১২ মে, ৭২, বঙ্গবন্ধু অসুস্থ

উদিসা ইসলাম

১৯৭২ সালের ৯ মে থেকে টানা চার দিন ঢাকায় ছিলেন না বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ক্যালেন্ডারের এইদিন সকালে উত্তরবঙ্গ থেকে চার দিনের সরকারি সফর শেষে ঢাকায় পৌঁছেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।

১৯৭২ সালের ১৩ মে এর সংবাদপত্রগুলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সামান্য অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সকালে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় চারদিনের ঐতিহাসিক সফর শেষে হেলিকপ্টারে ঢাকা প্রত্যাবর্তন কালে তিনি পেটে ব্যথা অনুভব করেন। বাসসের বরাত দিয়ে দৈনিক বাংলার খবরে বলা হয় যে তিনি অসুস্থ বোধ করায় দিনের কর্মসূচি বাতিল করে দিয়ে বিশ্রাম গ্রহণ করছেন।
১৯৭২ সালের আজকের দিনের পত্রিকা

সফর সফল

বঙ্গবন্ধুর চারদিনের সফর নিয়ে দৈনিকগুলোতে যে বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় তাতে এই সফরের ভূয়সী প্রশংসা ছিল। এতে বলা হয়, বঙ্গবন্ধুর সাম্প্রতিক উত্তরাঞ্চলীয় জেলাসমূহে সফর ছিল জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার রাজনৈতিক মোকাবিলা করার বিঘোষিত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের প্রথম সফল পদক্ষেপ। দৈনিক বাংলার বিশ্লেষণ ছিল, বঙ্গবন্ধুর এ সফর যেমন একদিকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিতে গভীর প্রভাব বিস্তার করবে, সাথে সাথে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে তাতে সন্দেহ নেই। এবারের এ সফর আরও প্রমাণ করেছে যে স্বাধীনতা-উত্তর বিধ্বস্ত বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জনগণ সম্পূর্ণ সচেতন রয়েছে। জাতীয় স্বার্থবিরোধী সাম্রাজ্যবাদী এজেন্টের বিরুদ্ধে প্রচারণা তাদেরকে বিভ্রান্ত করতে সমর্থ হবে না।

বঙ্গবন্ধু সুস্পষ্টভাবে দেশের শত্রুদের চিহ্নিত করে বলেন, সাম্রাজ্যবাদীরা বিদেশের অর্থ গ্রহণ করে আমাদের স্বাধীনতাকে ধ্বংস করতে চাচ্ছে। কেউ কেউ আবার সরকারের সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি পদক্ষেপ গুলো বানচালের সূক্ষ্ম প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। চরম বিপদের দিনে বাংলাদেশের পাশে যেসব বন্ধুরা দাঁড়িয়েছিল তাদের বিরুদ্ধেও তারা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এরা গণতন্ত্রের নামে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুযোগ নিচ্ছে। প্রয়োজন হলে এসব সাম্রাজ্যবাদের দালালদের মোকাবিলার জন্য জনগণকে আবার ডাক দেওয়া হবে। বঙ্গবন্ধু তার সফরকালে আওয়ামী লীগ ছাড়াও বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে আলোচনা করেন।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে একটি বিপ্লবী রাজনৈতিক দলে রূপান্তরিত করার ওপর বঙ্গবন্ধু গুরুত্ব আরোপ করেছেন। দলের দুর্বলতাগুলো মুছে ফেলে পার্টি হিসেবে গড়ে তোলার অভিপ্রায়ে তিনি কর্মী সাধারণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান এবং উপস্থিত কর্মীরাও বঙ্গবন্ধু আহ্বানে সাড়া দেন।

এদিকে ভিয়েতনাম থেকে বিদেশি সৈন্য সরাতে আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১২ মে শনিবার ঢাকায় প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে বলেন, মার্কিন প্রশাসনের উত্তর ভিয়েতনামের বন্দরগুলো থেকে অবিলম্বে অবরোধ তুলে নিয়ে ভিয়েতনাম থেকে সমস্ত বিদেশি সৈন্য বাহিনী প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করা উচিত। বাসসকে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু বলেন, উত্তর ভিয়েতনামের বোমাবর্ষণ, বন্দর অবরোধ ও সাধারণ ভাবে যুদ্ধ সম্প্রসারণ কোনোমতেই শান্তিপূর্ণ সমাধানের সহায়ক হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মার্কিন সরকারের এটা বোঝা উচিত যে এইসব কার্যকলাপ কোনও সাফল্য বয়ে আনে না বরং তা বিশ্ব শান্তির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভিয়েতনামের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে বাংলাদেশের জনগণ বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার এবং জনসাধারণ কোনও বিদেশি হস্তক্ষেপ ছাড়াই ভিয়েতনামের জনগণ কর্তৃক তাদের সমস্যা সমাধানের দাবিতে সব সময় সমর্থন করে আসছে। বঙ্গবন্ধু বলেন, অবরুদ্ধ দেশ থেকে বিদেশি সৈন্য প্রত্যাহারের পরিবর্তে আমরা দেখছি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উত্তর ভিয়েতনাম অবরোধের সাথে সাথে যুদ্ধের তীব্রতা বৃদ্ধি করেছে। তিনি এর তীব্র সমালোচনা করে দেশটি থেকে বিদেশি সৈন্য প্রত্যাহারের দাবি জনান।

সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন, প্রকাশিত : মে ১২, ২০২০ 

SUMMARY

2653-১.jpg