বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থা

উদিসা ইসলাম
১৯৭২ সালের এই দিনে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল সুইজারল্যান্ড। এর আগের তিন মাসে বিশ্বের প্রায় সবক’টি শক্তিশালী দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। পাশে থাকার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সবদেশ ও দেশের  জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।  সবসময় বাংলাদেশের ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে টিকে থাকার জন্য। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের  জনগণকে ধন্যবাদ জানালেও মুক্তিযুদ্ধকালে তাদের রাষ্ট্রপ্রধান নিক্সনের আচরণের তীব্র সমালোচনা করেন। মার্চে বেশি কয়েকটি দেশের নেতা, সংসদের প্রতিনিধিরা সফরে আসেন। আর বাংলাদেশে আসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।  

শক্তিশালী বন্ধুত্বপরায়ন বাংলাদেশ

ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি ঘোষণা দিয়েছিলেন, তার মতে  শক্তিশালী ও বন্ধুত্বপরায়ন বাংলাদেশ পারে উপমহাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার দৃঢ়তা বাড়াতে। সব ক্ষেত্রে পারস্পারিক সহযোগিতামূলক আচরণ দু’দেশের মধ্যকার সৌহার্দ্য বাড়িয়ে তুলবে মন্তব্য করে তিনি নিরবচ্ছিন্ন সহযোগিতা অব্যাহত রাখার বিষয়ে কথা বলেন। ডেইলি অবজারভাবে ১৪ তারিখের পত্রিকার এ খবর প্রকাশ করা হয়। 

১৯৭২ সালের ১৪ তারিখের পত্রিকা 
১৯৭২ সালের ১৪ তারিখের পত্রিকা
এদিকে জাপানের একটি  প্রতিনিধিদল জাপান সফরের জন্য তাদের প্রেসিডেন্ট ই সাটের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুকে আমন্ত্রণ জানান। বাসসের সংবাদে প্রকাশ, দু’দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়েও আমন্ত্রণ নিয়ে কথা হয়। জাপানি সংসদীয় প্রতিনিধি তাকাশাই হাভাকাওয়া বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে  সাক্ষাৎ করেন এবং জাপান বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা করবে বলেও অবহিত করেন। তিনদিনের সেই সফরের সময়ে এই প্রতিনিধি দল অর্থনৈতিক জায়গায় সহযোগিতার সম্ভাব্য পথগুলোর সন্ধান করে। জাতিসংঘ, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে যুক্ত হতে জাপান পাশে থাকবে। 

বন্ধু ইন্দিরা গান্ধী  আসছেন, সাজ সাজ রব চারপাশে

বন্ধু প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে ভারত মুক্তিযুদ্ধকালে যে সহযোগিতা বাংলাদেশকে করেছে তা অনন্য। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ায় তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ সবকিছুকে সহজ করেছিল। সেই বন্ধু ইন্দিরা গান্ধী  আসছেন। দু’দিনের সফরে ১৭ মার্চ আসার কথা। বাংলাদেশ তখন সাজছে। মানুষের মনে আগ্রহ, জনসভায় কী বলবেন তিনি।
১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে দিল্লিতে
১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে দিল্লিতে

রেসকোর্সের আয়োজন

দৈনিক বাংলার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের মানুষের ওপর বর্বর হামলার বিরুদ্ধে সোচ্চার কণ্ঠ এ দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু ইন্দিরা গান্ধী রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকায় আসবেন। ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় তিনি ভাষণ দেবেন জনতার উদ্দেশে। মঞ্চ নির্মাণের কাজ শেষ। মঞ্চের উচ্চতা ২০ ফুট, দৈর্ঘ ৪৫ ফুট। সেই ২০ ফুটের ওপরে ১৩ ফুট পার করে দেওয়া হয় ছাদ। মঞ্চের সামনের অংশে একটু বাড়িয়ে স্থান রাখা হচ্ছে, এখান থেকেই বক্তারা কথা বলবেন।

আবেগের জায়গা ছিল দু’দেশের সম্পর্কের বাঁধন। ইন্দিরা গান্ধী একবার গোহাটি যাওয়ার পথে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের ওপর দিযে যাওয়ার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে যে বার্তা বঙ্গবন্ধুকে পাঠিয়েছেন তাতে বন্ধু প্রতিবেশী  দুই রাষ্ট্রের প্রধানদের পরস্পরের প্রতি যে দৃঢ় অবস্থান তা সবার সামনে আসে। বার্তাতে তিনি লেখেন, ‘এই প্রথমবারের মতো আমি সোনার বাংলার ওপর দিয়ে যাচ্ছি। আমি ৫ হাজার ফুট ওপরে থাকলেও আমি আপনার  জনগণের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি ও আমার কৃতজ্ঞতা জানচ্ছি।’
১৯৭২ সালের মার্চে প্রকাশিত পত্রিকা
১৯৭২ সালের মার্চে প্রকাশিত পত্রিকা

তার উত্তরে নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ আপনাকে গভীর শ্রদ্ধার চোখে দেখে। তারা আপনাকে নিজেদের মাঝে পেতে চায়।’ আর সেই চাওয়া পূরণ হবে। পত্রিকার খবর বলছে, আরও উদযাপনের আমেজ ছিল কারণ ভারত তার সেনাদের পুরোপুরি ফিরিয়ে নিয়েছে, যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।

সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন, প্রকাশিত : মার্চ ১৩, ২০২০ 

SUMMARY

2408-১.jpg

১৯৭২ সালের ১৪ তারিখের পত্রিকা