‘জনগণ যখন কষ্ট করছে তখন ঘরে বসে থাকতে পারি না’

উদিসা ইসলাম

অসুস্থ ও দুর্বল শরীরে ১০ জুলাই প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবারও কাজে ডুব দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘জনগণ যখন কষ্ট করছে তখন ঘরে বসে থাকতে পারি না।’ চিকিৎসকদের শাসন তাকে ধানমন্ডির বাড়িতে আটকে রাখতে পারেনি। বাসসের খবরের বরাত দিয়ে দৈনিক বাংলার ১১ জুলাইয়ের প্রতিবেদন বলছে, পাঁচ দিনের অসুস্থতাজনিত বিরতিতে তার (প্রধানমন্ত্রীর) অফিস কক্ষে ফাইলপত্র স্তুপ জমে গিয়েছিল।  বঙ্গবন্ধু সারাদিন সেসবের মধ্যে ডুব দিয়েছিলেন।
১১ জুলাই ১৯৭২ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রকাশিত খবর
১১ জুলাই ১৯৭২ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রকাশিত খবর
এই দিনে বঙ্গবন্ধুর চিকিৎসক বাসসকে জানান, বঙ্গবন্ধু অসুস্থতা থেকে ফিরে হালকা কাজকর্ম করার উপযোগী হয়েছেন বলে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি জনসাধারণের স্বার্থকে সবার ওপরে স্থান দেন। প্রধানমন্ত্রীর পারিবারিক সূত্রে জানা যায় যে, তিনি আরও আগে কাজ শুরু করতে চেয়েছিলেন। ৯ জুলাই তিনি বলেছিলেন, জনসাধারণ যখন দুঃখ কষ্ট ভোগ করছে তখন ডাক্তারের নিষেধে তিনি ঘরে বসে থাকতে পারেন না। বঙ্গবন্ধু ১০ জুলাই আইনমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন ও শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়, বেগম মুজিব দুপুরের খাবার নিয়ে বঙ্গবন্ধুর কাছে এসেছিলেন। চিকিৎসকের নিষেধ না মানার জন্য তিনি মৃদু তাঁকে শাসন করেন। সেখানে তখন আরও কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাদের বলেন, ‘এই ভদ্র মহিলাকেই কেবল আমি ভয় পাই।’ বঙ্গবন্ধু তার স্বভাবসিদ্ধ  কৌতুকচ্ছলে কথা বলছিলেন। তিনি বলেন, ‘মেয়েরা পুরোপুরি পুরুষের সমানাধিকার পাবার আগেই তাদের অধিকার প্রয়োগ করতে শুরু করেছে। অধিকার পেলে কী হবে বলতে পারেন?’

সিন্ধুতে চলছে দাঙ্গা

পাকিস্তানে ভয়াবহ দাঙ্গা আরও  ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে। করাচি ও হায়দ্রাবাদ ছাড়া পাকিস্তানের আরও চারটি শহরে তথা সমগ্র সিন্ধু প্রদেশে এই দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে। একমাত্র করাচিতে কমপক্ষে ২০ জন নিহত ও বহু ব্যক্তি আহত  হয়েছে বলে জানা যায়।

করাচির একজন বিরোধী দলীয় নেতার বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ বলছে, করাচিতে একটিমাত্র সংঘর্ষে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। করাচি, হায়দ্রাবাদসহ আরও  কয়েকটি জায়গায় সান্ধ্য আইন জারি করা হয়েছে। কিন্তু সান্ধ্য আইন জারি সত্ত্বেও সর্বত্র দাঙ্গা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে।
দৈনিক বাংলা, ১১ জুলাই ১৯৭২
দৈনিক বাংলা, ১১ জুলাই ১৯৭২সেপ্টেম্বরে ন্যায্যমূল্যের দোকান

সাপ্লাই করপোরেশনের পরিচালনায় চার হাজার ৩২০টি  দোকানে ন্যায্যমূল্যের বিক্রি সেপ্টেম্বরের আগে শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। বাজারজাতকরণ সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও প্রয়োজনীয় পুঁজির অভাবের কারণেই এ পরিস্থিতি বলে খবরে প্রকাশ করা হয়। এছাড়া একই সময়ে এতগুলো ন্যায্যমূল্যের দোকান পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলতে হচ্ছে। ন্যায্যমূল্যের দোকানগুলোতে ১১ রকমের  পণ্য বিক্রি করা হবে। এগুলো হচ্ছে— চাল, ডাল, বিভিন্ন প্রকারের তেল, সিগারেট ও শিশুখাদ্য। বলা হয়, যারা কর বা ট্যাক্স দেন না এবং বছরে সর্বোচ্চ তিন টাকা পর্যন্ত খাজনা বা কর দেন— এই দুই শ্রেণির লোক দোকান থেকে পণ্য ক্রয় করতে পারবেন।
দৈনিক ইত্তেফাক, ১১ জুলাই ১৯৭২
দৈনিক ইত্তেফাক, ১১ জুলাই ১৯৭২
মুজিববাদ প্রতিষ্ঠা করবে ছাত্রলীগ

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের দুই দিনব্যাপী অধিবেশন সমাপ্ত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী। তিনি তার নীতি নির্ধারণী বক্তৃতায় বলেন, ‘ছাত্রলীগ সবসময় চরম বাস্তবতাকে স্বীকার করে নিয়ে মানুষের সার্বিক মুক্তির দিকে লক্ষ্য রেখে সংগ্রাম করেছে বলেই প্রতিক্রিয়াশীল ও উগ্রবামপন্থীদের সঙ্গে কোনোদিন আপস করেনি।’ ছাত্রলীগ মুজিববাদ তথা চার মূল রাষ্ট্রনীতি প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম চালিয়ে যাবে বলেও তিনি জানান।

এদিকে রাজস্ব ও ভূমি সংস্কার মন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ১৯৭২ সালের ১০ জুলাই বিকালে ইসলামি অ্যাকাডেমি বাংলাদেশ প্লাস্টিক শ্রমিক ফেডারেশনের সম্মেলনে ভাষণদানকালে বলেন, ‘যারা আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে বেআইনিভাবে পরিত্যক্ত সম্পত্তি দখলে রাখে, তারা আওয়ামী লীগ ও সমাজতন্ত্রের দুশমন।’ মন্ত্রী এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু এদের কাউকে ক্ষমা করবেন না।’

সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন, প্রকাশিত : জুলাই ১০, ২০২০

SUMMARY

2765-২.jpg