বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে হিউমের সাক্ষাৎ

উদিসা ইসলাম

১৯৭২ সালের ২৩ জুন একদিনের সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নোয়াখালী থেকে ঢাকায় ফেরেন। এ দিন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্যার আলেক ডগলাস হিউম বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারা ব্রিটেনের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং আন্তর্জাতিক সমস্যাবলী নিয়ে একঘণ্টার বেশি সময় ধরে আলোচনা করেন। উপমহাদেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি ও বাংলাদেশ সংক্রান্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন নিয়ে তারা আলোচনা করেছেন বলে অনুমান করা হয়। কেননা, তাদের আলোচনার সঠিক বিষয় সম্পর্কে জানা যায়নি বলে ২৪ জুনের দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। তাদের আলোচনার সময়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে ডগলাস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রয়োজনে ব্রিটেন সাহায্য করবে।’
 ১৯৭২ সালের ২৩ জুন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্যার আলেক ডগলাস হিউম
 ১৯৭২ সালের ২৩ জুন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্যার আলেক ডগলাস হিউম
অভিযান চলছে চলবে

কালোবাজারী, মুনাফাখোর, মজুতদারসহ যেকোনও দুর্বৃত্তের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযান ২৩ জুনও অব্যাহত ছিল। গভীর রাত পর্যন্ত জাতীয় রক্ষী বাহিনী, পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী জনগণের সহায়তায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে ৪২ জনকে আটক করে। বঙ্গবন্ধু ঘোষিত সময়সীমা শেষ হওয়ার পর ২২ জুন থেকে এই অভিযান শুরু হয়। এ বিষয়ে পূর্বদেশের প্রতিবেদনে বলা হয়, মনে করা হয়েছিল এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর শুভবুদ্ধির উদয় হবে। কিন্তু তেমন কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি। কয়েকটি নিত্যপণ্য ছাড়া কোনও পণ্য নায্যমূল্যে বিক্রির খবর মেলেনি।

অভিযানে রক্ষীবাহিনী

বিভিন্ন ধরনের সমাজবিরোধীদের ধরার জন্য অভিযানের দ্বিতীয় দিনেও চির পরিচিত পুলিশ ইউনিফর্মের সঙ্গে গাঢ় সবুজ পোশাক পরিহিত স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রে সজ্জিত বাঙালি যুবকদের ব্যক্তিত্বপূর্ণ উপস্থিতি নাগরিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বাঙালি জাতিকে পৃথিবীর মানচিত্র হতে মুছে দেওয়ার জন্য বর্বরতম শক্তির কার্যক্রমের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে বাংলার মুক্তিপাগল যে বিদ্রোহী যৌবন ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, দেশপ্রেমের উদ্দীপনা নিয়ে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাদের মধ্য থেকে বাছাই করে জাতীয় রক্ষীবাহিনী গঠিত হয় এবং এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশ ও আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের পাশে এসে দাঁড়ায় তারা।
২৩ জুনের দৈনিক পূর্বদেশ
২৩ জুনের দৈনিক পূর্বদেশ
বঙ্গবন্ধুর সমবেদনা

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সিলেটে বন্যার পানিতে জীবন ক্ষতিগ্রস্তের ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি নিহত ব্যক্তিদের পরিবার-পরিজনের এবং ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের কাছে তার সমবেদনা পাঠান। বঙ্গবন্ধু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে বন্যাদুর্গত এলাকায় যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেন।
২৩ জুন মাইদজীকোর্টে অনুষ্ঠিত জনসভার ছবি পরের দিনের পত্রিকায় প্রকাশিত হয়
২৩ জুন মাইদজীকোর্টে অনুষ্ঠিত জনসভার ছবি পরের দিনের পত্রিকায় প্রকাশিত হয়
এদিকে প্রধানমন্ত্রী নোয়াখালীতে একদিনের সফর শেষে  ঢাকায় এসে পৌঁছান এদিন। তিনি আসার আগে মাইজদী কোর্টে প্রেসক্লাবের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর এই প্রথম মাইজদী সফর করলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ হলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে বরণ করতে সব আয়োজনই করে এলাকাবাসী। হাতিয়া, সন্দ্বীপ, চরজব্বর, কোম্পানীগঞ্জ, রামগতি, লক্ষ্মীপুরসহ চরাঞ্চলের মানুষ বঙ্গবন্ধুকে দেখতে ছুটে আসেন মাইজদীতে। কে কার আগে তাকে একনজর দেখবেনব এজন্য প্রতিযোগিতা লেগে যায়। মানুষের জটলা ছিল শহরের বিশেষ বিশেষ স্থানে। ২৩ জুন ১৯৭২ সালে বিদায়ের প্রাক্কালে বঙ্গবন্ধু ভূমিহীনদের চরে জায়গা করে দেওয়ার জন্য উদ্যোগ নিতে প্রশাসনকে জানান। সার্কিট হাউজের গেটের উত্তর পাশে তিনি চারা লাগিয়ে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। পরে ঢাকায় ফিরে তিনি সিলেটের বন্যা কবলিতদের ত্রাণের বিষয়ে সক্রিয় হন।

সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন, প্রকাশিত : জুন ২৩, ২০২০

SUMMARY

2747-২.jpg