বেকার হোস্টেলে রাজনীতির চর্চা করতেন বঙ্গবন্ধু

সোহেল রানা 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক অনন্য সাধারণ বিশ্বনেতার নাম। এ নেতার স্বপ্নের বীজ থেকেই জন্ম নিয়েছে স্বাধীন এক ভূখণ্ড। আর এ ভূ-খণ্ডটি হচ্ছে আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশ। তারই একটি জেলা গোপালগঞ্জ। এখান থেকে দীর্ঘপথ কলকাতা। যাতায়াতের জন্য তখন ছিল না কোনো আধুনিক যানবাহন। তবে দীর্ঘ সেই পথ পাড়ি দিয়েই তরুণ বঙ্গবন্ধু পড়তে গেছেন ইসলামিয়া কলেজে। সেখানে ভর্তি হন ডিগ্রিতে। ওঠেন শিয়ালদহের বেকার হোস্টেলে। এই হোস্টেলে থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি রাজনীতির চর্চা করতেন তিনি।

বেকার হোস্টেল সরকারি ছাত্রাবাস। এটি অবস্থিত ৮ স্মিথ লেনে। ১৯১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বেকার হোস্টেলটি। বঙ্গবন্ধু এ বেকার হোস্টেলে ছিলেন ১৯৪৫-৪৬ সালে। ২৪ নম্বর কক্ষে থাকতেন তিনি। ইসলামিয়া কলেজের নাম পরিবর্তন করে এখন নামকরণ করা হয়েছে মৌলানা আজাদ কলেজ।

বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ১৯৯৮ সালে উদ্যোগ নেন বেকার হোস্টেলের ২৩ ও ২৪ নম্বর কক্ষ নিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতিকক্ষ’ গড়ার। পরে তা বাস্তবায়ন হয়। ওই বছরের ৩১ জুলাই বঙ্গবন্ধু স্মৃতিকক্ষের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন পশ্চিমবঙ্গের উচ্চশিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক সত্যসাধন চক্রবর্তী।

এ স্মৃতিকক্ষে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত খাট, চেয়ার, টেবিল ও আলমারি। সবকিছু খুব যত্ন করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। হোস্টেলের দেয়ালজুড়ে ফ্রেমে বাঁধাই করা তার চিত্রকর্ম ও আলোকচিত্র। এছাড়া আছে শ্বেতপাথর দিয়ে নির্মিত তার একটি আবক্ষমূর্তি।

বেকার হোস্টেলের কর্মী শেখ মো. গোলাম জানান, এখানে বঙ্গবন্ধু বেশকিছু সভা করেছিলেন। সেই সময় হোস্টেল সুপার ছিলেন অধ্যাপক সাঈদুর রহমান। বঙ্গবন্ধুকে আলাদাভাবে স্নেহ করতেন তিনি। একবার হোস্টেল ছাত্র সংসদের নেতা হিসেবেও মনোনীত হয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।


বেকার হোস্টেলে থাকতেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছবি: ইন্টারনেট
কয়েকজন তরুণ বলেন, বঙ্গবন্ধু একটি অসাম্প্রদায়িক আদর্শের ইতিহাস। যে বন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। তার অসাম্প্রদায়িক আদর্শ ধারণ করে বাঙালি একত্রিত হয়ে স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছিল। সেই মাটি ও দেশের মানুষ হিসেবে আমি গর্বিত।

গোটা বিশ্বে বেকার হোস্টেল আর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ১৩০০ গ্রন্থ রচনা হয়েছে। তাকে নিয়ে রয়েছে অসংখ্য গান ও কবিতা। বঙ্গবন্ধুর মতো অধিনায়কত্বসুলভ সহৃদয়, মনুষ্যত্বপূর্ণ ও উদারচিত্তের নেতা বিশ্বে বিরল। তার বলিষ্ঠ আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ দেশ স্বাধীন করেছিলেন। তিনি সারাবিশ্বের জন্য অনুকরণীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।

জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বাঙালির কল্যাণের কথা ভেবেছেন। বেকার হোস্টেল সেই মহান মানুষের স্মৃতি ধরে রেখে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।
সুত্র: ভোরের কাগজ, প্রকাশিত : মার্চ ১৭, ২০২০ 

SUMMARY

2551-১.jpg