উদিসা ইসলাম
শিল্প জাতীয়করণ, নতুন বেতন কাঠামো তৈরিসহ বেশকিছু বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার অভিনন্দিত হয়। এসময়েই উত্তরাঞ্চল সফরে বের হন বঙ্গবন্ধু। জনমত গঠন ও শিক্ষক বুদ্ধিজীবী শ্রমিকসহ সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বলা ছিল তার উদ্দেশ্য। একইসঙ্গে শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কাজও এগিয়ে চলছিল। এদিকে জনস্বাস্থ্য বিভাগকে ঢেলে নতুন করে সাজানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ সরকার। থানা পর্যায়ে চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।
উত্তরাঞ্চলে বঙ্গবন্ধুর চারদিনের সফর
দেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে চারদিনের সফরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা ত্যাগ করবেন বলে সংবাদে প্রকাশ করা হয়। ১৯৭২ সালের ৩ মে বাসসের সংবাদে এই সফরকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে থাকবেন তার রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ। ঘোষিত কর্মসূচি অনুসারে প্রধানমন্ত্রী সকালে হেলিকপ্টারে করে বগুড়া পৌঁছাবেন ৮ মে। ওইদিন বিকালে তিনি বগুড়ায় এক জনসভায় ভাষণ দেবেন। বগুড়ায় রাতে অবস্থানের পর বঙ্গবন্ধু ৯ মে সকালে রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা দেবেন। রাজশাহী পৌঁছার পরপরই প্রধানমন্ত্রী সারদা পুলিশ একাডেমি পরিদর্শন করবেন এবং বিকালে তিনি সেখানে এক জনসভায় ভাষণ দেবেন। সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রদের সঙ্গে মিলিত হবেন।
১৯৭২ সালের পত্রিকা
রাতে তিনি রাজশাহীতে অবস্থান করবেন। পরের দিন সকালে হেলিকপ্টারে পাবনা যাবেন। বিকালে তিনি পাবনায় এক জনসভায় বক্তৃতা করবেন এবং রাতে সেখানে থাকবেন। ১১ মে সকালে তিনি রংপুর পৌঁছাবেন। বিকালে এক জনসভায় ভাষণ দেবেন বঙ্গবন্ধু। সেখানে রাতে অবস্থান করবেন। ১২ মে শুক্রবার সকালে বঙ্গবন্ধু ঢাকা ফিরে আসবেন। এই সফরে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পথসভা ও জনসভার পরিকল্পনা ছিল এবং উত্তরাঞ্চলের মানুষ বঙ্গবন্ধুকে প্রথমবারের মতো কাছ থেকে পাওয়ার অপেক্ষায় ছিল।
দেশকে গোছানোর প্রক্রিয়ায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে কাজ চলছিল জোরেশোরে। স্বাধীনতা লাভের এই ক’মাসের মধ্যেই বসন্তসহ বেশকিছু রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে আরও গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়। জনস্বাস্থ্য বিভাগকে ঢেলে নতুন করে সাজানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ সরকারের জনস্বাস্থ্য বিভাগ। জনস্বাস্থ্য বিভাগের অধীনে এ যাবৎ ১৪টি সংস্থা বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করছিল। বর্তমানে এই সংস্থাগুলোকে সরাসরি জনস্বাস্থ্য বিভাগের নিয়ন্ত্রণে আনা হবে এবং ইতোমধ্যে এই সংযুক্তিকরণের কাজ শুরু হয়েছে।
জানা গেছে যে ম্যালেরিয়া উচ্ছেদ, পল্লি স্বাস্থ্য কেন্দ্র, মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি, পাবলিক হেলথ, টিবি ক্লিনিক, দাতব্য চিকিৎসালয়, শিশুকল্যাণ পরিবার পরিকল্পনা ইত্যাদিকে একীভূত করা হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে যে ৬৫ থানা পল্লি স্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে সেগুলোতে থানা হেলথ সার্ভিস কেন্দ্রে রূপান্তরিত করে উন্নত করা হবে। এসব থানা হেলথ সার্ভিস কেন্দ্রের অধীনে ম্যালেরিয়ার, মশক নিধনসহ অন্যান্য সেক্টরের কাজগুলোকে আনা হবে। প্রতি কেন্দ্রে ২০ থেকে ২৫ বেডের হাসপাতাল থাকবে।
এইদিনের পত্রিকার প্রথম পাতাতেই একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয় যেখানে বলা হয়, মওলানা ভাসানী সাম্প্রদায়িক প্রচারে নেমেছেন। বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলী ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়ন পার্টি বিরোধিতা ও সাম্প্রদায়িক প্রচারণার নিন্দা করেছে। এক বিবৃতিতে তারা বলেন, আইয়ুব শাসনামল থেকে মওলানা ভাসানী দেশের গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর মধ্যে বিভেদ ও বিভ্রান্তি সৃষ্টির কাজে আত্মনিয়োগ করেছেন। পার্টি ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বের সপক্ষে ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার। দেশের প্রতিক্রিয়াশীলরা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে দুর্বল ও বানচালের চেষ্টা করছে বলেও বিবৃতিতে দাবি করা হয়।
সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন, প্রকাশিত : মে ০৩, ২০২০