‘সমাজবিরোধী কাজ করলে প্রয়োজনে কঠোর আইন হবে’

উদিসা ইসলাম

কালোবাজারি, চোরাচালানি, মুনাফাখোর, দুর্বৃত্ত এবং অন্যান্য সমাজবিরোধীদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে বলে ঘোষণা দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, প্রয়োজন হলে সমাজবিরোধী কার্যকলাপের জন্য দুর্বৃত্তদের কঠোর শাস্তিদানের উদ্দেশে আইন প্রণয়ন করা হবে। সমাজবিরোধীরা যদি তাদের ঘৃণ্য কার্যকলাপ থেকে বিরত না হয় তাহলে তাদের গুলি করে হত্যা করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।  ১৯৭২ সালের ২২ জুন নোয়াখালীতে শহীদ ভুলু স্টেডিয়াম প্রায় ৭ লাখ লোকের এক সমাবেশে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ ঘোষণা করেন। ১৯৭২ সালের ২৩ জুন প্রকাশিত দৈনিক পূর্বদেশের প্রতিবেদনে এসব তথ্য বলা হয়।
এতে বলা হয়, ১৯৭২ সালের ২২ জুনের মধ্যে সব অসাধু ব্যবসায়ীদের সিধা পথে আসার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। ২২ তারিখ বিকাল থেকেই অসাধু ব্যবসায়ী, চোরাকারবারি প্রভৃতি কাজে লিপ্ত সমাজবিরোধী ও বিরোধীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়। নোয়াখালীর জনসভায় বঙ্গবন্ধু বলেন, আমি সাড়ে সাত কোটি মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি আমি তাদের কল্যাণের জন্যই নিজেকে উৎসর্গ করেছি। প্রত্যেকটি মানুষ তিনি যেখানে জন্মগ্রহণ করুন এবং যেখানে বাস করুন বিনা বাধায় তার জীবিকা নির্বাহের অধিকার পারে।

বঙ্গবন্ধু বলেন, এইসব সমাজবিরোধী দল যদি তাদের ঘৃণ্য কার্যকলাপ থেকে বিরত না হয় তাহলে তাদেরকে গুলি করে হত্যা করা হবে। চোরাচালান এবং প্রত্যেকটি ঘরবাড়ি দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করে তিনি বলেন, ইতোপূর্বে তাদের দেওয়া সময়সীমা শেষ হয়েছে সুতরাং যারা এখনও বেআইনিভাবে ঘর-বাড়ি দখল করে রেখেছে তারা যেন অবিলম্বে তা খালি করে দেয়। উপস্থিত জনতার বারবার বিপুল হর্ষধ্বনির মধ্যে বঙ্গবন্ধু বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের প্রতিষ্ঠান এবং তার দল জনগণের স্বার্থের জন্য সংগ্রাম করেছে। তিনি আরও বলেন, তার দল দুর্দশাগ্রস্ত লাখ লাখ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাবে।


বাংলাদেশের নিরীহ জনগণের ওপর বর্বর পাকবাহিনীর নির্মম অত্যাচারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা সব নিঃস্বার্থ কর্মীকে হত্যা করতে পারে নাই। যদি আমরা সবাই নিঃস্বার্থভাবে কাজ করি তাহলে দেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। বিদেশ থেকে যে সমস্ত সাহায্য পাওয়া গেছে তা জনগণের মধ্যে বিতরণ করা হবে কিন্তু দেশের কষ্টার্জিত স্বাধীনতার বিক্রি করে কোনও সাহায্য নেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দেন বঙ্গবন্ধু।
একজন  হাসমতউল্লাহ

পূর্বদেশের সংবাদ অনুযায়ী, এদিকে ঢাকা থেকে মাইজদী কোর্ট যাবার পথে প্রতিকূল আবহাওয়ায় বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি জরুরি অবতরণে বাধ্য হয়। তখন মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিলো। কিন্তু এই মুষলধারে বৃষ্টি উপেক্ষা করে মো. হাসমত উল্লাহ নামে এক ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুর কাছে হাজির হন। ওই ব্যক্তি নিজের পকেট থেকে একখানি দরখাস্ত বের করে বঙ্গবন্ধুর হাতে দেন। তিনি তার দরখাস্ত অবিলম্বে তাকে কিছু নগদ অর্থ সাহায্যের আবেদন জানান। প্রধানমন্ত্রী তাকে অবিলম্বে সাহায্যের আশ্বাস দেন।

তল্লাশি শুরু

১৯৭২ সালের ২২ জুন বিকাল চারটা থেকে জাতীয় রক্ষীবাহিনী ও পুলিশ রাজধানী শহরের বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি শুরু করে। তল্লাশিকালে সকল স্তরের মানুষ তাদেরকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সহযোগিতা করে। রাজধানীসহ বিভিন্ন মহল থেকে সরকারি ব্যবস্থার প্রতি জনসাধারণ আস্থা প্রকাশ করে। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মান্নান দুর্নীতি দমনে সহযোগিতা কামনা করেন।

জেলায় জেলায় পার্থক্য থাকবে না

বঙ্গবন্ধু বলেন, বাংলাদেশ বাংলাদেশই থাকবে। জেলায় জেলায় কোনও পার্থক্য থাকবে না। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, তারা জনগণের বন্ধু নয়। তিনি রাজাকারদের গ্রেফতার করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান ।তিনি জনগণকে ধৈর্য ধরার এবং স্বাধীনতা রক্ষা করতে নির্দেশ দেন। এই কয় বছরে যা কিছু সাহায্য পাওয়া যাবে তা জনগণকে দেওয়া হবে উল্লেখ করে দুর্বৃত্তদের পুলিশের হাতে তুলে দিতে তিনি জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।

সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন, প্রকাশিত : জুন ২২, ২০২০ 

SUMMARY

2746-২.jpg