আদমজীতে বঙ্গবন্ধুর জনসভা নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ

উদিসা ইসলাম

১৯৭২ সালের ১৮ জুলাই আদমজীনগরে এক জনসভায় ভাষণ দেওয়ার কথা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় শ্রমিক লীগের যৌথ উদ্যোগে এই সভার আয়োজন করা হয়। ওই জনসভা নিয়ে সে সময় বেশ কিছুদিন আগে থেকেই ব্যাপক আগ্রহ দেখা দেয়। শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে, পরিচালনা পদ্ধতি নিয়ে বঙ্গবন্ধু কী বলবেন সেই আগ্রহের পাশাপাশি চলছিল জনসভার প্রস্তুতি।
১৯৭২ সালের ১৭ জুলাই বঙ্গবন্ধু বেশকিছু কর্মসূচিতে অংশ নেন। ওই বছরের ১৮ জুলাইয়ের দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার খবরে বলা হয়, সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত মি. পোপভ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাৎ করেন। এই সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে সোভিয়েত রাশিয়ার পক্ষের বন্দর উদ্ধারকারী দলের প্রধান এবং তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী মনসুর আলী উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের বন্দরের উদ্ধারকার্য সম্পর্কে প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেন।

১৯৭২ সালের ১৭ জুলাই ঢাকার পঞ্চম স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-১ পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর দোসর আল বদর বাহিনী কর্তৃক বুদ্ধিজীবী নিধন মামলায় প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও সাংবাদিক শহীদুল্লাহ কায়সার হত্যা মামলার রায় প্রদান করে। জামায়াতে ইসলামের বেতনভুক্ত দফতর সম্পাদক এবিএম আবদুল খালেককে দোষী সাব্যস্ত করে ৭ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দান করা হয়। বাংলাদেশের জন্য এইদিনটি ছিল ভীষণভাবে উদ্দীপনার। যুদ্ধবন্দিদের বিচার নিয়ে তখনও পাকিস্তান নানা টালবাহানা ও আন্তর্জাতিক সম্মতি গ্রহণের জন্য ঘুরছে। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু বারবারই দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করছেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই। সেই মুহূর্তে আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে বুদ্ধিজীবী হত্যার অভিযোগে বিচার সম্পন্ন আশার আলো দেখিয়েছিল।
সমাজবিরোধী ও দুশমনদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় পর্যায়ে অভিযান পরিকল্পনা হচ্ছে বলে পত্রিকার খবরে জানানো হয়। এতে বলা হয়, সমাজবিরোধী ও দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় পর্যায়ের অভিযানের পরিকল্পনা তৈরি ইতোমধ্যে সম্পন্নও হয়েছে। এলাকাভিত্তিক কারফিউ জারি ও তল্লাশি হচ্ছে প্রথম পর্যায়ের অভিযান পরিকল্পনা। সেটি আরও কিছুদিন চলবে বলে জানা যায়। পুরনো ঢাকার সেসব এলাকায় একবার কারফিউ কার্যকরী হয়েছে সেসব এলাকায় পুনরায় কারফিউ জারি বা তল্লাশি হতে পারে বলেও জানানো হয়। গত ২৬ দিনে ঢাকা শহরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটেছে আর একইসঙ্গে নাগরিক জীবনে স্বস্তি ও নিরাপত্তাবোধ ফিরে এসেছে বলে পুলিশ দাবি করে। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে শহরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে। সমাজবিরোধী ও দুষ্কৃতিকারীরা ইতোমধ্যে অস্ত্রশস্ত্র ফেলে দিতে শুরু করেছে উল্লেখ করে বলা হয়, অপরদিকে জনসাধারণের তরফ থেকেও স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা অব্যাহত আছে।

বাংলাদেশ বেতারের ১০০০ কিলোওয়াট শক্তিসম্পন্ন মিডিয়াম ওয়েভ ট্রান্সমিটারের নির্মাণকার্য আগামী বছর (১৯৭৩ সালে) সম্পন্ন হবে এবং বৈদেশিক সার্ভিস থেকে সারা এশিয়ার অনুষ্ঠান প্রচার সম্ভব হবে বলে জানান তৎকালীন তথ্য ও বেতার মন্ত্রী মিজানুর রহমান চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশ বেতার ভবনে  এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ তথ্য প্রকাশ করেন। মন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে রাশিয়ার সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তির বিভিন্ন দিক ব্যাখ্যা করেন। উল্লেখ্য যে ১৯৭২ সালের ১৭ জুলাই সকালে বাংলাদেশ বেতার ভবনে বাংলাদেশ বেতারের এক কোটি ৬৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে উচ্চশক্তিসম্পন্ন ট্রান্সমিটার স্থাপনের জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে তিনটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
  

স্থবিরতার আবরণ ভেদ করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি এবার গতিশীলতা লাভ করতে চলেছে বলে পত্রিকার খবরে বলা হয়। সক্রিয় নিরাপত্তা, নিরপেক্ষতা এবং ও প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্ব পররাষ্ট্রনীতির এই নবায়নের ভিত্তি বলে জানান তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী  আব্দুস সামাদ। মন্ত্রী এইদিনে ইন্দোনেশিয়ায় সফরের উদ্দেশে রওনা দেন।
সুত্র: বাংলাট্রিবিউন, প্রকাশিত : জুলাই ১৭, ২০২০ 
 

SUMMARY

2773-২.jpg