উদিসা ইসলাম
বিবদমান মুক্তিসেনাদের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানের সংবাদ
দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘গুন্ডারা নিরীহ লোকদের হয়রানি করছে। সহায় সম্পত্তি লুট করছে। সরকার গুন্ডামি সহ্য করবে না। এসব সমাজবিরোধী লোককে কঠোর হস্তে দমন করা হবে।’ ১৯৭২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) সকালে পিলখানার একটি ‘বেদনাদায়ক ঘটনা’র পর সাবেক ইপিআর এবং জাতীয় গণবাহিনীর লোকদের সম্মিলিত সমাবেশে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। বাসসের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করা, দেশ পুনর্গঠনের কাজে নিজেদের নিয়োজিত করার জন্য যখন কাজ চলছে তখনও দেশে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে। যেকোনও ধরনের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকার বিকল্প নেই।’ গণবাহিনীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের চরিত্রহীন লোকদের সম্পর্কে আপনাদের সজাগ থাকতে হবে।’
‘চক্রান্তকারীদের রুখে দিন’
উসকানিদাতা ও চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে সজাগ দৃষ্টি রাখতে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু। তিনি বলেন, ‘আমাদের সংগ্রাম এখনও চলছে। দেশের মুক্তির পর আত্মসন্তুষ্টি নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। আপনারা চক্রান্তকারীদের রুখে দিন।’ বাসসে একটি বেদনাদায়ক ঘটনা বলে উল্লেখ করলেও ‘বেদনাদায়ক ঘটনা’টি কী, সেটির বিস্তারিত বিবরণ সংবাদপত্রে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘কষ্টার্জিত স্বাধীনতা রক্ষার জন্য নিষ্ঠা ও সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। মুক্তিসংগ্রাম এখনও শেষ হযনি। দরকার হলে মাতৃভূমির জন্য আরও ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তের আত্মকলহ দেশ পুনর্গঠনে বিরাট কাজে বিপর্যয় ডেকে আনবে। এছাড়া এ ধরনের বিবাদে আমাদের সবারই বদনাম হবে।’
বঙ্গবন্ধুর ডাকে বিবদমান মুক্তিসেনাদের অস্ত্র সমর্পণ
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দখলদার সেনারা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে। পল্লি এলাকার লক্ষ লক্ষ মানুষকে খাদ্য ও আশ্রয় দিতে হবে। কারণ তাদের বাড়িঘর নেই। তারা কারখানার ক্ষতি করেছে, খাদ্যের গুদাম লুট করেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা নষ্ট করেছে। সর্বস্তরের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’ তিনি জনসাধারণের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে সরকারের নানা উদ্যোগেরও উল্লেখ করেন।
বিবদমান দুই দল মুক্তিসেনা বঙ্গবন্ধুর সেদিনের বক্তৃতার আগে পরস্পরকে আলিঙ্গন করে এবং একসঙ্গে কাজ করার শপথ নেয়। আর কোনও ভুল বোঝাবুঝি তাদের সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারবে না বলেও জানায়। প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে জানান, তিনি তাদের স্বার্থকেই সবার ওপরে দিয়েছেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল এম এ জি ওসমানী।
পিন্ডিকেই এগিয়ে আসতে হবে
ইন্দোনেশিয়ার প্রস্তাবের জবাবে আগের মতোই স্বীকৃতির বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার পুনরায় সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে যেকোনও আলোচনা অনুষ্ঠানের আগে পাকিস্তানকে অবশ্যই স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে হবে। বাসসের খবরের বরাত দিয়ে দৈনিক বাংলা’র খবরে বলা হয়, ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সরকারের কাছে জাকার্তা বা অন্য যেকোনও জায়গায় দুই দেশের মধ্যে শান্তি আলোচনা অনুষ্ঠানের প্রস্তাব করেন।
দ্য বাংলাদেশ অবজারভারের প্রথম পাতা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জানান, বাংলাদেশ সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু শিগগিরই জাপান সফর করতে পারেন। বঙ্গবন্ধু তার বিশেষ দূতের মাধ্যমে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এ প্রস্তাব দেন এবং একইসঙ্গে পুনর্বাসন কাজে সহায়তার জন্য জাপানকে একটি জরিপ টিম পাঠানোরও অনুরোধ করা হয়।
নতুন মুদ্রা আসছে
ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ নতুন মুদ্রা চালু করা হবে বলেও জানিয়েছেন অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। তিনি বলেন, ‘চলতি মাসের শেষ নাগাদ এ সেবা চালু করা হবে।’ স্বাধীনতার আগে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ যেসব কারেন্সি নোট অচল করেছিল, সে সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ সরকার এ ব্যাপারে তার নীতি ইতোপূর্বে ঘোষণা করেছে।
সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন, প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২০