উদিসা ইসলাম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ছাত্র অটো-প্রমোশনের দাবিতে উপাচার্যসহ বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধান, ডিন, হল প্রভোস্ট ও প্রক্টরদের ঘেরাও করে রাখে। তাদের উদ্ধারে বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজির হয়ে শিক্ষার্থীদের তিরস্কার করেন। শিক্ষকদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করায় তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমিও ছাত্রজীবনে ছাত্র রাজনীতি করেছি। কখনও শিক্ষকদের সঙ্গে এরকম ব্যবহার করিনি।’ ১৯৭২ সালের ২১ জুলাইয়ের দৈনিক পত্রিকার খবরে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
খবরে বলা হয়, সেসময় উপাচার্যসহ শিক্ষকরা অটো-প্রমোশন নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সভায় মিলিত হয়েছিলেন। এসময় একদল ছাত্র অটো-প্রমোশনের দাবিতে উপাচার্য সহ বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধান, ডিন, হল প্রভোস্ট ও প্রক্টরদের ঘেরাও করে রাখে। খবর পেয়ে বিকাল নাগাদ বঙ্গবন্ধু সেখানে যান এবং শিক্ষকদের উদ্ধার করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে বঙ্গবন্ধু বিক্ষোভকারীদের প্রতি ঘেরাও তুলে নিতে বলেন। বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিদায় নেওয়ার সময় ছাত্ররা ‘আমার ভাই তোমার ভাই মুজিব ভাই’ স্লোগান দিতে থাকে।
উল্লেখ্য, এর আগে বেশ কিছুদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অটো-প্রমোশনের দাবি জানিয়ে আসছিল। শিক্ষকরা এ ব্যাপারে কঠোর মনোভাব গ্রহণ করেন এবং অটো-প্রমোশন না দেওয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেন। এ সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়ার পর একদল ছাত্র উপাচার্যের কক্ষ ঘেরাও করে। তার টেলিফোন ও বৈদ্যুতিক তার কেটে দেয়। পানিও বন্ধ করে দেয়। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাপসিবল গেট বন্ধ করে দেয়। শিক্ষকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে বলে জানা যায়। ওই সময় অন্যান্য শিক্ষক ছাত্রদের ঘেরাও প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানান। অসুস্থ এবং বৃদ্ধ শিক্ষকরা তাদের কথার মান রাখতে বলেন। কিন্তু এরপরও ছাত্ররা শিক্ষকদের আটক করে রাখলে এক শিক্ষক অজ্ঞান হয়ে যান। এরপর শিক্ষকরা বঙ্গবন্ধুর শরণাপন্ন হন।
বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ২০ জুলাই ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন করবেন বলে পত্রিকার খবরে প্রকাশ করা হয়। বলা হয় প্রধানমন্ত্রী (তৎকালীন) শেখ মুজিবুর রহমান সকাল ৯টায় শহীদ ময়দানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের তিন দিনব্যাপী জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন করবেন। ওই সুনির্দিষ্ট সম্মেলনে প্রায় এক লাখ প্রতিনিধি যোগ দিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়। সম্মেলনের আগেই বিপুল সংখ্যক প্রতিনিধি ঢাকায় এসে পৌঁছান। সম্মেলন উপলক্ষে সংগঠনের সভাপতি নুরে-আলম সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক ইসমত কাদির গামা বলেন, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়ে ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
১৯৭৪ সালের জানুয়ারি/ফেব্রুয়ারিতে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম আদমশুমারি অনুষ্ঠিত হবে বলে সময় নির্ধারণ করা হয়। আদমশুমারি কমিশনার বাহাউদ্দিন আহমেদ জানান, এ ব্যাপারে আদমশুমারির কাঠামো পুনর্গঠিত হচ্ছে। আদমশুমারির গুরুত্ব উপলব্ধি করে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতার উদ্দেশ্যে জনগণের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচারের জন্য বিপুল পরিমাণ প্রচারপত্র তৈরি করা হয়। ১৯৭২ সালের ১৯ জুন ১৫ যুদ্ধশিশুকে কানাডা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অভিভাবকত্ব নিয়ে শিশুদের দত্তক নিয়ে যান অনেকে। ১৯৭২ সালের ২০ জুলাই ডেইলি অবজারভারের প্রধান খবর ছিল এটি।
বাংলাদেশ সরকার যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকাগুলোতে ২৪ হাজার গৃহনির্মাণের এক ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এই পরিকল্পনা কার্যকর করতে ১২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয় হওয়ার কথা। দুর্যোগ ও ত্রাণমন্ত্রী কামরুজ্জামান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, এই কর্মসূচির অধীনে সীমান্তবর্তী জেলা ময়মনসিংহ কুমিল্লা রংপুর ও দিনাজপুর ৪৫ হাজার গৃহ নির্মাণ করা হবে এবং এজন্য ভারত ১ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা মূল্যের নির্মাণ সরঞ্জাম সরবরাহ করতে সম্মত হয়েছে।
সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন, প্রকাশিত : জুলাই ১৯, ২০২০