শতবর্ষে মুজিব : ভাষারাষ্ট্রের পিতা

মোস্তাফা জব্বার 

শেখ মুজিব সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনের বিপরীতে একটি ভাষাভিত্তিক আধুনিক জাতিরাষ্ট্র গঠনের দূরদর্শী স্বপ্ন দেখেন। ভাষাভিত্তিক আধুনিক রাষ্ট্র গঠনের ধারণা তখন ইউরোপ, জাপান, কোরিয়া বা চীনের বাইরে প্রসারিত হয়নি। এই অঞ্চলে ভাষারাষ্ট্র ধারণা তখন মোটেই গুরুত্ব পায়নি। ভারত বহুভাষিক হিন্দুপ্রধান রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে ওঠে। খুব সঙ্গত কারণেই কাগজে-কলমে ভারতের ধর্ম রাষ্ট্র হওয়ারও খুব সুযোগ ছিল না।

এক.
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তোমাকে শততম জন্মবার্ষিকীর শুভেচ্ছা। বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম বাঙালি, বিশ্বের একমাত্র বাংলা ভাষার রাষ্ট্রের পিতা, বাংলা ভাষার আন্দোলনের জনক, চার দশকেরও বেশি সময় আগে বাংলার মাটিকে রক্ত দিয়ে পবিত্র করে যাকে সপরিবারে শহীদ হতে হয়েছিল তার সম্পর্কে দুটি বাক্য লিখতে আর কার কী হয় জানি না, আমার তো হাত কাঁপে। এত বড় মাপের মানুষ তাকে মূল্যায়ন করার ক্ষমতা আমার মতো নগণ্য একজনের থাকতেই পারে না। ৭০ বছর বয়সে তাকে নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ নিবন্ধ লিখতে পারিনি। আমি তার ভক্ত-সৈনিক। যৌবনে তাকে দূর থেকে দেখেছি। তার সৈনিক হিসেবে যুদ্ধ করে যাচ্ছি। আমার চারপাশে, ইতিহাসের পাতায় তার সঙ্গে তুলনীয় কোনো রাজনীতিককে আমি দেখি না। আমার পাঠ করা গল্প-ইতিহাসের পাতাতেও নেই। বাংলাদেশ, ভারতবর্ষ, দক্ষিণ এশিয়া, এশিয়া বা সারা দুনিয়া খোঁজে একজন শেখ মুজিব পাইনি আমি। তিনি কেবল হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি নন। তাকে আমি মনে করি একজনই বাঙালি, যার মাঝে বাঙালিত্বের পুরোটা আছে এবং সেজন্য তিনি সব বাঙালির, সব বাংলা ভাষাভাষীর একমাত্র অনুসরণীয় নেতা। অথচ চারপাশে তাকে নিয়ে কোটি কোটি হরফ দেখি। যিনি যেভাবে চান তাকে সেভাবেই উপস্থাপন করছেন। কেন জানি মনে হচ্ছে তার নীতি, আদর্শ বা কর্মপন্থাকে আমরা এখনো সেভাবে মূল্যায়ন করি না যেভাবে সেটি করা দরকার। অনেক ভাবনা থেকে তার সম্পর্কে একটি অতি ক্ষুদ্র নিবন্ধ লেখার সাহসও এতদিন পাইনি। এবার যখন ৭১ বছরে পা দিলাম আর মুজিববর্ষটা চলেই এলো, তখন মনে হলো এই মহামানব সম্পর্কে নিজের ভাবনাটার কিছু অংশ প্রকাশ করে যাওয়াটা নিজের কাছে জবাবদিহি করার মতো একটি বিষয়। নইলে এক সময়ে মনে হবে আমি তাকে যেমনটি ভাবি সেটি তো কাউকে বলা হয়নি।
আমি নিজে তার নাম সরাসরি শুনেছি ও রাজনীতির সৈনিক হয়েছি ১৯৬৬ সালে, যখন ঢাকা কলেজে পড়ার সময়ে ছাত্রলীগ করা শুরু করি। সেখানেই ৬ দফা নামক একটি লিফলেট বণ্টন করতে গিয়ে প্রথম জেনেছি যে, বাঙালিরা তাদের প্রাপ্য পায় না। কেবল তাই নয়, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ভেতরেও সাধারণ মানুষ বৈষম্যের শিকার। গ্রাম থেকে হাওরের কাদামাটি পায়ে মেখে ঢাকায় এসে অনুভব করি কিছু নগরবাসী ছাড়া আমরা সবাই শোষিত-বঞ্চিত ও সর্বহারা। এর আগে স্কুলের লাইনে দাঁড়িয়ে পাকসার জমিন সাদ বাদ গেয়েছি। পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদকে পোক্ত করার জন্য স্কুলে আমাকে উর্দু পড়তে বাধ্য করা হয়েছে। এসএসসিতে আমার ফলাফল খারাপ হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে আমি বাধ্য হয়ে পড়া উর্দুতে মাত্র ৩৩ নম্বর (পাস নম্বর) পেয়েছিলাম। সেই থেকে দুচোখে উর্দুকেও দেখতে পারি না। ঢাকা কলেজের রাজনৈতিক জ্ঞানকে আরো শানিত করতে পারি যখন ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করি। তখন ১১ দফায় সেই ৬ দফা যুক্ত হয় আর রাজপথে শেখ মুজিবের মুক্তির দাবিতে মিছিল করা দিয়ে নিজের স্লোগান দেয়ার ক্ষমতাকে প্রমাণ করি। ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নগণ্য একজন কর্মী হিসেবে তার সামনে যাওয়ার কোনো কারণই ছিল না। তবে যারা তার কাছে থাকতেন তাদের সঙ্গে আমরা দিন-রাত কাটাতাম বলে তার ব্যক্তিগত ভাবনা-জীবনাচার বা রাজনৈতিক দর্শন জানতে পারতাম। ১৭ মার্চ ২০২০ তার জন্মশতবার্ষিকী অতিক্রম করে আমরা তার ১০১তম জন্মদিন পালন করব। স্মরণ করতে পারি ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ আজকের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আমরা তাকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দিয়েছিলাম যার ৫০তম বার্ষিকী ২০১৯ সালে অতিক্রান্ত হলো। চোখের সামনে সেই মহামানবকে দেখা সেই প্রথম।
এই নিবন্ধে তার জীবন নিয়ে ইতিহাস লেখার কোনো ইচ্ছাই আমার নেই। অনেকে লিখেছেন, লিখবেন এবং সারা বিশ্ব তাকে নিয়ে গবেষণা করবেন, বর্তমানের পরিপ্রেক্ষিতে এটাই স্বাভাবিক। গত কয়েক বছরে তার কন্যা বাংলার স্বর্ণকন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে যেখানে স্থাপন করেছেন তাতে সারা বিশ্বকে জানতেই হবে, কে এই দেশের জনক এই শেখ মুজিবুর রহমান। এক সময়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের তলাহীন ঝুড়ির দেশ এখন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনসহ বিশ্ব নায়কদের আদর্শ দেশ।
আমাদের এই দেশটির জনক প্রথম আমাকে আকৃষ্ট করেন তার অতি সাধারণ জীবনযাপন, সহজ-সরল অভিব্যক্তি এবং স্পষ্টবাদিতায়। ঢাকা কলেজ থেকেই তার বড় ছেলে শেখ কামালকে চিনতাম। তিনি আমার এক বছর পরে ১৯৬৭ সালে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। তিনি হয়তো বঙ্গবন্ধুর রেপ্লিকা হয়ে রাজনীতি করেননি, কিন্তু আমার স্পষ্ট মনে আছে তার সক্রিয় অংশ গ্রহণে ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগের রাজনীতির আমূল পরিবর্তন ঘটে। যে কলেজে আমরা একটি সভা করতে পারতাম না সেই কলেজে এক সময়ে আমরা মিছিলও করতে পেরেছি।
শেখ কামালের মাঝে তার পারিবারিক জীবনধারার প্রতিফলন ছিল। বাঙালি মধ্যবিত্তের সব রূপের প্রতিফলন ছিল শেখ কামালের জীবনে। কেবল শেখ কামালই নন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক উত্তরাধিকার আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাঝেও ছিল। ১৯৭০ সালে বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যখন অবিসংবাদিত নেতা তখন তার জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহপাঠিনী হিসেবে তাকে প্রথম চিনি। তিনি তখন বিবাহিতা। তাকে দেখে আমি আরো অভিভ‚ত হই। যার অঙ্গুলি হেলনে পাকিস্তান কেঁপে ওঠে সেই মানুষটির বড় মেয়ে ১০ টাকা দামের টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি পরে সহপাঠীদের সঙ্গে আর দশটা সাধারণ মেয়ের মতোই মিশে, আড্ডা দেয়, গল্পগুজব করে; এটি শেখ হাসিনাকে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। তিনি অতি সাধারণ পরিবারের মেয়ে রোকেয়ার সঙ্গে দারুণভাবে বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছিলেন। তার বান্ধবীরা নিম্ন-মধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছিল। আমি দু-চারজনের নাম স্মরণ করতে পারি রোকসানা সুলতানা সানু, শিরি, মমতাজ আপাদের পাশাপাশি আমাদের সিনিয়র বেবী মওদুদ আপার সঙ্গে তার পরম বন্ধুত্ব ছিল। আমার স্পষ্ট মনে আছে বাংলা বিভাগের নির্বাচনে আমাকে ভিপি পদপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার জন্য সক্রিয় ভ‚মিকা পালন করেছিলেন।
শেখ কামালও ভীষণ সক্রিয় ছিলেন। কেবল রাজনীতি নয়, তিনি খেলাধুলার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও ব্যাপকভাবে যুক্ত ছিলেন। শেখ কামাল আমাদের সঙ্গে নাটক করতেন। একাত্তর সালে তাকে দেখেও কেউ ভাবতে পারত না যে, তার পিতা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য জনগণের রায় পেয়ে আছেন। আমি স্মরণ করতে পারি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কেবল তার রাজনৈতিক দল নয়, ছাত্র বা শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন। এমনকি তাদের পারিবারিক তথ্যও মনে রাখতেন। সেই মানুষটির সাধারণ মূল্যায়ন যখন আমরা করি তখন কেবল তার বাংলাদেশ সৃষ্টির বিষয়টিকে প্রাধান্য দিই। তবে তার ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবনাচারসহ সামগ্রিক জীবনধারাও আলোচনার দাবি রাখে। তবে বস্তুতপক্ষে বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় পরিচিতি বাংলা ভাষাকেন্দ্রিক বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা।
যে সময়ে ব্রিটিশরা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ও জওহরলাল নেহরুর সাম্প্রদায়িক রাজনীতি, দ্বিজাতিতত্ত¡ ও ব্যক্তিগত লোভের বশে পুরো উপমহাদেশটিকে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে কলঙ্কিত করে দুটি অদ্ভুত সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বানিয়ে দিয়ে গিয়েছিল এবং পুরো উপমহাদেশের তাবত বড় বড় রাজনীতিবিদরা সেই সাম্প্রদায়িকতাকেই মাথায় তুলে নিয়েছিল তখন কেবল শেখ মুজিব সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনের বিপরীতে একটি ভাষাভিত্তিক আধুনিক জাতিরাষ্ট্র গঠনের দূরদর্শী স্বপ্ন দেখেন। ভাষাভিত্তিক আধুনিক রাষ্ট্র গঠনের ধারণা তখন ইউরোপ, জাপান, কোরিয়া বা চীনের বাইরে প্রসারিত হয়নি। এই অঞ্চলে ভাষারাষ্ট্র ধারণা তখন মোটেই গুরুত্ব পায়নি। ভারত বহুভাষিক হিন্দুপ্রধান রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে ওঠে। খুব সঙ্গত কারণেই কাগজে-কলমে ভারতের ধর্ম রাষ্ট্র হওয়ারও খুব সুযোগ ছিল না। তবে ভারতের আত্মাটা ছিল হিন্দু রাষ্ট্রের। বস্তুত ব্রিটিশরা ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ব্যবস্থা করেছিল। ভারতের নেতারাও সেটি মেনে নিয়েছিলেন ও সেই পথেই দেশটিকে গড়ে তুলেছিলেন। আজকের দিনে ভারতে কাশ্মিরসহ অন্য যেসব বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন চলছে তার পেছনে বৈষম্য, অসাম্য, শোষণ ও নির্যাতনের ব্যাপক ভ‚মিকা রয়েছে। সম্প্রতি নাগরিকত্ব আইন নিয়ে যে তুমুল বিতর্ক তার পেছনেও সাম্প্রদায়িকতাই কাজ করে। কাশ্মিরে তো সাম্প্রদায়িকতাই মূল ইস্যু। ভারতের দশা এখন এতটাই নিচে নেমেছে যে ১৯৪৭ সালের দাঙ্গা ২০২০ সালে আবার দিল্লিতে ফিরে এসেছে। অন্যদিকে পাকিস্তান হয়ে ওঠে উগ্র সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এই রাষ্ট্রের ভিত্তি। বঙ্গবন্ধু সেই মানুষটি যিনি বাংলাদেশের অন্তরকে অনুভব করেন এবং উগ্র সাম্প্রদায়িকতা যে এই অঞ্চলের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নয় এবং বাঙালি যে তার ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতিকে সবার ওপরে ঠাঁই দেয় এবং তার এই জীবনধারায় ধর্ম যে প্রধান শক্তি নয় সেটি উপলব্ধি করতে সক্ষম হন। আমি নিজে অভিভ‚ত হই যখন দেখি যে তিনি পাকিস্তানের কাঠামোতে থেকে তার রাজনৈতিক সংগঠনের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি উপড়ে ফেলে দিতে পারেন। যে মানুষটি নিজেকে স্পষ্ট করে দুনিয়ার কাছে তুলে ধরতে পারেন যে তিনি মানুষ, বাঙালি এবং মুসলমান সেই মানুষটি পাকিস্তানের শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের চোখের সামনে পাকিস্তানের কোনো রাজনৈতিক সংগঠনকে ধর্মনিরপেক্ষ করতে পারেন এটি যেন স্বপ্নের মতো! তার শততম জন্মবার্ষিকীতে আমাদের ভেবে দেখা উচিত তিনি কেবল মুসলিম শব্দ বর্জন করেননি, মুসলমানদের রাষ্ট্র পাকিস্তানকে টুকরো করে সেখানে ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে সেই রাষ্ট্রের সংবিধানকে অসাম্প্রদায়িক করে গেছেন। আমার জানা মতে তার হাতে তৈরি ১৯৭২ সালের সংবিধানটি হচ্ছে দুনিয়ার অন্যতম সেরা সংবিধান যার সঙ্গে তুলনা করার মতো কোনো সংবিধান অন্তত এই অঞ্চলে পাওয়া যায় না। এই সংবিধানকে ছিন্নভিন্ন করে জিয়া ও এরশাদ কেবল যে সাম্প্রদায়িকতা যুক্ত করে তাই নয় এর গণতান্ত্রিক চরিত্রও বিনষ্ট করে। আমাদের জন্য দুঃখজনক যে ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ অবধি দেশে এমন সাম্প্রদায়িক রাজনীতি গড়ে তোলা হয় যে বঙ্গবন্ধুর কন্যার পক্ষেও এখন ১৯৭২-এর সংবিধানের মূল চরিত্রে ফেরত যাওয়া সহজ হচ্ছে না। এখন যদি তিনি সেই কাজটি করেন তবে রাজনীতির ছকটাকে উল্টানোর অপচেষ্টা করা হবে এবং বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মতোই সাম্প্রদায়িক, জঙ্গি ও একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার রাজনীতি প্রবলভাবে জোরদার করা হবে। বঙ্গবন্ধুর বাঙালিত্ব, তার প্রতি একনিষ্ঠতা এবং জাতিসত্তা বিষয়ে অত্যন্ত স্পষ্ট নীতিমালা আমার মতো লাখো লাখো তরুণকে বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্র গঠনে জীবন দিতে উদ্বুদ্ধ করেছে। যারা এখন মনে করেন যে, পাকিস্তান আমাদের ঠকিয়েছে, ন্যায্য পাওনা দেয়নি এবং বনিবনা হয়নি বলে পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ জন্ম নিয়েছে তারা বঙ্গবন্ধুর নীতি ও আদর্শকে আংশিক ও বাহ্যিক দিকটা বোঝেন, পুরোপুরি বুঝতেই পারেন না। 
দুই \
ডিজিটাল সোনার বাংলাদেশ : বঙ্গবন্ধু ভাষা আন্দোলন করতে গিয়েই উপলব্ধি করেছিলেন যে বাঙালির নিজস্ব রাষ্ট্র ছাড়া সোনার বাংলা হবে না। ভাষা আন্দোলনের পাশাপাশি তিনি তাই রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তুলেন। সেই রাজনৈতিক সংগঠন কেবল পাকিস্তান প্রতিষ্ঠাকারী মুসলিম লীগকে চ্যালেঞ্জই করেনি ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত করার জন্য সার্বিক প্রেক্ষিত তৈরি করে। এটিও স্মরণ রাখা দরকার যে স্বাধীনতার পরও জাতির পিতা দেশটিকে সোনার বাংলায় পরিণত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। একদিকে তিনি বাংলা ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্রের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে প্রতিষ্ঠিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, অন্যদিকে একটি সুখী, সমৃদ্ধ, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বৈষম্যহীন সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য সব ভিত্তি তৈরি করেন।
আমরা ২০০৯ সাল থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর যে ঘোষণা দিয়েছিলেন তারই বাস্তবায়ন করছিলাম আমরা। ২০২১ সাল সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার একটি মাইলফলক। তবে প্রধানমন্ত্রী এর মাঝে ২০৪১ সালকে পরের মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত করে সরকারি প্রেক্ষিত পরিকল্পনাও প্রস্তুত করছেন। এটির প্রথম খসড়া পেশ হয়েছে। সহসাই এর চ‚ড়ান্ত রূপ অনুমোদিত হবে। সেই প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়নের সময়ও আমাদের বঙ্গবন্ধুর ভাষা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও তার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশের বিষয়টি অনুধাবন করতে হচ্ছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে বস্তুত আমাদের তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করতে হচ্ছে। খুব সংক্ষেপে আমরা প্রেক্ষিতটা একটু আলোচনা করতে পারি।
বঙ্গবন্ধু প্রণীত ১৯৭২ সালের সংবিধানের মূলমন্ত্র ছিল চারটি; গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপক্ষেতা ও জাতীয়তাবাদ। বঙ্গবন্ধুর শাসনকালের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনকাল ছাড়া সেই চার নীতির গণতন্ত্র শব্দটি ছাড়া বাকি সবই মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল। সেই সময়টিতে বাংলাদেশে সমাজতন্ত্র শব্দটি কেউ উচ্চারণ করত না। কিন্তু ঐতিহাসিক বাস্তবতা হচ্ছে সমাজতন্ত্রের আদর্শগত দিকগুলোর বাস্তবায়ন ছাড়া মুক্তির কোনো পথ নেই। হয়তো কার্ল মার্কসের সমাজতন্ত্র ডিজিটাল যুগে প্রতিষ্ঠা করা যাবে না, কিন্তু ধনী-গরিবের বৈষম্য দূর করতে বা এমনকি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্র অর্জন করতে হলে ডিজিটাল যুগের সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় নেই। এক সময়কার কায়িকশ্রমনির্ভর মালিক-শ্রমিক কাঠামোটি দিনে দিনে মেধাশ্রমভিত্তিক কাঠামোতে রূপান্তরিত হচ্ছে। ফলে শ্রেণিচরিত্র বা শ্রেণিসংগ্রামের সংজ্ঞা বদলাচ্ছে। কোন এক ডিজিটাল বিপ্লবীকে মার্কস-লেনিন-এঙ্গেলসের সমাজতন্ত্রকে নতুন করে বর্ণনা করতে হবে ব্যাখ্যা করতে হবে। দিতে হবে নতুন তত্ত¡। তবে সমাজতন্ত্র যে বৈষম্যহীনতার ধারণাকে জন্ম দিয়েছে সেটি দুনিয়া থেকে বিদায় নেবে না। বরং সমাজতন্ত্রের ডিজিটাল ধারাটির জন্য সারা দুনিয়ায় নতুন করে লড়াই চলবে। আমাদের দুর্ভাগ্য যে এই দেশের মার্কসপন্থি (গোপনে) রাজনৈতিক দলগুলো মার্কসের ধারণার ডিজিটাল রূপান্তর অনুধাবন করতে অক্ষম। মার্কস শিল্পযুগের প্রথম স্তরটির বিশ্লেষণ করেছিলেন। সেই ধারাবাহিকতা দ্বিতীয় স্তরে বহমান ও তৃতীয় স্তর পর্যন্ত চলমান ছিল। কিন্তু মার্কসের চিন্তা ভাবনা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে সমভাবে প্রযোজ্য হবে না। অথচ বঙ্গবন্ধুর কথা ভাবুন। তিনি নিজে কমিউনিস্ট ছিলেন না। তাকে তৎকালীন মার্কসবাদীরা সাম্রাজ্যবাদের দালাল বলত। তিনি নিজেও প্রচলিত কমিউনিজম ধারণায় বিশ্বাস করতেন না। কিন্তু তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন সারা দুনিয়ার মানুষ দুই ভাগে বিভক্ত শোষক ও শোষিত, আমি শোষিতের পক্ষে। যখন তিনি দেশটি স্বাধীন করে দেশের শাসনতন্ত্র রচনা করেন তখন রাষ্ট্রের লক্ষ্য হিসেবে সমাজতন্ত্রকে অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। আমরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর বাকশালকে গালিতে রূপান্তর হতে দেখছি। তিনি বাকশাল করে নাকি একদলীয় শাসন কায়েম করে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিলেন। বলা হয়, খুনি জিয়াউর রহমান দেশটিতে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু বাকশাল বা বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচির দিকে একটু তাকিয়ে দেখুনÑ একটি সমৃদ্ধ-উন্নত বাংলাদেশ থেকে বৈষম্য দূর করতে হলে ফিরে যেতে হবে সেই দ্বিতীয় বিপ্লবেই। গণতন্ত্রের কথাও যদি বলেন তবে বাকশালে যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কথা বলা হয়েছে তার চেয়ে উৎকৃষ্ট গণতন্ত্র চর্চা আর কী হতে পারে? বহুদল মানেই প্রকৃত গণতন্ত্র সেটি যারা মনে করেন তারা কেবল পশ্চিমা ধারণার গণতন্ত্রের কথাই চিন্তা করেন। এটি যে একটি মাত্র দলের মাধ্যমেই সম্পূর্ণ ঐকমত্যের গণতন্ত্র হতে পারে এবং সেই পদ্ধতিতেও যে নির্বাচন হতে পারে ও জনগণের পছন্দ-অপছন্দ বাছাই করা যেতে পারে সেই নিন্দুকেরা আলোচনাতেই আনে না। অন্যদিকে ধর্মনিরপেক্ষতা যে বাংলাদেশের শক্তি সেটি এখন ভারত-পাকিস্তানসহ সারা দুনিয়া উপলব্ধি করে। ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশের অগ্রগতির অন্যতম একটি কারণ হিসেবে অসাম্প্রদায়িকতাকে স্মরণ করা হয়। পাকিস্তান মৌলবাদের কাছে জিম্মি হয়ে ও ভারত উগ্রবাদের হাতে জিম্মি হয়ে অগ্রগতির চাকাকে সামনে না নিয়ে অভ্যন্তরীণ দ্ব›দ্ব নিয়ে জটিলতায় পড়েছে।
আমরা যখন ডিজিটাল বাংলাদেশ, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কথা বলছি তখনো সেই মহামানবের কথাই ভাবতে হচ্ছে। এই বিষয়টি অনেকের কাছে অনেকটা অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। কিন্তু তার কর্মকাণ্ড দেখলেই বোঝা যাবে তিনি কতটা দূরদর্শিতার প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছিলেন। তিনি বাংলাদেশকে ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের সদস্যপদ গ্রহণ করান। তিনি ডাক বিভাগকে ইউনিভার্সাল পোস্টাল ইউনিয়নের সদস্যপদ গ্রহণ করান। একটু ভেবে রাখুন ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন তিনি বেতবুনিয়ায় উপগ্রহ ভ‚কেন্দ্র উদ্বোধন করেন। সেই পথ ধরেই আমরা ২০১৮ সালের ১২ মে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করি। কত দূরদর্শী হলে একটি দরিদ্র দেশে উপগ্রহ নির্মাণের কথা ভাবা যায়।
আজকে আমরা যখন মানবসম্পদের কথা বলি তখন ভাবতে হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার রূপান্তরের কথা। ভেবে দেখুন তিনি যখন তার দেশের নাগরিকদের ভাত জুটাতে পারেন না, কর্মচারীদের বেতন দিতে পারেন না, সড়ক-সেতু বানাতে পারেন না তখন প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করেন। আজকে আমরা উপলব্ধি করতে পারছি যে প্রাথমিক শিক্ষাকে শক্তিশালী করতে না পারলে ডিজিটাল যুগের মানবসম্পদ গড়ে তোলা যাবে না। বস্তুত তার ধারণাতেই আমাদের ২০৪১ সালের বাংলাদেশ গড়ে তোলার কথা ভাবতে হবে।
জিয়া-এরশাদ-খালেদা বাংলাদেশকে যেভাবে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করার অপচেষ্টা করেছে এবং সারা দুনিয়ার ধর্ম পরিস্থিতি যেমনটা তাতে বাংলাদেশের জন্য ধর্মনিরপেক্ষেতা বজায় রাখাকেই একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড় করিয়েছিল। একই কারণে বাঙালির জাতিসত্তা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে ছিল। নতুন প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুর জাতীয়তাবাদের মূল কথাগুলো তুলে ধরা হয়নি বলে এখন তরুণদের একাংশকে ইসলামি জঙ্গিতে রূপান্তরিত করার চেষ্টা হয়। অথচ বঙ্গবন্ধুকে তো বটেই পুরো বাঙালি জাতিকে পাকিস্তানিরা অমুসলিম বানাতে চেষ্টা করেও সফল হয়নি। একাত্তরে তারা স্পষ্ট করেই বলেছে যে, পূর্ব পাকিস্তানের বাসিন্দারা মুসলমান নয়। বাঙালি মুসলমানদের হত্যা বা ধর্ষণ করার পেছনে তাদের এই মানসিকতা কাজ করেছে। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা ভারতীয় ‘দুষ্কৃতকারী’ ও ‘হিন্দু’ বলেই গালি খেয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে কৌশলের সঙ্গে এই সাম্প্রদায়িকতাকে মোকাবিলা করছেন সেটি ভারত-পাকিস্তানসহ সারা বিশ্বের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। পাকিস্তানিরা বরং এটি উপলব্ধি করেছে যে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার জন্য পাকিস্তানের অগ্রগতি থেমে যাচ্ছে।
বঙ্গবন্ধুর জন্য আমার চোখের পানি আসে আরো একটি বিশাল কারণে। তাকে ছাড়া আমি নিজেকে অসহায় মনে করছি। আমার নিজের মতে বঙ্গবন্ধুর মতো আর কোনো রাষ্ট্রনায়ক তার আগে বাঙালির মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রযন্ত্রে প্রয়োগ করার চেষ্টা করেননি। আমি সেই মুজিবের কথা ভাবি, যে মুজিব ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রভাষার দাবি তুলেন, ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন করেন, ১৯৫২ সালে চীনে ও ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেন তিনিই ১৯৭২ সালে অপটিমা মুনীর টাইপরাইটার বানিয়েছিলেন। আমি সেই মুজিবের কথা ভাবি যিনি রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার আগেই বলেছিলেন, ভুল হোক শুদ্ধ হোক আমরা সরকার গঠন করলে সরকারি কাজে বাংলাই লিখব। কালক্রমে সেই মুজিবের আদর্শ থেকে বাংলাদেশ রাষ্ট্র সরে গিয়েছিল। এখনো বাংলাদেশের বেসরকারি অফিসে বাংলা বর্ণমালাই নেই। সরকারের কাজে-কর্মে বাংলা ব্যবহৃত হয়। কিন্তু ডিজিটাল করার নামে প্রায়ই বাংলা হরফকে বিদায় করা হয়। উচ্চ আদালতে ও উচ্চশিক্ষায় বাংলার প্রচলন খুবই কম। উভয় ক্ষেত্রেই বঙ্গসন্তানরা তাদের মায়ের ভাষায় কথা বললেও কার্যক্ষেত্রে ভাষাটিকে প্রয়োগ করে না। অথচ এর কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। আদালতের বাদী-আসামি-বিচারক ও উকিল বাংলা ভাষাভাষী। তারা কেন বাংলা ব্যবহার করবে না তার কোনো কারণ কেউ বলতে পারবে না। উচ্চশিক্ষায় বাংলায় উপাত্তের অভাব রয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সময়টি পার করতে গিয়ে আমাদের উচিত ছিল এই দুর্বলতাটি দূর করা। স্কুল পর্যায়েও শিক্ষার মাধ্যম বাংলাকে পরাভ‚ত করার কুৎসিত অপচেষ্টা বিরাজ করে। ইংলিশ মিডিয়াম বা ইংলিশ ভার্সন শিক্ষার নামে বাংলাকে বিদায় করার চেষ্টা বাড়ছে। আবার বাংলা ভাষা লেখা হয় ইংরেজি অক্ষর দিয়ে। যে মানুষটি জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিতে পেরেছিলেন সেই মানুষটির দেশে এখন চারপাশে রোমান হরফের রাজত্ব দেখি। ইংরেজি হরফে বাংলা লিখে সেটিকে ভুল বাংলায় রূপান্তর করার ডিজিটাল প্রক্রিয়ার ব্যাপক প্রসারের পাশাপাশি সরাসরি ইংরেজি হরফে বাংলা লেখা প্রবণতা প্রবলভাবে বাড়ছে। ডিজিটাল করার নামে এই ভয়াবহ অপচেষ্টাকে প্রতিরোধ করতে হবে। যে বাঙালি রোমান হরফে বা আরবি হরফে বাংলা লেখার প্রস্তাব গ্রহণ করেনি সেই বাঙালি এই অপচেষ্টাকে কখনো বাড়তে দিতে পারে না। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে শেখ মুজিবের বাংলাদেশে যেমনি গণতন্ত্র থাকবে তেমনি এটি বাঙালি জাতীয়তাবাদকেও সর্বোচ্চ মর্যাদা দেবে। অন্যদিকে শেখ মুজিবের বাংলাদেশ থাকবে অসাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যহীন।
আসুন না সবাই মিলে বঙ্গবন্ধুর ভাষারাষ্ট্রটাকেই বিশ্বের সেরা রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করি। আসুন সব ক্ষেত্রে সেই একজন বাঙালিকেই অনুসরণ করি। (সমাপ্ত)

মোস্তাফা জব্বার : তথ্যপ্রযুক্তবিদ ও কলাম লেখক।
bijoyekushe10@gmail.com

সুত্র: ভোরের কাগজ, প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০২০

SUMMARY

2597-বঙ্গবন্ধু৪.jpg