বাংলাদেশ-ভারত গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক

উদিসা ইসলাম

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশে আসবেন ১৭ মার্চ (১৯৭২)। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে সামনে রেখে বাংলাদেশে এলেও একাধিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন দুই প্রধানমন্ত্রী। সেখানে সীমান্ত বাণিজ্যসহ বাণিজ্যচুক্তি, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন ও যুদ্ধাপরাধের বিচার আলোচনায় প্রধান জায়গা পায়। দুই প্রধানমন্ত্রী তাদের অবস্থান ব্যক্ত করে আগামীতে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় এবং স্থিতিশীল সম্পর্কের বিষয়ে আশ্বস্ত হন।

ইন্দিরা আসছেন

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ঢাকায় আসবেন বলে ১৭ মার্চ চলাফেরায় বেশ কিছু পথ সংরক্ষিত রাখা হয়। ১৭ মার্চ সকাল ৬টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ঢাকা বিমানবন্দরে সাধারণ নাগরিকদের যাতায়াত বন্ধ করা হয়। ময়মনসিংহ রোডে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ, টঙ্গী থেকে আগত যানবাহন গুলশান-তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল হয়ে কাওরানবাজার পর্যন্ত আসতে পারবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার জন্য সকাল ১০টা থেকে বিকাল ছয়টা পর্যন্ত বেশিরভাগ সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।

আলোচনা হবে যেসব বিষয়ে

সীমান্ত বাণিজ্যসহ বাণিজ্যচুক্তি বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন ও যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়ে আলোচনা হবে  বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে। যে দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্য চুক্তি সম্পর্কে এর মধ্যেই মতবিনিময় হয়েছে এবং উভয় প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনার সময় তা চূড়ান্ত রূপ লাভ করেছে।

  

পররাষ্ট্র অফিস সূত্রে জানা গেছে,প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের পাকহানাদার বাহিনীর সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করবেন। বাংলাদেশে পাক বাহিনীর সৈন্যদের যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচার করতে চায়। কীভাবে বিচার করা হবে তার পদ্ধতি বাংলাদেশ সরকার প্রথম পরীক্ষা করে দেখেছেন এবং বিচারের উদ্দেশে ট্রাইব্যুনাল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশে গণহত্যা চালানোর পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের জন্য দায়ী পদস্থ সেই সব সামরিক জেনারেলদের বিচারের জন্য জেনেভা সম্মেলনের আলোকে আইনের খসড়া তৈরির কাজে বাংলাদেশ এখন ব্যস্ত। মুজিব-ইন্দিরা বৈঠকে কেবল যুদ্ধনীতিই তালিকাভুক্ত নয়, যুদ্ধবন্দিদের বিনিময় প্রশ্নটিও আলোচনা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছিল।

আলোচনা চলছে আগে থেকেই

১৯৭২ সালের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ উপদেষ্টার নয়াদিল্লির সফরের সময়ে উভয় দেশের মধ্যে বন্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সহযোগিতার ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনা সভা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নটিই আলোচিত হয়েছে। ভারত নীতিগতভাবে এ ব্যাপারে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে বলে জানা গেছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে সে সময় কিছু আশা করা যাচ্ছিল। ভারত থেকে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রশ্নটিও আলোচনায় স্থান পাবার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল।  

  

ইন্দিরাকে বঙ্গবন্ধুর মা-বাবার শুভেচ্ছা

সফর উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর মা-বাবা প্রার্থনা করেন যে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্ধুত্ব বৃদ্ধি পাবে এবং চিরস্থায়ী হবে। ইন্দিরা গান্ধীর রাষ্ট্রীয় সফর উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান টুঙ্গিপাড়ার বাড়ি থেকে পাঠানো এক বার্তায়  শেখ লুৎফর রহমান ও তার স্ত্রী বঙ্গবন্ধুর মা সাহেরা খাতুর এই আশা প্রকাশ করেন। বঙ্গবন্ধু বাবা-মা ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিসেস গান্ধী ও ভারতের জনগণের জন্য সম্মান সুখ-সমৃদ্ধি ও উন্নতি কামনা করেন। তারা দুঃখ প্রকাশ করেন যে, ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও অসুস্থ অবস্থায় ঢাকায় ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ব্যক্তিগতভাবে অভ্যর্থনা জানাতে পারছেন না। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সেক্রেটারি আমিনুল হক বাদশা বঙ্গবন্ধুর মা-বাবার এই বার্তা টুঙ্গিপাড়া থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন বলে বাসসের সংবাদে প্রকাশিত হয়।

ভারতের এগিয়ে চলা

এই সময়ে প্রগতির পথে ভারতের এগিয়ে চলা নিয়ে ফটোস্টোরি প্রকাশ করে পত্রিকাগুলো। ভারতে নারী জাগরণ, টেকনোলজি ও কৃষির উন্নয়ন নিয়ে নানা ছবির সমন্বয়ে ভারতকে তুলে ধরা হয়। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বাংলাদেশ সফর নিয়েই এই আয়োজন। এতে বলা হয়—দেশটি নারীরা শিক্ষায় এগিয়ে চলেছে। সংখ্যা বাড়ছে তাদের। কৃষকদের এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা যেমন আছে, সামুদ্রিক পরিবহন অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে জাহাজ শিল্পেও এগিয়ে চলেছে আধুনিক ভারত।

সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন, প্রকাশিত : মার্চ ১৬, ২০২০ 

SUMMARY

2411-১.jpg