গেলেও শারীরিকভাবে তিনি অত্যন্ত দুর্বল ছিলেন। পুনরায় অসুস্থ হওয়ার ১৬ দিন আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একই পেটের ব্যথায় অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সফরের কারণে সৃষ্ট ক্লান্তি, অতিরিক্ত পরিশ্রম ও অনিয়মই অসুস্থতা ফিরে আসার অন্যতম কারণ বলে জানান চিকিৎসকরা। তারা জানান,  দেশের প্রতি কর্তব্য তাকে বেশি দিন বিছানায় আটকে রাখতে পারে না। মাত্র পাঁচ দিনের পর তিনি দুর্বল ও অসুস্থ শরীর নিয়ে ছুটে এসেছিলেন গণভবনে। সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা কাজ করে গেছেন।
সে সময়ও ভাইরাস ভীতিতে ছিল ঢাকা

১৯৭২ সালের এপ্রিলের দিকে রাজধানী ঢাকায় ভাইরাস পাণ্ডু রোগ দেখা দেয়। ওই বছর এপ্রিল থেকে শহরে এই রোগের ব্যাপক প্রভাব দেখা যায় এবং পরবর্তীতে তা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে। পাণ্ডু রোগে আক্রান্ত রোগীদের শতকরা ৭০ ভাগ শিশু ও কিশোর-কিশোরী। দূষিত পানি ও দুধ থেকে এ রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বলে পত্রিকার খবরে বলা হয় ।



সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন, প্রকাশিত : জুলাই ২২, ২০২০ 

SUMMARY

2781-২.jpg