আরও একটি ওয়াদা পূরণ করলেন বঙ্গবন্ধু

উদিসা ইসলাম

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন । আজ পড়ুন ওই বছরের ১৫ মে’র ঘটনা।)

কাপড় ও সুতা বণ্টন ব্যবস্থা, দেশে উৎপাদিত কাপড়ের ডিস্ট্রিবিউটরশিপ ও অন্যান্য এজেন্সি ব্যবস্থা বাতিলের আদেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সুষ্ঠু বণ্টনের নিশ্চয়তা বিধান এবং জনগণ যাতে ন্যায্যমূল্যে কাপড় পেতে পারে, সেজন্য দোকান মালিক সমিতির মাধ্যমে সারাদেশে কাপড়  বিক্রি হবে। সরাসরি যেন জনগণের হাতে গিয়ে পৌঁছে, সেজন্য মধ্যস্বত্বভোগীদের নির্মূল করার ব্যবস্থা বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সরকার ১৯৭২ সালের ১৫ মে  লাইসেন্সপ্রাপ্ত পারমিটের মাধ্যমে সুতা বণ্টন ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়।

পরের দিন ১৬ মে’র পত্রিকায় বলা হয়,  অবিলম্বে এ আদেশ কার্যকর হবে। প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত আদেশ মোতাবেক দেশের মিলে উৎপাদিত সুতা এখন থেকে রেশন কার্ডের ভিত্তিতে প্রকৃত তাঁতিদের কাছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র শিল্প করপোরেশনের  মাধ্যমে সরাসরি বণ্টন করা হবে। বাসসের খবরের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়— কাপড় বণ্টনের এই ব্যবস্থায় বঙ্গবন্ধুর একটি ওয়াদা পূরণ হলো। দেশে কাপড়ের মূল্য হ্রাস করে জনগণের কল্যাণ সাধনই এ ব্যবস্থার লক্ষ্য।
১৯৭২ সালের ১৬ মে প্রকাশিত দৈনিক বাংলা
১৯৭২ সালের ১৬ মে প্রকাশিত দৈনিক বাংলা
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে প্রায় ৪৪টি কাপড় কল আছে। এসব কাপড় কলে মাত্র তিন কোটি গজের মতো কাপড় উৎপন্ন হয়। অথচ দেশে কাপড়ের চাহিদার পরিমাণ হলো ৯০ কোটি গজ। পাকিস্তান বাংলাদেশে প্রায় ১১ কোটি গজের মতো কাপড় রফতানি করতো। বাদ বাকি চাহিদা তাঁত শিল্প থেকে পূরণ হতো। দেশে বণ্টন ব্যবস্থার বিপ্লবী কার্যক্রমের ফলে কাপড়ের দাম কমবে বলে আশা করে সরকার।

তবে সব কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চালু করতে কিছু সময় লাগবে বলেও ধরে নেওয়া হয়েছিল। কারণ, দুটো কাপড় কলে সরঞ্জাম এসে গেছে বলে জানা গেলেও কিছু কিছু কাপড় কল মেরামত করার প্রয়োজন আছে। সুতা ব্যবস্থা দেশব্যাপী তাদের (জনগণের) কাছে সুস্থতা বণ্টনের নিশ্চয়তা বিধান করবে। গত ২৪ বছরের মধ্যে এ ধরনের ব্যবস্থা এই প্রথম।
দৈানক বাংলা, ১৬ মে ১৯৭২
দৈানক বাংলা, ১৬ মে ১৯৭২
এর ফলে তাঁত বস্ত্রের দাম কমবে এবং মান উন্নত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে, উল্লেখ করে বলা হয়— বাংলাদেশে প্রায় তিন লাখ তাঁতি রয়েছে। তাদের তৈরি কাপড় মোট চাহিদার শতকরা ৪০ ভাগ পূরণ করে থাকে। তবে অতীতে এসব তাঁতি মধ্যস্বত্বভোগী ধরনের লোকের কারসাজির শিকার হতো।

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ডিপি ধরের সাক্ষাৎ

ভারতের বহির্বিষয়ক মন্ত্রক ডিপি ধর এদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে দেখা করেন। এক মাস আগে পাকিস্তানে দূত পর্যায়ের যে বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টোর সাক্ষাতের বিষয়ে আলাপ হয়, সেই বৈঠকে ডিপি ধর উপস্থিত ছিলেন। ভারত- পাকিস্তান দূত পর্যায়ের বৈঠকের প্রতিবেদন পেশ করতে ডিপি ধর প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ডিপি ধর, দৈনিক বাংলা, ১৬ মে ১৯৭২তবে তাদের আলোচনার বিষয়বস্তু জানা যায়নি। সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ইন্দিরা-ভুট্টো শীর্ষ বৈঠক ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান উপমহাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন শ্রী ধর। ঢাকা আগমনের পর ডিপি ধর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পররাষ্ট্র দফতরে অনুষ্ঠিত এই সাক্ষাৎকারে ধর ও আব্দুস সামাদ ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা করেন। এরপর সন্ধ্যা ছয়টায় শ্রী ধর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর অফিস কক্ষ থেকে বেরিয়ে এলে বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকরা আলোচনার বিষয়বস্তু জানতে চান। কিন্তু  কোনও মন্তব্য করতে তিনি অসম্মতি জানান।

ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র শিল্প করপোরেশনকে দেশে তাদের অধীন তাঁতিদের সঠিক সংখ্যা নিরূপণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। করপোরেশন তাঁতিদের রেশন কার্ড তৈরির কাজে সাহায্য করবে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র শিল্প করপোরেশন এরইমধ্যে প্রায় তিন লাখ অর্ডারের ফর্ম বিলি করেছে। এ সংখ্যা আরও বাড়বে বলে শুরুতেই আশা করা হয়েছিল।
সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন,প্রকাশিত : মে ১৫, ২০২০

SUMMARY

2657-১.jpg