ড. জেবউননেছা
আমার বাবা কবি মু. জালাল উদ্দিন নলুয়া ১৯৬৫ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের একজন নিবন্ধিত সদস্য ছিলেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে অভূতপূর্ব বিজয়ে বাবা ‘জয় নৌকা’ শিরোনামে নাটকও লিখেন। সেই নাটকটি নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের তৎকালীন কার্যালয় বি.কে রোডস্থ কাঠের দোতলায় ১৯৭০ সালের ১৯ ডিসেম্বর মঞ্চস্থ হয়। এছাড়া স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রথম শহীদ ছাত্রনেতা ফারুক ইকবালের পাক হানাদার বাহিনীর গুলিতে রাজপথে ৩ মার্চ ১৯৭১ সালে শহীদ হওয়ার পর ‘জয়বাংলা’ শিরোনামে বাবা নাটিকা লিখেন। দুটি নাটিকা ছেলেবেলায় পড়া শেষ হয়ে গিয়েছিল।
১৯৭১ সালের ৪ মার্চ দক্ষিণ নারায়ণগঞ্জ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের বক্তব্যের একপর্যায়ে আমার বাবা বলেছিলেন, ‘ওগো জন্মভূমি, জননী মা আমার, তোমার আর কত রক্ত চাই।’ বাবার এই বক্তব্য আমাকে ভীষণ শিহরিত করেছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাবার লেখা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ‘হে বন্ধু’ কবিতাটি পড়ে চোখের জল কয়বার গড়িয়েছে জানা নেই।
আমার নানাবাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানার মদনগঞ্জে। নানাবাড়িতে টাঙ্গিয়ে রাখা শৈশব থেকে জাতির জনকের বড় ছবি বঙ্গবন্ধুকে জানার ব্যাপারে কৌতূহলী করে তুলেছিল। আমার নানা সাহাবুদ্দিন চৌধুরী (সাহা মেম্বার) নারায়ণগঞ্জের মদনগঞ্জের বন্দর থানা স্থানীয় আওয়ামী লীগের আমৃত্যু আজীবন সদস্য ছিলেন। নারায়ণগঞ্জে আমাদের বাড়ির ঠিক পাশের জায়গাতে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম আওয়ামী লীগের কার্যালয় ছিল। তারই চেতনায় দেশ নিয়ে লিখি ‘রক্তে আঁকা পতাকা’ প্রথম কবিতা ১৯৮৯ সালের ৩ মার্চ।
ছেলেবেলা থেকে নারায়ণগঞ্জে আমাদের সাহিত্যাঙ্গনের বৈঠকখানায় ‘আমরা তোমাদের ভুলবো না শিরোনামে’ সাত বীরশ্রেষ্ঠের বিরাট ছবি আমার মধ্যে তৈরি করেছিল এক ধরনের চেতনা।
নারায়ণগঞ্জের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, পূর্ব বঙ্গ মুসলীম লীগ গঠন করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ন্যাশনাল গার্ড। ১৯৪২ সালের দিকে নারায়ণগঞ্জে এর শাখা গঠন করা হয়। এ সংগঠনের প্রথম জেলা নায়েবে সালার (জেলা কর্মকর্তা) আ. গফুর চৌধুরী। ‘পাকিস্তানের জন্য এবং পাকিস্তান হওয়ার পরে এই প্রতিষ্ঠান রীতিমতো কাজ করে গিয়েছে। রেলগাড়িতে কর্মচারীর অভাব, আইনশৃঙ্খলা ও সকল বিষয়ই এই প্রতিষ্ঠান কাজ করেছে। হাজার হাজার ন্যাশনাল গার্ড ছিল…’। (অসমাপ্ত আত্মজীবনী: পৃ: ৮৯)
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় তৎকালীন সিলেট অঞ্চলের দেশ বেছে নেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়েছিল। বাবার কাছ থেকে শুনেছি, সেই গণভোটে আমাদের গ্রাম থেকে গিয়েছিলেন ন্যাশনাল গার্ডের ১৭ জন। আমাদের গ্রামে জন্ম নিয়েছেন প্রথিতযশা রাজনীতিবিদ। যারা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠজন ছিলেন।
১৯৪৮-এর ১৫ মার্চ প্রকাশিত ‘দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা’য় ‘বাংলা ভাষার দাবিতে নানা স্থানে হরতাল শিরোনামে’ সংবাদ প্রকাশিত হয়। ‘পাকিস্তান অবজারভার’ও এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে। ১৯৪৮-এর ১১ মার্চ নারায়ণগঞ্জে সর্বাত্মক ধর্মঘট পালিত হয়’।
বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর নারায়ণগঞ্জের মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জেই আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ায় খান সাহেব ওসমান আলীর বাসা ‘বায়তুল আমানেই’ হয়েছে আওয়ামী লীগের প্রথম বৈঠক। পরবর্তীকালে, নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়া মিউচুয়াল ক্লাবে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্ম হয়েছিল। ‘আমরা পাইকপাড়া ক্লাবে সভা করলাম। বিভিন্ন জেলার অনেক নেতাকর্মী উপস্থিত হয়েছিলেন। এই সময় শামসুজ্জোহার উপর মুসলিম লীগের ভাড়াটিয়া গুন্ডারা আক্রমণ করেছিল’। (অসমাপ্ত আত্মজীবনী: ১০১)
১৬ মে ১৯৪৮ সালে পাইকপাড়ার মিউচুয়াল ক্লাবে বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাবেক কাউন্সিলরদের একটি রুদ্ধদ্বার সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ময়মনসিংহের মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী বক্তৃতা শুরু করেন। বৈঠকে শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এই সভায় সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা রাখেন। ১৭ মে ১৯৪৮ তারিখে বিকেল ৫টায় নারায়ণগঞ্জের পাবলিক লাইব্রেরিতে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। যে সভায় উপস্থিত ছিলেন মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, খান সাহেব ওসমান আলী এমএলএ সহ নারায়ণগঞ্জের নেতৃবৃন্দ। ১৭ মে ১৯৪৮ সালে সভায় যারা বক্তব্য প্রদান করেছিলেন তাদের নাম ২৯.০৫.১৯৪৮ইং তারিখের গোয়েন্দা রিপোর্ট দেখা যায় (Secret Documents of Intelligence Branch on Father of the Nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, Vol-1 ১৯৪৮-১৯৫০: ২৩)। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন বিকেলে ঢাকার কেএম দাস লেন এর রোজ গার্ডেনে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের’ অভিষেক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীকালে, সেই দলের পরিবর্তিত নাম হয় ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’।
নারায়ণগঞ্জের বায়তুল আমান থেকেই ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন হয়েছিল-নারায়ণগঞ্জের আরেক সন্তান যেমন শফি হোসেন খান, মাহবুব জামিল-মোস্তফা খান সারোয়ার সাহেব সহ বায়তুল আমান থেকেই গ্রেফতার হয়ে জেল খেটেছিলেন।
আরেক গ্রন্থে দেখা যায়, ‘১৯৫৪ সালে পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলন জোরদার হয়। এসময় ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হলে বঙ্গবন্ধু আত্মগোপন করে নারায়ণগঞ্জে চলে আসেন। দীর্ঘদিন আমার বাড়িতে ছিলেন। দিনের বেলায় আমার বাবুরাইলের বাড়িতে অবস্থান করেন। রাতের খাবার খেয়েই দু’জনে বেরিয়ে পরতাম। কোনোদিন কাশীপুর, কোনোদিন গোগনগর, (গোপচর), সৈয়দপুর এলাকায় রাত্রী যাপন করার জন্য চলে যেতাম। এই দিনগুলোতে সুযোগ বুঝে আলী আহমেদ চুনকা শেখ মুজিব ভাইকে দেখতে আসতেন। বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতেন। এই কয়েকদিনের মধ্যে তাদের দু’জনের মধ্যে বেশ ঘনিষ্ঠতা লক্ষ্য করি। প্রায় তিনমাস পর অবস্থার উন্নতি ঘটলে শেখ মুজিব ঢাকায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু চুনকাকে বিশ্বাস করতেন। চুনকা বঙ্গবন্ধুর সাথে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেই বিশ্বাস ভালোবাসা মর্যাদা দিয়েছেন বলে আমার মনে হয়’ (গফুর চৌধুরী, পৃ: ৪২)।
১৯৬৪ সালের ১১ মার্চ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি সমন্বয়ে ‘সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি’ গঠিত হয়। এ কমিটি প্রাপ্তবয়স্ক ও প্রত্যক্ষ নির্বাচনের দাবি নিয়ে ১৯ মার্চ হরতাল আহ্বান করে। ঢাকা নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় হরতাল পালিত হয়।
বঙ্গবন্ধু নারায়ণগঞ্জের পৌর পাঠাগার মিলনায়তন, রহমতউল্লাহ ইনস্টিটিউটের স্থানগুলোতে আসতেন এবং বক্তব্য প্রদান করতেন। চাষাড়ার বালুরমাঠে আওয়ামী মুসলীম লীগ কর্তৃক আয়োজিত হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু এসেছিলেন (নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন: ২০১৯)।
ছয়দফা আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জের ভূমিকা ছিল অনন্য। ১৯৬৬ সালের ছয়দফা সংগ্রামের প্রচারের গোপন সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল আমাদের বাসা থেকে ২ মিনিটের ব্যবধানে অবস্থিত নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জের বি.কে রোডস্থ মহিউদ্দিন আহমেদ (খোকা)’র বোনের বর শফিউদ্দিন আহমেদ শরীফ মুন্সী সাহেবের বাসায়। উক্ত সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দীন আহমদ, মিজানুর রহমান চৌধুরী (পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য), আলী আহমেদ চুনকা, এ.কে.এম. শামসুজ্জোহা সহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ‘কারাগারের রোজনামচা’য় বেশ কয়েকবার মহিউদ্দিন আহমেদ খোকার কথা উল্লেখ রয়েছে।
ছয়দফা ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধু দেশব্যাপী ঝটিকা সফর করে ৩২টি জনসভা করেন। ১৯৬৬ সালের ৮ মে নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ার মে দিবস স্মরণে নারায়ণগঞ্জে পাটকল শ্রমিকদের জনসভায় বঙ্গবন্ধুকে পাটের মালা পরিয়ে দেয়। ভাষণ শেষে রাত ১টায় বাসায় ফেরার পথে পাকিস্তান দেশরক্ষা আইনের ৩২(১) ‘ক’ ধারায় বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। (দৈনিক কালের কণ্ঠ, ১০ জানুয়ারি, ২০২০)
৮ মে ১৯৬৬ বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করার প্রতিবাদে ১৯৬৬ সালে ৭ জুন দেশব্যাপী সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। এইদিন নারায়ণগঞ্জের রেললাইনের ২ নম্বর গেট এর দিকে পাতি ভরে ভরে ইট দিয়ে বৃষ্টির মতো ইট ছুঁড়েছে নারায়ণগঞ্জগামী ট্রেনের দিকে। পরবর্তীতে সে ট্রেনের চালক পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। ঘটনাস্থলে ইটের বিক্ষিপ্ত ছোঁড়া প্রতিরোধ করতে না পেরে পুলিশ পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। অতঃপর বিক্ষুব্ধ জনতা থানা আক্রমণ করতে গেলে এক অবাঙালি পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে। সেই গুলিতে একজন ঘোলওয়ালার মাথায় গুলি লাগে। সেই ব্যক্তির মস্তক ডিগুবাবুর বাজারে ফকিরটোলা মসজিদে দীর্ঘদিন লেগেছিল এবং ছয় জন গুলিবিদ্ধ হয়ে শাহাদৎ বরণ করেন এই ঘটনার পরে। সেই লাশগুলো ঠেলাগাড়িতে নিয়ে পুরো নারায়ণগঞ্জে সেদিন বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। ছয়দফা সংগ্রামে নারায়ণগঞ্জের ভূমিকা প্রণিধানযোগ্য।
১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে ১৫ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের ছাত্র মাজাহার আহমেদ শহীদ হন। তারই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর ডাকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ সকাল ৯টায় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতা সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ কোর্টে অবস্থিত সরকারি মালখানা ভেঙে ১২১টি রাইফেল ও ৬ পেটি (বাক্স) গুলি সংগ্রহ করে জড়ো করেন দেওভোগ জনকল্যাণ সমিতিতে স্বাধীনতা যুদ্ধে কাজে লাগানোর কাজে। একইদিন শহরের বিভিন্ন প্রবেশমুখে ব্যারিকেড দেওয়া হয়। দীর্ঘ নয় মাস নারায়ণগঞ্জবাসী স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’(২০১২) তে বঙ্গবন্ধু অসংখ্যবার নারায়ণগঞ্জের কথা উল্লেখ করেছেন। …‘নারায়ণগঞ্জ দিনের বেলায় নামলে আর ঢাকা যেতে হবে না, সোজা জেলখানায়। পরোপকারী শওকত মিয়া যেন আমার জন্য থাকার বন্দোবস্ত করে রাখে। আর যদি পারে সন্ধ্যার সময় যেন নারায়ণগঞ্জে খান সাহেব ওসমান আলীর বাড়িতে আসে। খান সাহেবের বড় ছেলে শামসুজ্জোহাকেও খবর দিতে বোলো। সন্ধ্যায় যেন সে বাড়িতে থাকে।’
‘আমরা মুন্সিগঞ্জে নেমে মীরকাদিম হেঁটে আসলাম। সেখানে এক আত্মীয়ের বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া করে সন্ধ্যার একটু পূর্বে নৌকায় নারায়ণগঞ্জ রওয়ানা করলাম। সন্ধ্যার পরে নারায়ণগঞ্জ পৌঁছে রিকশা নিয়ে সোজা খান সাহেবের বাড়িতে পৌঁছলাম। জোহা সাহেব খবর পায় নাই, তার ছোট ভাই মোস্তফা সরোয়ার তখন স্কুলের ছাত্র। আমাকে জানত। তাড়াতাড়ি জোহা সাহেবকে খবর দিয়ে আনল। আমরা ভিতরের রুমে বসে চা-নাশতা খেলাম। খান সাহেবের বাড়ি ছিল আমাদের আস্তানা। ক্লান্ত হয়ে এখানে গেলেই যে কোনো কর্মীর খাবার ও থাকার ব্যবস্থা হত। ভদ্রলোকের ব্যবসা বাণিজ্য নষ্ট হয়ে গিয়েছিল কিন্তু প্রাণটা ছিল অনেক বড়।’ (পৃষ্ঠা: ১৬৫)।
‘আমাদের নারায়ণগঞ্জ থানায় নিয়ে যাওয়া হল। ওপরওলাদের টেলিফোন করল এবং হুকুম নিল থানায়ই রাখতে। আমাদের পুলিশের ব্যারাকের একটা ঘরে নিয়ে যাওয়া হল। একজন চেনা লোককে থানায় দেখলাম, তাকে বললাম, শামসুজ্জোহাকে খবর দিতে। খান সাহেব ওসমান আলী সাহেবের বাড়ি সকলেই চিনে। এক ঘণ্টার মধ্যে জোহা সাহেব, বজলুর রহমান ও আরও অনেকে থানায় এসে হাজির। আমাদের জন্য খাবার নিয়ে এসেছে। পরে আলমাস আলী ও আমাদের দেখতে এসেছিল…’ (পৃষ্ঠা: ১৯৯)।
‘…আট-দশজন কর্মী নিয়ে জোহাসাহেব বসে আছেন। আমরা আস্তে আস্তে খাওয়া-দাওয়া করলাম, আলাপ আলোচনা করলাম। ভাসানী সাহেব, হক সাহেব ও অন্যান্য নেতাদের খবর দিতে বললাম।… নারায়ণগঞ্জের কর্মীদের ত্যাগ ও তিতিক্ষার কথা কোনো রাজনৈতিক কর্মী ভুলতে পারে না। তারা আমাকে বলল, “২১ শে ফেব্রুয়ারি তারিখে নারায়ণগঞ্জে পূর্ণ হরতাল হবে। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি তো আছেই, আপনাদের মুক্তির দাবিও আমরা করবো।” (পৃষ্ঠা: ২০০)।
‘খবরের কাগজে দেখলাম, মওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ এমএলএ, খয়রাত হোসেন এমএলএ, খান সাহেব ওসমান আলী এমএলএ এবং মোহাম্মদ আবুল হোসেন ও খোন্দকার মোশতাক আহমেদ সহ শত শত ছাত্র ও কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। দু’একদিন পরে দেখলাম কয়েকজন প্রফেসর, মওলানা ভাসানী, শামসুল হক সাহেব ও বহু আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। নারায়ণগঞ্জের খান সাহেব ওসমান আলীর বাড়ির ভিতরে ঢুকে মারপিট করেছে। বৃদ্ধ খান সাহেব ও তাঁর ছেলেমেয়েদের উপর অকথ্য অত্যাচার করেছে। সমস্ত ঢাকায় ও নারায়ণগঞ্জে এক ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। আওয়ামী লীগের কোন কর্মীই বোধ আর বাইরে নাই…’। (পৃষ্ঠা: ২০৪)
১৯৫৪ সালের মে মাস। আমরা সকলে শপথ নিতে সকাল নয়টায় লাটভবনে উপস্থিত হলাম। আমাদের যখন মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়া শেষ হল, ঠিক সে সময় খবর এল আদমজী জুট মিলে বাঙালি ও অবাঙালি শ্রমিকদের মধ্যে ভীষণ দাঙ্গাহাঙ্গামা শুরু হয়েছে।… হক সাহেব আমাদের নিয়ে সোজা রওয়ানা করলেন আদমজী জুট মিলে। তখন নারায়ণগঞ্জ লঞ্চে যেতে হত।… নারায়ণগঞ্জ যেয়ে শুনলাম, হক সাহেব আমার জন্য অপেক্ষা করে ঢাকা রওয়ানা হয়ে গেছেন। একটা লঞ্চ রেখে গেছেন।… বিভিন্ন জায়গা থেকে যে সমস্ত বাঙালি জনসাধারণ জমা হচ্ছিল মিল আক্রমণ করার জন্য তাদের কাছে গিয়ে আমি বক্তৃতা করে তাদের শান্ত করলাম। তারা আমার কথা শুনল।’ (পৃষ্ঠা: ২৬৩)
‘…পরেরদিন আবার আমি আদমজি জুটমিলে যাই এবং যাতে শ্রমিকদের খাবার ও থাকার কোন কষ্ট না হয় তার দিকে নজর দিতে সরকারি কর্মচারীদের অনুরোধ করি।’ (পৃষ্ঠা: ২৬৬)। নারায়ণগঞ্জে আমার এক মামা ব্যবসা করেন, তার নাম শেখ জাফর সাদেক।’ (পৃষ্ঠা: ১২)
কারাগারের রোজনামচা (২০১৭) গ্রন্থেও বঙ্গবন্ধু নারায়ণগঞ্জের কথা বেশ কয়েকবার উল্লেখ করেছেন। ‘…হাসপাতালের আহত কর্মীরা দরজায় কাছে দাঁড়াইয়া আছে। নারায়ণগঞ্জের খাজা মহিউদ্দিন ও অন্যান্য কর্মীরা এবং সাহাবউদ্দিন চৌধুরীও হাসপাতালে আছেন। তিনিও নেমে এসেছেন দরজার কাছে। আমি একটু এগিয়ে যেয়ে ওদের বললাম, ‘চিন্তা করিও না। কোনো ত্যাগই বৃথা যায় না। দেখ না আমাকে একলা রেখেছে (পৃষ্ঠা: ১০৫)। মানিক ভাই ও মোস্তফা সরওয়ারকে ‘এ’ ক্লাস দেওয়া হয়েছে। (পৃষ্ঠা: ১১৩)
সন্ধ্যায় দেখলাম পুরানা বিশ সেলে নারায়ণগঞ্জের খাজা মহিউদ্দিনকে নিয়ে এসেছে। ওর বিরুদ্ধে অনেকগুলি মামলা দিয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশে ওকে পরীক্ষা দিতে অনুমতি দিয়েছে। ডিভিশন দেয় নাই। ভীষণ মশা, পরশু পরীক্ষা, মশারিও নাই। তাড়াতাড়ি একটা মশারির বন্দোবস্ত করে ওকে পাঠিয়ে দিলাম। আমার কাছাকাছি যখন এসে গেছে একটা কিছু বন্দোবস্ত করা যাবে। বেশি কষ্ট হবে না। খাজা মহীউদ্দিন খুব শক্তিশালী ও সাহসী কর্মী দেখলাম। একটুও ভয় পায় নাই। বুকে বল আছে। যদি দেশের কাজ করে যায়, তবে এ ছেলে একদিন নামকরা নেতা হবে, এ সম্বন্ধে কোনো সন্দেহ নাই। ত্যাগ করার যখন প্রাণ আছে, আদর্শ যখন ঠিক আছে, বুকে যখন সাহস আছে একদিন তার প্রাপ্য দেশবাসী দেবেই।’ (পৃষ্ঠা: ১২৫)।
‘…নারায়ণগঞ্জ থেকে চটকল ফেডারেশনের জেনারেল সেক্রেটারি আবদুল মান্নানকে নিয়ে এসেছে। জামিন দেয় নাই, নারায়ণগঞ্জের মামলায় তাকে আসামি করেছে। ভদ্রলোক কাছেও ছিল না। শুনলাম নারায়ণগঞ্জে মশা কামড়াইয়া তার হাত মুখ ফুলাইয়া দিয়াছে। আরও বহু লোককে গ্রেপ্তার করে নারায়ণগঞ্জ জেলে রেখেছে। অনেক ছাত্রও আছে। জামিন পায় নাই। কাপড় দেয় নাই, ডিভিশন দেয় নাই। প্রত্যেকটা লোক অর্ধেক হয়ে গেছে। তিন শতের উপর লোককে আসামি রেখেছে। যাকেই পেয়েছে গ্রেপ্তার করে জেলে দিতেছে।’ (পৃষ্ঠা: ১২৭)।
‘যখন আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য কর্মীরা কারাগারে- এক নারায়ণগঞ্জেই সাড়ে তিনশত লোকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা ঝুলছে, তখনও কথা বলেন না…’। (পৃষ্ঠা: ১৩২)
মোস্তফা সরোয়ারের ভাই গ্রেপ্তার হয়ে এসেছিল নারায়ণগঞ্জের মামলায়। সে পরীক্ষার্থী, বিএ পরীক্ষা দু’টা দিয়েছিল। আবার চার তারিখে পরীক্ষা। ওর নাম হাসু। আমি হাসু বলেই ডাকি।… আরও দুইটা ছেলে পরীক্ষার্থী পড়ে রইল। একজন পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি পেয়েছে- নাম খাজা মহীউদ্দিন (পৃষ্ঠা: ১৩৮, ১৩৯) ‘…পড়তে পড়তে ঘুম এলে বাইরে যেয়ে একটু ঘোরাঘুরি করতেছিলাম দেখি যে চটকল ফেডারেশনের সেক্রেটারি আবদুল মান্নানকে নিয়ে যায়। শুনলাম বাজার আনতে গেটে যেতেছে।…’ (পৃষ্ঠা: ১৪৩)
‘সকালেই খবর পেলাম চটকল শ্রমিক ফেডারেশন সেক্রেটারি জনাব মান্নান জামিন পেয়েছে। আজই চলে যাবে, আমার সামনইে বিশ সেলে ছিল, সাধারণ কয়েদি রাখা হয়েছিল।’ (পৃষ্ঠা: ১৬০)
১০ নং সেল থেকে শামসুল হক, মিজানুর রহমান চৌধুরী, আবদুল মোমিন, ওবায়দুর রহমান, মোল্লা জালাল, মহীউদ্দিন (খোকা), সিরাজ, হারুন, সুলতান এসেছে। দেখা হয়ে গেল, কিছু সময় আলাপও হলো। এরা সবাই আওয়ামী লীগের নেতা ও কর্মী।’ (পৃষ্ঠা: ২০২)
‘…আমরা ৬ দফা দাবির জন্য জেলে এসেছি। আজও প্রচার সম্পাদক আব্দুল মোমিন, কালচারাল সম্পাদক ওবায়দুর রহমান, অর্গানাইজিং সেক্রেটারি মিজানুর রহমান চৌধুরী, প্রভাবশালী নেতা শাহ মোয়াজ্জেম, ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য মোল্লা জালালউদ্দিন, মহীউদ্দিন আহম্মদ সিটি আওয়ামী লীগ সম্পাদক নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা সিটির অফিস সেক্রেটারি মোহাম্মদ সুলতান এবং ঢাকা জেলা অফিস সেক্রেটারি সিরাজউদ্দিন জেলে।’ (পৃষ্ঠা:২২৭)
‘২৮ তারিখের কাগজে দেখলাম ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, জয়দেবপুর ও ফতুল্লা থানা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে- যাতে ৭ই জুন ‘৬ দফা দাবি দিবস’ পালন করতে না পারে। বুঝতে আর কষ্ট হলো না।’ (পৃষ্ঠা: ২৪৭)
২২শে জুন খবরের কাগজে দেখলাম নারায়ণগঞ্জের বজলুর রহমানকে… মুক্তি দেওয়ার হুকুম দিয়েছে।’ (সাথে আর ও অনেক নেতা কর্মীর নাম ছিল)। এরা সবাই আওয়ামী লীগের কর্মী ও নেতা (পৃষ্ঠা: ২৪৯)।
এ দুটি গ্রন্থ থেকে বুঝতে বাকি নেই, নারায়ণগঞ্জের নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধু কতটা সম্পর্কযুক্ত ছিলেন।
আমার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ পিতৃ এবং মাতৃকুলের মাধ্যমে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত। অস্থিমজ্জায় বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ এবং অস্তিত্বে নারায়ণগঞ্জ বাস করে। ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ সময়ে নারায়ণগঞ্জ মাথা নত করেনি কোনও অন্যায়ের কাছে। নারায়ণগঞ্জ মানেই ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস, ছয় দফার ইতিহাস, একমুষ্ঠি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জ্বলজ্বলে ইতিহাস, ৭১ এর ইতিহাস। সেই চেতনা থেকে বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া প্রাচীন দলের সাথে আমাদের পরিবারের আত্মার সম্পর্ক দুঃসময়ে ছিল। শৈশব থেকে এই পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে একচুল বিচ্যুত হইনি। সেই চেতনা থেকে উদ্ধার করেছি ঢাকার ধানমন্ডি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অজানা তথ্য। যে বিদ্যালয়ে এখন দাঁড়িয়ে আছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে ‘মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ’।
ছেলেবেলা বাবার কাছ থেকে শুনেছিলাম ১৯৬৪ এর দিকে নারায়ণগঞ্জের জনসভায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, তিনি তাঁর দলে ‘যখন যেমন, তখন তেমন’ লোক চান না। ওই নীতি নিয়েই বড় হয়েছি। আমাদের পরিবার ‘যখন যেমন, তখন তেমন’ পরিবার নয়। অকপটে বলতে পারি, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে পুঁজি করে আজ পর্যন্ত আমার পিতৃকুলের এবং মাতৃকুলের কেউ কোনও সুবিধা গ্রহণ করেনি। নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসে গিয়েছি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।
বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধ একটি আবেগের নাম। যে আবেগ পুঁজি করে ব্যবসা করা যায় না। যে আবেগ দিয়ে কবিতা, গল্প প্রবন্ধ লেখা যায়, শ্রদ্ধা করা যায়। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মানে, অন্যায়ের কাছে মাথা না নোয়ানো এক ব্যক্তিত্ব, অত্যাচারীদের খড়গ হবার ব্যক্তিত্ব, হার না মানা জয়ের মালা পরা এক ব্যক্তিত্ব।
১৯৬৪ সালের ৫ জুলাই বঙ্গবন্ধু নারায়ণগঞ্জে তাঁর বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ সংগ্রাম করে দেশের ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য। ভবিষ্যৎ বংশধররা যাতে গোলামে পরিণত না হয় আমাদের সংগ্রাম তাহার জন্যই।’ নেতা, আপনার এই কথাটি থেকেই শিখে নিয়েছি, যতই বাধা আসুক, নিজের ব্যক্তিত্বকে বিসর্জন দিয়ে যেন গোলামে পরিণত না হই।
বাংলাদেশের কিংবদন্তী নেতাদের স্নেহধন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা’র নলুয়া’য় জন্মগ্রহণ করে আমি নিজেকে ধন্য মনে করি। যে নারায়ণগঞ্জ ভূমিকা পালন করেছে ছয়দফা আন্দোলন সহ বিভিন্ন আন্দোলনে। ছয়দফা দিবসে ‘বাঙালির ম্যাগনাকার্টা’ প্রণেতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। ৯০ দশকে আমার মায়ের ‘অলংকার’ কাব্যগ্রন্থে ১০ পাতায় ‘স্বাধীনতা’ শিরোনামে একটি কবিতার লাইন দিয়ে শেষ করবো বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখাটি।
‘স্বাধীনতা চিরঞ্জীব/ স্বাধীনতার নাম শেখ মুজিব’। হ্যাঁ সূর্যের মতোই সত্যি, স্বাধীনতা চিরঞ্জীব/ স্বাধীনতার নাম শেখ মুজিব।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, লোক প্রশাসন বিভাগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বিষয়ক গবেষণা পরিষদ
তথ্যসূত্র:
১. অসমাপ্ত আত্মজীবনী (২০১২), শেখ মুজিবুর রহমান।
২. কারাগারের রোজনামচা (২০১৭), শেখ মুজিবুর রহমান।
৩. Secret Documents of Intelligence Branch on Father of the Nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman ,Vol-1 1948-1950, (শেখ হাসিনা সম্পাদিত)
৪. মু. জালাল উদ্দিন নলুয়া’র ১৯৭১ এর ডায়েরী।
৫. মু. জালাল উদ্দিন নলুয়া’র জীবনের টুকরো স্মৃতি (২০২০)।
৬. আমাদের চুনকা ভাই একটি স্মারকগ্রন্থ (২০১২)।
৭. বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার তমিজউদ্দিন আহমেদের সাক্ষাৎকার,১২.১.২০০১ইং অবলম্বনে।
৮. বঙ্গবন্ধু ,বাংলার স্বাধীনতার মহানায়ক, জেলা প্রশাসন, নারায়ণগঞ্জ, ২০১৯ইং।
৯. লাল লাল পলাশ, ম. আ. হাফিজ, ১৯৭০ ,প্রথম খণ্ড।
১০. বাঙ্গালির ম্যাগনাকার্টা, তোফায়েল আহমেদ, দৈনিক কালের কণ্ঠ, ১০.১.২০২০ইং
১১. বঙ্গবন্ধুর ভাষণসমগ্র, সাতচল্লিশ থেকে স্বাধীনতা বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ, হাসানুর রশিদ, আগস্ট, ২০১১ইং
১২. ৫২’র ভাষা আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জ বিদ্রোহের শহর, প্রেস নারায়ণগঞ্জ, ১৭.২.২০১৮ইং
১৩. ৫২ থেকে ৭১: প্রতিটি আন্দোলনের সূতিকাগার ছিল নারায়ণগঞ্জ, বাংলা নিউজ২৪.কম, ১৫.১২.২০১১ইং
১৪. জেলা তথ্য বাতায়ন, নারায়ণগঞ্জ।