১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণ সে সময়ের পত্র-পত্রিকাতেও সর্বোচ্চ গুরুত্বসহকারে স্থান পায়। প্রথম সারির পত্রিকাসহ সব পত্রিকায় পরদিন ৭ মার্চের ভাষণের বিষয় প্রকাশিত হয়। ‘পরিষদে যাওয়ার প্রশ্ন বিবেচনা করিতে পারি, যদি-’ শিরোনামে সেই সময়ের ৮ মার্চ অন্যতম প্রধান দৈনিক ইত্তেফাক খবরটি ছাপে ৮ কলাম ব্যানারে। শিরোনামের নিচে উল্লেখ করা হয় সেই চার দাবি। শিরোনামের নিচে দেয়া হয় গর্জে ওঠা বঙ্গবন্ধুর ছবি। এই ছবির ক্যাপশনটা ছিল, ‘….সামরিক বাহিনীকে অবিলম্বে ব্যারাকে ফিরাইয়া লও’।
খবরের নিচে আট কলামজুড়ে সমাবেশে উপস্থিত হর্ষোৎফুল্ল লাখো জনতার ছবি। ছবির ওপরে ক্যাপশন, ‘এবার বন্দী বুঝেছে মধুর প্রাণের চাইতে ত্রাণ, জয় নিপীড়িত জনগণ জয়, জয় নব উত্থান’।
এই সমাবেশের এক পৃষ্ঠা আলোকচিত্র ছাপা হয় ৬-এর পৃষ্ঠায়। ‘চিত্রে রবিবারের রেসকোর্স’ নামে এ পাতায় ছবি ছিল সাতটি। প্রথম ছবিটি ছিল তখন স্বাধিকার আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের স্মৃতির প্রতি দোয়া কামনা বিষয়ে। একটি ছবিতে বঙ্গবন্ধুসহ অন্য নেতারা দুই হাত তুলে জনতার অভিবাদন গ্রহণ করছেন। একটি ছবি শুধু নারীদের। হাতে তাঁদের লাঠি ও বাঁশি। এতে ক্যাপশন লেখা হয়, ‘মা-বোনেরাও আসিয়াছিলেন হাজারে, হাজারে’। একটি ছবি বাসের সারির। ভেতরে, ছাদে উৎফুল্ল জনতা।
দৈনিক সংবাদ প্রত্রিকায় রিভার্স টাইপে শিরোনাম ছিল, ‘এবার স্বাধীনতার সংগ্রামঃ মুজিব’। তারাও আট কলামজুড়ে সংবাদটি ছাপায়। খবরটিতে দুই লাইনের শোল্ডার ছিল: ‘সামরিক আইন প্রত্যাহার ও গণপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা দিলেই পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিব কি না ঠিক করিব’। ভাষণে বঙ্গবন্ধু যে নির্দেশনা দেন, তা ‘মুজিবের নির্দেশ’ নামে পৃথক আরেকটি শিরোনামে ছাপা হয়। ভেতরে ছাপে ‘শেখ মুজিবের বিবৃতির পূর্ণ বিবরণ’।
বঙ্গবন্ধুর ভাষণের মূল্যায়ন করতে গিয়ে লন্ডনের ‘অবজারভার’ পত্রিকার তৎকালীন রাজনীতি বিশ্লেষক সিরিল ডান লিখেছিলেন, ৭ই মার্চের ভাষণ ছিল একটি জাতির স্বাধীনতা ও স্বাধীন অস্তিত্ব পুনর্নির্মাণের ডাক। এই ডাক সারাবিশ্বের নির্যাতিত মানুষের মনে সাড়া জাগাবে তাতে সন্দেহ নেই।
কানায় কানায় জনসমুদ্রে রূপ নিয়েছিলো তৎকালিন রেসকোর্স ময়দান (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান)। কারণ সেদিন মঞ্চে উঠবেন বঙ্গবন্ধু। ঠিক বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি আর হাতাকাটা কালো কোট পরে বাঙালির প্রাণপুরুষ সেদিন দৃপ্তপায়ে উঠে আসেন রেসকোর্সের মঞ্চে৷ ৭ মার্চের জনসভায় একমাত্র বক্তা ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মঞ্চে উঠে প্রথমেই তিনি উচ্চারণ করেন, ‘ভায়েরা আমার…’ শব্দটি। এরপর অলিখিত ১৮ মিনিটের সেই ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে বাঙালি মুক্তিকামি মানুষকে উজ্জিবিত করেন অধিকার আদায়ের নেশায়।
সুত্র: ভোরের কাগজ, প্রকাশিত : মার্চ ৭, ২০২০