অস্ত্রে ভয় নেই আমি এখন যেকোনও ব্যবস্থা নিতে পারি: বঙ্গবন্ধু

উদিসা ইসলাম
জনগণের কাছে এখনও বিপুল পরিমাণ অস্ত্র রয়েছে কিন্তু এতে মোটেও বিচলিত হওয়ার কিছু নে—বলে মন্তব্য করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পুলিশ বাহিনী সম্পূর্ণ প্রস্তুত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন আমি যেকোনও ব্যবস্থা গ্রহণে সক্ষম।’ ১৯৭২ সালের ২২ জুনের দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার খবরে বলা হয়, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টেলিগ্রাফের প্রতিনিধিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘দেশবাসী আমাকে ভালবাসেন এবং আমার কথা শোনেন। দেশের ক্ষতি হয় এমন কিছু তারা করবেন না। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক এবং আইন রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর যেকোনও জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সক্ষম।’ সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে দুর্বৃত্তের সংখ্যা এখন খুবই নগণ্য।’ হানাদার বাহিনী দেশে যে লুটতরাজ ও জুলুম চালিয়েছে সে কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘সব থানায় যথেষ্ট সংখ্যক লোক দেওয়া হয়েছে। এখন আমি যেকোনও স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পাঠাতে সক্ষম।’

পাকিস্তান নিজেদের স্বার্থ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবে বলেও উল্লেখ করেন বঙ্গবন্ধু। তিনি বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দেওয়ার কারণ হল নতুন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের অপপ্রচার। তবে বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়া ও অপর একটি মুসলিম রাষ্ট্র বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশে নিজেও দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম অধিবাসীর দেশ।’ বঙ্গবন্ধু এই মর্মে আশা প্রকাশ করেন যে, ‘মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর বাংলাদেশের বাস্তবতায় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’


তিনি বলেন, ‘বর্তমান পাকিস্তানের তথাকথিত মুসলমানেরা ৩০ লাখ লোককে হত্যা করেছে, ২ লাখ নারীর সম্মান নষ্ট করেছে এবং বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সান্ধ্য আইন জারি করে বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে। তবুও আমি যেখানে আছি তাই নিয়ে সুখী। আমি চাই যে তারা শান্তিতে থাকুক, আমাকেও শান্তিতে বাস করতে দিন।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভুট্টোসহ কারও বিরুদ্ধে তার কোনও বিদ্বেষ নেই। কিন্তু তারা আমাদের বিরুদ্ধে যা করেছে অবশ্যই সেজন্য নিন্দা করা উচিত। মানবতার বিরুদ্ধে তারা যে অপরাধ করেছে বিশ্ববাসীকে সেসব জানাতে হবে। তাদের অবশ্যই বাংলাদেশে গণহত্যার নিন্দা করতে হবে।’ পাকিস্তানে বন্দি অবস্থা থেকে মুক্তি দানের আগে সাক্ষাৎকালে উভয়ের মধ্যে যোগসূত্র রাখার জন্য ভুট্টো তাকে যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন সে বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের মধ্যে যে সম্পর্ক থাকে সে সম্পর্ক ছাড়া এই ‍দুই রাষ্ট্রের মধ্যে আর কোনও সম্পর্ক থাকতে পারে না।’ তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে আমার কোনও আক্রোশ নেই। আমি তাদের জন্য শুভ কামনা করি। তারা শান্তিতে থাকুন।’ তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানিরা অমানুষ। আমি দীর্ঘদিন ধরে তাদের হাতে যন্ত্রণা ভোগ করেছি। এদের ব্যাপারে আমার আর কিছুই করার নেই।’

ভুট্টো মুখে পুরোনা রা

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টোর মুখে পুরোনো রা আবারও বিভ্রান্তিকর পরিবেশ সৃষ্টির শঙ্কা তৈরি করে। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান কাশ্মীর জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের প্রতি সমর্থন দানে বিরত থাকবে না।’ তিনি শিক্ষাবিদদের উদ্দেশ্যে ভাষণে এসব কথা বলেন। সমস্যা সমাধান করে শান্তি স্থাপনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক ভালো ছিল না।’
৬ ঘণ্টা মন্ত্রিসভার বৈঠক

১৯৭২-৭৩ সালের উন্নয়ন পরিকল্পনার রূপরেখা ও কাঠামো নিয়ে আলোচনার উদ্দেশ্যে মন্ত্রিসভার ছয় ঘণ্টা দীর্ঘ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। সকাল থেকে দুদফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।  তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় রক্ষীবাহিনীর এক কুচকাওয়াজে তাদের সালাম গ্রহণ করেন।

আজ শেষ দিন শুভবুদ্ধির উদয় হোক

অসাধু ব্যবসায়ীদের কর্মকাণ্ড বন্ধ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত সময়সীমা অনুযায়ী ১৯৭২ সালের ২২ জুন ছিল শেষ দিন। ১৯৭২ সালের ৭ জুন বঙ্গবন্ধু সোহরাওয়ার্দী ময়দানে এ  সময়সীমা ঘোষণা করে মজুতদার কালোবাজারিদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর হুঁশিয়ারিতে কয়েকটি দ্রব্যের মূল্য কমছে বলে লক্ষ্য করা গেছে। তবে কোনও কোনও ব্যবসায়ী মত প্রকাশ করেন যে, একশ্রেণীর ব্যবসায়ী এতকিছু করার পর বিভিন্ন পণ্য অন্যত্র সরিয়ে ফেলার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।


সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন, প্রকাশিত :জুন ২১, ২০২০

SUMMARY

2745-২.jpg