উদিসা ইসলাম
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেছেন, পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিষয় সম্পর্কিত বিতর্কিত যা আছে তা বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বিষয় বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, উপমহাদেশের স্থায়ী শান্তি আসার নিশ্চয়তা দেওয়া হলেই কেবল ভারত পশ্চিম রণাঙ্গনে বন্দি পাকিস্তানের যুদ্ধবন্দিদের মুক্তি দিতে পারে। তিনি আরও বলেন, যুদ্ধবন্দিদের সার্বিক প্রশ্নটিই উপমহাদেশের স্থায়ী শান্তির সঙ্গে বিশেষভাবে জড়িত। ভারত উপমহাদেশে স্থায়ী শান্তির নিশ্চয়তা চায়।
১৯৭২ সালের ১২ জুলাই নয়াদিল্লিতে দেশি-বিদেশি অসংখ্য সাংবাদিকের এক জমজমাট সমাবেশে বক্তৃতাকালে এসব কথা বলেন তিনি। বাংলাদেশ বার্তা সংস্থা নয়াদিল্লির বিশেষ সংবাদদাতা আতাউস সামাদ তার প্রেরিত প্রতিবেদনে একথা জানান। সাংবাদিক সম্মেলনে এক সংবাদদাতার একটি প্রশ্নের জবাবে ইন্দিরা ঘোষণা করেন, পূর্ব রণাঙ্গনে বন্দি পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তির প্রস্তুতি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক বিষয়। তিনি বলেন, পাকিস্তানি সৈন্যরা ভারত-বাংলাদেশ সংযুক্ত কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে, অতএব এ প্রশ্নে বাংলাদেশের বক্তব্য অবশ্যই আছে।
এদিকে ১৯৭২ সালের জুনের শেষে সিমলায় অনুষ্ঠিত ভারত-পাকিস্তান বৈঠকের আগে ও পরে একাধিকবার বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই এবং বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া আগে পাকিস্তানের সঙ্গে কোনও আলোচনায় বসার প্রশ্নই আসে না। তিনি বারবারই স্মরণ করিয়ে দেন, ভুট্টো যে বৈঠকই করুক না কেন তাতে বিচার থেমে থাকবে না।
ইন্দিরা গান্ধী সাংবাদিকদের বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ক্রমে ক্রমে স্থায়ী শান্তির দিকে নেওয়ার চেষ্টা করার সিদ্ধান্ত ছিল কিন্তু সে প্রচেষ্টা সফল হয়নি। তাই ভারত চায় এই উপমহাদেশে এখন স্থায়ী শান্তির নিশ্চয়তা। স্বাভাবিক কারণেই শান্তির প্রশ্নটি সীমান্তের সঙ্গে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে জড়িত।
দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সেই সংবাদ সম্মেলনে ইন্দিরা গান্ধী বলেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার জেনেভা কনভেনশনবিরোধী নয়। তিনি ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেননি এবং সম্ভাবনা যে নেই সে কথাও বলেননি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাবের প্রকাশিত খবরকে অতিরঞ্জিত বলে মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক ফাটল ধরার বিষয়ে প্রকাশিত এক রিপোর্টের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আমার মনে হয় আপনারা অতিরঞ্জিত রিপোর্ট পাচ্ছেন।
সিমলায় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ভারত-পাকিস্তান শীর্ষ বৈঠককে তিনি শুভ সূচনা হিসেবে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, যদিও বেশ কিছু সমস্যা অমীমাংসিত রয়ে গেছে তবু সিমলা বৈঠক শান্তি প্রতিষ্ঠার শুভসূচনা বলে আমি মনে করি। সিমলা বৈঠকের ফলশ্রুতিতে হারজিতের মনোভাব নিয়ে দেখলে সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দেওয়া হবে বলেও মন্তব্য করে ইন্দিরা গান্ধী
প্রায় ৬ দিন রোগভোগের পর বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ১২ জুলাই থেকে সেক্রেটারিয়েটে তার কার্যালয়ে আবার কাজ শুরু করেন। এর আগে তিনি ১১ তারিখ গণভবনে তার সরকারি বাসভবনে কাজ করেছেন বলে বাসসের খবরে বলা হয়।
নতুন দেশে এবছর প্রথমবারের মতো কলেজে ঢুকবেন যারা তাদের জন্য দুঃসংবাদ দেখা দিতে পারে বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছর প্রায় ৪ লাখ এসএসসি উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রী কলেজে ভর্তির ব্যাপারে মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। পর্যবেক্ষক মহলের মতে দুই লাখ ছাত্রছাত্রী উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হতে পারে। কারণ দেশে ১৯৭টি ইন্টারমিডিয়েট কলেজের ছাত্র-ছাত্রীর স্থান সংকুলান একটি দুঃসাধ্য ব্যাপার। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই মারাত্মক সংকটের মোকাবিলা করার জন্য এখন পর্যন্ত গঠনমূলক কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বলেও খবরে প্রকাশ হয়।
সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন, প্রকাশিত : জুলাই ১২, ২০২০