উদিসা ইসলাম
জাতিসংঘের মহাসচিব কুর্ট ওয়াল্ডহেইম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ জুনের রাষ্ট্রনায়কোচিত ভাষণের জন্য তাকে অভিনন্দন জানান। ১১ জুন সকালে গণভবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতের পর জাতিসংঘের সাহায্য কার্যক্রমের প্রধান ভিক্টর উমব্রিখট বাসসকে জানান যে, তিনি সেক্রেটারি জেনারেলের বাণী বঙ্গবন্ধুর কাছে পেশ করেছেন। ১৯৭২ সালের ১২ জুনের দৈনিক পূর্বদেশ এ সংবাদ প্রকাশ করে।
১৯৭২ সালের ১২ জুন প্রকাশিত দৈনিক পূর্বদেশ
ঢাকায় আনরড (জাতিসংঘের সাহায্য কার্যক্রম) প্রধান ভিক্টর উমব্রিখট জানান, বাংলাদেশের জন্য জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেলের আহ্বানে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাহায্যের পরিমাণ বৃদ্ধি সন্তোষজনক। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পর আনরড প্রধান দেশে বিমান থেকে খাদ্য বিতরণের পরিমাণ বাড়ানো হবে বলে বাসসের প্রতিনিধিকে জানান। বর্তমানে বিমানে করে খাদ্য বিতরণে দুটি বিমান কার্যকর আছে। আগামীকালের (১২ জুনের) মধ্যেই আরও দুটি বিমানকে কাজে লাগানো হবে বলে জানান তিনি। এছাড়া ২৫ জুনের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী নিক্ষেপের জন্য বিমানের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি দুটি হেলিকপ্টার কাজে লাগানো হবে।
বাংলাদেশ ও ভারত শিল্প ক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং পারস্পরিক সাহায্যের ভিত্তিতে বাণিজ্য ও উন্নয়ন সম্পর্ক গড়ে তোলার কয়েকটি নতুন ক্ষেত্র নির্ধারণ করা হয়। দুই দেশের পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিনিধি দল ভারত সরকারের বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার পরেই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন বলে সরকারি সূত্র থেকে জানানো হচ্ছে।
১২ জুনের দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত খবর
তিন দিনব্যাপী এ আলোচনার শেষ দিন আজ (১১ জুন) বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ এবং ভারতের অর্থমন্ত্রী আলোচনায় মিলিত হন। ১৯৭২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আবারও আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানানো হয়। বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা ভারতের বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা করেন। দুই দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের ব্যাপারেও উভয় দেশের কর্মকর্তারা ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। এই গ্রুপ মেঘালয় থেকে বাংলাদেশের সিমেন্ট কারখানার জন্য চুনাপাথর সরবরাহের বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখবেন। বাংলাদেশে কাগজ উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। কারণ, এ সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় সম্পদ বাংলাদেশের রয়েছে। ভারত তার প্রয়োজন মোতাবেক বাংলাদেশ থেকে কাগজ ও নিউজপ্রিন্ট আমদানিতে আগ্রহ প্রকাশ করে।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে ১৩ দিনের সফর শেষে দেশে ফেরেন। ২৮ জুন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকের সময় তার দেশের পক্ষে এসব দেশগুলোর সমর্থন পাওয়ার জন্য তিনি সফর করেন। কিন্তু দেশে ফিরে এসে তিনি দেখেন যে, পাকিস্তানের শিল্প সেক্টরে উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। দেশের এই পরিস্থিতি নয়া দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় সম্মেলনে যোগদানের জন্য হুমকিস্বরূপ।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টোকে নিয়ে দৈনিক পূর্বদেশের প্রতিবেদন
ইউপিআই এর বরাতে ১১ জুন এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে দৈনিক পূর্বদেশ। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়— পর্যবেক্ষক মহলের মতে, ভুট্টোকে ক্ষমতায় থাকতে হলে নিজ দেশে তার অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করতে হবে। তাদের মতে, ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হওয়ার আগেই ভুট্টোকে এ কাজ করতে হবে। ইতোমধ্যে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তারা (ভারত) ক্ষমতা পরিচালনা করতে সক্ষম হয়েছে, অথচ গত ২৪ বছরেও পাকিস্তানে তা সম্ভব হয়নি। পূর্বদেশ আরও জানাচ্ছে যে, গত ডিসেম্বর মাসে ১৪ দিনের যুদ্ধের পর যে সমস্যাগুলো সৃষ্টি হয়, তা সমাধানের জন্যই ভারত-পাকিস্তান শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠানের প্রয়োজন।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভুট্টো দেশে ফিরে আসার আগের দিন করাচিতে এক সংঘর্ষ হয়। পুলিশের সঙ্গে ওই সংঘর্ষে ২৯ জন শ্রমিক নিহত হন।
সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন, প্রকাশিত : জুন ১১, ২০২০