উদিসা ইসলাম
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কর্মচারীদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘লাল ফিতার দৌরাত্ম্য থেকে জনগণকে মুক্তি দিন।’ ১৯৭১ সালের মে মাসে চারদিনের উত্তরবঙ্গর সফরকালে বগুড়া থেকে রাজশাহী যাওয়ার পথে রাজশাহী শহরের চারিদিকে দেওয়া বাঁধের ভগ্নদশা দেখতে পান তিনি। বাঁধের এরকম অবস্থা কেন তা জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধুকে জানানো হয় যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রকল্পটির দিকে নজর দিচ্ছে না। বঙ্গবন্ধু এতে বিস্মিত হয়ে অবিলম্বে বাঁধ প্রকল্পের কাজে হাত দেওয়ার নির্দেশ দেন। ১০ মে পাবনায় অবস্থানকালে বঙ্গবন্ধু বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমেদের কাছ থেকে একটা বার্তা পান। যাতে বলা হয়, নির্দেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
স্বীকৃতির আগে আলোচনা নয়
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবারও ঘোষণা করে,ন যে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দেওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানের সঙ্গে কোনও আলোচনা হবে না। ১৯৭২ সালের ১০ মে বিকালে পাবনার স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বিশাল জনসভায় ভাষণদানকালে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবে কিনা তাই নিয়েই নাকি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভুট্টো আমার সঙ্গে আলাপ করার প্রস্তাব রেখেছেন। বাংলাদেশের বাস্তবতাকে স্বীকার না করে নেওয়া পর্যন্ত ভুট্টো সাহেবের সঙ্গে কোনও কথা নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয়কেতন আজ উড়ছে। অপরদিকে বিশ্বের দরবারে পাকিস্তান কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। যে প্রভুর কথায় ভুট্টো সাহেব নেচেছেন সেই প্রভুই বাংলাদেশের বাস্তবতাকে স্বীকার করে নিয়েছে। কাজেই আলোচনা হোক বা না হোক পাকিস্তান এখন বাধ্য হয়েই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবে।’
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই
প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন, বাংলাদেশের মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই। মানবতার বিরুদ্ধে যারা জঘন্যতম অপরাধ করেছে বাংলার মাটিতে তাদের বিচার অবশ্যই হবে। আমার ওপর যতই চাপ সৃষ্টি করা হোক না কেন এ বিচার হবেই।
বিশ্বের সভ্য দেশগুলোর উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আপনারা নুরেমবার্গের বিচার করেছিলেন। নুরেমবার্গে যে নাজিদের বিচার করা হয়েছিল তাদের চেয়েও হাজার গুণ বেশি অপরাধী পাকিস্তানের যুদ্ধাপরাধীরা। কাজেই এই পশুদের বিষয়ে বাংলাদেশ যে ভূমিকা নিয়েছে তার প্রতি আপনারা সমর্থন দিন। এদের বিচার অপরিহার্য তবে বিনা বিচারে কাউকে শাস্তি দেওয়া হবে না।’
বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘পাকিস্তানে আটক বাঙালিদেরকে অবশ্যই ফিরিয়ে দিতে হবে। সাহেবদের জেনে রাখা উচিত শেখ মুজিব কখনও বাজে কথা বলে না।’
১৯৭২ সালের পত্রিকা
ষড়যন্ত্রকারীদের বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান
সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বলে বাসসের খবরে প্রকাশ করা হয়। তিনি বলেন, ‘সাম্রাজ্যবাদী শক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করতে সক্রিয় রয়েছে। আপনারা সতর্ক থাকুন। সাম্রাজ্যবাদের দালালদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য আমি হয়তো আপনাদের ডাক দিতে পারি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কতিপয় দুষ্কৃতকারী এখানে সেখানে আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করে চলেছে। এই সশস্ত্র দুষ্কৃতকারীরা ডাকাতি করছে। এদের ধরে ধরে আপনারা পুলিশে সোপর্দ করুন। প্রয়োজন হলে পুলিশ অস্ত্র নিয়েই এদের মোকাবিলা করবে। কিন্তু তবুও সাধারণ মানুষকে আর দুর্ভোগ পোহাতে দেওয়া হবে না।’
তিনি বলেন, কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি করেই সংকট মোকাবিলা করতে হবে। মিল কারখানাগুলোকে উৎপাদন বাড়াতে কঠোর পরিশ্রম করতে শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানান।
এর আগে বন্ধু পাবনায় এসে পৌঁছালে তাকে বিপুল সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ১১ মে সকাল সাড়ে ৯টায় তিনি রংপুর যান। সেখানেও তাকে বিপুল সংবর্ধনা জানানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়। ওইদিন বিকালে তিনি রংপুর কালেক্টরেট ময়দানে আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেন।
সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন, প্রকাশিত : মে ১০, ২০২০