উদিসা ইসলাম
সরকার গঠনের পর থেকেই প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ ও দেশের অর্থনীতির পুনর্গঠনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানাতে শুরু করেন। আর এর জন্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে তাদের কাজের জায়গায় মনোযোগী এবং গুরুত্ব দিয়ে দায়িত্ব পালনের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। বঙ্গবন্ধুর কাছে বিষয়টি এতটাই গুরুত্ব পেয়েছিল যে, তিনি অফিসে-অফিসে গিয়ে নিজ চোখে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন।
ভারতীয় গণমাধ্যমে এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের বিষয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘ওদের বিষয়ে ইতিহাসই ব্যবস্থা নেবে।’
অফিসে কর্মকর্তারা আছেন কিনা দেখছেন বঙ্গবন্ধু
আর বরদাস্ত করা হবে না
সরকার গঠনের প্রথম মাসেই বেশ কয়েকবার হুঁশিয়ারি দিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘ফাঁকিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনও ছাড় দেওয়া হবে না।’ যেকোনও দিন তিনি আকস্মিকভাবে অফিস পরিদর্শনের কথাও জানিয়ে দেন। তার ঠিক কয়েকদিনের মাথায় সেক্রেটারিয়েটে আকস্মিকভাবেই বিভিন্ন অফিস ভিজিটে বেরিয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধু। এবং যথারীতি অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে তিনি তাদের নিজেদের জায়গায় সময় মতো উপস্থিত পাননি। প্রধানমন্ত্রী কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন,‘কোনও সরকারি কর্মকর্তা দেরিতে অফিসে গেলে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কোনও ইতস্তত করা হবে না।’ বাসস পরিবেশিত খবরের তথ্য মতে, কেবল মুখের হুঁশিয়ারি নয়, আকস্মিকভাবে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েটের নানা অফিস পরিদর্শনে যান বঙ্গবন্ধু। জানুয়ারি মাসে তিনি একাধিকবার একথা বলে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী পরিদর্শনে গিয়ে তিনি অনেককেই অফিসে পাননি। পরিদর্শন শেষে তিনি আবারও বলেন, ‘অফিসে আসার বিষয়ে তার সরকার সরকারি কর্মকর্তাদের কোনও মন্থরতা বা দীর্ঘসূত্রতা বরদাস্ত করবে না।’
‘আমি কেন তাদের লাথি মেরে তাড়াতে যাব?’
ইতিহাস মার্কিন সরকারের বিচার করবে বলে এক সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেন বঙ্গবন্ধু। ভারতীয় একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক এক সাক্ষাৎকারে ঢাকায় মার্কিন কনস্যুলেট জেনারেল বাংলাদেশের উদ্বোধনী ও অন্যান্য অনুষ্ঠান বর্জন করে যেভাবে দেশ ও তার সরকারকে অপমান করেছে, তার প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ওই সম্পাদক জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনি কেন তাদের লাথি মেরে তাড়িয়ে দেন না?’
অর্থপূর্ণ হেসে শেখ মুজিব বলেন, ‘আমি কেন তাদের লাথি মেরে তাড়াতে যাবো? ইতিহাসই তা করবে।’
বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘যারা সময়ের সঙ্গে চলতে জানে না এবং আমাদের বিপ্লবের মতো বাস্তবতা স্বীকার করে না, আপনি জানেন— তাদের ভাগ্যে কী ঘটবে! মি. নিক্সন ও তার সরকার যদি এখনও সচেতন না হন, তাহলে ইতিহাসের অমোঘ গতি ও যুক্তির সামনে এমনিতেই তাদের পতন হবে। যুক্তরাষ্ট্র এবং আমাদের সৌভাগ্য এটাই যে, আমেরিকার সংবাদপত্র ও জনসাধারণ এবং মি. কেনেডির প্রগতিশীল সিনেটররা পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ সজাগ দৃষ্টি দিচ্ছেন না।’
তিনটি বৃহৎ শক্তির স্বীকৃতি
এপর্যন্ত তিনটি বৃহৎ শক্তির দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই তিনটি দেশ হচ্ছে— সোভিয়েত ইউনিয়ন, ব্রিটেন ও ফ্রান্স। এরা প্রত্যেকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশ, যাদের রয়েছে ভোট ক্ষমতা। বাংলাদেশকে ফ্রান্স আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ায় গভীর সন্তোষ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাসসের খবরে প্রকাশ, প্রধানমন্ত্রী মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ভবিষ্যতে সবক্ষেত্রে সহযোগিতা ও সমঝোতা গড়ে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘শান্তি পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য দেশের মধ্যে তিনটি দেশ বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয়।’
সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন, প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২০