উদিসা ইসলাম
স্বাধীনতার ছয় মাসের মধ্যে লে. জেনারেল নিয়াজী স্বীকার করে নেন যে, বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় মানুষকে ওরা দিনের পর দিন নির্মমভাবে হত্যা করেছে। তবে তিনি এর দায়ভার ইয়াহিয়ার ওপরে চাপিয়ে দেন। ভারতের বন্দি শিবিরে থাকা অবস্থায় জেনারেল নিয়াজী একটি বইয়ের পাণ্ডলিপি রচনা করেন। এই বইয়ের খবর বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আরেকটু এগিয়ে নিয়ে যায়। এরইমধ্যে ভারতে আটক যুদ্ধবন্ধিদের জবানবন্দির জন্য বাংলাদেশে নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীনের পর থেকেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে সব সভা- সমাবেশে ঘোষণা দিয়ে আসছেন এবং এই বাংলার মাটিতে তাদের বিচার সম্পন্ন হবে বলেও তিনি জানান।
যুদ্ধবন্দি হিসেবে ভারতে আটক লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজী দীর্ঘ ৩০০ পৃষ্ঠার একটি রচনা সমাপ্ত করেছেন বলে দিল্লি থেকে প্রকাশিত মাসিক ম্যাগাজিনের এক খবরে বলা হয়। এতে বলা হয়, পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের দখলে থাকা অবস্থায় ১৯৭১ সালে সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে কী ঘটেছিল, তার একটি নিখুঁত বর্ণনা এই পুস্তকে দেওয়া হয়েছে। সেই সময়ের অন্যান্য বিষয় সম্পর্কেও এই পুস্তকে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে বলে দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশে ভারতীয় দূতাবাসের এক বিবৃতিতেও এ কথা বলা হয়। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর আট হাজার সৈন্যসহ জেনারেল নিয়াজী গত বছরের (১৯৭১) ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশে আত্মসমর্পণের চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন।
১৫ জুনের (১৯৭২) দৈনিক পূর্বদেশ
সে সময় যা ঘটে গেছে তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানের কাঁধে চাপিয়ে দিয়েছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজী। বাংলাদেশের নিরীহ ও শান্তিপ্রিয় জনগণের ওপর জেনারেল টিক্কা খান যে নৃশংস বর্বরতা চালায়, তা স্বীকার করেছে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী এবং অগ্নিসংযোগ করেছে বলেও তিনি (নিয়াজী) স্বীকার করেন।
তার লেখায় বেরিয়ে আসে, এ সময় ব্যাপক তুষারপাতের ফলে চীনা সৈন্যদের পক্ষে রণাঙ্গনের দিকে অগ্রসর হওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। ১৩ ডিসেম্বর জেনারেল ইয়াহিয়া খানকে সেটা অবহিত করেন তিনি। পক্ষান্তরে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পরামর্শ দিয়ে নিয়াজীকে বলেন যে, ‘পশ্চিমের বিভিন্ন রণাঙ্গনের উচিত সৈন্য বাহিনী পাঠানো। এই লেখায় চীন ও সোভিয়েতের সম্পৃক্ততা নিয়েও বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোভিয়েত ইউনিয়নের ভয়ে চীন হকচকিয়ে গিয়েছিল। ভারতের বিরুদ্ধে চীন নতুন রণাঙ্গন খুললে ভারত-সোভিয়েত শান্তি ও মৈত্রী চুক্তি মোতাবেক সোভিয়েত আঘাত করতে পারে ভেবে চীন আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। সোভিয়েত সীমান্ত বরাবর সেদেশের সৈন্য বাহিনীর তৎপরতা সম্পর্কে পাকিস্তানকে জানিয়েছিল চীন।
১৫ জুনের (১৯৭২) দৈনিক পূর্বদেশ
এদিকে বঙ্গবন্ধু ২৫ জুন (১৯৭২) কুষ্টিয়া যাচ্ছেন বলে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একদিনের সফরে কুষ্টিয়া যাবেন এবং সেখানে এক জনসভায় ভাষণ দেবেন। সেদিন বিকালে তিনি আলাদাভাবে কুষ্টিয়ার মহিলা নেত্রী ও কর্মী এবং জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হবেন বলেও জানানো হয়।
কাউকেই আইন নিজের হাতে তুলে নিতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মান্নান। সচিবালয়ে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘সরকার দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সক্রিয়ভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম। রাষ্ট্রবিরোধী ব্যক্তিদের জন্য দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে জোরদার করা হয়েছে।’
বাংলা ট্রিবিউন, প্রকাশিত : জুন ১৫, ২০২০