ভাষা আন্দোলনে শেখ মুজিবুর রহমান

অরবিন্দ মৃধা

দাসত্বের শিকল বাঙালি জাতির ভাষা-সংস্কৃতিকে বোবা করে রেখেছিল। সেই শিকল ছিঁড়ে বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে ১৯৫২-এর রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই আন্দোলন শুরু হয় সাধারণ ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী প্রতিবাদ প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে। আর সেই পথ ধরে ১৯৭১-এ লাখ শহীদের রক্তে রঞ্জিত হয়ে বাঙালি জাতি অর্জন করে স্বাধীনতা। প্রাচীন যুগ থেকে বহুদাবিভক্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভূখণ্ডের নানা জাতিগোষ্ঠীর ভাষাভাষীর মানুষকে একটি ভূখণ্ডের গণ্ডিতে আবদ্ধ করে বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার প্রবক্তা, স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ছাত্রনেতা থাকাকালে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা’ আন্দোলন শুরু হয়। ছাত্রজনতার কাতারে থেকে দেশব্যাপী নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাভাষা রক্ষার সপক্ষে জনমত গড়ে তুলে অসামান্য অবদান রেখেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।

বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার প্রবক্তা, স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ছাত্রনেতা থাকাকালে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা’ আন্দোলন শুরু হয়। ছাত্রজনতার কাতারে থেকে দেশব্যাপী নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাভাষা রক্ষার সপক্ষে জনমত গড়ে তুলে অসামান্য অবদান রেখেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।

রাজনৈতিকভাবে ১৯৪৮ খ্রি. ফেব্রুয়ারি মাসে করাচিতে সংবিধান প্রণয়ন সভার বৈঠকে রাষ্ট্রভাষা নির্ধারণ বিষয়ে আলোচনা উঠলে তৎকালীন এমএলএ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বাংলাভাষাকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব উত্থাপন করেন। কিন্তু পাকিস্তানের অধিকাংশ মুসলিম লীগ সদস্য রাজি হননি। এ অবস্থায় বাংলাকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার উদ্যোগকে পূর্ব পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করে বাংলাভাষা আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠে।

এ বিষয়ে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেছেন, ‘ফেব্রুয়ারি ৮ই হবে ১৯৪৮ সাল। করাচিতে পাকিস্তান সংবিধান সভার (কন্সটিটিউয়েন্ট এ্যাসেম্বলী) বৈঠক হচ্ছিল। সেখানে রাষ্ট্রভাষা কি হবে সেই বিষয়ও আলোচনা চলছিল।’ …‘কুমিল্লার কংগ্রেস সদস্য বাবু ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত দাবি করলেন বাংলা ভাষাকেও রাষ্ট্রভাষা করা হোক। কারণ পাকিস্তানের সংখ্যাগুরুর ভাষা হল বাংলা।’ ‘আমরা দেখলাম বিরাট ষড়যন্ত্র চলছে বাংলাকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রভাষা উর্দু করার।

পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ ও তমদ্দুন মজলিস এর প্রতিবাদ করল এবং দাবি করল, বাংলা ও উর্দু দুই ভাষাকেই রাষ্ট্রভাষা করতে হবে।’ ‘আমরা সভা করে প্রতিবাদ শুরু করলাম। এই সময় পূর্বপাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, ছাত্রলীগ ও তমদ্দুন মজলিস যুক্তভাবে সর্বদলীয় সভা আহ্বান করে একটা ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করল।…তমদ্দুন মজলিস যার নেতা ছিলেন অধ্যাপক আবুল কাশেম সাহেব।…সভায় ১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চকে ‘বাংলাভাষা দাবি দিবস’ ঘোষণা করা হলো।’

এই দাবি দিবসকে সফল এবং আন্দোলনকে বেগবান করার লক্ষ্যে শেখ মুজিবুর রহমান (ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ/মার্চ ১৯৪৮-এর প্রথম সপ্তাহে) খুলনা দৌলতপুরসহ দক্ষিণাঞ্চল ঘুরে ছাত্র সমাবেশ করেছিলেন।

তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘জেলায় জেলায় আমরা বের হয়ে পড়লাম। আমি ফরিদপুর যশোর হয়ে দৌতলপুর খুলনা ও বরিশালে ছাত্র সভা করে ঐ তারিখের তিনদিন পূর্বে ঢাকায় ফিরে এলাম। দৌলতপুরে মুসলিম লীগ সমর্থক ছাত্ররা আমার সভায় গোলমাল করার চেষ্টা করলে, খুব মারপিট হয়। কয়েকজন জখমও হয়। এরা সভা ভাঙতে পারে নাই, আমি শেষ পর্যন্ত বক্তৃতা করলাম।’ উল্লেখ্য, ভাষা আন্দোলনকে গতিশীল এবং কমিটি গঠন করার লক্ষ্যে শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৮-এর ২৮ ফেব্রুয়ারি দৌলতপুর ব্রজলাল কলেজে ছাত্রছাত্রী সমাবেশ করে ভাষণ দিয়েছিলেন।

এই বিষয়ে সমাজ গবেষক ড. খ ম রেজাউল করিম উল্লেখ করেছেন, ‘২৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে খুলনা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। খুলনার দৌলতপুরে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় গৃহীত প্রস্তাবে বাঙলাকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা করার দাবি এবং দেশব্যাপী দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার কথা বলা হয়।’

শেখ মুজিব ঢাকায় ফিরে ১১ই মার্চ বাংলাভাষা দাবি দিবসকে সফল করার জন্য সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে পিকেটিংয়ের এলাকা নির্ধারণ ও কে কোথায় নেতৃত্ব দিবে সে বিষয়ে নির্দেশনা দিলেন। তিনি বলেছেন, ‘১১ই মার্চ ভোরবেলা শত শত ছাত্রকর্মী ইডেন বিল্ডিং, জেনারেল পোষ্ট অফিস ও অন্যান্য জায়গায় পিকেটিং শুরু করল।…সমস্ত ঢাকা শহর পোষ্টারে ভরে ফেলা হল।

…সকাল ৮টায় জেনারেল পোষ্ট অফিসের সামনে ছাত্রদের উপর ভীষণভাবে লাঠিচার্জ হলো।…ফজলুল হক হলে আমাদের রিজার্ভ কর্মী ছিল।…নয়টায় ইডেন বিল্ডিংয়ের সামনের দরজায় লাঠিচার্জ হলো। খালেক নেওয়াজ খান, বখতিয়ার শহর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ ওয়াদুদ গুরুতর রূপে আহত হলো।

…আমি জেনারেল পোষ্ট অফিসের দিক থেকে নতুন কর্মী নিয়ে ইডেন বিল্ডিং এর দিকে ছুটেছি, এর মধ্যে শামসুল হক সাহেবকে…পুলিশ ঘিরে ফেলেছে। …তখন আমার কাছে সাইকেল। আমাকে গ্রেফতার করার জন্য সিটি এসপি জীপ নিয়ে বার বার তাড়া করছে। ধরতে পারে না।…(পরে) চার পাঁচজন ছাত্র নিয়ে ইডেন বিল্ডিং এর দরজায় আমরা বসে পড়লাম।…আমাদের উপর কিছু উত্তম মধ্যম পড়ল এবং ধরে নিয়ে জিপে তুলল।…বহু ছাত্র গ্রেফতার ও জখম হলো।’ ‘আমাদের প্রায় সত্তর/পঁচাত্তর জনকে বেঁধে নিয়ে জেলে পাঠিয়ে দিলো সন্ধ্যা বেলায়।’

১৯৪৮-এর ১১ মার্চ সকাল ১০টায় শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ১৫ মার্চ সন্ধ্যায় ছেড়ে দেয়া হয়। আটক দিনগুলো সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘জেলের … দেয়ালের বাইরেই মুসলিম গার্লস স্কুল। যে পাঁচদিন আমরা জেলে ছিলাম সকাল ১০টায় মেয়েরা স্কুলের ছাদে উঠে শ্লোগান দিতে শুরু করত আর চারটায় শেষ করত। ছোট্ট ছোট্ট মেয়েরা একটু ক্লান্তও হতো না। ‘রাষ্ট্রা ভাষা বাংলা চাই’ ‘বন্দি ভাইদের মুক্তি চাই’ ‘পুলিশি জুলুম চলবে না’ নানা ধরনের স্লোগান।’

১৯৪৮-এর ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত আমতলায় শেখ মুজিবের সভাপতিত্বে বাংলা ভাষার দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মিটিং শেষে তিনি ছাত্রদের নিয়ে স্মারকলিপি দেন। এ বিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘১৬ তারিখ সকাল দশটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্র সভায় আমরা সকলেই যোগদান করলাম। হঠাৎ কে যেন আমার নাম প্রস্তাব করে বসল সভাপতির আসন গ্রহণ করার জন্য। সকলেই সমর্থন করল।

বিখ্যাত আমতলায় এই আমার প্রথম সভাপতিত্ব করতে হলো।…অনেকেই বক্তৃতা করল। …সভাশেষে এক শোভাযাত্রা করে আমরা হাজির (আইন সভায়) হয়ে কাগজটা ভিতরে পাঠিয়ে দিলাম খাজা সাহেবের কাছে।’ এদিন তিনি সন্ধ্যা পর্যন্ত ছাত্রদের খণ্ড খণ্ড সমাবেশে বক্তৃতা করেছিলেন। আইন সভা থেকে এমপি, মন্ত্রীগণ বেরুলেই ছাত্ররা তাঁকে ধরে রাষ্ট্রভাষা বাংলার সপক্ষে জোর করে লিখিত স্বাক্ষর নিচ্ছিলেন, সেই দিন এমনই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল।

১৯৪৮ খ্রি. ১১ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর মৃত্যু হয়। ১৯৫১ খ্রি. খাজা নাজিমুদ্দীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন তখন পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন নুরুল আমীন। ইতোপূর্বে ছাত্র আন্দোলনের মুখে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের যাবতীয় দাবি মেনে নিতে তিনি সম্মত হয়েছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হয়ে ১৯৫২ খ্রি. জানুয়ারি মাসে ঢাকায় এসে পল্টনের জনসভায় ঘোষণা দিলেন, ‘উর্দুই পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে।’

এই ঘোষণার প্রতিবাদে ৩০ জানুয়ারি ঢাকা শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হরতালের ডাক দেওয়া হয় এবং মুসলিম ছাত্রলীগের নেতা খালেক নেওয়াজ খানের সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সমাবেশ করা হয়।

এ বিষয়ে শেখ মুুজিব বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী হয়ে ২৬ জানুয়ারি পল্টনের জনসভায় খাজা নাজিমুদ্দিন ঘোষণা করলেন উর্দুই রাষ্ট্রভাষা হবে। তখনই প্রতিবাদের ঝড় উঠল।

আন্দোলন সংগ্রামের সপক্ষে মিছিল মিটিং প্রতিবাদ সমাবেশ করে ছাত্র জনতাকে উসকে দেয়ার অপরাধ খাড়া করে পুলিশ শেখ মুজিবকে ১৯৪৯-এর ডিসেম্বরে গ্রেপ্তার করে বিনা বিচারে সাজা দেয়ার প্রতিবাদে আমরণ অনশনের ঘোষণা দিয়ে অনশন শুরু করলে পাকিস্তান সরকার তাঁকে এবং জনাব মহিউদ্দীন সাহেবকে ঢাকা কারাগার থেকে ফরিদপুর কারাগারে স্থানান্তর করে। তিনি ১৬ ফেব্রুয়ারি ৫২-তে ফরিদপুর কারাগারে পৌঁছান।

১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ থেকে এক টানা ১২ দিন তিনি আমরণ অনশন পালনকালে সরকার বাধ্য হয় তাঁকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে। ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে মুক্তি আদেশ পড়ে শুনানোর পর ফরিদপুর জেলে অনশন সঙ্গী মহিউদ্দীন সাহেব ২ চামচ ডাবের পানি মুখে দিয়ে তাঁর অনশন ভঙ্গ করান। তিনি এতো অসুস্থ হয়েছিলেন যে বাঁচার মতো আশা ছিল না। তাঁর পিতা শেখ লুৎফর রহমান অতিকষ্টে কয়েকদিন ধরে বাড়ি নিয়ে যান। এ বিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘পাঁচদিন পর বাড়ি পৌঁছালাম। মাকে তো বোঝানো কষ্টকর। ‘হাসু আমার গলা ধরে প্রথমেই বলল, “আব্বা, রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, রাজবন্দিদের মুক্তি চাই।”

২১ শে ফেব্রুয়ারি ওরা ঢাকায় ছিল, যা শুনেছে তাই বলে চলেছে।…আমি খুব দুর্বল, বিছানায় শুয়ে পড়লাম।’ এই সময় দীর্ঘ কারাভোগের পর জাতির পিতার কাছে তাঁর মমতাময়ী রত্নগর্ভা মা সায়েরা খাতুন প্রশ্ন করে বলেছিলেন, “বাবা তুইতো পাকিস্তান পাকিস্তান করে চিৎকার করেছিস, এদেশের মানুষ তো তোর কাছ থেকে পাকিস্তানের নাম শুনেছিল। আজ তোকে সেই পাকিস্তানের জেলে কেন নেয়?…যে তোকে জেলে নেয়, আমাকে একবার নিয়ে চল, বলে আসব তাকে মুখের উপর।’ (কারাগারের রোজনামচা)

ভাষার দাবিতে ১৯৫২ খ্রি. মে মাসে শেখ মুজিব একাই পাকিস্তান যান। পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহমুদুল হক ওসমানী এবং জেনারেল সেক্রেটারি শেখ মঞ্জুরুল হক দলবল নিয়ে তাকে অর্ভ্যথনা জানান। তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীসহ সতীর্থ রাজনীতিকগণের কাছে পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা ভাষা আন্দোলন, নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, নির্যাতন বিষয়গুলো তুলে ধরেন এবং কয়েকস্থানে সভা করেন ও প্রেস কনফারেন্স করে নির্যাতন বন্ধ এবং তদন্ত ও বিচারের দাবি জানান। তিনি (তৎকালীন) প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীনের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা আন্দোলনে জেলে আটককৃত নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি জানিয়ে বলেন, ‘আমি তাকে অনুরোধ করলাম, মাওলানা ভাসানী, শামসুল হক, আবুল হাশিম, মাওলানা তর্কবাগীশ, খয়রাত হোসেন, খান সাহেব, ওসমান আলীসহ সমস্ত কর্মীকে মুক্তি দিতে। আরও বললাম, জুডিশিয়াল ইনকোয়ারি বসাতে, কেন গুলি করে ছাত্রদের হত্যা করা হয়েছিল।’ (অঃ আঃ পৃ- ২১৩)

সৎ, নির্ভীক, আত্মপ্রত্যয়ী সে দিনের ছাত্র নেতা শেখ মুজিবুর রহমানই একমাত্র ব্যক্তি যিনি বাংলা ভাষার জন্য ভাষা
ভাষা আন্দোলন শুরু হলে ছাত্রনেতা শেখ মুুজিব ১৯৪৮-এ ১১ মার্চ বাংলাভাষা দাবি দিবসকে সফল করার জন্য বিভিন্ন জেলায় অঞ্চলে সভা করেছেন, ১১ মার্চ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে ১৫ মার্চ পর্যন্ত জেল খেটেছেন। ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সমাবেশে সভাপতিত্ব করে সরকারের কাছে দাবি আদায়ের জন্য স্বাক্ষরিত প্রতিবাদ লিপি প্রদান করেছেন। পরে দেশব্যাপী ছাত্র আন্দোলন এবং সাংগঠনিক কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯৪৯ খ্রি. নানা বাধা অতিক্রম করে ‘ভাষা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, জনতা শেখ মুজিবের নেতৃত্বে দেশব্যাপী জেলায় জেলায় ‘জুলুম প্রতিরোধ দিবস’ পালন করেছে।

১৯৫২-তে জেল হাসপাতালে থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি ‘রাষ্ট্রভাষা দিবস’ পালন এবং সংগ্রাম পরিষদ গঠনের তাগিদ দিয়েছেন। একই সঙ্গে বিনাবিচারে বন্দি রাখার প্রতিবাদে তিনি মুক্তি না দেয়া পর্যন্ত আমরণ অনশনের ঘোষণা দিয়ে সরকারকে তাঁর কথা মানতে বাধ্য করেছেন। একই বছর মে মাসে একাই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীনের মুখোমুখি হয়ে আন্দোলনকারী ছাত্রদের হত্যার বিচার এবং রাজবন্দিদের মুক্তির দাবি জানান।

১৯৫২-এর অক্টোবরে চীনের জাতীয় সম্মেলনে আত্মপ্রত্যয়ী বাঙালি শেখ মুজিব ভাষণ দিয়ে মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসার নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। কর্মজীবনে ব্যক্তি শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন, দেশপ্রেমিক, সৎ, ন্যায়, সত্য সুন্দর এবং অবহেলিত, দুঃখী বঞ্চিত মানুষের প্রবক্তা। তাঁরই যোগ্য নেতৃত্বে হাজার হাজার বছরের তিতিক্ষিত বাঙালি জাতি, ভাষা আন্দোলনের সিঁড়ি বেয়ে কঠিন বন্ধুরপথ অতিক্রম অন্তে আজকের বাংলাভাষা, বাঙালি সংস্কৃতি; বাংলাদেশ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে লাখো শহীদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে।

সুত্র: ভোরের কাগজ,  প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৯ 

SUMMARY

2622-বঙ্গবন্ধু-৫.jpg