সমাজতন্ত্র ছাড়া কোনও উপায় নেই: বঙ্গবন্ধু

উদিসা ইসলাম

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ । আজ পড়ুন ওই বছরের ১৯ মে’র ঘটনা।)

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, আমাদের দেশের জনগণকে বাঁচাতে হলে সমাজতন্ত্র ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই। ১৯৭২ সালের ১৯ মে  বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- ন্যাপের জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু এ কথা বলেন।

আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে ওই সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন— বাংলাদেশে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোনও বিদেশি সাহায্য গ্রহণ করা হবে না। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার বিনিময়ে আমরা এধরনের কোনও সাহায্য গ্রহণ করতে পারি না। শর্তযুক্ত কোনও সাহায্য আমরা নেবো না।’
ন্যাপের সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন বঙ্গবন্ধু, ২০ মে ১৯৭২, দৈনিক বাংলা
ন্যাপের সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন বঙ্গবন্ধু, ২০ মে ১৯৭২, দৈনিক বাংলা

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত এই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ন্যাপের প্রধান মোজাফফর আহমদ। সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আড়তদার, মজুতদার, মুনাফাখোর চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে শিগগিরই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এদেরকে অবশ্যই চরম আঘাত হানা হবে। এরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করার বিষয়ে তৎপর রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘জনগণ শক্তির উৎস। দেশের মানুষ এদের প্রতিরোধ করবে।’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি গ্রহণ করেই অর্থনৈতিক স্বাধীনতা আনতে হবে।’

আমাদের দেশের জনগণকে বাঁচাতে হলে সমাজতন্ত্র ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘ব্যক্তিগত মালিকানার সুযোগ দিলে সাময়িকভাবে হয়তো অর্থনীতির ক্ষেত্রে কিছুটা চাকচিক্য দেখা যেতো। কলকারখানা জাতীয়করণের বদলে ব্যক্তিগত মালিকানায় রাখলে চোরাপথে অর্থ সমাগমে এগুলো হয়তো তাড়াতাড়ি চালু হতো এবং কিছু সাময়িক সুবিধে হতো না তাও নয়। অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি দেখা দিতো, কিন্তু একবার দেশে ব্যক্তি মালিকানা স্বীকার করে নিলে পরবর্তী পর্যায়ে তাদেরকে প্রতিহত করা কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ, এদের সঙ্গে দুনিয়ার পুঁজিবাদী গোষ্ঠীর একটি স্বাভাবিক যোগাযোগ গড়ে ওঠে।’ তিনি বলেন, ‘সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রথমে জনতাকে দুঃখ-কষ্ট ভোগ করতে হয়।’
১৯৭২ সালের ২০ মে’র দৈনিক বাংলা
১৯৭২ সালের ২০ মে’র দৈনিক বাংলা
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সত্যিই খারাপ। সাম্রাজ্যবাদী দালালেরা আবারও এর সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে। দেশে একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য এরা যথেষ্ট অর্থ ব্যয় করছে। বিদেশি অর্থে কিছু কিছু পত্রিকা বের হচ্ছে। তবে জনগণকে আমি চিনি, এসব দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা যাবে না।’ বঙ্গবন্ধু প্রশ্ন করেন, সমাজতন্ত্রের নামে যারা দেশে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে, তাদেরকে কঠোর হাতে দমন করা ছাড়া আর কী উপায় আছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাকিস্তানের কিছু কিছু আমলা এখনও পরিবর্তন হয়নি। তারা এখনও সাম্প্রদায়িক মনোভাব পোষণ করে আসছে। অবশ্যই তাদেরকে ধীরে ধীরে ছাটাই করা হবে।’

শেখ মুজিবুর রহমান মিত্র রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বকে নস্যাৎ করার প্রচেষ্টাকে প্রতিরোধ করার জন্য, সংগঠিত জনমত সৃষ্টির উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আদর্শে যখন মিল রয়েছে, তখন শত্রু মোকাবিলায় আমরা তিন পার্টি একতাবদ্ধ আছি। আগে কখনও আওয়ামী লীগ, ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টির মাঝে এমন বন্ধুত্ব দেখা যায়নি।’ এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু আরও বলেন, ‘নেতাদের অনেকেই একদিন আমাদের সহকর্মী ছিলেন। আমরা একই দলে ছিলাম। জেল খেটেছি। আজ  আবারও আদর্শের মিল দেখা যাচ্ছে। আমাদের মাঝে আপস  হয়ে গেছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আড়তদার, মুনাফাখোর চোরাচালানী দুষ্কৃতিকারী ও সমাজবিরোধীদের প্রতিরোধে সরকার আওয়ামী লীগ নেতাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাকে সাহায্য করবে। প্রয়োজন হলে এসব সমাজবিরোধীদের জন্য নতুন কারাগার নির্মাণ করা হবে।’
১৯৭২ সালের ২০ মে দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত খবর
১৯৭২ সালের ২০ মে দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত খবর

এদিকে দ্বিতীয় দফায় টেস্ট রিলিফের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেশে টেস্ট রিলিফের কাজের জন্য সরকার শিগগিরই আরও ১০ কোটি টাকা প্রদান করবে। এতে টেস্ট রিলিফে মোট পরিমাণ দাঁড়াবে ২৬ কোটি টাকা। যুদ্ধবিধ্বস্ত জাতীয় পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে সরকার জনগণের খাদ্য অধিকারকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছে। এরপর এই স্থান পেয়েছে আশ্রয়। সাহায্য ও পুনর্বাসনমন্ত্রী কামরুজ্জামান ১৯ মে ঢাকায় একথা বলেন। মন্ত্রী বাসসকে জানান যে, টেস্ট রিলিফের কাজে ১০ কোটি টাকার মধ্যে চার কোটি টাকা দুই-একদিনের মধ্যেই দেওয়া হবে। ইতোপূর্বে প্রদত্ত ১৬ কোটি টাকার বিষয়টি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘এসব প্রকল্পের শতকরা ৮০ থেকে ১০০ ভাগ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।’

সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন, প্রকাশিত : মে ১৯, ২০২০

SUMMARY

2674-১.jpg