‘বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ৬ দফা প্রস্তাব আমিই উত্থাপন করি’

- তারিকুল ইসলাম মাসুম  

সংক্ষিপ্ত পরিচিতি: ভাষা সংগ্রামী বাহাউদ্দিন চৌধুরী বাংলাদেশ সরকারের প্রথম তথ্য সচিব। ১৯৬৬ সালে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেন তিনি। তিনি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামী। বাহাউদ্দিন চৌধুরী জন্মগ্রহণ করেন বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ থানার উলানিয়া গ্রামে। পিতা আলাউদ্দিন আহমদ চৌধুরী ছিলেন উলানিয়ার জমিদার। মাতা সৈয়দা জামিলুন নেছা সুলতানা চৌধুরী ছিলেন বরিশালের সায়েস্তাবাদের নবাব বাড়ির কন্যা।

২০১১ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি মগবাজারে কমিউনিটি হাসপাতালে ভাষা সংগ্রামী বাহাউদ্দিন চৌধুরীর সাক্ষাতকার গ্রহণ করেন তারিকুল ইসলাম মাসুম। তখন কিডনি রোগে আত্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।সাক্ষাৎকারের বাকি অংশ পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো:

আমি বিয়ে করে এই ’৫৬ সালে আমি সরকারি চাকরিতে চলে গেলাম, রাজনীতি ছেড়ে।
আমি পাকিস্তান হাই কমিশনে দিল্লিতে প্রেস এটাচে হিসেবে চাকরি নিয়ে চলে গেলাম ৬৫ সনে। তখন সোহরাওয়ার্দী মন্ত্রীসভা। ’৫৮ সনে আইয়ুব খান এসে বসলেন। যুক্ত হল মার্শাল ল’।

’৫৮ সনে ইন্ডিয়ার মত সেনসেটিভ জায়গায় বাঙালী রাখবে না বলে আমাকে বন্দী করে করাচি নিয়ে আসল।
তো সেইখানে, আমাকে ব্যুরো অব ইন্টারস্টেট করাচি, ডেপুটি ডাইরেক্টর করে রাখল। তো আমাকে, একটা সেমিনার হল, তো সেখানে এই বাংলা উভয় পাকিস্তানের ইন্টিগ্রেশন একটা, সংহতির একটা পেপার তৈরি করতে বলল।
তো আমি, সেই পেপার তৈরি কারার ক্ষেত্রে দুইটাতেই বাংলা ভাষা সম্পর্কে বললাম। ওরা, চটে গল! ওখানে মুসা আহম্মদ বলে একজন বাঙালী অফিসার, শাহাবুদ্দীনের জামাই, তিনি এসিস্ট্যান্ট ডাইরেক্টর ছিলেন। তিনি আমাকে বললেন, না, না, তুমি মিথ্যা কথা লিখছো। ওখানে, ওরা সব ভারতীয় দালাল ছিল। এরা ইন্ডিয়ার এজেন্ট, এরা এখানে এসে বাংলা ভাষা করতে চায়!

তো, আমি চটে গেলাম। আমি অবশ্য ইংরেজিতে বললাম, ইংরেজিতে কথা হচ্ছিল। যে, আমি বললাম,
আই ক্যান নট কম্পেয়ার মাই প্যাট্রিয়টিজম উইথ দোজ, হু আর লিটিং ব্রিটিশ রুলস অন দেয়ার লাইভস্। ব্রিটিশ রুলস বলাতে আইয়ুব খানও পড়ে গেল।  কারণ, আমি তো রাগ হয়ে বলে দিছি। আমি এটা জানি, আই ওয়াজ ওয়ান অব দি লিডার্স অব দ্যট মুভমেন্ট। কাজেই, তুমি মিথ্যা কথা বলছো। তারপরে তো ভয় পেয়ে গেলাম। তো, আমাকে আইয়ুব খান বললেন, তুমি বলো।

আমি বলে গেলাম যে, আমি আমার কথা বললাম। পরে ভয় পেয়ে গেলাম। ভয় পেয়ে গিয়ে তখন, আইয়ুব খানের মন্ত্রীসভায় আইনমন্ত্রী ছিলেন, বিচারপতি ইব্রাহীম। ঐ অধ্যাপক সুফিয়া আহমদের বাবা, বিচারপতি ইব্রাহীম। উনি তখন বাঙালীর ত্রাতা হিসেবে ওখানে পরিচিত ছিলেন। বাঙালীরা কোনো বিপদে পড়লে সবাই তার কাছে যেতো।
আমি গেলাম।

তিনি আমাকে বললেন, তুমি তো একটা সাংঘাতিক কাজ করে ফেলেছো বাবা। দেখি কী করতে পারি।
আমার সামনে উনি মুসা আহমেদকে টেলিফোন করলেন। তাকে চায়ের দাওয়াত দিলেন। বললেন, তুমি কালকে সন্ধ্যায় আমার সঙ্গে চা খাবা। আমাকে বললেন, তুমি আমার সঙ্গে পরশু যোগাযোগ করো।

মুসা আহমেদ আমাকে বললেন, তোমাকে ৭ দিন ছুটি দেওয়া হল। তোমার অফিসে আসার দরকার নাই। এবং আমার একটা ফর্ম ফিলাপ করলেন। এবং আমাকে রিভাইভ ক্লিয়ারেন্স করতে হবে পুলিশ।
আমি বললাম আমার তো পুলিশ ক্লিয়ারেন্স জমাই দেয়া আছে একবার। বলে না, করতে হবে।

তারপরে, তিন দিন পরে গেলাম ওখানে ইব্রাহীম সাহেবের ওখানে। তো, ইব্রাহীম সাহেব বললেন, মুসা আহমেদ তোমার ওপর মহা চটা! তোমাকে সে জেলে ঢুকিয়ে ছাড়বে। তারপরে, ৭ দিন পরে গেলাম। আমার রিপোর্ট চলে এসেছে।
তো, মুসা সাহেব আমাকে বললেন, তুমি সরকারি চাকরিতে ঢুকলে কীভাবে?

আমি বলি কেন?  বলে, তোমার তো জেলে থাকার কথা। এই যে, তোমার রিপোর্ট এসেছে। তুমি কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ছিলে। আমি বললাম আমার তো পুলিশ ক্লিয়ারেন্স রিপোর্ট রয়েছে। বলে, কী করে হয়েছে জানি না? এখন তোমাকে জেলে যেতে হবে।তখন আমাকে ইব্রাহীম সাহেব বললেন, বাবা, তোমাকে বাঁচাবার আর কোনো রাস্তা নাই। তুমি আমার প্রাইভেট সেক্রেটারি হয়ে যাও। তখন আমি ইব্রাহীম সাহেবের প্রাইভেট সেক্রেটারি হয়ে গেলাম। এটা হচ্ছে ১৯৬০ সালে। তারপর ওখানে থাকলাম, ওখানে থাকতে থাকতে, বিচারপতি ইব্রাহীমের সঙ্গে এই কেবিনেটে খালি যুদ্ধ হতো বাঙালীর অধিকার নিয়ে।

তিনি বাঙালীর স্বায়ত্তশাসনের কথা বলতেন, বাঙালীর অধিকারের কথা বলতেন, বাংলা ভাষার কথা বলতেন।
তো, ওনার গাট্টি-বোস্কা প্রায় বাঁধা অবস্থায় থাকতো, ওনার চেকও নেন নাই। উনি সব সময় পদত্যাগ করার জন্য তৈরি থাকতেন। তো উনি ’৬২ সনে পদত্যাগ করলেন। ওনার সঙ্গে সঙ্গে আমিও পদত্যাগ করলাম।
তো আমি পদত্যাগ করে এসে, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমার আগেই পরিচয় ছিল। একসঙ্গে জেলে ছিলাম দীর্ঘদিন।
উনি তখন আওয়ামী লীগ নতুন করে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছেন। তো আমি এসে সেখানে জয়েন করলাম। জয়েন করার পরে আমি ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হলাম। কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য হলাম।

১৯৬৬ সনে আওয়ামী লীগ কাউন্সিলে ৬ দফা প্রস্তাব, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ৬ দফা প্রস্তাব আমিই উত্থাপন করি। এবং এই ৬ দফা রচনার সঙ্গে আমারও কিছুটা অবদান ছিল। এইভাবে আওয়ামী লীগ করলাম। তারপরে আবার ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান।

ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের পরে এই নমিনেশন নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমার মতবিরোধ হয়ে গেল। উনি আমাকে আমার দেশের বাড়ি থেকে নমিনেশন দিতে চাইলেন, বরিশাল। বরিশালে আমি জীবনে থাকি নাই। আমি বললাম, আমি ঢাকা শহর আওয়ামী লীগর সভাপতি, আমি বরিশাল জীবনে থাকি নাই। বরিশালে কেউ আমাকে চেনে না। বরিশালের ভাষা আমি বলতে পারি না। আমি বরিশালে নমিনেশন নিব না। আমি নমিনেশন চাই না।

বলে, না, তুই ঢাকা থেকে… আমি ঢাকা থেকে দিতে পারব না। আমার ঢাকায় কামাল হোসেনকে এ্যাকোমোডেট করতে হবে। ওর কোনো কনস্টিটিউয়েন্সি নাই। তোমার তো বাপ দাদা ঐখানে, তোমার চাচা এমএলএ ছিল, আরিফ চৌধুরী, আসাদ চৌধুরীর বাবা, কবি আসাদ চৌধুরীর পিতা, উনি আমাদের চাচা।
তোর চাচার সীটে তুই এমএলএ হ।
আমি বলি, আমাকে কেউ চেনে না।
বলে, তোমাকে কেউ চিনতে হবে না। আমি নমিনেশন দিব, তুমি পাশ করে আসবা। আসলে পরে মন্ত্রী হবা।
তো, আমি রাগ করে রাজনীতি করাই ছেড়ে দিলাম। আমি একটু জেদী ছিলাম। অবশ্য সম্পর্ক আমার নষ্ট হয় নাই।
এরপর তো যুদ্ধ এসে গেল। আমার বাড়িতেও আর্মস ডাম্প করা হল।

আমার বাড়িটা ছিল ৩১ নাম্বার রোড, ধানমন্ডি। ৩২ নাম্বার ছিল বঙ্গবন্ধুর বাড়ি, ৩২ নাম্বার ধানমন্ডি। এখন হচ্ছে কি? ২৫শে মার্চের সেই গণতহ্যার সময় বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে আমার বাড়িতে এনে রেখেছিলাম আমি।
তো, ঐখানে আমাদের একই রাস্তায় জাপানি কনসাল জেনারেল থাকতেন। তিনি গিয়ে টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করে, ঐ রাস্তায় মিলিটারি টহল বন্ধ করে দিলেন। ঐ জাপানি কনসাল জেনারেল। তার পরে আমার রাস্তাটা নিরাপদ হয়ে গেল।
ক্যাপ্টেন হায়দার প্লাটুন কমান্ডার, কমান্ডো বাহিনীর, উনি আসলেন। এসে উনি বললেন, তোমার বাড়ি তো সেফ। এইখানে আমরা আর্মস ডাম্প করি।

আমার বাড়িতে একটা হাউজ বানানো হল, সেখানে সব অস্ত্রপাতি রাখা হল। ঢাকার বিভিন্ন অপারেশন আমার বাড়ি থেকে করা হতো। কাজেই, আমার আর ইন্ডিয়া যাওয়া হয় নাই।

তো, বঙ্গবন্ধু ফিরে আসলেন। ফিলে আসার পর আমি আর তার সঙ্গে দেখা করলাম না। ফিরে আসলেন ১০ জানুয়ারি ১৯৭২। উনি ১৮ জানুয়ারি আমার বাড়িতে এসে হাজির। এসে খুব রাগ করলেন। বলেন, উলানিয়ার জমিদারী তো আর নাই! তো, বাড়িতে বসে আছো কেন? খালি বউ’র ভাত খাইতেছো?
আমার বউ চাকরি করতো।
বউ’র ভাত খাছ্, লজ্জা করে না তোর? চল আমার সঙ্গে।
এই মিনা, মিনা?
আমার বউ’র নাম ছিল মিনা। ওর কাপড়-চোপড় দাও।

কাপড়-চোপড় পড়াইয়া ওনার গাড়িতে করে নিয়ে গেলেন গণ-ভবনে। গণ-ভবনে নিয়ে গিয়ে মুখ্য সচিব রুহুল কুদ্দুস ডাকলেন।তো, এস্টাবলিসমেন্ট সেক্রেটারি নূরুল কাদির খানকে ডাকলেন।তারপরে বললেন, দেখ, একটা পোস্ট খালি আছে জয়েন্ট সেক্রেটারির আমি জানি, ঐ সেন্ট্রাল গভর্নমেন্টের। এখন আপাতত তাকে ঐ পোস্টটায় আজকেই এ্যাপয়েন্টমেন্ট দাও। এবং কিছুদিন পরে তাকে এ্যাক্টিং সেক্রেটারি করে দেওয়া হবে।এই ধরে নিয়ে গেল সেক্রেটারিয়েটে, এ্যাপয়েন্টমেনট লেটার দিয়ে দিল, পরের দিন জয়েন করলাম।
তারপরে, বঙ্গবন্ধু বললেন, দেখ, তুই সচিব হবি, আমি মন্ত্রী থাকব। মাঝখানে কোনো মন্ত্রী থাকবে না। তুই’ই মন্ত্রী। তুই তো রাজনীতি করা ছেড়ে দিলি? তুই’ই মন্ত্রী থাকবি। এই সব ইতিহাস বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে।

কিন্তু পরবর্তীকালে তার সঙ্গেও আমার মতবিরোধ হয়ে গেল। প্রেস এন্ড পাবলিকেশন্স অর্ডিন্যান্স নিয়ে।এই প্রেস এন্ড পাবলিকেশন্স অর্ডিন্যান্সে তিনি আমাকে, ১১টা পত্রিকা বন্ধ করে দিতে বললেন।
আমি রাজি হলাম না।

আমি ১০ পৃষ্ঠাব্যাপী নোট দিলাম, কেন আমরা এই প্রেস এন্ড পাবলিকেশন্স অর্ডিন্যান্সে কোনো এ্যাকশন নিতে পারি না।
তারপর বঙ্গবন্ধু খুব রাগ হলেন, আমাকে ডাকলেন, ডেকে ফাইলাটা আমার মুখের ওপর ছুঁড়ে ফেলে দিলেন।
বললেন, লিখে আনছো? মুখে বলতে পারো নাই? তারপরে রাগ করে আমাকে ১৩ মাস ওএসডি বানিয়ে দিলেন।

হে হে হে। কিন্তু ওএসডি বানিয়ে দিলেও, এই পাশাপাশি বাড়ি থাকার কারণে, রোজ তার বাড়িতে যেতাম চা খেতে।
তো, আমি গেলাম, আমার সঙ্গে দেখা।বললেন, তুমি আমার বাড়িতে আসছো, তুমি তো একজন জমিদার।
আমি, বললাম, আমি আপনার বাসায় আসি নাই। আমি রেনু ভাবীর বাসায় আসছি। বাড়িটা ভাবীর নামে ছিল, তার স্ত্রী।

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

এইভাবে আমি গেলে উনি বলতেন, এই যে, উলানিয়ার জমিদার আসছে, রেনু ওনারে চা খাওয়াও।
পান খেয়ে (মুখে পান তুলে দেয়ার ভঙ্গি করে), উনি অর্ধেক পান আমাকে খাওয়াতেন। এই রকম একটা সম্পর্ক ছিল। আপন ভাইয়ের মতো।

তারপরে ২৫শে মার্চের ক্রাক ডাউনে, ওনার (বঙ্গবন্ধুর) বউ, রাসেল, এদেরকে নিয়ে আসলাম আমার বাড়িতে। আমার (বাড়ির) পেছনেই ছিল তো। নিয়ে আসলাম। ২৭ শে মার্চ যখন কারফিউ উঠে গেল তখন তাদের ফুফাতো ভাইর বাড়িতে পৌঁছে দিলাম।

তারপরে, ওহ্, আমাকে তো ১৩ মাস ওএসডি করে রাখলেন, তারপরে আবার চাকরিতে ঢুকালেন। এফডিসির চেয়ারম্যান করে দিলেন আমাকে। সচিবের মর্যাদায় এফডিসির চেয়ারম্যান করে দিলেন। সেন্সর বোর্ডের চেয়ারম্যান করে দিলেন। বলেন (বঙ্গবন্ধু), তুই খালি ঝগড়া-ঝাটি করিস, তোরে সিএসপিরা দেখতে পারে না। তুই আগেও তো নাটক করতি? তুই ফিল্ম বানা। হা হা হা (হাসে)।

তো, গেলাম। তারপরে তো, পারলেন না (১৯৭৫এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হল)।
তারপরে তো, খন্দকার মোশতাক, আমাকে ওএসডি করে দিলো। জিয়াউর রহমান সাহেবী। জিয়াউর রহমান সাহেব, দেখা করতে গেলাম যে, স্যার, আমাকে একটা পোস্টিং দেন। তো, তিনি আমাকে বললেন, আপনি মন্ত্রী হয়ে যান।
আমি বলি, মন্ত্রী? আমি তো স্যার সচিব ছিলাম। আপনার অন্য কলিগরা তো মন্ত্রী হয়েছে। অনেক সেক্রেটারি মন্ত্রী হয়েছে।আমি বললাম, দেখেন স্যার, আমি যেহেতু আগে রাজনীতি করতাম, আমি মন্ত্রী হতে পারব না। আমার একটা রাজনৈতিক মতাদর্শ আছে। সেই জন্য আমি চাকরি করতে পারি, কিন্তু মন্ত্রী হতে পারি না। উনি রাগ হয়ে গেলেন। রাগ হয়ে, তারপরে ফাইল ফেলে রাখলেন। যতই তদবির করি, বলে,আমি জানি, থাক্।
এরকম আমাকে ৪ বছর ঝুলিয়ে রাখলেন। পরে আমি পদত্যাগ করলাম।

আমার স্ত্রী তখন অসুস্থ, তাকে নিয়ে আমাকে যেতে হল, ক্যান্সারের রোগী। এই হচ্ছে আমার ইতিহাস।
তারপরে, আবার এসে খবরের কাগজে যোগ দিলাম। গণকন্ঠের সম্পাদক ছিলাম। দৈনিক গণকন্ঠের সম্পাদক হিসেবে। তারপরে আমি দৈনিক লাল সবুজের প্রধান সম্পাদক ছিলাম। আজাদে কাজ করেছি উপদেষ্টা সম্পাদক হিসেবে।

তা. ই. মাসুম: স্যার, মুক্তিযুদ্ধের সময়টা’র কথা আরেকটু বলবেন? ২৫শে মার্চের সময় এবং এরপরে?
বাহাউদ্দিন চৌধুরী : ২৫শে মার্চে, আমারতো বাড়ি ধানমিন্ড ৩১ নাম্বারে, বঙ্গবন্ধুর বাড়ির পেছনে। আমার বাড়ির গেটে কতগুলি লাশ পড়ে রইল। সব ট্যাঙ্ক ঘেরাও করে রেখেছে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি। এই ১২টা ১টার দিকে রাত।
বঙ্গবন্ধু হুংকার দিয়ে বললেন, এই তোরা আমার লোককে মারিস না। ডোন্ট কিল মাই পিপল, কাম এন্ড টেক মি, এ্যারেস্ট মি, বাট ডোন্ট কিল মাই পিপল।
তখন তো গণ-হত্যা শুরু হয়ে গেছে। তো তখন, ওরা এসে, বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে এসে, তাকে এ্যারেস্ট করে নিয়ে গেল।
এরেস্ট করেছে এটা মানুষ জানতে পারে নাই। কিন্তু অসংখ্য লোক মারা পড়ল। রাস্তা-ঘাটে রক্তের নদী।
তা. ই. মাসুম: ২৫শে মার্চ ১৯৭১ রাতে এরেস্ট করলেন।
বাহাউদ্দিন চৌধুরী : তারপরে স্বাধীনতার পরে, মাঝখানে তো বলেছি? হ্যাঁ, আমার বাড়িতে অস্ত্রাগার বানানো হল, মুক্তিযোদ্ধারা এসে অস্ত্র নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অপারেশনে যেতো এবং এটা নিয়ে আবার আসতো।
ক্যাপ্টেন হায়দার ছিলেন এর দলনেতা। ওনাকে তো পরে মেরে ফেলেছিল।
আমার নিজস্ব আর কোনো ভূমিকা ছিল না, ঐ অস্ত্র পাহারা দেওয়া ছাড়া।

তা. ই. মাসুম: ঐ সময়কার যে পরিস্থিতিটা, আপনার অস্ত্র পাহারা দেওয়া, কারা আসছিলেন এবং কীভাবে ঢাকার যুদ্ধটা হয়েছিল? এটা যদি একটু বলতেন।
বাহাউদ্দিন চৌধুরী : ঢাকার তখন ১৮ নাম্বার রোডে আটকে রাখা হল বঙ্গবন্ধু’র পরিবারকে। ধানমন্ডির ১৮ নাম্বার রোডে রাখলেন। তার পরিবারকে ওরাই দেখাশোনা করতো পুলিশ। তারপরে এখন ঢাকা শহরে বিভিন্ন জায়গায় তখন….,
ওহ্, সবচাইতে বড় গণহত্যা বলা হয় জগন্নাথ হলের যে হত্যাযজ্ঞ। হিন্দু-মুসলিম এই যে ছাত্রদের মারল। ছাত্রদের মারলো ২৫শে মার্চেতো মারলই একবার। ২৫শে মার্চে হলের ভিতর ঢুকে ঢুকে ওরা গুলি চালিয়েছে।
যেমন, জ্যেতির্ময় গুহঠাকুরতা, গোবিন্দ দেব আরো অনেক শিক্ষকদের মারল গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছাত্রদের মারল, তাদেরতো সব গণ-কবর দেওয়া হল। কারো তো লাশ পাওয়া গেল না।
তারপরে ১৪ই ডিসেম্বরে বিভিন্ন বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে গেল। চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে গেল। অনেকের তো লাশ পাওয়া যায় নাই, শহীদুল্লাহ কায়সারের লাশ পাওয়া যায় নাই।
আমি শহীদ মিয়াকে (শহীদুল্লাহ কায়সার) বলেছিলাম এর মধ্যে যে, শহীদ মিয়া, আপনি কেনো চলে যাচ্ছেন না?
উনি আমাকে বললেন যে, দেখো বাহাউদ্দিন, সারাজীবন তো কমিউনিস্ট পার্টি করলাম! পরিবার-পরিজন দেখি নাই।
এখন এইবার জহির (জহির রায়হান) আমাকে বলল, দাদা, এইবার তুমি ফ্যামিলি দেখো, আমি যুদ্ধে যাবো।
বলি যে হ্যাঁ, সে যুদ্ধে চলে গেল, বাপ-ভাইকে, পরিবারের ভার দিয়ে। কাজেই, বাহাউদ্দিন আমি যেতে পারছি না।
জহির আমাকে দায়িত্ব দিয়ে গেছে, পরিবার দেখার।
তা. ই. মাসুম: স্যার, আরেকটা বিষয়, মুজিব বাহিনী যে গড়ে উঠছিল, তারা কি আপনার কাছে আসছে (ঐ অস্ত্র নিতে)?
বাহাউদ্দিন চৌধুরী : না, মুজিব বাহিনী আমার কাছে আসে নাই।
তা. ই. মাসুম: ঢাকার যে সশস্ত্র অভিযানটা চলতো এটা কারা করেছেন?
বাহাউদ্দিন চৌধুরী : এটা মেইনলি করেছে, যুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিবাহিনী, বিএলএফ (বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স), মুজিব বাহিনী না।
তা. ই. মাসুম: বিএলএফ?
বাহাউদ্দিন চৌধুরী : হ্যাঁ, মুজিব বাহিনী তো হল ইন্ডিয়াতে।
তা. ই. মাসুম: বিএলএফ কারা?
বাহাউদ্দিন চৌধুরী : এরা মুক্তি, এখন হয়েছে কি এখানে বিভিন্ন দলের লোক ছিল। এবং এর মধ্যে বামপন্থী অনেক, কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ এদের লেকেরাই বেশি ছিল এই মুক্তিবাহিনীতে। এবং তারা যুদ্ধ করেছিল ওখানে, ভারত গিয়ে তারা তাজউদ্দিন সরকারের সহায়তা পেয়েছিল, কিন্তু ভারত সরকার তাদেরকে পছন্দ করে নাই।
ভারত সরকারের প্যাট্রোনাইজে (মুজিব বাহিনী) তৈরি হয়, সিরজুল আলম খান, শেখ ফজলুল হক মনি, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, এই ৪ জনকে নেতা করে ওরা ঐ মেজর জেনারেল নামটা ভুলে গেলাম। মেজর জেনারেল… এই ইন্ডিয়ান একজন জেনারেল, তারা ট্রেনিং দিল মুজিব বাহিনীকে দেরাদুনে নিয়ে গিয়ে। ওরাও যুদ্ধ করেছে, কিন্তু মুক্তি বাহিনীর সঙ্গে একত্রে, এক ফ্রন্টে করে নাই। ওরা একটা সেকেন্ড ফ্রন্ট। ইন্ডয়ার একটা ভয় ছিল, বামপন্থীরা বেশি শক্তিশালী হলে এখানে বামপন্থীরা ক্ষমতায় চলে আসবে।

ঐ তাজউদ্দিন সাহেব চলে গেলেন, বঙ্গবন্ধুর বাড়ি থেকে, আমি রাত ১০টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ছিলাম। তাজউদ্দিনও ছিলেন। তাজউদ্দিন সাহেব, ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম, কামাল হোসেন (ড. কামাল হোসেন) একত্রে বেরিয়ে গেলেন। তারা বঙ্গবন্ধুকে অনেক বললেন, আপনি আসেন।

বঙ্গবন্ধু বললেন, না, আমি যাব না। আমি চলে গেলে, আমার সব লোককে ওরা মেরে ফেলবে। আমাকে পেলে তো ওরা কিছুটা শান্ত হবে। নইলে সব লোক খুন করবে আমার বাঙালীদের।

তো গেলেন, কিছুদূর যবার পরে রাস্তা থেকে ডক্টর, সত্যি কথা বলছি, রাস্তা থেকে কামাল হোসেন (ড. কামাল হোসেন) কেটে পড়লেন। কামাল হোসেন আর গেলেন না। কামাল হোসেন তো পরে পাকিস্তান চলে গেলেন।

এই আমিরুল ইসলাম আর তাজউদ্দিন আহমদ, একটা রাইফেল সঙ্গে নিয়ে, আরহাম সিদ্দিকী বলে আমাদের একজন আওয়ামী লীগের লোক ছিলেন। আরহাম সিদ্দিকী তাকে একটা রাইফেল এনে দিলেন, এইটা নিয়ে ওনারা গেলেন।
ওনরা যখন চুয়াডাঙ্গায় পৌঁছেন, চুয়াডাঙ্গা তখন অনেকটা স্বাধীন, তখন এই চুয়াডাঙ্গায় ছিলেন আমাদের এই যে, বীর বিক্রম পুলিশের…মাহবুব। মাহবুব ওখানে এসডিপিও ছিলেন। তো, মাহবুবের ওখানে গিয়ে পৌঁছলেন, তারপরে ঐ এলাহী…এই যে এখন বিদ্যুতের, জ্বালানী উপদেষ্টা হইছে… সিএসপি,
তা. ই. মাসুম: তৌফিক ইলাহী ।
বাহাউদ্দিন চৌধুরী: হ্যাঁ, তৌফিক ইলাহী উনি ছিলেন। ওরা তাকে (তাজউদ্দিন) পৌঁছে দিলো বর্ডার পর্যন্ত। বর্ডারে গিয়ে তারা খবর পাঠাল যে, এরকম একজন নেতা এসেছেন। তখন ওখান থেকে বিএসএফের লোক আসল। বিএসএফের লোক আসার পরে, আমিরুল ইসলাম বললেন যে, আমাদেরকে সসম্মানে, আমাদের সমমর্যাদায় না নিয়ে গেলে, আমরা যাব না। ওরা তখন ওনাদেরকে গার্ড অব অনার দিয়ে, ওদেরকে মার্চ করে, স্যালুট করে, ওদেরকে নিয়ে গেল। নিয়ে যাওয়ার পরে, ইয়েতে, গৌরব বাবু বলে একজন ইন্ডিয়ান ইন্টিলিজেন্সের লোক ছিলেন। তো, যোগাযোগ করলেন, ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে। বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাই। পরে তারা আরো ভেরিফাই-টেরিফাই করে, এরা সত্যিকারের, জেনুইন কি-না।

পরে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তাজউদ্দিন দেখা করলেন। ইন্দিরা গান্ধী প্রথমে রাজী ছিলেন না, এই যুদ্ধে আসতে।
বলেন, আমরা সাহায্য করব, তোমরা থাকো এখানে, খাও-দাও, এক কোটি লোক। কিন্তু আমরা যুদ্ধ করতে রাজী না।
তারপরে, অনেক অনুনয়-বিনয় করার পরে। বলে, তাহলে তোমরা একটা, নিজেরা একটা গভর্ণমেন্ট ফর্ম করো।
তখন সেখানে ওনারা তাজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে প্রবাসী সরকার প্রতিষ্ঠা করল। সেখানেও অনেকে বিরোধী ছিল। খন্দকার মোশতাক কিন্তু এই প্রবাসী সরকারে ছিল। ঐখান থেকে সে পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতো।

প্রবাসী সরকার প্রথমে, তাদেরকে অস্ত্র-বারুদ, গোলা-বারুদ দিল, ট্রেনিং দিল, তখনো তারা সেনাবাহিনী দেয়নি। ট্রেনিং দিল। ট্রেনিং নিয়ে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা, তারা দেশের ভিতরে এসে অপারেশন চালাতো। তারপরে, কিছুদিন পরে দেখা গেল, এই প্রবাসী সরকার একা কিছু করতে পারছে না। তখন, এদিকে পাকিস্তান ইন্ডিয়া আক্রমণ করে বসল। তখন যুদ্ধ আরম্ভ হয়ে গেল। তখন, ইন্দিরা গান্ধী, ইন্ডিয়ান আর্মি নিয়ে যুদ্ধে নামলেন। এবং ইন্ডিয়ান আর্মি তখন, ইন্ডিয়ান আর্মির নেতৃত্বেই যুদ্ধটা হল, মুক্তিবাহিনী সঙ্গে ছিল।

তারপরে তো ইতিহাস সবাই জানে। ৯ মাসের যুদ্ধে তারা (পাকিস্তান) হেরে গেলেন। ইন্ডিয়ার কাছে আমরা অনেক ঋণী। যদিও তারা পরে নানারকম ব্যবসায়ী স্বার্থ, তারও যে পরে একটা খুব ভাল ব্যবহার করেছে, তা করে নাই।
ইন্দিরা গান্ধী মারা যাওয়ার পরে ঐ অন্যেরা পক্ষে ছিল না। তখনো, জাগ জীবন রাম ছিলেন, ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার, তিনি বলেছিলেন, ‘ডোন্ট ক্রিয়েট টু পাকিস্তান’, দুইটা পাকিস্তান তৈরি করো না। আমরা এদের লোক রেখেছি, ঠিক আছে, আমরা নেগোশিয়েট করে এদেরকে ফেরত পাঠিয়ে দেই।

কিন্তু ইন্দিরা গান্ধী একগুয়ে হয়ে গেলেন। তার একটা মায়া পড়ে গেল। মাতৃস্নেহের মত, তিনি বাংলাদেশের জন্ম দিয়ে ছাড়লেন। এই দেশের জননী ইন্দিরা গান্ধী।

তাজউদ্দিন সাহেবের কাছে সাংবাদিকরা আসল, তাজউদ্দিন সাহেব বললেন, আমি ধাত্রী মাত্র। এই রাষ্ট্রের পিতা বন্দী অবস্থায় পাকিস্তানে আছেন। তখন, সোভিয়েত ইউনিয়ন আর ভারত মিলে অনেক চাপ সৃষ্টি করল, শেখ মুজিবুর রহমানকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। তখন তারা ছেড়ে দিছে।

তা. ই. মাসুম: স্যার, দেশের মানুষের জন্য কি কিছু বলার আছে?
বাহাউদ্দিন চৌধুরী: বলার এইটুকু আছে। এই দেশের মানুষ, অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। হাজার বছরের বাঙালীর একটা ইতিহাস আছে, কিন্তু বাঙালী সেইভাবে জেগে ওঠে নি। এই ’৭২ এর পরে বাঙালী প্রথম, নিজের জাতীয় সত্তা, নিজে বাঙালী হিসেবে একটা বাঙালী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটা একটা সাংঘাতিক ব্যাপার! একটা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে একটি জাতি হিসেবে।
বাঙালী এখানে আগেও ছিল, কিন্তু এইভাবে ছিল না। নিজের একটা স্বকীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা কেউ চিন্তা করে নাই।
কূর্দীরা তিন রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে আছে। গাজী সালাহ উদ্দিনের মতো সেনাপতি যাদের ছিল, কিন্তু তারা রাষ্ট্র বানাতে পারে নি। কারণ, মুজিবুর রহমানের মত একজন এইরকম দূরদর্শী নেতা তারা পায় নাই। এই রকম বহু জাতি আছে, যারা রাষ্ট্র বানাতে পরে নাই।

আমরা একটি ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, কিন্তু আমরা নিজেদের একটি রাষ্ট্র বানাতে পেরেছি মাত্র ৯ মাসের যুদ্ধে। এটা একটা কম কথা নয়! ইতিহাসে একটা অনন্য ঘটনা। সেই হিসাবে আমরা অনেক গৌরবের অধিকারী।
বাঙালীদের যে একটা একত্রিত করা, মুজিবুর রহমানের পরে এমন কোনো নেতৃত্ব আসল না দেশে যে, বাঙালীকে একত্রিত করতে পারছে। আজকে বিনা কারণে, অনেক সময় অ-কারণে ঝগড়া, খালি গদি দখলের দৌড়াদৌড়ি।
মুক্তিযুদ্ধ কিন্তু আমরা করেছিলাম না, এইসব করার জন্য। আমি সার্টিফিকেট নেই নাই।
আমি বলেছি, আমি সার্টিফিকেট চাই না। আমি সাটিফিকেটের জন্য যুদ্ধ করি নাই।
(কেঁদে ফেললেন বাহাউদ্দিন চৌধুরী, অনেকক্ষণ ফুঁপিয়ে কাঁদলেন, এবং নিজেকে সামলানোরও চেষ্টা করলেন)

আমরা যুদ্ধ করেছি, মা’কে মুক্ত করার জন্য।
(কান্নার কারণে কথাগুলো চিকন হয়ে বের হচ্ছিল কণ্ঠনালী থেকে, কিছুটা অস্পষ্ট) সেই দেশপ্রেম ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশপ্রেম চলে যাচ্ছে, আমরা নিজেরা বখাটে হয়ে যাচ্ছি, চোর ডাকাত বদমাইশ হয়ে যাচ্ছি। চরিত্র গঠনের কোনো চেষ্টা নাই। (ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হলে লাগল কণ্ঠস্বর) আগে লোকে রাজনীতি করতে দেশ সেবার জন্য, আজকে রাজনীতি করে পয়সা করার জন্য। আজকে রাজনীতিবিদরা হয়ে গেছে দালাল। তোফায়েল সাহেব কিছুদিন আগে বলেছেন, রাজনীতি থেকে রাজনীতিবিদরা চলে যাচ্ছে, এখন সব মালদাররা রাজনীতি করছে।

তারা পয়সা বানাচ্ছে একদিকে, আবার পয়সা তৈরি করছে। পয়সা রোজগার করার জন্য এমপি হচ্ছে। কাজেই আজকে নতুন প্রজন্ম এসেছে, নতুন প্রজন্ম সম্পর্কে আমি খুব আশাবাদী। তারা যেন নিজেদের চরিত্রবান করে তৈরি করে। চরিত্রবান তৈরি করে দেশকে গড়ার চেষ্টা করে। এবং দেশকে যেন ভালবাসে। আমরা সারাজীবন কষ্ট করেছি। ওদেরকে সেই কষ্টগুলো করতে হবে না।

গবেষণামূলক ও সাক্ষাতকারভিত্তিক গ্রন্থ ‘ভাষা সংগ্রামীর বাংলাদেশ’ থেকে সংক্ষেপিত

SUMMARY

256-1.jpg