বেশকিছু অস্থিরতায় আবারও সরকারি হুঁশিয়ারি

উদিসা ইসলাম
১৯৭২ সালের ৯ মার্চ বাংলাদেশ সরকার দুস্কৃতিকারীদের এক কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে ঘোষণা করেন যে, দেশের যেকোনও স্থানে দুষ্কৃতিকারীদের যেকোনও তৎপরতা ধ্বংস করার জন্য সরকার সম্পূর্ণ প্রস্তুত। একদিকে অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে, চোরাই গাড়ি ধরা পড়ছে, শুরু হয়েছে বীমাখাতে অস্থিরতা। এসবের পাশাপাশি চলছিল ১৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের প্রস্তুতি। 

দুষ্কৃতিকারীরা তৎপর

সরকারের ঘোষণায় অত্যন্ত স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, দেশে দুষ্কৃতিকারীদের যেকোনও অপচেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না। পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান মহকুমা থেকে ৬০ মাইল দূরে থানচি বাজারে কিছু সংখ্যক দুষ্কৃতিকারীর তৎপরতা সম্পর্কে সেসময়ের একটি পত্রিকায় যেসব অতিরঞ্জিত রিপোর্ট ছাপা হয়েছে, সে সম্পর্কে সরকারি হ্যান্ডআউট দিয়ে জানানো হয়— সরকার এরইমধ্যে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়েছে।পরিস্থিতি সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে।

  

ঘোষণায় বলা হয় — থানচি বাজার এলাকায় পূর্ণ শান্তি বিরাজ করছে। দুষ্কৃতিকারীদের খুঁজে বের করার জন্য সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে। সরকারি ঘোষণায় ঘটনার প্রকৃত অবস্থা উল্লেখ করা বলা হয়— গত চার মার্চ একদল দুষ্কৃতিকারী মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে থানচি বাজার এলাকায় হামলা চালায়। তাদের সঙ্গে সীমান্তের ওপারের মিজো বিদ্রোহীরা ছিল।

বিমাকারীরা ক্ষতির সম্মুখীন

বিমা শিল্প জাতীয়করণ করা হবে বলে সবাই মোটামুটি ধরে নিলেও সরকার এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করে। ফলে জনগণ মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। সরকার শেষ পর্যন্ত বিমা শিল্প জাতীয়করণ করার সিদ্ধান্ত নিলে এই ক্ষতিপূরণের দায়িত্ব সরকারের ওপরই বর্তাবে। বিমা শিল্পের সবাই মনে করেন যে, এই শিল্প জাতীয়করণ হয়ে যাবে। সর্বত্র যে জল্পনা-কল্পনা করা হচ্ছে সেটা হলো— প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের ক্ষতি পূরণ দেওয়া হবে কিনা এবং দেওয়া হলে তার পরিমাণ কী হবে।


 

ইন্দিরার জন্য বানানো হয় জামদানি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বাংলাদেশ সফরকালে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি রূপে অবস্থান করেন। ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ সফরে আসেন। এটা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রথম বাংলাদেশ সফর এবং তিনি হচ্ছেন প্রথম বিদেশি সরকার প্রধান, যিনি বঙ্গভবনে অবস্থান করলেন। বাসসের খবরে প্রকাশ, ইন্দিরা গান্ধীকে যেসব উপহার দেওয়ার পরিকল্পনা হয়েছে– তার মধ্যে ছিল ঢাকার ঐতিহ্যবাহী জামদানি শাড়ি। তার জন্য  দুটি শাড়ি বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছিল।

ইন্দিরা গান্ধীকে যে দুটি জামদানি শাড়ি দেওয়া হবে সেগুলো তখন আর ঢাকায় তৈরি হয় না। একারণে এই বিরল জামদানি তৈরির জন্য বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের চার জন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পীকে নিয়োগ করা হয়। ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে তারা এই কাজ শুরু করেন। শাড়ি দুটি তৈরি করতে ৩১ দিন সময় লাগে।

বন্ধুরাষ্ট্র ভারত থেকে আসা মিত্রবাহিনী ১২ মার্চ ফিরে যাবে নিজ দেশে। তাদের বিদায়ের জন্য নানা প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। ১৯৭২ সালের ১২ মার্চ বিকাল চারটায় তাদের জন্য বিদায়ী কুচকাওয়াজের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

ঢাকায় চোরাই গাড়ি ও অস্ত্র উদ্ধার

ঢাকার পুলিশ শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাক বাহিনীর সহযোগীদের অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে। পুলিশ স্থানীয় জনসাধারণের সহযোগিতায় দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেফতার করে। এদিকে নিউ মডেল ডিগ্রি কলেজের পরিত্যক্ত ভবন থেকে বেশকিছু অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

একাত্তরের এই দিনে

১৯৭১ সালের সাত মার্চে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অনুযায়ী, আজ  (৯ মার্চ) থেকে সব সরকারি অফিস অচল করে দেওয়া হয়। এদিকে মার্শাল ল’ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর সংশ্লিষ্ট সামরিক বিধি পরিবর্তন করে সামরিক শাসন চালানোর জন্য পরিচালক পদে লে. জে. টিক্কা খানকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর আগে ৬ মার্চ টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।

এদিন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের জরুরি সভায় ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’ ঘোষণার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। এই সভায় আরেকটি প্রস্তাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বাংলাদেশে জাতীয় সরকার’ গঠনের জন্যও অনুরোধ করা হয়

সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন, প্রকাশিত : মার্চ ০৯, ২০২০

SUMMARY

2413-১.jpg