আমি হিমালয় দেখিনি, শেখ মুজিবকে দেখেছি

আতাউর রহমান সুজন 

কিউবান বিপ্লবী নেতা ও কিউবার প্রধানমন্ত্রী ফিদেল কাস্ত্রো ১৯৭৩ সালে অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এই বিখ্যাত উক্তিটি করেছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর সাহস, ধৈর্য ও আদর্শকে হিমালয়ের সাথে তুলনা করেছিলেন। হিমালয়কে যেমন জীবন বাজি রেখে জয় করতে হয় তদ্রুপ বঙ্গবন্ধুও গহীন অরণ্য ভেদ করে, সহস্র বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে হিংস্র হায়েনাদের কাছ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছেন। রাতারাতি আঙুল ফুলে হঠাৎ কলাগাছ হয়ে যাননি ও বাংলাদেশ এমনিতেই স্বাধীন হয়ে যায়নি। সেজন্য বঙ্গবন্ধু তার যৌবনের শুরু থেকেই নিরলস সংগ্রাম করে গেছেন। যার জন্য তিনি আজ বিশ্বের মাঝে বিখ্যাত হয়ে আছেন। বঙ্গবন্ধু কত বড়মাপের নেতা সেদিন ফিদেল কাস্ত্রো বুঝতে পেরেছিলেন। তাই তিনি হিমালয়কে না দেখে শেখ মুজিবকে দেখলেই হিমালয়কে দেখা হয়ে যাবে সে কথা বোঝাতে চেয়েছিলেন। অথচ আমরা বাঙালি হয়েও কিছু বাঙালি বঙ্গবন্ধুকে না চেনার ভান করি।
আর ‘সংগ্রাম’ শব্দটি মনে পড়লে যে ব্যক্তির নাম চিরভাস্বর হয়ে ওঠে এই মহান কৃতিত্বের অধিকারী ব্যক্তি হচ্ছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙালি জাতির জনক বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি, বিশ্বনন্দিত অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কারণ তিনি অজস্র নিরলস সংগ্রামের মাধ্যমেই বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছেন।
এই খ্যাতনামা সংগ্রামী বরেণ্য ব্যক্তি ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ তৎকালীন ফরিদপুর জেলা বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান এবং মাতার নাম মোসাম্মাৎ সায়েরা খাতুন। ৬ ভাই-বোনের মধ্যে শেখ মুজিব পিতা-মাতার তৃতীয় সন্তান ছিলেন। বাল্যকালে তার পিতা-মাতা তাকে আদর করে খোকা নামে ডাকত।
ছোটকাল থেকেই তিনি ভাষণে চমৎকার পারদর্শী ছিলেন। কথিত আছে তার পিতা নিজের বাড়িতে মাঝে মাঝে এলাকার মানুষদের দাওয়াত দিয়ে ভোজের আয়োজন করতেন এবং তার ছেলে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনাতেন। ওই ব্যক্তিরা ভাষণ শ্রবণ করে বলতেন আপনার ছেলে একদিন বড় নেতা হবে। এই উপমার চাক্ষুষ প্রমাণ দেয় ১৯৭১ সালে ঢাকার রেসকোর্স ময়দান বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ। এই ৭ মার্চের ভাষণই চলমান বিশ্বের ৩টি ভাষণের মধ্যে অন্যতম। চলতি মাসের ১৭ মার্চে তার ১০০তম জন্মবার্ষিকী। সেজন্য তার শততম জন্মবার্ষিককে স্মরণীয় করে রাখার জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত ‘মুজিবর্ষ’ ঘোষণা করেছেন। এই মহান নেতার জন্মশতবার্ষিকী শুধু বাংলাদেশেই নয় বরং বিশ্বব্যাপী জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালিত হবে।
অসামান্য কৃতিত্বের অধিকারী এই কিংবদন্তি নেতা ১৯২৭ সালে ৭ বছর বয়সে গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন জীবনের সূচনা করেন। ছোটকাল থেকেই তার অসাধারণ মেধার পরিচয় পাওয়া যায়। এছাড়া তিনি যখন বুঝতে পারেন তখন থেকেই তিনি খুব দয়ালু ছিলেন।
১৯২৯ সালে ৯ বছর বয়সে তিনি গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন এবং এখানেই ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা করতেন। দুর্ভাগ্যবশত ১৯৩৪ সালে ১৪ বছর বয়সে বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হলে তার একটি চোখ কলকাতা হাসপাতালে অপারেশন করা হয় এবং যার ফলে তার শিক্ষাজীবনের সাময়িক ৪ বছর ছেদ ঘটে।
চোখের সমস্যা দূর হলে ১৯৩৭ সালে তিনি গোপালগঞ্জের মাথুরানাথ ইনস্টিটিউট মিশন স্কুলে ৭ম শ্রেণিতে ভর্তি হন।
১৯৩৮ সালে ১৮ বছর বয়সে এই বরেণ্য ব্যক্তি তার চাচাত বোন বেগম ফজিলাতুন্নেছাকে বিয়ে করেন। এই বিদুষী সহধর্মিণী বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে সাহস জুগিয়েছেন। পরবর্তীতে তারা ৫ সন্তানের জনক-জননী হন। তার জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
যেসব ব্যক্তি বিখ্যাত হয়েছেন তাদের জীবন পথে চলার মাঝে কিছু ব্যতিক্রমধর্মী তাৎপর্যময় ঘটনা থাকে। তদ্রƒপ এই ব্যক্তির জীবনেও একাধিক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটেছে। এই ব্যক্তি যখন গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুলের শিক্ষার্থী তখন ১৯৩৯ সালে অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুলে পরিদর্শন করতে আসেন। পরিদর্শন শেষে যাওয়ার সময় যখন গাড়িতে উঠবেন তখনই বঙ্গবন্ধু তার সহপাঠীদের নিয়ে তাদের পথ আটকে রাখেন। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন স্কুলের ছাদ দিয়ে পানি পড়ে ও ছাত্রাবাসের কথা বলেন। ছাদ ঠিক করতে কত টাকা লাগবে। তিনি বলেন, ১২০০ টাকা। শেরে বাংলা তখনই পকেট থেকে ১২০০ টাকা স্কুল কর্তৃপক্ষকে দেন এবং শেরে বাংলা ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী তার অসীম সাহস দেখে তার মাথায় হাত দিয়ে দোয়া করেন। কে জানত এই তেজস্বী সংগ্রামী সাহসী সন্তানই একদিন এই দেশকে স্বাধীন করবে। সেজন্য বলা হয় রতনে রতন চেনে। তখন থেকেই তার ছাত্ররাজনীতির সূচনা হয়।
প্রকৃতপক্ষে ১৯৪৩ সালে শেখ মুজিবুর রহমান সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক জীবনে যোগদান করেন এবং এ বছরেই তিনি মুসলিম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।
১৯৪৪ সালে কুষ্টিয়ায় অনুষ্ঠিত নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের সম্মেলনে যোগদান করেন এবং সেখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
১৯৪৬ সালে তিনি কলকাতার ইসলামিক কলেজ থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক বা জিএস নির্বাচিত হন। এই সময় তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সহকারী নিযুক্ত হন।
১৯৪৭ সালে তিনি ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। এই কলেজটা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিল। এ বছরের ১৪ ও ১৫ আগস্টে ভারত ভাগ হয়ে স্বাধীন পাকিস্তান ও স্বাধীন ভারত রাষ্ট্রের জন্ম হলে কলকাতায় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সৃষ্টি হয়। এই দাঙ্গা ও সহিংসতা প্রতিরোধ তৎপরতায় তিনি উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকা পালন করেছিলেন।
১৯৪৮ সালে বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। তিনি ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। এই বছরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিন উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করলে বঙ্গবন্ধু তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানান। যার ফলে পরবর্তীতে বাংলা ভাষা দাবির জন্য বঙ্গবন্ধুকে একাধিকবার জেলে যেতে হয়।
১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি জেলে ছিলেন এবং বাংলা ভাষার জন্য ২১ ফেব্রুয়ারিতে এদেশের দেশপ্রেমিক সূর্যসন্তান সন্তান সালাম, রফিক, শফিক, বরকত প্রমুখ পুলিশের গুলিতে নিহত হলে তিনি জেলের মধ্যে অনশন করেছিলেন এবং এর তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন।
১৯৪৯ সালের ৩ মার্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা তাদের দাবি দাওয়া আদায়ের উদ্দেশ্যে ধর্মঘট ঘোষণা করলে তিনি তাদের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন করেন ও আন্দোলনে যোগদেন। আন্দোলনে যোগ দেয়ার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বঙ্গবন্ধুকে অযৌক্তিকভাবে আটক করে ও জরিমানা করে। ন্যায্য আন্দোলনকে সমর্থন করেছেন সেজন্য তিনি জরিমানা দেননি। যার ফলে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কারের ফলে তিনি বলেছিলেন উপযুক্ত ব্যক্তি যেদিন হতে পারব সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখব।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয় এবং জেলে থাকা অবস্থায় তাকে অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। এই বছরের ২৭ জুলাই তিনি জেল থেকে মুক্তি পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে না গিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে যোগ দেন। এই বছরে পূর্ব বাংলায় দুর্ভিক্ষ শুরু হলে খাদ্যের দাবিতে তিনি আন্দোলন শুরু করেন। এ আন্দোলনের জন্য ১৯৫০ সালে তাকে পুনরায় আটক করা হয়।
১৯৫৩ সালের ১৬ নভেম্বরে তিনি প্রাদেশিক আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে সাধারণ সম্পাদক হন।
১৯৫৪ সালের ১০ মার্চের সাধারণ নির্বাচনে ২৩৭টি আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৩টি আসনে বিজয়ী হয়। শেখ মুজিবুর রহমান গোপালগঞ্জের আসনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। এই বছরের ২ এপ্রিলে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। তিনি এই মন্ত্রিসভায় বয়োকনিষ্ঠ মন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ করেন ও উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকা পালন করেছিলেন।
১৯৫৫ সালের ৫ জুনে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। এই বছরে ঢাকার পল্টনের জনসভা থেকে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন দাবি করেন। ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোম্বর জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শাহেদ আলীর ওপর আক্রমণ এবং তার মৃত্যুর প্রেক্ষাপটে ইস্কান্দার মির্জা পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি করেন। এ বছরের ১২ অক্টোবরে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং এ সময় তার বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা সাজিয়ে বারবার জেলে নেয়া হয়।
১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারিতে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে আওয়ামী লীগকে পুনরায় ঢেলে সাজানো হয়। এই বছরের ২৬ জুলাই তার নেতৃত্বে সম্মিলিত বিরোধী দল কঅপ বা কম্বাইন্ড অপজিশন পার্টি গঠিত হয়।
১৯৬৬ সালের ৫-৬ ফেব্রæয়ারিতে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের লাহোরে বাঙালির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ৬ দফা পেশ করেন। লাহোর সম্মেলনের বিষয় নির্বাচনী কমিটি ৬ দফা দাবি অনুমোদন না করলে বঙ্গবন্ধুসহ আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দল উক্ত সম্মেলন বর্জন করেন। পরবর্তীতে ১৯৬৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় ৬ দফা অনুমোদন পায় ও এই দলের দলীয় ইশতেহারে পরিণত হয়। তিনি ৬ দফার পক্ষে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মাঝে ব্যাপক প্রচারণা করেন। যার ফলে তাকে একাধিকবার কারাগারে যেতে হয়। মূলত ৬ দফা ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। যাকে ম্যাগনাকার্টা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আর এই ৬ দফাকে কেন্দ্র করে তিনি বাঙালির অভিসংবাদিত জনপ্রিয় নেতাতে পরিণত হন।
১৯৬৮ সালের ৩ জানুয়ারিতে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে এক নম্বর আসামি করে মোট ৩৫ জন বাঙালি সামরিক-বেসামরিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে বিছিন্ন করার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক এক মামলা করে যা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত। এই মামলার মূল কথা ছিল রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য। ৮ জানুয়ারিতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বঙ্গবন্ধু আদালতে লিখিত বিবৃতি দেন। এই বিবৃতি পড়ে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি ও তার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। ছাত্র সমাজ ছয় দফার সমর্থনে আরো ১১ দফা দাবি উপস্থাপন করে।
১৯৬৯ সালের ৩০ জানুয়ারিতে গণআন্দোলনের ভয়ঙ্কর উদ্ভ‚ত পরিস্থিতি ঠেকাতে আলোচনার জন্য বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তির প্রস্তাব দেয় পাকিস্তানি শোষণকারী কুচক্রী সরকার। কিন্তু তিনি সে প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন।
এ বছরের ১৫ ফেব্রæয়ারিতে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের অভ্যন্তরে মামলার অন্যতম আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হককে নির্মমভাবে হত্যা করা হলে বিক্ষুব্ধ জনতা বাঁধভাঙা বন্যার মতো রাজপথে ভয়াবহরূপে নেমে আসে।
১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারিতে তীব্র গণআন্দোলনের মুখে সরকার রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য শিরোনামে মিথ্যা মামলাটি তুলে নেয় এবং বঙ্গবন্ধু ও অন্যান্য আসামিকে মুক্তি দেয়।
১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারিতে ডাকসু এবং পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ রেসকোর্স ময়দান বর্তমান শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কিংবদন্তি বিপ্লবী নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে এক বিশাল সংবর্ধনা দেয়। এই অনুষ্ঠানে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভ‚ষিত করা হয়। তখন থেকেই তিনি বঙ্গবন্ধু নামে খ্যাত।
১৯৭০ সালের ১ জানুয়ারিতে, ১৯৫৮ সালের পর প্রথম রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। বঙ্গবন্ধু প্রথম দিন থেকেই ৬ দফার পক্ষে দেশব্যাপী ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে যান। ১৯৭০ সালের ২৮ অক্টোবরে বঙ্গবন্ধু বেতার ও টেলিভিশনে নির্বাচনী ভাষণ দেন। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বরে বন্যা-দুর্গত এলাকা বাদে জাতীয় পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। পাকিস্তান পিপলস পার্টি পায় ৮৮টি আসন। এছাড়াও ১৯৭০ সালের ১৭ ডিসেম্বরের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৯৮টি আসন লাভ করে। আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া সত্তে¡ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করতে চায়নি পশ্চিম পাকিস্তানের কুচক্রী বেইমান শাসকগোষ্ঠীরা। এজন্য তারা বিভিন্ন টালবাহানা শুরু করে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষদের বঞ্চিত করার জন্য।
১৯৭১ সালের ২ মার্চে ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বতঃস্ফ‚র্ত হরতাল পালিত হয়। উত্তাল জনস্রোতে ঢাকা পরিণত হয় এক বিক্ষোভের শহরে। পাকিস্তানি বেইমান শাসক ঢাকা শহরের পৌর এলাকায় সন্ধ্যা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করে। ১৯৭১ সালের ৩ মার্চে বিক্ষুব্ধ জনতা কারফিউ উপেক্ষা করে রাজপথে নেমে আসে। সামরিক সেনার গুলিতে মারা যান ৩ জন, আহত হন কমপক্ষে আরো ৬০ জন। এই সময় পুরো দেশ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে পরিচালিত হতে থাকে।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে এক ঐতিহাসিক কালজয়ী ভাষণ দেন। তিনি বলেন, তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে। ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। এছাড়া তিনি আরো বলেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দিব, তবুও বাংলার মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব- ইনশাাল্লাহ’। জয় বাংলা বলে তিনি ভাষণ শেষ করেন। বঙ্গবন্ধুর এই অগ্নিঝরা ভাষণে স্পষ্ট হয়ে যায় স্বাধীন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। সারাদেশে শুরু হয় এক অভ‚তপূর্ব অসহযোগ আন্দোলন। মূলত তিনি যদি এই ৭ মার্চের অগ্নিঝরা জ্বালাময়ী ভাষণ না দিতেন তাহলে হয়তো বাংলাদেশ নাও স্বাধীন হতে পারত। এই ভাষণই বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করেছে। এই ভাষণের ফলে বাংলাদেশের সংগ্রামী জনতা যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকে এবং পরবর্তীতে বিপ্লবী জনতা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ চালিয়ে এদেশকে নরপিশাচ হায়েনার হাত থেকে স্বাধীন করেছিল।
এভাবে যুদ্ধের দাবানল বেজে উঠলে ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ প্রতিরোধ দিবস পালনের ষোষণা দেয়। এদেশের সরকারি-বেসরকারি সমস্ত প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। বঙ্গবন্ধু এ দিনে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন।
মার্চের শুরু থেকেই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এই বাংলায় অস্ত্র মজুদ করতে থাকে। যার ফলে ২৫ মার্চের ভয়াল গভীর রাতে ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে পাকিস্তানি নরপিশাচ সামরিকরা ঘুমন্ত নিরস্ত্র নির্দোষ বাঙালির ওপর ভয়ঙ্কর ঘৃণিত হত্যাযজ্ঞ বা অপারেশন সার্চলাইট চালায়।
এভাবে যুদ্ধের দামামা বেজে গেলে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের গভীর রাতে অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু ওয়ারলেস যোগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং ঘোষণাপত্রটি চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রে পাঠিয়ে দেন। পরবর্তীতে এই বেতারকেন্দ্র থেকে একাধিক ব্যক্তি একাধিকবার এই ঘোষণা বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে পাঠ করেছেন। ঐ রাতেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হলেও বঙ্গবন্ধু ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক।
আটক করা হলেও জাতীয় ৪ নেতা মুক্তিযুদ্ধের হাল ধরেন। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল তৎকালীন মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ঘোষণা করেন আজ থেকে বৈদ্যনাথ তলার নাম মুজিবনগর এবং অস্থায়ী রাজধানী থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনা করা হবে। বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি ষোষণা করা হয় আর সৈয়দ নজরুল ইসলামকে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ষোষণা করা হয়। তারা ১১টি সেক্টরে সমগ্র বাংলাদেশকে ভাগ করেন।
এই যুদ্ধে এদেশের দেশপ্রেমিক দামাল ছেলেরা স্বদেশের জন্য বীরবিক্রমে যুদ্ধ করতে করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন। প্রায় ৯ মাস ধরে যুদ্ধ চলল। ৯ মাস পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল নিয়াজী ৯৩ হাজার সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্রসহ বাঙালির হাতে বা যৌথবাহিনীর কাছে শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পরাজয় বরণ করে আত্মসমর্পণ করে। যার ফলে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ৩০ লাখ বীর শহীদের রক্তের ¯্রােতে বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারিতে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি এক কিংবদন্তি নেতা বঙ্গবন্ধু কারাগার থেকে মুক্তি পান। পিআইয়ের একটি বিশেষ বিমানে বঙ্গবন্ধুকে লন্ডনে পাঠানো হয়। ৮ জানুয়ারি ভোরে বঙ্গবন্ধু লন্ডনে পৌঁছেন।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারিতে সকালে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের আগ্রহে ব্রিটেনের রাজকীয় বিমানবাহিনীর এক বিশেষ বিমানে বঙ্গবন্ধু নয়া দিল্লি পৌঁছালে রাষ্ট্রপতি ভি.ভি গিরি এবং প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সাথে দেখা করে ওই দিনই তিনি বিমানে বাংলাদেশে আসেন। ঢাকায় বিমানবন্দরে পৌঁছালে বঙ্গবন্ধু সরাসরি শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চলে যান। কারণ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ তাকে সংবর্ধনা দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল। বঙ্গবন্ধু প্রায় ৩০ লাখ বীর শহীদের রক্তের বিনিময়ে এদেশকে স্বাধীন বাংলা করেছিলেন সেজন্য তিনি লাখ লাখ জনতার ভালোবাসা পাওয়া সত্তে¡ও কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে ঐদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির উদ্দেশে কালজয়ী ভাষণ দিয়েছিলেন। বাঙালিরা তাদের প্রাণপ্রিয় নেতাকে হাসিমুুখে ফুটন্ত ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নিয়েছিল।
১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ৬ ফেব্রুয়ারিতে ভারত সরকারের আমন্ত্রণে তিনি ভারত সফর করেন। ২৮ ফেব্রুয়ারিতে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়ন সফর করেন। ১২ মার্চে বঙ্গবন্ধুর অনুরোধে ভারতীয় মিত্রবাহিনী বাংলাদেশ ত্যাগ করে স্বদেশে যায়। ১ মে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি ষোষণা করেন। ১০ অক্টোবরে বিশ্ব শান্তি পরিষদ বঙ্গবন্ধুকে ‘জুলিও কুরী’ পদক পুরস্কারে ভ‚ষিত করেন। ৪ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচন ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চে অনুষ্ঠিত হবে সে ঘোষণা তিনি দেন। ১৪ ডিসেম্বরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের সংবিধানে স্বাক্ষর করেন। ১৫ ডিসেম্বরে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের খেতাবে ভ‚ষিত করা হবে সে আইন পাস করা হয়। ১৬ ডিসেম্বরে বাংলাদেশের সংবিধান কার্যকর হয়। মাত্র ৪ বছর ক্ষমতায় থাকার সুযোগ পেলেও বঙ্গবন্ধু অসংখ্য রাস্তঘাট, খাল খনন, মহাসড়ক নির্মাণ করেন। প্রশাসনিক ক্ষমতার পুনর্বিন্যাস করেন। ১ কোটি মানুষের পুনর্বাসন করেন। কৃষকদের বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে কৃষি উপকরণ বিতরণ করেন। নিম্ন মাধমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেন। প্রাথমিক স্কুলে বিনামূল্যে বই বিতরণ ও শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। মদ, জুয়া, ঘৌড়দৌড়সহ সমস্ত ইসলামবিরোধী কার্যকলাপ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড নির্মাণ করেন। ১১ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ৪০ হাজার প্রাথমিক স্কুল সরকারি করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ঘোষণা করেন। কৃষকদের ২৫ বিঘা জমি পর্যন্ত খাজনা মওকুফ করা হয়। পাকিস্তানিদের পরিত্যক্ত ব্যাংক, বীমা ও ৫৮০ শিল্প ইউনিটকে জাতীয়করণ করেন। যার ফলে হাজার হাজার শ্রমিক কর্মসংস্থানের সুযোগ পায়। ঘোড়াশাল সার কারখানা, আশুগঞ্জ কমপ্লেক্সের প্রাথমিক কাজ নতুন নতুন শিল্পকারখানা স্থাপন, বন্ধ শিল্পকারখানাকে চালু করেন। অতি অল্প সময়ে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে পড়া থাকা দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি, বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রের স্বীকৃতিসহ জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভ ইত্যাদি ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর অবদান অতুলনীয় ও অবিস্মরণীয়।
১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদের ১ম নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৩ আসন লাভ করে বিপুল ও ইতিহাসের সেরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনে তার যৌবনের ৪ হাজার ৬৮২ দিন অর্থাৎ প্রায় ১৩ বছর জেল খেটেছেন। তার রচিত অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচা বই দুটি পড়লে এ সম্পর্কে ভালো ধারণা পাওয়া যাবে। যে ব্যক্তি তার জীবনের ১৩ বছর জেলে কাটিয়েছেন তার মতো উদারনৈতিক ব্যক্তি বাংলার জীবনে কখনো হবে কিনা আমার সন্দেহ। অথচ সেই বরেণ্য ব্যক্তিকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে তার নিজস্ব ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে ভোর রাতে একদল কুচক্রী উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তারা বঙ্গবন্ধুর মতো মহান নেতাকে হত্যা করতে দ্বিধাবোধ করেনি। শুধু তাকে হত্যা করেই ক্ষান্ত থাকেনি বরং তার সপরিবারকে হত্যা করেছিল। সেদিন বঙ্গবন্ধুসহ ১৬ জনকে হত্যা করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র নিষ্পাপ শিশু শেখ রাসেল শত মিনতি করেও ওই নরপিশাচ হায়েনাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। চরম দুর্ভাগ্য বাঙালি জাতির সেদিন এক বিপ্লবী-সংগ্রামী নেতাকে হারাতে হয়েছিল। এদেশের অনেক নেতাই রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। তবে বঙ্গবন্ধু নিরলস কঠোর সংগ্রামের মাধ্যমে এবং ৩০ লাখ রক্তের বিনিময়ে এই লাল সবুজের বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছেন। বঙ্গবন্ধু মারা গেলেও তিনি চিরদিন বেঁচে থাকবেন বাঙালিদের হৃদয়ে।
সুত্র: ভোরের কাগজ, প্রকাশিত : মার্চ ১৯, ২০২০ 

SUMMARY

2592-১.jpg