রবীন্দ্র গোপ
আমার চোখে বার বার ভেসে উঠে দুখীনি মায়ের মুখ
দাউ দাউ আগুনে হলকা, সহযোদ্ধা গুলিবিদ্ধ
ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত বুকে বাঙলার মানচিত্র।
আজও শুনতে পাই-জাতির পিতার বজ্রকণ্ঠ-
আর যদি একটি গুলি চলে
আর যদি আমার লোকের উপর হত্যা করা হয়….
কানে ভেসে আসে করুণ আর্তনাদ,
আমার কাঁধে বারুদতপ্ত বুকে ঝুলন্ত বন্ধু বলে,
ভয় নেই, আমিত আছি, এগিয়ে যাও দৃপ্ত পদক্ষেপে।
আমি শুনতে পাই পিতার বজ্রকণ্ঠ
‘তোমাদের যার যা কিছু আছে
তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে
মনে রাখবা রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব
বাঙলার মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইন্শাল্লাহ’।
কোমল মাটির বুকে শক্ত কনুই আর হাঁটুতে ভর করে
পৃথিবী জয়ের নেশায়, হামাগুড়ি দেয়া শিশুর মতই
আমরা ক’জন দুর্ধর্ষ গেরিলা স্বপ্নভরা চোখে এগোচ্ছি।
মাতৃগর্ভ থেকে একটি নতুন শিশুর জন্মদানের প্রতীজ্ঞাদীপ্ত মনে
পৃথিবীর কোলে তুলে দেবার স্বপ্নে বিভোর
জীবন দানে নির্ভীক, স্বপ্নের ভ‚গোলে সোনার বাঙলা।
আমার কানে ভেসে আসে জাতির পিতার বজ্রকণ্ঠ
প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলো।
সামনে শক্রর ঘাঁটি চোখে স্বপ্ন, উড়ে লাল সূর্যের পতাকা
মায়ের সবুজ আঁচলে কোমল মাটির স্নেহে
বুক ঘষে ঘষে আমরা এগোচ্ছি গেরিলা দল।
আমাদের সামনে জমাট আঁধারে লেফট্ রাইট্ লেফট্ রাইট্
মায়ের বুকে আঁকে রক্তলাল আল্পনা
ক্ষতবিক্ষত বুকে বুটের উল্লাসে মেতে উঠে দানবের দল।
আমার ভায়ের রক্তমেখে উল্লাস করে অসুর সন্তানেরা
আমার ধর্ষিতা বোনের বস্ত্র হরণে ওরা গর্বিত হুংকারে আকাশ কাঁপায়
আমার কাঁধে ঝুলন্ত বন্ধুটি বলে, আর দেরী নয়
এখন গর্জে উঠার সময়
তারপর ট্রিগারে তর্জনী, ট্রা ট্রা! ধ্রিম ধ্রিম..জয়বাংলা..।
আমি শুনতে পাই জাতির পিতার বজ্রকণ্ঠ
‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’
তপ্ত বারুদের চিৎকারে পৃথিবীময় ছড়িয়ে পড়লো
একটি নতুন শিশুর জন্মের কথা, যার জনকের নাম
শেখ মুজিবর রহমান! পৃথিবীতে জন্ম নিল
নতুন পতাকা, গায়ে রক্ত লাল সূর্যটিপে এক নতুন মানচিত্র
আমার মাতৃভ‚মি সোনার বাঙলা-বাংলাদেশ।