১৯৭২: সেবার ছিল অনন্য মে দিবস

উদিসা ইসলাম
লড়াই-সংগ্রামের জীবন শ্রমিকের। স্বাধীন বাংলাদেশে তাদের প্রথম মে দিবসের প্রাপ্তি ছিল অনেক বেশি। ১৯৭২ সালে শ্রমিকরা মে দিবস নিজেদের মতো করে উদযাপন করতে পেরেছিল। না চাইতেই বিশেষ ভাতা মূল বেতনের সঙ্গে যুক্ত হওয়া, দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনে শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানানো—এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে না, যেখানে প্রধানমন্ত্রী তার শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে অর্থনৈতিক কাণ্ডারি হওয়ার স্বপ্ন দেখেন।
বক্তব্য রাখছেন সংবাদপত্র কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবীর
বক্তব্য রাখছেন সংবাদপত্র কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবীর
অভূতপূর্ব উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে সারাদেশে মহান মে দিবস উদযাপিত হয়। এই মে দিবস ছিল স্বাধীন বাংলার মাটিতে প্রথম মে দিবস। ৮৭ বছর আগে আমেরিকার শিকাগো শহরের শ্রমিকরা তাদের ন্যায়সঙ্গত দাবি প্রতিষ্ঠার জন্য বুকের রক্ত দিয়েছিল। তারই স্মরণে সারাবিশ্বের শ্রমিকরা মেহনতি মানুষের সঙ্গে একাত্ম হয়ে দিনটি উদযাপন করে। এদিন বাংলাদেশে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। বিশ্বের মানচিত্রে হাতে গোনা আর কোনও দেশ আছে কিনা, যেখানে এই দিনে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয় এবং সরকারি উদ্যোগে দিনটি পালন করা হয়। মে দিবস উপলক্ষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভাষণ দেন। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ছাড়া বাংলাদেশ একমাত্র দেশ, যে দেশের প্রধানমন্ত্রী মে দিবসে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন।

বঙ্গবন্ধু তাঁর এই ভাষণে দেশের শ্রমিক ও নিম্ন বেতনভোগী কর্মচারীদের জন্য আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করেন। এবারের মে দিবসে সারাদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল। ঢাকা শহরে বিভিন্ন স্থানে ও সব শিল্পাঞ্চলে লাল পতাকা ওড়ানো হয় এবং অনুষ্ঠিত হয় সমাবেশ, শোভাযাত্রা ও সংগীতানুষ্ঠান। বেতার-টেলিভিশনে মে দিবস উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। সংবাদপত্রগুলো বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে। সকাল বেলা পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় শ্রমিক লীগের কুচকাওয়াজ।
লাল বাহিনীর শপথ
লাল বাহিনীর শপথ
লাল বাহিনীর কুচকাওয়াজ

মহান মে দিবস উপলক্ষে জাতীয় শ্রমিক লীগের উদ্যোগে এদিন সকাল আটটায় পল্টন ময়দানে লাল বাহিনীর কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে লাল বাহিনীর প্রধান ও জাতীয় পরিষদ সদস্য আব্দুল মান্নান সালাম গ্রহণ করেন। এর আগে ঢাকা জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে লাল বাহিনীর সদস্যরা পল্টন ময়দানে এসে জমায়েত হন। আব্দুল মান্নান শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। তারা শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থা কায়েমের পথে যেকোনও বাধা দূর করে সুখী ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশের জন্য শেষ রক্তবিন্দু দিতে বদ্ধপরিকর, এই মর্মে শপথ গ্রহণ করেন। এরপর তারা কুচকাওয়াজ করে গণভবনে গেলে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি খোলা জিপে দাঁড়িয়ে তাদের সালাম গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন আলী সরদার। সেখানে সিরাজুল আলম খান উপস্থিত ছিলেন।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ট্রেড ইউনিয়নের গণসমাবেশ
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ট্রেড ইউনিয়নের গণসমাবেশ

এছাড়া, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক শ্রমিক সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশ শেষে একটি শোভাযাত্রা শহরের বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে। সংযুক্ত শ্রমিক ফেডারেশনের শ্রমিক জমায়েত অনুষ্ঠিত হয় পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে। এছাড়া বিভিন্ন শ্রমিক ইউনিয়ন ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করে।

সুত্র: বাঙলা ট্রিবিউন, প্রকাশিত : মে ০১, ২০২০ 

SUMMARY

2607-১.jpg

মে দিবসে শ্রমিক লীগের সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন সিরাজুল আলম খান