যশোরের জনসভায় মুজিবরের বক্তৃতা

যশোরের জনসভায় মুজিবরের বক্তৃতা ~ ৬-দফা দাবীর প্রতি জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন রহিয়াছে
যশোর, ১৫ই এপ্রিল, ১৯৬৬ (সংবাদদাতা)।
পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবর রহমান অদ্য স্থানীয় টাউন হল ময়দানে এক জনসভায় ঘোষণা করেন যে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টো আমাকে মোকাবিলা করার প্রশ্নে শেষ পর্যন্ত কাটিয়া পড়ায় ৬-দফার ব্যাপারে আমাদের প্রথম পর্যায়ের বিজয় সূচিত হইয়াছে।
তিনি বলেন, জনাব ভুট্টোর অগৌরবজনক পশ্চাদপসারণের জন্য আমার দুঃখ হয়। তবে এই প্রসঙ্গে বর্তমান সরকারের প্রতি ছয় দফা প্রশ্ন জনমত যাচাইর জন্য অবিলম্বে গণভোট অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করার দাবীর পুনরাবৃত্তি করিতেছি।
তিনি বলেন, পশ্চিম পাকিস্তানের রক্ষাব্যবস্থা পূর্ব পাকিস্তানের উপরই নির্ভর করে। পূর্ব পাকিস্তানই জনশক্তি ও অর্থশক্তি দ্বারা পাকিস্তানের অবশিষ্ট অংশকে রক্ষা করিতে পারে।
প্রেসিডেন্ট আইয়ুব গৃহযুদ্ধের যে হুমকি দিয়াছেন, তাহাতে তিনি দুঃখ প্রকাশ করিয়া জিজ্ঞাসা করেন, কাহাদের মধ্যে এই গৃহযুদ্ধ হইত? তিনি বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে লক্ষ্যে পৌঁছনোর নীতিতে বিশ্বাস করি। দেশে অসন্তোষ সৃষ্টির উদ্দেশ্যই গৃহযুদ্ধের হুমকি দেওয়া হইতেছে।
দাবী আদায়ে জীবন বিসর্জন
অদ্য মাগুরায় এক বিরাট জনসভায় বক্তৃতাকালে শেখ মুজিবর রহমান দাবী আদায়ের জন্য সকলকে জীবন বিসর্জনে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বাঁচিয়া থাকার যদি কোন অর্থ থাকে তবেই বাঁচিয়া থাকুন, নইলে গৌরবোজ্জ্বল মৃত্যুবরণই শ্রেয়।
বক্তৃতাকালে শেখ মুজিব বিশেষভাবে সাম্প্রতিক পাক-ভারত যুদ্ধের আলোকে ছয়দফা দাবীর গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন।
তিনি বলেন, উক্ত যুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তান অবশিষ্ট বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগহীন হইয়া পড়ে। অথচ তথাকথিত সর্বময় শক্তিধর কেন্দ্রীয় সরকারও আমাদের কোন প্রকার সাহায্যে আগাইয়া আসিতে পারেন নাই। যুদ্ধরত রাষ্ট্র ভারতের দ্বারা আমরা তখন পরিবেষ্টিত হইয়া পড়ি। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানকে রক্ষার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় নাই। একটি বিদেশী রাষ্ট্রের মধ্যরাত্রির হুঁশিয়ারির দরুন ভারত তখন পাকিস্তান আক্রমণ করে নাই চিন্তা করা গৌরবের বিষয় নহে। সরকার তখন নিজেদের শক্তি দ্বারা দেশকে রক্ষা করিতে পারেন নাই, ইহা অবমাননা কর ছাড়া কিছু হইতে পারে না। নিজেরা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করিতে পারিব না এবং এজন্য অনেকের উপর ভরসা করিতে হইবে ইহা অপেক্ষা শোকবহ কি হইতে পারে? যাহারা পূর্ব্ব পাকিস্তানে একটি অস্ত্র কারখানা স্থাপনেও রাজী নহেন, যুদ্ধের সময় তাহারা এই প্রদেশকে রক্ষার জন্য কি করিয়াছিলেন দেশের জনসংখ্যার শতকরা ৫৬ ভাগ এখানে বাস করে। অথচ যুদ্ধের সময় আমাদের ভাগ্য শিকায় ঝুলিয়াছিল।
তিনি বলেন, গত ১৮ বছরে পূর্ব পাকিস্তান ক্রমশঃ দরিদ্র হইয়াছে। এখান হইতে অর্থ ও সম্পদ পাচার হইয়াছে। সাধারণ মানুষ দারিদ্র্যের চরমে পৌঁছিতেছে। এই অবস্থার মোকাবিলা করার জন্যই আজ ছয়দফা বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়াছে। আর এই দাবী বাস্তবায়নের জন্য আমাদেরকে চরম ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত হইতে হইবে।
[প্রকাশ : ১৭ই এপ্রিল, ১৯৬৬ / দৈনিক সংবাদ]

SUMMARY

2692-২.jpg