জাহিদ রহমান
‘৭৫ এর ২৮ জুলাই জাতীয় ফুটবল দল মালয়েশিয়াতে মারদেকা কাপ ফুটবলে অংশ নিতে রওয়ানা হয়। অমলেশ সেন, কাজী সালাহউদ্দিনদের সাথে আমিও তখন জাতীয় দলে খেলি। বয়সে আমি সবচেয়ে ছোট একজন। আগের দিন ২৭ জুলাই আমরা গণভবনে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে আর্শীবাদ নিয়ে আসি। আমি বঙ্গবন্ধুর পায়ের কাছে বসেছিলাম। মালয়েশিয়াতে আমাদের সাথে ‘লিডার অফ দ্যা টিম’ হিসেবে যাওয়ার কথা ছিল আবাহনী ক্রীড়া চক্রের সভাপতি আমাদের প্রিয় শেখ কামাল ভাই-এর। কিন্তু ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাবেন এই কারণে শেখ কামাল ভাই তাঁর মালয়েশিয়া যাওয়া বাতিল করেন। সেদিন কামাল ভাই জাতীয় ফুটবল দলের সাথে মালয়েশিয়াতে গেলে তিনি ঘাতকের হাতে নিহত হতেন না, বেঁচে যেতেন। আর কামাল ভাই বেঁচে থাকলে এদেশের ক্রীড়াঙ্গন কতোটা এগিয়ে যেত তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার প্রতিবাদে আমরা আবাহনীর খেলোয়াড়রা টুর্নামেন্টে ম্যাচ খেলতে অস্বীকৃতি জানাই। ২৯ আগস্ট আমরা মালয়েশিয়া থেকে ফেরত আসি। বিমানবন্দরে নেমে আমরা খুব ভয়ে থাকি। বিমানবন্দরে সেনাবাহিনী কর্তৃক সেদিন আমাদের অশোভন আচারণের শিকারও হতে হয়।’ শেখ কামাল নিহত ও পরবর্তী ঘটনা সম্পর্কে এই কথামালা সাবেক তারকা ফুটবলার আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নুর। খুব অল্প বয়সে যিনি শেখ কামালের সান্নিধ্য ও অনিঃশেষ স্নেহ পেয়েছিলেন।
দেশের ক্রীড়াঙ্গনে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠপুত্র মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল। মাত্র ছাব্বিশ বছর বেঁচেছিলেন । কিন্তু এই ছোট্ট জীবনে দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে উচ্চমাত্রায় নেওয়ার তীব্র আকাঙ্খা প্রোথিত ছিল তাঁর মাঝে। খেলাধুলার বাইরে তিনি নিজেকে কখনই ভাবতেন না। তাঁর ক্রীড়া দর্শনটাও ছিল আবেগের চেয়ে বাস্তবতায় পরিপূর্ণ। আর তাইতো ক্রীড়াঙ্গনে আধুনিকতা যুক্ত করার স্বপ্ন শুরুতেই দুচোখ ভরে দেখেছিলেন। আজ ৫ আগস্ট আবাহনী ক্রীড়া চক্রের (বর্তমানে আবাহনী লিমিটেড) প্রতিষ্ঠাতা এবং আধুনিক ফুটবলের অগ্রদূত শেখ কামালের ৭১তম জন্মদিন। ১৯৪৯ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন দেশের অন্যতম এই ক্রীড়া সংগঠক। আবার এ মাসেই ঘাতকের বুলেটে নির্মমভাবে নিহত হয়েছিলেন তিনি। তাঁর জন্ম আর মৃত্যু তারিখের ব্যবধান মাত্র দশ দিন। স্বভাবতই শেখ কামাল অনুরাগীদের কাছে আগস্ট মাসের গুরুত্ব অন্যরকম। আগস্ট এলেই শেখ কামালকে একটু অন্যভাবে মনে করতে হয়। বিশেষ করে রণাঙ্গণ থেকে ফিরে এসে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে তার নিবিড় সম্পৃক্ততা, আবাহনী ক্লাবকে আধুনিক ধাঁচে গড়ে তোলা, খেলাধুলোয় আবাহনীকে অন্য এক উচ্চমাত্রায় নিয়ে যাওয়া, ফুটবলে আধুনিকতার সংযোজন এসবই শেখ কামালকে আজো অন্যরকম এক মর্যাদায় অভিষিক্ত করে আছে। আর এ কারণেই ক্রীড়াঙ্গনের সাথে এ নামটি ভিন্নতরোভাবে উচ্চারিত হয়।
৭৫-এর ১৫ আগস্ট পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার রাতে ঘাতকদের বুলেটে নির্মমভাবে নিহত হন শেখ কামালও। মারা যাওয়ার আগে ঘাতকদের প্রতিরোধে নিজেই স্টেনগান দিয়ে গুলি ছুঁড়েছিলেন। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি ঢাকা বিশ¦িবদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে লেখাপড়া করা ক্রীড়ানিবেদিত এই প্রাণটির। শুধু খেলাধুলো নয়, তিনি নাটকও করতেন, সেতারও বাজাতেন শখের বশে। খেলাধুলো, নাটক, আড্ডা সবখানেই তাঁর প্রাণবন্ত উপস্থিতি ছিল মৃত্যু অব্দি। তবে ক্রীড়াঙ্গনে বড় বেশি অনুপ্রেরণা হয়ে আছেন তিনি।
শেখ কামালকে নিয়ে এ দেশের একটি মহল দিনের পর দিন নানাবিধ কল্প কাহিনী ঝড়িয়ে তাঁর চরিত্রহননের প্রাণান্তকর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু শেখ কামালের মতো একজন ক্রীড়াসংগঠকের মৃত্যুতে যে এ দেশের ক্রীড়াঙ্গনের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে এই বিষয়টি তার ঘোরশত্রুও স্বীকার করতে বাধ্য হবেন। শেখ কামাল এবং তার ক্রীড়াসংশ্লিষ্টতা নিয়ে যারা গভীরে প্রবেশ করেছেন তাদের কাছে এ বিষয়টি মোটেও অস্পষ্ট নয় যে, ক্রীড়া নিবেদিত এই মানুষটি দেশের ক্রীড়াঙ্গনে কেবলই দিতে চেয়েছিলেন আধুনিকতার ছোঁয়া, বিনিময়ে কিছুই নিতে চাননি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেই স্বাক্ষরও রেখে যান তিনি। আবাহনী ক্রীড়া চক্রকে চোখের পলকে তিনি জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে গিয়েছিলেন। রাজধানীর শাহীন স্কুল এন্ড কলেজের ক্লাশমেট আর ক্রিকেট মাঠের ঘনিষ্ঠ বন্ধু দেশের কিংবদন্তী ফুটবলার কাজী সালাউদ্দিনকে হ্নদয় বন্ধন দিয়ে তিনিই টেনে এনেছিলেন আবাহনী ক্লাবে। আবাহনীকে শুধু বাংলাদেশ নয়, এশিয়ার অন্যতম এক ক্লাবেও পরিণত করতে চেয়েছিলেন তিনি। আর তাই মৃত্যুর আগের দিনও আবাহনী ক্লাবের নতুন ভবনে দাঁড়িয়ে বন্ধুদের সামনে সেই অভিপ্রায়ই ব্যক্ত করেছিলেন। কিন্তু তাঁর আগেই ঘাতকরা তাঁকে চিরদিনের জন্যে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেন।
আজ ধানমন্ডিতে আবাহনী ক্লাবটি যেখানে দাঁড়িয়ে ওখানে তখন নতুন ভবন তৈরি হচ্ছিলো। ১৪ আগস্ট সর্বশেষ নতুন ক্লাব চত্বরে দাঁড়িয়ে বন্ধু আর ক্লাব সহযোদ্ধাদের বলেছিলেন এখানে একটি পরিপূর্ণ সমন্বিত ক্রীড়াকমপ্লেক্স গড়ে তুলবেন। শুধু তাই নয়, বন্ধুদের এও বলেছিলেন, আবাহনী ক্লাবে তার স্ত্রী সুলতানাও বসবে। তার ইচ্ছে ছিল সুলতানাকে দিয়ে আবাহনী ক্লাবের একটি ‘আবাহনী উইমেন উইং’ সেকশন গড়ে তুলবেন। নারী খেলোয়াড় তৈরিতে যে উইং মুখ্য ভূমিকা পালন করবে। শেখ কামাল আবাহনী ক্লাবের ম্যানেজার সুভাষকে এও বলেছিলেন ‘শুধু ছেলেদের কথা ভাবলে হবে না, মেয়েদের কথাও ভাবতে হবে। তোদের ভাবিও এই ক্লাবে বসবে।’ শেখ কামাল যে এক অসাধারণ ক্রীড়া সংগঠক ছিলেন তা সন্দেহাতীত। তার জাদুকরী সাংগঠনিক দক্ষতার কারণেই আবাহনী ক্রীড়া চক্র ( বর্তমানে আবাহনী লি.) এক আধুনিক এবং জনপ্রিয় ক্লাবে পরিণত হয়েছিলো।
শেখ কামাল এবং আবাহনী তাই অভিন্ন এক নাম। এই ক্লাবের প্রতিটি কণায়, স্মৃতিতে জড়িয়ে আছে শেখ কামালের নাম। ছাত্র জীবনেই শেখ কামাল এই ক্লাবটিকে তাঁর হ্নদয়ের সাথে বেঁধে নিয়েছিলেন। এর পেছনে অবশ্য সঙ্গত কারণও ছিল। শেখ কামালের সতীর্থদের কাছ থেকে জানা গেছে, ছাত্রজীবনে শেখ কামাল আপাদমস্তকক একজন খেলোয়াড় ছিলেন। নিয়মিত ক্রিকেট, বাস্কেটবল এবং ভলিবল খেলতেন। কাজী সালাহউদ্দিনসহ অন্যান্য বন্ধুদের সাথে ধানমন্ডি ও সোবহানবাগ মাঠেই তিনি বেশি খেলতেন। স্বভাবতই তখন ধানমন্ডি, কলাবাগান এলাকার খেলোয়াড়, ক্রীড়া সংগঠকদের সাথে তার ছিল মধুর সম্পর্ক। আবার শেখ মুজিবের মতো নেতার ছেলে খেলোয়াড় হওয়ার কারণে অগ্রজেরা বড় বেশি তাঁকে স্নেহ করতেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধের আগেই শেখ কামাল তরুণ সংগঠক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি প্রথম ধানমন্ডি ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরের বছরই শেখ কামাল আবাহনী সমাজ কল্যাণ সমিতির সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। ঐ সময় বর্তমান যে আবাহনী লি. তার নাম ছিল আবাহনী সমাজ কল্যাণ সমিতি। আবাহনী সমাজ কল্যাণ সমিতি গঠিত হয় ৬৬ সালের মার্চ মাসে। প্রতিষ্ঠা লগ্নে আবাহনী সমাজ কল্যাণ সমিতির সভাপতি ছিলেন গোলাম আওলিয়া তালুকদার এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন হারুনুর রশিদ। সে সময় আবাহনী সমাজ কল্যাণ সমিতি গড়তে মুখ ভূমিকা পালন করেন- বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তায় থাকা বাচ্চু, ওমর, মাহফুজ, হারুন, সেন্টু, শফি, মঞ্জু, বাদল, বাবলু, জিলু, ফিরোজ, মাসুম, খোকা, মোশাররফ, ফারুক, কমলসহ আরো অনেকে। জানা যায়, ঐ সময় আবাহনীর সাথে শেখ কামালের সম্পৃক্ততা গড়ে তোলা ব্যাপারে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান নিজে। একদিন বঙ্গবন্ধু নিজে ছেলে শেখ কামালকে ডেকে বলেন, সে যেনো আবাহনীর সমাজ কল্যাণ সমিতির সাথে যুক্ত হয়। এর পর শেখ কামাল আবাহনী সমাজ কল্যাণ সমিতিতে যুক্ত হলে এক নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়।
শেখ কামাল আবাহনী সমাজ কল্যাণ সমিতির নেতৃত্বে আসার পরপরই প্রথমবারের মতো আবাহনী সংশ্লি¬ষ্ট মাঠে আয়োজন করেন ‘তোফাজ্জেল হোসেন মানিক মিয়া’ স্মৃতি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। জানা যায়, আজকের যে আবাহনী মাঠ ওখানে সরকারের পক্ষ থেকে ২২ জন সিএসপির নামে প্ল¬ট বরাদ্দের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন স্থানীয় খেলোয়াড় ও ক্রীড়াসংগঠকরা। বিষয়টি সুকৌশলে রুখে দিতেই সে সময় আয়োজন করা হয় ‘তোফাজ্জেল হোসেন মানিক মিয়া’ স্মৃতি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। এই টুর্নামেন্ট শেখ জামাল ইলেভেন ক্রিকেট টিম নামে একটি দলও অংশগ্রহণ করে। এরপর পিতাকে শেখ কামাল বুঝাতে সক্ষম হন খেলার মাঠ বরাদ্দ দেওয়া যাবে না। বঙ্গবন্ধু তাই সিএসপিদেও প্লট দেওয়া বাতিল করতে নির্দেশ দেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ক্লাবের সবাইইকে নিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। নিজে সেনাবাহিনীতে কমিশন প্রাপ্ত হয়ে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেন। বাংলাদেশ স্বাীধীন হলে সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করে শেখ কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবনে ফিরে আসেন। নিজেকে আরো ব্যাপকমাত্রায় খেলাধুলোর সাথে সম্পৃক্ত করেন।
এদিকে আবাহনী সমাজ কল্যাণ সমিতি মূলত আবাহনী ক্রীড়া চক্র নামে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ৭১ এর আগেই। ১৯৭২ সালে শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান উপদেষ্টা করে আবাহনী ক্রীড়া চক্র প্রথম কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। জানা যায়, ঐ বছর প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগে নিজের কোনো একটি ফুটবল দলকে খেলানোর অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন শেখ কামাল। কিন্তু সারাসরি এরকম কোনো সুযোগ না থাকায় প্রথম বিভাগে ওঠা মোহাম্মদপুরের ইকবাল স্পোটিং ক্লাবের সমস্ত স্বত্ত্ব কিনে আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে শেখ কামাল এবং আবাহনী ক্রীড়া চক্র নামে নতুন ক্লাব রেজিস্ট্রেশন করান। সহযোগী হিসেবে পাশে পান পান্না, হারুন, মন্টু, তারেক, জিলানী, শাহান, বরকত, আলী ইমাম, সাহান, সেন্টু, বুলু, জামাল, শাহরিয়ারসহ আরো অনেককে। শেখ কামালের অনুপ্রেরণায় বঙ্গবন্ধু কণ্যা আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানাসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের আরো অনেকেই এই ক্লাবের সাথে যুক্ত হন। উল্লেখ্য এসময় আবাহনী ক্লাব ছিল ধানমন্ডি ১৯ নম্বর রোডে, ওখান থেকেই সব কার্যক্রম পরিচালনা হতো।
আবাহনী ক্লাবকে প্রাণের চেয়েও ভালোবাসতেন শেখ কামাল। আর তাই মৃত্যুর আগের দিনও ১৪ আগস্ট স্ত্রীকে নিয়ে তিনি নতুন ক্লাবভবনে এসেছিলেন। জানা যায়, ১৪ আগস্ট সন্ধ্যায় শেখ কামাল স্ত্রী সুলতানাসহ ক্লাবে আসেন। সে সময় ক্লাবপ্রাঙ্গনে উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে ছিলেন-হারুনুর রশিদ, ইকবাল হাসান টুকু, শেখ মারুফ, ফারুক, বাচ্চু, লে. কাদেরসহ আরো কয়েকজন। এসময় ক্লাব চত্ত্বরে দাঁড়িয়ে খেলাধুলো নিয়ে অনেক স্বপ্নের কথা বলেন শেখ কামাল। মিটিং শেষ করে শেখ কামাল স্ত্রী অ্যাথলেট সুলতানাকে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে যান। এটিই ছিল শেখ কামালের সর্বশেষ আবাহনী ক্লাবে আসা। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে নিহত হওয়ার পর আবাহনী ক্লাবের ওপর দিয়ে নানা সময়ে নানাভাবে ঝড়-ঝাপটা বয়ে গেছে। আর সে সব ঝড় ঝাপটা শেখ কামালের বন্ধু, সহযোগী, ভক্তরা অনেককিছু মাথায় নিয়ে সামাল দিয়েছেন। ১৫ আগস্টের পর আবাহনী ক্লাব সেনাবাহিনী কর্তৃক লুটপাট হয়। শুধু এই নয়, পঁচাত্তর পরবর্তীতে ফুটবল লীগেও তাদের অংশ নিতে হয় বিরাট ঝুঁকি নিয়ে।
দেশের ক্রীড়াঙ্গনে শেখ কামাল নামটি সত্যিই অন্যরকম এক মাধুর্যতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। নিন্দুকেরা যায় বলুক না কেন-শেখ কামাল এ দেশের ক্রীড়াঙ্গনে আধুনিকতার অন্যতম রুপকার। বেঁচে থাকলে তাঁর হাতের ছোঁয়ায় এ দেশের ক্রীড়াঙ্গন আরো সমৃদ্ধ হতো সন্দেহাতীতভাবেই। ক্রীড়াঙ্গনে শেখ কামাল সফল ছিলেন বলেই আজো তাঁর নামটি অম্লান, আজো তিনি অনিঃশেষ অনুপ্রেরণা।
শেখ কামাল সম্পর্কে যেমনটি মূল্যায়ন করেন সাবেক তারকা ফুটবলার আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু। ‘কামাল ভাই সত্যিকার অর্থেই বিশাল মনের ক্রীড়াঅন্ত প্রাণ এক মানুষ ছিলেন। আবাহনী ক্লাবকে তিনি মনে প্রাণে ভালবাসতেন। রণাঙ্গন থেকে ফিরে আসা এই বীর মুক্তিযোদ্ধা এদেশের ক্রীড়াঙ্গনকে উচ্চমাত্রায় নিয়ে যাওয়ার এক বিরাট এক স্বপ্ন এঁকেছিলেন। তিনি সবাইকে এগিয়ে যেতে বলতেন, অনুপ্রেরণা দিতেন। নিজে ক্রিকেট, ফুটবল খেলতেন। অত অল্প বয়সে যে একজন তরুণ খেলাধূলোয় আধুনিকতা যুক্ত করার কত বড় স্বপ্ন দেখতে পারেন তা এখনও আমাকে ভাবায়। আমি মনে করি এরকম একজন উদার, দৃঢ় মনোবল সম্পন্ন স্বাপ্নিক ক্রীড়া সংগঠক এ দেশে বেঁচে থাকলে ক্রীড়াঙ্গন আরও অনেক অনেক এগিয়ে যেত। প্রতিটি ক্ষণেই আমরা তাঁকে ভীষণ মিস করি। তাঁকে মিস করবে আগামী প্রজন্মও।’