সমবায় আন্দোলন জোরদার করাই সরকারের নীতি: বঙ্গবন্ধু

উদিসা ইসলাম

কুমিল্লার এক সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু স্পষ্ট জানিয়ে দেন, সমবায় আন্দোলন জোরদার করাই তার সরকারের নীতি। তিনি সেটা করতে সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, চাষিদের স্বার্থ রক্ষা এবং জনগণকে সমবায় পদ্ধতি গড়ে তোলার আহ্বানও জানান।

১৯৭২ সালের ২৪ এপ্রিল থেকে কুমিল্লায় দুই দিনব্যাপী এক সভায় চাষাবাদ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু তাঁর শুভেচ্ছা বাণীতে আরও বলেন, ‘দেশে সমবায় আন্দোলনকে ব্যাপক ভিত্তিতে প্রসারিত করা হচ্ছে। ২৬ এপ্রিলের পত্রিকায় এ সম্পর্কিত খবর প্রকাশ করা হয়। সেই সংবাদে বলা হয়, সরকারের নীতি অনুযায়ী অবিলম্বে একটি গ্রহণযোগ্য কর্মসূচি নেওয়ার বিষয়েও বঙ্গবন্ধু গুরুত্বারোপ করেন। স্বায়ত্তশাসন, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী শামসুল হক আলোচনা সভার উদ্বোধন করেন। সমবায় আন্দোলন হচ্ছে সাধারণ মানুষেরই একটা আন্দোলন, বঙ্গবন্ধুর এই উক্তি সম্পর্কে পল্লি উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী শামসুল হক বলেন, ‘এ ব্যাপারে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং এ সম্পর্কে একটি পাঁচশালা পরিকল্পনা পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় দফতর তৈরি করেছে। ১৯৭৬-৭৭ সালের মধ্যে পল্লি শিল্পের বিশেষ করে মৎস্য,  লবণ, ডেইরি শিল্পগুলো থানা পর্যায় পর্যন্ত সমবায়ের অন্তর্ভুক্ত হবে বলে জানা যায়।

  

ঢাকা ব্শ্বিবিদ্যালয়ে আন্দোলন

টাঙ্গাইলে ছাত্রলীগের মিছিলের ওপরে বোমা নিক্ষেপ ঘটনার প্রতিবাদে এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘট পালিত হয়। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে দুই ব্যক্তিকে মুক্তি দেওয়ার প্রতিবাদে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় গৃহীত এক প্রস্তাবে বেআইনি অস্ত্রধারী ব্যক্তিদের কঠোর হস্তে দমনের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়। প্রস্তাবে টাঙ্গাইলের ঘটনার জন্য কাদের সিদ্দিকীকে দায়ী করে তার গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি করা হয়। এ ঘটনায় নিহত আজিজুল হকের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এদিকে টাঙ্গাইলের ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তি প্রদানের কথা বলেন কাদের সিদ্দিকী। বাসসে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘টাঙ্গাইলের ঘটনার সঙ্গে সেখানকার মুক্তিযোদ্ধাদের কোনও সম্পর্ক নেই।’

প্রশাসনকে পুনর্গঠনের উদ্যোগ

প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস কল্পে একটা ব্যাপকভিত্তিক স্কিম প্রণয়ন ও সুপারিশ করার জন্য বাংলাদেশ সরকার একটি কমিটি নিয়োগ করে। এখতিয়ার অনুযায়ী এই কমিটি কারিগরিসহ বিভিন্ন চাকরির বর্তমান কাঠামো বিবেচনা করবে এবং সরকারের চাহিদা ও কাজ চালানোর প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে ভবিষ্যৎ কাঠামো নিরূপণ করবে। স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, গেজেটেড, নন গেজেটেডসহ সাবেক কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের সব কর্মচারী সমিতিকে নিয়মগুলো জেনে নিয়ে সাত দিনের মধ্যে কমিটির কাছে এ সম্পর্কে তাদের মতামত জানাতে সুপারিশ করা হয়েছে।

ভারত-পাকিস্তান দূত পর্যায়ের বৈঠক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর বিশেষ দূত ডিপি ধর পাকিস্তানের উদ্দেশে রওনা দেবেন কাল (২৬ এপ্রিল)। তিনি সেখানে গিয়ে শীর্ষ বৈঠকের পথ সুগম করবেন আলোচনার মধ্য দিয়ে। এই যাত্রার লক্ষ্যগুলোর মধ্যে জুলফিকার আলী ভুট্টোর সঙ্গে তার যে বৈঠক হবে না, সেই সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিতে চাননি তিনি। এই বৈঠকের সম্ভাবনা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে ডিপি ধর বলেন, ‘পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট তার (ভুট্টোর) সঙ্গে আমার সাক্ষাতের সুযোগ করে দিলে আমি আমার জন্য একটা বিরাট আনুকূল্য বলেই মনে করবো।’

ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের জন্য ১০ ভাগ চাকরি

মুক্তিযুদ্ধকালে যেসব নারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের  জন্য ১০ ভাগ চাকরি খালি রাখা হবে। বাংলাদেশ সরকার সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন চাকরিতে শতকরা ১০ ভাগ পদ খালি রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে যে নারীরা তাদের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়েছেন, তাদেরকে এসব স্থানে নিয়োগ দেওয়া হবে। সরকারি ঘোষণা থেকে বাসসের  বরাত দিয়ে দৈনিক বাংলা এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে— সরকারি ও আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানে ১০ ভাগ পদ খালি রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন, প্রকাশিত : এপ্রিল ২৫, ২০২০ 

SUMMARY

2477-১.jpg